সমুদ্রের নিচে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের গুদাম!
প্রকাশিত হয়েছে : ৫:২৮:০৬,অপরাহ্ন ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | সংবাদটি ৩৫৩ বার পঠিত
নিউজ ডেস্ক:: বৈশ্বিক উষ্ণায়নের মোকাবিলায় কার্বন নির্গমন কমানোর নানা উদ্যোগ চলছে। সমুদ্রের তলদেশেও কার্বন-ডাই-অক্সাইড মজুত রাখার সম্ভাবনার কথা ভাবছেন বিজ্ঞানীরা। এবার তার নানা ঝুঁকি নিয়ে পরীক্ষানিরীক্ষা চলছে।
সমুদ্রের তলদেশের গভীরে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের মতো গ্রিনহাউস গ্যাস মজুত করা কতটা বিপজ্জনক হতে পারে? ইউরোপীয় গবেষকরা সেই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করছেন। ইতালির এয়োলিয়ান দ্বীপপুঞ্জের উপকূলের কাছে তারা ‘কার্বন ক্যাপচার অ্যান্ড স্টোরেজ’ বা সিসিএস-এর সম্ভাবনা খতিয়ে দেখছেন।
বৈশ্বিক উষ্ণায়নের জন্য দায়ী গ্রিনহাউস গ্যাসের পরিমাণ কমানোর ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখাই এই প্রয়াসের লক্ষ্য। সামুদ্রিক ভূতত্ত্ববিজ্ঞানী ক্লাউস ভালমান বলেন, ‘বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র ও অন্যান্য উৎস থেকে বায়ুমণ্ডলে কার্বন-ডাই-অক্সাইডের নির্গমন প্রতিরোধ করাই এর লক্ষ্য। কারণ এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তন তরান্বিত হয়। তাই সেটি আলাদা করে মাটির নিচে মজুত করতে হবে। মাটির নিচে অথবা সমুদ্রের তলদেশে তা রাখা যেতে পারে৷ ইউরোপের ক্ষেত্রে এমন অফশোর স্টোরেজ বেশি উপযুক্ত।
সমুদ্রের তলদেশে মজুত করা কার্বন-ডাই-অক্সাইড লিক করে সমুদ্রে প্রবেশ করলে ঠিক কী ঘটে, এয়োলিয়ান দ্বীপপুঞ্জের কাছে কর্মরত বিজ্ঞানীরা তা জানতে চাইছেন। অগ্নুৎপাতের ফলে সৃষ্ট এই দ্বীপমালার নিচে বিশাল পরিমাণ কার্বন-ডাই-অক্সাইড জমা রয়েছে৷ ফলে গবেষণার জন্য এই জায়গাটিকে আদর্শ বলা চলে। সমুদ্রবিজ্ঞানী সিনসিয়া দে ভিটর বলেন, এখানকার জীবজগৎ দীর্ঘকাল ধরে এই পরিবেশের সঙ্গে নিজেদের মানিয়ে নিয়েছে। এখানে কার্বন-ডাই-অক্সাইড প্রাকৃতিক কারণে বেরিয়ে পড়ে।ফলে অন্যান্য এলাকার তুলনায় এখানে পিএইচ-এর মাত্রা কম।
বুদবুদ শিকার এই গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ অংশ৷ গবেষকদের সমুদ্রের তলদেশ থেকে নির্গত বুদবুদের অবিরাম স্রোতের আচরণ পর্যবেক্ষণ করতে হবে। দক্ষ ডুবুরি হওয়ার পাশাপাশি তাদের এই কাজের জন্য বিশেষ সরঞ্জামও তৈরি করতে হয়েছে।
সমুদ্রবিজ্ঞানী লিসা ফিলস্টেটে বলেন,বুদবুদের আকার মাপতে আমরা এক বাবলবক্স তৈরি করেছি। আমরা পেছন থেকে আলো ফেলে বুদবুদ উজ্জ্বল করে তুলি। এর মাধ্যমে পরে কম্পিউটারে মাপজোক করতে সুবিধা হয়৷ আমাদের নিউমারিক মডেলগুলোর জন্য এই কাজ গুরুত্বপূর্ণ।
কার্বন-ডাই-অক্সাইড দৃশ্যমান করে তোলার আরেকটি উপায় হলো সামুদ্রিক পরিবেশে পিএইচ-এর মাত্রা পর্যবেক্ষণ করা। তার নির্গমন পর্যবেক্ষণ করতে পারলে গবেষকরা এমন এক মডেল তৈরি করতে পারবেন, যার সাহায্যে গ্যাসের নির্গমন ও তা ছড়িয়ে পড়ার হারের পূর্বাভাষ দেওয়া যাবে। মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার মারিউস ডেওয়ার বলেন, দ্রবীভূত সিওটু পিএইচ-এর মধ্যে পরিবর্তন আনে। বিভিন্ন ঋতুতে সেই পরিবর্তন ও সেটি শনাক্ত করার সেরা জায়গাগুলোর দিকে লক্ষ্য রাখছি।
উত্তর সাগরের তলদেশে তেল উত্তোলনের পর সেখানে বহু বছর ধরে কার্বন-ডাই-অক্সাইড মজুত করা হয়েছে। নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে লিকের ঝুঁকি ও তার সম্ভাব্য প্রভাব আগেভাগেই নির্ণয় করা সম্ভব। জীববিজ্ঞানী পেটার লিংকে বলেন, আমরা যন্ত্র থেকে সীমিত মাত্রার সিওটু লিক হতে দিয়েছি। তারপর আমাদের সেন্সরের মাধ্যমে পানির মধ্যে তার প্রভাব খতিয়ে দেখেছি। পূর্বাভাসের লক্ষ্যে আমাদের মডেলের মধ্যে এই তথ্য বিবেচনা করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
জার্মানির কিল শহরে এক গবেষণাগারে উত্তর সাগরের পরিবেশ কৃত্রিমভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে৷ ছোট ও বড় মাত্রার লিকের পূর্বাভাস করতে এক ডিজিটাল মডেল সৃষ্টি করাই এই উদ্যোগের লক্ষ্য। ভূ-রসায়নবিজ্ঞানী মাটিয়াস হেকেল বলেন, সিওটু উঠে আসার সময় যে প্রতিক্রিয়া ঘটে, আমরা তা পরীক্ষা করছি৷ পরের ধাপে বুদবুদের মাপ, তলদেশ ভেদ করে গ্যাসের প্রবাহ পরীক্ষা করবো।
তারপর গোটা প্রক্রিয়ার বৃহত্তর সার্বিক রূপও জানতে হবে৷ কয়েক হাজার-লাখ লিটারের মাত্রায় সেই উপলব্ধির প্রয়োজন রয়েছে৷ এই সব পরীক্ষা থেকে তথ্য সংগ্রহ করে গণিতের ফর্মুলা সৃষ্টি করতে হয়৷এই গবেষণা শেষ হতে আরও সময় লাগবে। তবে বিজ্ঞানীদের বিশ্বাস, তার ফলাফল মানুষের কাজে লাগবে।
সূত্র: ডয়চে ভেলে