ঐক্যফ্রন্টে অনৈক্য: বিএনপির যুক্তি শোনার অপেক্ষায় ড. কামাল
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৩৩:০২,অপরাহ্ন ০৬ জানুয়ারি ২০১৯ | সংবাদটি ২৬৩ বার পঠিত
নিউজ ডেস্ক:: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিজয়ী দুই প্রার্থীর সংসদে অংশগ্রহণ করার বিষয়ে গণফোরামের ইতিবাচক সিদ্ধান্তে ভাঙনের সুর বেজে উঠেছে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টে। ফ্রন্টের শরিক পাঁচ দলের মধ্যে বিএনপিসহ বাকি চার দলের নেতারা মনে করছেন, সমন্বিতভাবে একাদশ জাতীয় সংসদের ফল প্রত্যাখ্যান এবং পুনর্নির্বাচনের দাবি তোলার পর সংসদে অংশ নেওয়ার সিদ্ধান্তে সন্দেহ সৃষ্টি হওয়া স্বাভাবিক।
তবে ফ্রন্টের আহ্বায়ক ড. কামাল হোসেন বলেন, শনিবার (৫ জানুয়ারি) গণফোরামের বর্ধিত সভায় তার বক্তব্য দলের প্রাথমিক সিদ্ধান্ত। বিএনপিসহ ফ্রন্টের শরিক দলগুলো যুক্তি দিয়ে আপত্তি জানালে তিনি সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন।
ঐক্যফ্রন্টের শরিক নেতারা গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেনকেও অবিশ্বাস করছেন। তাদের ভাষ্য, ফ্রন্টের ঐক্যবদ্ধ সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে গণফোরামের সুলতান মোহাম্মদ মনসুর ও মোকাব্বির খান শপথ নিলে স্বাভাবিকভাবেই ঐক্যফ্রন্টের ঐক্যে প্রভাব পড়বে এবং ভাঙন ধরবে। এ অবস্থায় জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের আগামী বৈঠক উত্তপ্ত হওয়ার ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছেন শরিক দলগুলোর নেতারা।
জানতে চাইলে গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, ‘জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের বাকি শরিকরা যদি যুক্তি দিয়ে বিষয়টি উত্থাপন করেন, তাহলে তিনি প্রাথমিক সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করবেন। আলোচনা সাপেক্ষে চূড়ান্ত হবে। সিদ্ধান্ত নেবো সবার সঙ্গে আলোচনা করার পর। বিএনপি যদি জানায়, যে কেন তারা যাবে না, যুক্তি দিয়ে, ভালো উদাহরণ দিয়ে বললে নিশ্চয়ই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন হতে পারে।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম উদ্যোক্তা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী সংসদে যাওয়ার পক্ষে ব্যক্তিগতভাবে একমত থাকলেও ঐক্যফ্রন্টের পরবর্তী বৈঠকের আগে কোনও মন্তব্য করতে রাজি নন। তিনি বলেন, ‘আরও এক থেকে দুই সপ্তাহ সময় লাগবে। পুরো বিষয়টা নিয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ করতে হবে।’
জাফরুল্লাহ চৌধুরী বলেন, ‘আমি তো মনে করি, সংসদে যাওয়া এবং সংসদের বাইরে— দুই অবস্থাতেই জাতীয় ঐক্যফ্রন্টকে আন্দোলন করা উচিত। সংসদে গিয়ে সরকারের নীতিগুলোর সমালোচনা করার সুযোগ কেন হারাতে হবে? নির্বাচন কেমন হয়েছে, তা আমরা ভালো করে জানি এবং দেশবাসীও জানে।
কিন্তু বাস্তবতা এটাই যে, এই নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। উপরে অংশগ্রহণমূলক হলেও আদতে কারচুপি হয়েছে।’
জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গণফোরামের দুজন সদস্য শপথ নিলে তা হবে আত্মঘাতী। বিশেষ করে বিতর্কিত নির্বাচনের পর ফল প্রত্যাখ্যান করে সংসদে গেলে রাজনীতিরই আর কী থাকে! সেক্ষেত্রে নতুন নির্বাচনের দাবি করার পাশাপাশি রাজপথে শক্ত প্রতিরোধ গড়ে না তুলে সংসদে অংশ নিলেও ফল প্রত্যাখ্যানের কোনও যৌক্তিকতা থাকে না।
শনিবার বিকেলে রাজধানীর একটি মিলনায়তনে গণফোরামের বর্ধিত সভা অনুষ্ঠিত হয়। সে সভায় দলের সদস্যরা সংসদে অংশ নেওয়ার বিরোধিতা করলেও বিজয়ী দুজন প্রার্থী পক্ষে মত দিয়েছেন। ড. কামাল হোসেন বলেছেন, ‘সুনির্দিষ্ট আলোচনা করে সংসদে যাওয়ার ব্যাপারে আমরা সিদ্ধান্ত নেবো। আমার ধারণা, আমরা ইতিবাচক সিদ্ধান্ত নেবো। তারা অনেক প্রতিযোগিতা করে নির্বাচিত হয়েছেন। গণফোরামের পক্ষ থেকে আমরা তাদের অভিনন্দন জানিয়েছি।’ তিনি এ-ও বলেন, ‘তাদের দুই প্রার্থী নিজেদের অর্জনকে ধরে রেখে অর্থপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারবে বলে গণফোরাম মনে করে।’
তার এই বক্তব্যের প্রেক্ষিতে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্তত পাঁচজন নেতা বিষয়টিকে নেতিবাচক হিসেবে দেখেছেন। তবে ফ্রন্টের স্টিয়ারিং কমিটির সদস্য ও বিএনপির স্থায়ী কমিটির অন্যতম সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘কোনও প্রভাব পড়বে কিনা, সেটা পরে দেখা যাবে। গণফোরাম কী সিদ্ধান্ত নিয়েছে, তা হয়তো আমরা দেখে বলবো। কিন্তু আমাদের সঙ্গে গণফোরামের আলোচনা হয়েছে, আমাদের মহাসচিবের সামনেই তো ড. কামাল হোসেন নির্বাচনের ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেছেন। মহাসচিব তো সামনেই ছিলেন। তারা তাদের দলীয় মিটিং করেছেন। তাদের সিদ্ধান্ত আমরা জেনে এরপর আমরা আমাদের অবস্থান জানাবো।’
প্রসঙ্গত, ৩০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জাতীয় ঐক্যফ্রন্টের অন্যতম শরিক বিএনপির ধানের শীষ প্রতীকে ছয়জন ও গণফোরামের উদীয়মান সূর্য প্রতীকে একজন নির্বাচিত হন। বাকি সদস্যরা শপথ নিলেও (জাপা চেয়ারম্যান এরশাদ ছাড়া) ঐক্যফ্রন্টের কোনও বিজয়ীই এখন পর্যন্ত শপথ নেননি।