জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির ভরাডুবি ও আওয়ামীলীগের বিজয়ের কারন
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:৩৭:৪১,অপরাহ্ন ০২ জানুয়ারি ২০১৯ | সংবাদটি ৯১৯ বার পঠিত
শেখ জাফর আহমদ, গ্রেটার ম্যানচেষ্টার.
যেহেতু ইংরেজী নববর্ষ , তাই ইংরেজী একটা চড়ার সারমর্ম দিয়ে শুরু করি. রাইগার এক সুন্দরী কুমারী হাসি-মুখে বাঘের পিঠে চড়েছিল. কিন্তু বাঘের পিঠে চড়া যত সহজ নামা তত সহজ নয়. বাঘের পিঠেই সুন্দরীর জীবনের সমাপ্তি হয়েছে. এই পর্যন্ত বাংলাদেশের ইতিহাসে , যে দল যত সহজে ক্ষমতায় এসেছে, তত সহজে কিন্তু ক্ষমতা ছাড়েনি. কারন এখানে পরিবার তন্ত্রের রাজনীতির একটা প্রভাব রয়েছে. আমাদের দেশে সেই আশির দশক থেকেই বংশ পরস্পরের রাজিনীতি শুরু হয়েছে. যে বংশ ক্ষমতায় যায় , সে আর ক্ষমতা চাড়তে চায় না. যে করেই হোক বংশের মর্যাদা রক্ষা করতেই হবে. এখানে দলের কোন নেতা কর্মীর মতামত কিংবা জনগন ও মুখ্য বিষয় নয়. বিষয় হচ্ছে ক্ষমতা. গনতন্ত্র শুধু মুখে , অন্তরে ক্ষমতা. ক্ষমতা পাওয়ার জন্য, নীতি আদর্শ, দল-বদল সবকিছু বিসর্জন দিতে প্রস্তুত. বিগত কয়েকটি জাতীয় নির্বাচনে যেটি প্রমাণিত.
এখন আসি একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে, যদিও মহাজোট ও ঐক্যফ্রন্টের মধ্যে ছিল নির্বাচন কিন্তু মুল লড়াই ছিল আওয়ামীলীগ এবং বিএনপির মধ্যে. বাংলাদেশের আদি সংগঠন আওয়ামীলীগ, এবং একটি বৃহৎ রাজনৈতিক সংগঠন হচ্ছে বিএনপি. দেশ ও দশের জন্য দুটি দলের গুরুত্ব অপরিসীম. মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও ৭১ সালের যুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামীলীগ এবং জাতীয়তাবাদী দল হিসাবে , উভয় দলের রয়েছে নিজস্ব , বৈশিষ্ট ও আদর্শ. কিন্তু প্রশ্ন থেকেই যায় , তারা কি তারা নিজস্ব বৈশিষ্ট আর আদর্শে অটল রয়েছেন ? আসুন একটু ঘুরে আসি – জামাতে ইসলামী এবং ভিবিন্ন নামে তাদের অঙ্গ – সংগঠন,- সৈরাচার –বাম্পন্থি রাজনৈতিক দল ও তাদের অঙ্গ সংগঠন– এবং সুযোগ সন্ধানী বাসুদ //- বাংলাদেশ সুবিধা-বাদী দল, যাদের কোন দল নেই, আবহাওয়ার মত এরা পরিবর্তন হয়. বড় দুটি দল বিভিন্ন সময় -বিভিন্ন ভাবে ওদেরকে ব্যবহার করেছে. ওরাও তাদের স্বার্থের জন্য ব্যবহৃত হয়েছে. কিন্তু সবছেয়ে ভয়ংকর হচ্ছে জামায়াতে ইসলামী তথা শিবির. এদের মোড় নেওয়াটা একটা বিশাল ব্যাপার. ওদের মোড় যে দিকে , সমালোচনার ঝড় ও সেদিকে. স্বাধীনতার বিরোধী হিসাবে নির্বাচনের মাঠে একটি স্পর্সকাতর বিষয়. ভোটারের চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দেওয়ার মত একটি ক্ষেত্র. সেই সুযোগ নির্বাচন আসলেই আওয়ামীলীগ ঠিকই ব্যবহার করে. প্রায় দুই যুগ ধরে ওরা বিএনপির সাথে জড়িত. নির্বাচন সহ সকল রাজনৈতিক কর্মকান্ডে ওরা ঐক্য বদ্ধভাবে কাজ করে যাচ্ছে. এদিকে দু হাজার সালের শুরুতে জামাত – শিবিরের সঙ্গ পুরাপুরি ত্যাগ করেছে আওয়ামীলীগ. ২০০৮ সালের নির্বাচনী ইস্তেহার ছিল যুদ্ধাপরাধীর বিচার. যেমন কথা তেমন কাজ. চিহৃত যুদ্ধাপরাধীদের বিচার হয়েছে. সমস্ত দেশ শুধু বিএনপি ছাড়া সবাই সমর্থন দিয়েছে. যুদ্ধাপরাধীদের পরোক্ষ সমর্থন বাংলার মানুষ উপলব্দি করেছে. হয়ত তার জবাব দিয়েছে ৩০ তারিখের নির্বাচনে. সরকারি দলের হামলা -মামলায় বিএনপির নেতা কর্মিরা কোনঠাসা, দলের সভানেত্রী জেল হাজতে, ভারপ্রাপ্ত সভাপতি প্রবাসে, মির্জা ফখরুল – রিজভীর অন্তর্দন্দ, মওদুদ – মির্জা ফখরুলের মনোমালণ্য, মহা সচিব হিসাবে ফখরুলের দায়িত্ব সঠিক ভাবে পালন করতে না পারা, সবকিছু মিলিয়ে সাংগঠনিক ভাবে বিএনপি দুর্বল হয়ে পড়েছিল. তাছাড়া মাঠ পর্যায়ের পছন্দকে অগ্রাধিকার না দেওয়া , যুদ্ধাপরাধীদের সঙ্গ ত্যাগ না করা, আওয়ামীলীগের সাবেক নেতাদের সাথে জোট করা ও ছিল কতটুকু যথার্ত. নির্বাচনের ঠিক পুর্ব মুহুর্তে জামায়াত সম্পর্কে ড: কামালের বিরুপ মন্তব্য, হেভী ওয়েট নেতাদের ফোনালাপ ফাঁস এবং প্রবাস থেকে তারেক জিয়ার উস্কানী মুলক বক্তব্য ছিল স্পর্সকাতর.
পক্ষান্তরে,,, বাংলাদেশের আওয়ামীলীগ যেহেতু ক্ষমতায় ছিল সেই সুবাদে সুযোগ সুবিধাটা ও ছিল একটু বেশি. একটানা দশ-বছর সরকার পরিচালনা করতে গিয়ে দেশের উন্নয়ন ও কম হয়নি. বাংলাদেশের প্রত্যেকটি সেক্টরে উন্নয়ন, বিশেষ করে জ্বালানী- বিদ্যুৎ, , খাদ্য, কৃষি, যোগাযোগ, শিক্ষা, চিকিৎসা সহ কম- বেশী উন্নয়ন হয়েছে. বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট, সমুদ্র জয়, পদ্ধা সেতু দৃশ্যমান, প্রবৃদ্ধির হার, এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভের মত মাইফলক ঘটনা দেশ – বিদেশে বেশ প্রসংসিত হয়েছে. প্রভাবশালী মহিলা নেত্রী হিসাবে শেখ হাসিনা পেয়েছেন ভিবিন্ন উপাধি. প্রসংসায় ভূষিত হয়েছেন বিশ্ব নেতাদের. অবলম্বন করেছেন নির্বাচনী সব ধরনের কৌশল. সতর্ক করেছেন দলীয় নেতা কর্মীদের. উৎসাহ , প্রেরণা আর নির্বাচনী বার্তা পৌচিয়ে দিয়েছেন বাংলার প্রত্যেকটি সেক্টরে. সবচেয়ে লক্ষনীয় বিষয় হচ্ছে অতীতের কোন নির্বাচনে কোন চলচিত্র অভিনেতা/অভিনেত্রী কিংবা ক্রীড়াজ্ঞনের কোন তারকা এত সক্রিয় ভাবে কোন দলের জন্য কাজ করেননি. মাশরাফি, শাকিব, ফেরদৌস, রিয়াজ গং-রা যেভাবে নৌকার জন্য প্রচারণা করেছেন তা নি:সন্দেহে আওয়ামীলীগের জন্য ছিল একটা ভাল দিক. অন্যদিকে বাংলাদেশের ইতিহাসে অবসর প্রাপ্ত সরকারি কর্মচারি দলবদ্ধ ভাবে নির্বাচনের ঠিক পুর্ব মুহুর্তে কোন দলে যোগদান ও সমর্থন জানাননি. যেটি এবার প্রায় তিন শতাধিক সাবেক সামরিক ও আইন শৃংখলা বাহিনীর সদস্যরা করেছেন. সবকিছু মিলিয়ে নির্বাচনী আবহাওয়া আওয়ামীলীগের পক্ষেই ছিল. পক্ষান্তরে নেতৃত্ব শুন্য বিএনপি ছিল একটু এলোমেলো. বাংলার মানুষ দিধাধন্দে ছিল , তারা আদো নির্বাচনে যাচ্ছে কিনা, আর গেলে কে বা ধরবে দলের হাল. কে বা হচ্ছেন আগামী দিনের প্রধান মন্ত্রী. বিএনপির হাল যখন চলে গেল সাবেক আওয়ামীলীগের নেতার হাতে, তখন মানুষ আরো সন্দিহান. ঐক্যফ্রন্টের নেতা হয়েছেন ড: কামাল কিন্তু নির্বাচন করেননি. দলের নেতা হয়ে দলের , – দলের শরীক দল সম্পর্কে বিরুপ মন্তব্য করা , অন্য দলের আদর্শের প্রসংসা করা , সবকিছু মিলিয়ে যেন গজা- খিচুড়ি. মানুষ এখন আর মান্ধাত্বার যুগের মত চলাফেরা করে না . হাওয়ার প্রভাহ যেদিকে তারা ও সেদিকে. হয়তোবা এজন্য আজকে ঐক্য ফ্রন্টের এই বিশাল পরাজয়. যে পরাজয় মেনে নেবার নয়, মেনে নেওয়া যায় না. ব্যক্তিগত ভাবে আমিও মেনে নিতে পারছি না . ফাকাঁ মাঠে যেমন গোল দেওয়ার কোন বাহাদুরি নেই, ঠিক তেমনি বিরধী দল ছাড়া সরকারি দলের ও কোন বাহাদুরি নেই. প্লেয়ার শুন্য মাঠের আনন্দ ভোগ করতে হবে সরকারি দলকে. যে আনন্দ দেশ ও জাতির জন্য মোঠই শোভ নয়.