৫০ আসনের ৪৭টিতে অনিয়ম: টিআইবি
প্রকাশিত হয়েছে : ১:৩৭:১৩,অপরাহ্ন ১৫ জানুয়ারি ২০১৯ | সংবাদটি ২২৪ বার পঠিত
নিউজ ডেস্ক:: একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ৫০টির মধ্যে ৪৭ আসনে অনিয়ম হয়েছে। ৩০০ আসনের মধ্য থেকে দৈবচয়নের (লটারি) ভিত্তিতে এই ৫০ আসন বেছে নেয়া হয়। ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) প্রকাশিত এক প্রাথমিক গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণায় অন্তর্ভুক্ত আসনগুলোতে আওয়ামী লীগ ৪০, জাতীয় পার্টি ছয়, বিএনপি এক, গণফোরাম দুই এবং অন্যান্য দল একটি আসনে জয়ী হয়েছে।প্রতিবেদনে বলা হয়, সারা দেশের বেশিরভাগ কেন্দ্র আওয়ামী লীগসহ মহাজোটের নেতাকর্মীদের দখলে থাকার অভিযোগ উত্থাপিত হয়েছে। নির্বাচন কমিশন অনেক ক্ষেত্রে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে সমর্থ হয়নি।
মঙ্গলবার (১৫ জানুয়ারি) রাজধানীর ধানমন্ডিতে টিআইবির কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য তুলে ধরা হয়। এতে সভাপতিত্ব করেন টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান ও প্রতিবেদন পাঠ করেন গবেষক দলের শাহজাদা এম আকরাম।
গত বছরের নভেম্বর থেকে শুরু করে ভোটের দিন ও ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত তথ্যের ভিত্তিতে এই প্রাথমিক প্রতিবেদন তৈরি করা হয়। আগামী ৩১ জানুয়ারি পর্যন্ত তথ্য সংগ্রহ করে চূড়ান্ত প্রতিবেদক প্রকাশ করবে প্রতিষ্ঠানটি।
অনিয়মগুলোর মধ্যে রয়েছে প্রশাসন ও আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর নীরব ভূমিকা ৪২ আসনে, জাল ভোট দেয়া ৪১ আসনে, নির্বাচনের আগের রাতে ব্যালটে সিল মেরে রাখা ৩৩ আসনে, বুথ দখল করে প্রকাশ্যে সিল মেরে জাল ভোট ৩০ আসনে, পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া ও কেন্দ্র থেকে বের করে দেয়া ২৯ আসনে, ভোটারদের কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া ২৬ আসনে।
ভোটারদের জোর করে নির্দিষ্ট মার্কায় ভোট দিতে বাধ্য করা ২৬ আসনে, ব্যালট পেপার শেষ হয়ে যাওয়া ২২ আসনে, আগ্রহী ভোটারদের হুমকি দিয়ে তাড়ানো ২১ আসনে, ব্যালট বাক্স আগে থেকে ভরে রাখা ২০ আসনে, প্রতিপক্ষ দলের প্রার্থীর নেতাকর্মীদের মারধর করা ১১ আসনে, পোলিং এজেন্টকে কেন্দ্রে যেতে বাধা দেয়া ২৯ আসনে এবং ১০ আসনে কোনও এজেন্ট ছিল না।
জাতীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগ ২৫৭, জাতীয় পার্টি ২২, বিএনপি ছয়, গণফোরাম দুই, স্বতন্ত্র তিন ও অন্যান্য দল নয়টি আসনে জয়ী হয়। ভোটের দিন সারা দেশে ২৪ জেলায় নির্বাচনী সহিংসতর ফলে ১৮ জনের মৃত্যু হয় এবং ২০০ জন আহত হন।
প্রতিবেদনের সুপারিশে বলা হয়, সৎ ও নিরপেক্ষ ব্যক্তিদের প্রধান নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ দেয়া; নির্বাচন কমিশন, প্রশাসন, আইন প্রয়োগকারী সংস্থাসহ অন্যান্য অংশীজনদের দলীয় প্রভাবমুক্ত ও নিরপেক্ষ রাখতে হবে; নির্বাচনে সহিংসতা ও বলপ্রয়োগসহ নির্বাচনী আচরণবিধির বহুমুখী লঙ্ঘনের যেসব অভিযোগ উঠেছে, সেগুলোর সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত ও তার ওপর ভিত্তিতে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।
সরকারের পক্ষ থেকে এসব অভিযোগ আমলে নিয়ে বিচারবিভাগীয় তদন্তের উদ্যোগ নেয়া, আচরণবিধি লঙ্ঘনের ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনকে তাদের ব্যর্থতা নিরূপণ করা, নির্বাচন প্রক্রিয়া ডিজিটালাইজ করা, নির্বাচন পর্যবেক্ষক ও গণমাধ্যমের তথ্য সংগ্রহের জন্য অবাধ পরিবেশ নিশ্চিত করতে হবে।
এ সময় টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘আচরণবিধি লঙ্ঘিত হয়েছে, সে পরিপ্রেক্ষিতে নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। গণতন্ত্রের জন্য এ ধরনের নির্বাচন ইতিবাচক নয়। এ জন্য আমরা বিচারবিভাগীয় তদন্ত দাবি করেছি।’
এ সময় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সাবেক উপদেষ্টা সুলতানা কামাল বলেন, ‘এই নির্বাচনে প্রচুর ত্রুটি রয়েছে। আগামী নির্বাচনগুলোতে যাতে ত্রুটি না হয়, সেজন্য যে সরকারই আসুক না কেন, তাদের প্রতি আহ্বান থাকবে।’