ঢাকা ০৪:৪৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ মে ২০২৫, ১ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
প্রবাসে স্বৈরাচারের দোসরদের আস্ফালন, ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতারের দাবি নাসিম আহমদ চৌধুরীর বিজয়নগরে স্কুল শিক্ষিকাকে বেধড়ক পিটিয়ে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার লুটপাট “লন্ডনে ‘প্রবাসীদের ক্ষমতায়ন: অধিকার, স্বীকৃতি ও জাতি গঠন – একটি এনআরবি প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক সেমিনার ও ইফতার মাহফিল অনুষ্টিত বিশ্বনাথে শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ, যুবক গ্রেপ্তার সুনামগঞ্জে চলন্ত সিএনজিতে কিশোরীকে ধর্ষণচেষ্টা, আটক ২ ‘মানুষের উন্নয়নে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বারবার রক্ষা করেছেন খালেদা জিয়া’ জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠকঃ দ্রুত নির্বাচনের দাবি বিএনপির “যুক্তরাজ্য যুবদলের সভাপতি আফজাল হোসেনকে ইলিয়াস পত্নী তাহসিনা রুশদির লুনার অভিনন্দন” বায়ান্নের ভাষা শহীদদের প্রতি নর্থইষ্ট বিএনপির শ্রদ্ধা নিবেদন প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে জয় লাভ করেন সোয়াবই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বালিকারা

আইনজীবীরা কি বিচারের উর্ধ্বে?

মানব পাচার আইনে গ্রেফতার হওয়া চট্টগ্রামে বারের এক আইনজীবী তার স্ত্রীর জামিন না মঞ্জুর অতঃপর ভিন্ন বিচারকের দরবারে মঞ্জুর। জামিন পাওয়া না পাওয়ার চেয়ে বড় হয়ে মিডিয়া উঠে এসেছে বিচারকের এজলাস ভাংচুরের বিষয়টি।

সন্দেহভাজন আসামী হিসেবে একজন আসামী যেমন জা্মিন লাভের অধিকার আছে তেমনি মামলার প্রাসঙ্গিক পরিস্থিতি বিবেচনায় জামিন দেয়া না দেয়ার কর্তৃত্বও আইন আদালতকে দিয়েছে। আদালত নিশ্চয়ই মামলার গুনাগুন বিবেচনা করেই আসামীর জামিন না মঞ্জুর করেছেন। জামিন না মঞ্জুর হওয়ার পর যা ঘটলো তা অবিশ্বাস্য বিস্ময়কর। বিচারকের এজলাস ভাংচুর ,চেয়ার লক্ষ করে পাথর নিক্ষেপ, সাংবাদিকদের প্রহার ও পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তি করে বিজ্ঞ আইনজীবীরা কি বুঝাতে চেয়েছেন তা আমার মতো নবীন আইনের ছাত্রকে বিব্রত করেছে। আইনজীবীরা মানুষের অধিকার নিশ্চিত করবেন আইনের যথাযথ ব্যাখ্যা বিশ্লেষন আদালতের সামনে তুলে ধরে। ভাংচুর বিক্ষোভ মিছিল করে জামিন মঞ্জুর এই বিষয়টি একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

রাজনৈতিক নেতাদের বিচার নিয়ে আদালত প্রাঙ্গনে দলীয় সমর্থক আইনজীবীদের মিছিল আমাদের দেশে নতুন কিছু নয়। তবে সেই সব মিছিল দলীয় সমর্থকদের রাজনৈতিক মিছিল বৈ কিছু নয়। আসামী শুধুমাত্র আইনজীবী হওয়ার কারনে আইনজীবীরা যা দেখালেন এটা অতিরঞ্জিত, বাড়াবাড়ি। অথচ একজন সাধারন মানুষের অধিকার নিয়ে তাদের সচেতনতা ও আন্তরিক্তা প্রশ্নাতীত নয় (ব্যতিক্রম নিশ্চয়ই আছে)।

আমার কাছে এই ঘটনাটি সামগ্রিকভাবে আমাদের আইন ও বিচার ব্যবস্থারই চলমান দূর্দশার প্রতিফলন মনে হয়। একদিকে এজাহারে নাম থাকা স্বত্বেও পুলিশ শুধুমাত্র সন্দেহভাজন হিসেবে আসামীকে স্বস্ত্রীক কোর্টে চালান করে দেয়া এবং ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা, যা হয়তো আসামীর জন্য মানহানিকর। কথায় কথায় রিমান্ড চাওয়াতো এখন আমাদের দেশে রেওয়াজ হয়ে গেছে।

অন্যদিকে আদালতের বিষয়টি আরো ঘোলাটে। বিজ্ঞ আদালত সার্বিক দিক বিবেচনা করে যখন জামিন মঞ্জুরই করলেন না তখন বিক্ষোভ ভাংচুরের পর পুনরায় জামিন দিয়ে দেয়া অনেকটা অসহায়ত্ব বৈ কি! । ঘটনা পরম্পরা একজন সচেতন মানুষকে এর চেয়ে বেশি কি ই বা ভাবতে দিবে?

বিভিন্ন গন মাধ্যম সূত্রে দেখা যায় মামলার শুনানিতে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিসহ প্রায় শতাধিক আইনজীবী অংশ নিয়েছেন। শুনানী শেষে যেমনটি বলছিলেন আইনজীবী সমিতির সভাপতি কফিল উদ্দিন সাহেব- “ এজাহারে নাম না থাকায় আদালত জামিন মঞ্জর করতে পারতো” । উনার মতো বিজ্ঞ আইনজীবীর এটাও নিশ্চয়ই জানা আছে জামিন না মঞ্জুর করার ক্ষমতাও আদালতের আছে।

বিচারকের এজলাস ভাংচুর, পাথর নিক্ষেপ, সাংবাদিকের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়া পুলিশের সাথে হাতাহাতি এসবই শুধুমাত্র আসামী আইনজীবী হওয়ার কারনে! বিভিন্ন উছিলাধরে বিচার না মানার যে সংস্কৃতি আমাদের দেশে চালু হয়েছে এর সমাধান এক্ষুনি হওয়া উচিত।

এর আগে জোট সরকারের আমলে প্রধান বিচারপতির কার্যালয় ভাংচুর হতে দেখেছি, বছর দুয়েক আগে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে সাংসদের নের্তৃত্বে জ্বালাও পোড়াও ইট পাটকেল ছুড়াছুড়ি নারী আইনজীবীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করতে দেখেছি।

দেশের সাধারন বিচারপ্রার্থী মানুষ বিচার ব্যবস্থার উপর থেকে আস্থা হারাতে চায় না, মানুষ আদালতকে বিশ্বাস করতেই ভালোবাসে কারন এটা আস্থার জায়গা। এরজন্য একজন বিচারকের যেমন আবেগমুক্ত দলীয় প্রভাবমুক্ত হওয়া জরুরী তেমনি রাষ্ট্রের প্রথম শ্রেনীর নাগরিক হিসেবে আইনজীবীদেরকেও আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা উচিত।

আতিকুর রহমান

এলএলএম (আন্তর্জাতিক আইন)

আতাতুর্ক ইউনিভার্সিটি

এরজুরুম, তুরস্ক

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

প্রবাসে স্বৈরাচারের দোসরদের আস্ফালন, ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতারের দাবি নাসিম আহমদ চৌধুরীর

আইনজীবীরা কি বিচারের উর্ধ্বে?

আপডেট সময় : ০৯:১০:৪৬ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৯ জানুয়ারী ২০১৭

মানব পাচার আইনে গ্রেফতার হওয়া চট্টগ্রামে বারের এক আইনজীবী তার স্ত্রীর জামিন না মঞ্জুর অতঃপর ভিন্ন বিচারকের দরবারে মঞ্জুর। জামিন পাওয়া না পাওয়ার চেয়ে বড় হয়ে মিডিয়া উঠে এসেছে বিচারকের এজলাস ভাংচুরের বিষয়টি।

সন্দেহভাজন আসামী হিসেবে একজন আসামী যেমন জা্মিন লাভের অধিকার আছে তেমনি মামলার প্রাসঙ্গিক পরিস্থিতি বিবেচনায় জামিন দেয়া না দেয়ার কর্তৃত্বও আইন আদালতকে দিয়েছে। আদালত নিশ্চয়ই মামলার গুনাগুন বিবেচনা করেই আসামীর জামিন না মঞ্জুর করেছেন। জামিন না মঞ্জুর হওয়ার পর যা ঘটলো তা অবিশ্বাস্য বিস্ময়কর। বিচারকের এজলাস ভাংচুর ,চেয়ার লক্ষ করে পাথর নিক্ষেপ, সাংবাদিকদের প্রহার ও পুলিশের সাথে ধস্তাধস্তি করে বিজ্ঞ আইনজীবীরা কি বুঝাতে চেয়েছেন তা আমার মতো নবীন আইনের ছাত্রকে বিব্রত করেছে। আইনজীবীরা মানুষের অধিকার নিশ্চিত করবেন আইনের যথাযথ ব্যাখ্যা বিশ্লেষন আদালতের সামনে তুলে ধরে। ভাংচুর বিক্ষোভ মিছিল করে জামিন মঞ্জুর এই বিষয়টি একটা দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে।

রাজনৈতিক নেতাদের বিচার নিয়ে আদালত প্রাঙ্গনে দলীয় সমর্থক আইনজীবীদের মিছিল আমাদের দেশে নতুন কিছু নয়। তবে সেই সব মিছিল দলীয় সমর্থকদের রাজনৈতিক মিছিল বৈ কিছু নয়। আসামী শুধুমাত্র আইনজীবী হওয়ার কারনে আইনজীবীরা যা দেখালেন এটা অতিরঞ্জিত, বাড়াবাড়ি। অথচ একজন সাধারন মানুষের অধিকার নিয়ে তাদের সচেতনতা ও আন্তরিক্তা প্রশ্নাতীত নয় (ব্যতিক্রম নিশ্চয়ই আছে)।

আমার কাছে এই ঘটনাটি সামগ্রিকভাবে আমাদের আইন ও বিচার ব্যবস্থারই চলমান দূর্দশার প্রতিফলন মনে হয়। একদিকে এজাহারে নাম থাকা স্বত্বেও পুলিশ শুধুমাত্র সন্দেহভাজন হিসেবে আসামীকে স্বস্ত্রীক কোর্টে চালান করে দেয়া এবং ৭ দিনের রিমান্ড আবেদন করা, যা হয়তো আসামীর জন্য মানহানিকর। কথায় কথায় রিমান্ড চাওয়াতো এখন আমাদের দেশে রেওয়াজ হয়ে গেছে।

অন্যদিকে আদালতের বিষয়টি আরো ঘোলাটে। বিজ্ঞ আদালত সার্বিক দিক বিবেচনা করে যখন জামিন মঞ্জুরই করলেন না তখন বিক্ষোভ ভাংচুরের পর পুনরায় জামিন দিয়ে দেয়া অনেকটা অসহায়ত্ব বৈ কি! । ঘটনা পরম্পরা একজন সচেতন মানুষকে এর চেয়ে বেশি কি ই বা ভাবতে দিবে?

বিভিন্ন গন মাধ্যম সূত্রে দেখা যায় মামলার শুনানিতে জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতিসহ প্রায় শতাধিক আইনজীবী অংশ নিয়েছেন। শুনানী শেষে যেমনটি বলছিলেন আইনজীবী সমিতির সভাপতি কফিল উদ্দিন সাহেব- “ এজাহারে নাম না থাকায় আদালত জামিন মঞ্জর করতে পারতো” । উনার মতো বিজ্ঞ আইনজীবীর এটাও নিশ্চয়ই জানা আছে জামিন না মঞ্জুর করার ক্ষমতাও আদালতের আছে।

বিচারকের এজলাস ভাংচুর, পাথর নিক্ষেপ, সাংবাদিকের ক্যামেরা ছিনিয়ে নেয়া পুলিশের সাথে হাতাহাতি এসবই শুধুমাত্র আসামী আইনজীবী হওয়ার কারনে! বিভিন্ন উছিলাধরে বিচার না মানার যে সংস্কৃতি আমাদের দেশে চালু হয়েছে এর সমাধান এক্ষুনি হওয়া উচিত।

এর আগে জোট সরকারের আমলে প্রধান বিচারপতির কার্যালয় ভাংচুর হতে দেখেছি, বছর দুয়েক আগে সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গনে সাংসদের নের্তৃত্বে জ্বালাও পোড়াও ইট পাটকেল ছুড়াছুড়ি নারী আইনজীবীকে বিবস্ত্র করে নির্যাতন করতে দেখেছি।

দেশের সাধারন বিচারপ্রার্থী মানুষ বিচার ব্যবস্থার উপর থেকে আস্থা হারাতে চায় না, মানুষ আদালতকে বিশ্বাস করতেই ভালোবাসে কারন এটা আস্থার জায়গা। এরজন্য একজন বিচারকের যেমন আবেগমুক্ত দলীয় প্রভাবমুক্ত হওয়া জরুরী তেমনি রাষ্ট্রের প্রথম শ্রেনীর নাগরিক হিসেবে আইনজীবীদেরকেও আরো দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখা উচিত।

আতিকুর রহমান

এলএলএম (আন্তর্জাতিক আইন)

আতাতুর্ক ইউনিভার্সিটি

এরজুরুম, তুরস্ক