নিজস্ব প্রতিনিধি
নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে যে ৬ সদস্যর সার্চ কমিটি ঘোষিত হয়েছে সেই কমিটিকে দলীয় কমিটি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
শুক্রবার বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল বলেন, ঘোষিত সার্চ কমিটি কোনো নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন উপহার দিতে পারবে না।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, বিএনপি চেয়ারপারসনের অন্যতম দাবি ছিল সরকারের লাভজনক পদে থাকা কোনো ব্যক্তি সার্চ কমিটির প্রধান বা সদস্য হতে পারবেন না। কিন্তু যাকে প্রধান করা হয়েছে তিনি একজন বিচারপতি এবং অন্য সদস্যরাও লাভজনক পদে আসীন।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সার্চ কমিটি গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর দাবির কোনো প্রতিফলন নেই। যাদের দিয়ে সার্চ কমিটি গঠন হয়েছে, তাদের মাধ্যমে নির্দলীয়, নিরপেক্ষ, সৎ ও সাহসী ব্যক্তিগণ আগামী প্রধান নির্বাচন কমিশনার কিংবা সদস্য হবেন এমনটা আশা করা বাতুলতা। ক্ষমতাসীনদের অনুগত ব্যক্তিকে সার্চ কমিটির প্রধান করায় তার মাধ্যমে পূর্বের ‘রকিবউদ্দিন’ কমিশনের মতোই সরকার অনুগত ও মেরুদণ্ডহীন কমিশন আসবে বলে অভিযোগ করেন তিনি।
মির্জা ফখরুল বলেন, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন মাননীয় বিচারপতিকে প্রধান করে ছয় সদস্যের অনুসন্ধান কমিটি গঠন করা হয়েছে। আগের বার গঠিত অনুসন্ধান কমিটিরও প্রধান ছিলেন তিনি। সেই কমিটির প্রস্তাবের ভিত্তিতে কাজী রকিবউদ্দীন আহমদের নেতৃত্বাধীন বর্তমান ইসি গঠিত হয়। বর্তমান ইসি অযোগ্য, মেরুদণ্ডহীন, বিতর্কিত। আগের অনুসন্ধান কমিটির প্রধানকে নতুন অনুসন্ধান কমিটির প্রধান করার অর্থ সরকার আরেকটি অনুগত ও অযোগ্য ইসি করতে চায়।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, অনুসন্ধান কমিটির আরেক সদস্য সুপ্রিম কোর্টের হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতি। তিনি ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা ছিলেন। আওয়ামী লীগ-সমর্থিত আইনজীবী হিসেবে বহুল পরিচিত ছিলেন। তার পিতা আওয়ামী লীগের অন্যতম নেতা ছিলেন। তার ছোট ভাই প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব হিসেবে কর্মরত আছেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, অনুসন্ধান কমিটির আরেক সদস্য সরকারি কর্মকমিশনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ সাদিক। গত জাতীয় সংসদ নির্বাচনের সময় তিনি নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিব ছিলেন। বিতর্কিত সেই নির্বাচনকে নিয়মসিদ্ধ করার পুরস্কার হিসেবে অবসরের পর তাকে চেয়ারম্যান করা হয়েছে। তিনি সরকারের ইচ্ছা পূরণে সচেষ্ট থাকবেন, এটাই স্বাভাবিক।
অনুসন্ধান কমিটির একমাত্র নারী সদস্য চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য শিরীণ আখতার। তার সম্পর্কে বিএনপির মহাসচিব বলেন, শিরীণ আখতার চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের আওয়ামীপন্থী শিক্ষক নেতা হিসেবে পরিচিত। তার বাবা কক্সবাজার জেলা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ছিলেন। শিরীণ আখতার নিজেও কক্সবাজার মহিলা আওয়ামী লীগের নেত্রী ছিলেন।
অনুসন্ধান কমিটির আরেক সদস্য বাংলাদেশের মহাহিসাব নিরীক্ষক ও নিয়ন্ত্রক মাসুদ আহমেদ সম্পর্কে মির্জা ফখরুল বলেন, রাজনৈতিক সরকারে অধীন একজন সরকারি কর্মকর্তা মাসুদ আহমেদ। তিনি সরকারের ইচ্ছার বিরুদ্ধে কিছু করার ক্ষমতা রাখেন না। অর্থাৎ, সরকারের ইচ্ছা পূরণে তিনিও কোনো বাধা নয়।
সংবাদ সম্মেলনে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন, নিতাই রায় চৌধুরী, সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবীর রিজভী, সহ-সাংঠনিক সম্পাদক আবদুস সালাম আজাদ, সহ-প্রচার সম্পাদক আসাদুল করিম শাহিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।