দুপুরে ঐক্যফ্রন্টের জনসভা, দেয়া হবে চূড়ান্ত আন্দোলনের ডাক
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৪৩:২১,অপরাহ্ন ০৬ নভেম্বর ২০১৮ | সংবাদটি ২৫৫ বার পঠিত
নিউজ ডেস্ক:: ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বাধীন নতুন জোট হিসেবে আত্মপ্রকাশের পর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের প্রথম জনসভা হচ্ছে আজ মঙ্গলবার।দুপুর ২টায় জনসভা থেকে চূড়ান্ত আন্দোলনের ডাক দেবেন জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা। সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগে খালেদা জিয়ার মুক্তিসহ সাত দফা আদায়ে তারা সরকারকে সময় বেঁধে দেবেন।
বুধবার পর্যন্ত অর্থাৎ ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে এসব দাবি মেনে নিতে হবে। অন্যথায় হরতাল-অবরোধ-লংমার্চ-নির্বাচন কমিশন ঘেরাও’র মতো কঠোর কর্মসূচি দেয়া হবে।জোট সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) সোমবার জনসভার অনুমতি দিয়েছে।এর পরই শুরু হয়েছে মঞ্চ নির্মাণের কাজ।
একই সঙ্গে চলছে জনসভাকে ঘিরে ব্যাপক শোডাউনের প্রস্তুতি। দুপুর ২টায় সভার মূল কাজ শুরু হবে। সন্ধ্যা ৬টার আগেই শেষ হবে জনসভা।জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের শীর্ষ নেতা ড.কামাল হোসেনের সভাপতিত্বে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জেএসডি) সভাপতি আ স ম আবদুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্নাসহ এ জোটের শীর্ষ নেতারা বক্তব্য দেবেন। প্রথমবারের মতো মঞ্চে উঠবেন কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।
এ প্রসঙ্গে জেএসডি সভাপতি আ স ম আবদুর রব বলেন, আমরা শান্তিপূর্ণ উপায়ে সমাধান চাই।এ জন্য প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপে বসতে চেয়েছি।প্রথম দফা সংলাপে আমাদের দাবি বাস্তবায়িত না হওয়ায় আবারও বসার আগ্রহ প্রকাশ করেছি। আশা করছি, দ্বিতীয় দফার সংলাপে আমাদের দাবির পুরোটা বাস্তবায়িত হবে। এবার ব্যর্থ হলে এর দায় প্রধানমন্ত্রীকেই নিতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের সাত দফা দাবি বাস্তবায়নের আগে কোনো তফসিল ঘোষণা করা চলবে না। যদি নির্বাচন কমিশন একতরফাভাবে তফসিল ঘোষণা করে, এর পরিণতি ভালো হবে না।আবদুর রব বলেন, দাবি মেনে না নেয়া হলে সোহরাওয়ার্দীর জনসভা থেকে আমরা বৃহত্তর আন্দোলনের কর্মসূচি ঘোষণা করব।
বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লাহ বুলু এ প্রসঙ্গে বলেন, আমরা (বিএনপির) চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নিঃশর্ত মুক্তি চাই। সংসদ ভেঙে দিয়ে নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে নির্বাচন চাই।তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, চাইলে খালেদা জিয়াকে প্যারোলে মুক্তি দেয়া হবে। তার কাছে এ দাবি কে করেছে? আমরা নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই খালেদা জিয়ার মুক্তি চাই। তাকে কারাগারে রেখে এ দেশে কোনো নির্বাচন হতে দেয়া হবে না।
বরকতউল্লাহ বুলু বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে সংলাপের জন্য বুধবার পর্যন্ত অপেক্ষা করব। দেখি তিনি কী করেন। সংলাপ ব্যর্থ হলে বৃহত্তর আন্দোলনে যাব। কোনো অবস্থায়ই ৫ জানুয়ারির মতো আরেকটি প্রহসনের নির্বাচন এ দেশে করতে দেয়া হবে না।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা বলেন, তারা জাতীয় সংসদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণার আগেই সরকারের সঙ্গে একটি সম্মানজনক সমঝোতায় পৌঁছাতে চান। এ জন্য বুধবার পর্যন্ত অপেক্ষা করবেন।এদিন বেলা ১১টায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার সঙ্গে গণভবনে ছোটপরিসরে সংলাপে বসবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। এ সময় তারা সংবিধানের ভেতরে থেকেই সংসদ ভেঙে দিয়ে নির্দলীয় সরকারের অধীনে সব দলের অংশগ্রহণে কীভাবে একটি অবাধ, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন করা যায়, তার একটি রূপরেখা উপস্থাপন করবেন।
সংবিধানের আলোকেই এ রূপরেখা ইতিমধ্যে প্রস্তুতও করা হয়েছে। এটি মেনে নেয়া না-নেয়ার ভার প্রধানমন্ত্রীর ওপর ছেড়ে দেবেন তারা। যদি প্রধানমন্ত্রী প্রস্তাব মেনে নেন, তা হলে তফসিল মেনে নিয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণের প্রস্তুতি শুরু করবেন।
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা জানান, সংলাপ ব্যর্থ হলে, তাদের দাবি-দাওয়া মেনে না নিয়ে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হলে, তারা তা প্রত্যাখ্যান করবেন। দাবি আদায়ে চূড়ান্ত আন্দোলনের পথে হাঁটবেন।বিষয়টি জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতারা সোমবার নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে দেখা করে জানিয়েও এসেছেন। তারা তফসিল পেছানোরও দাবি জানান এ সময়।
এ প্রসঙ্গে বিএনপির আরেক ভাইস চেয়ারম্যান মোহাম্মদ শাজাহান বলেন, নির্বাচনের আগেই বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার মুক্তির দাবি ছাড়াও জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট ঘোষিত সাত দফার বাস্তবায়ন চান তারা।এ ক্ষেত্রে প্যারোলে নয়, জোট নেতাদের দাবি- খালেদা জিয়ার সরাসরি মুক্তি। এসব দাবি মানা না হলে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের জনসভা থেকে নতুন করে আন্দোলন কর্মসূচি ঘোষণা করবে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট।
বিশিষ্ট আইনজীবী ও গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেনের নেতৃত্বে ১৩ অক্টোবর জাতীয় প্রেসক্লাবে আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মপ্রকাশ করে জাতীয় ঐক্যফ্রন্ট। গণফোরাম ছাড়াও বিএনপি, জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল (জেএসডি), জাতীয় ঐক্য প্রক্রিয়া এবং নাগরিক ঐক্য মিলে গঠিত হয় এ জোট। সোমবার এ জোটে শরিক হন কৃষক-শ্রমিক-জনতা লীগ সভাপতি বঙ্গবীর কাদের সিদ্দিকী।
এদিকে সোমবার দুপুরে সমাবেশের প্রস্তুতি দেখতে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে যান বিএনপি নেতারা। মঞ্চ নির্মাণ ও অন্যান্য বিষয় পরিদর্শন শেষে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আমানউল্লাহ আমান সাংবাদিকদের বলেন, জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের সমাবেশ স্মরণকালের সর্ববৃহৎ জনসমাবেশ হবে।
এ সমাবেশ আয়োজন করতে খুবই অল্প সময় আমরা পেয়েছি।কিন্তু তার পরও জনগণের যে আকাঙ্ক্ষা গণজাগরণ, সেই গণজাগরণের মধ্য দিয়ে সর্ববৃহৎ একটি সমাবেশ হবে।