যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর জিজ্ঞাসাবাদের পদ্ধতি পর্যালোচনায় মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের খসড়া আদেশ দেওয়ার পর কুখ্যাত গুয়ানতানামো বে-তে পুনরায় বন্দি পাঠানোর বিষয়টি সামনে চলে এসেছে। বিশ্বব্যাপী সমালোচনার মুখে কিউবায় যুক্তরাষ্ট্রের নৌ ঘাঁটিতে অবস্থিত এ কারাগার নির্বাহী আদেশে বন্ধ করেছিলেন সদ্য বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা।
বন্দিদের ওপর নির্যাতনের দিক দিয়ে বিশ্বের সবচেয়ে ভয়ঙ্কর কারাগারগুলোর মধ্যে অন্যতম গুয়ানতানামো বে। মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ ও দেশটির সেনাবাহিনী এখানে বন্দিদের ওপর জিজ্ঞাসাবাদের নামে অমানুষিক নির্যাতন চালাতো। এ কারাগারে শুধু সন্ত্রাসবাদে অভিযুক্তদের বন্দি করে রাখা হতো। তবে কোনও মার্কিন নাগরিককে সেখানে পাঠানো হয়নি কখনও। ২০০২ সালে গুয়ানতানামো বে বন্দি নির্যাতনের ভয়াবহ তথ্য বিশ্ববাসীর সামনে আসে। নিন্দা ও সমালোচনার মুখে পড়ে মার্কিন প্রশাসন। নির্যাতনের বেশ কিছু ভিডিওচিত্র প্রকাশিত হয়। যাতে দেখা যায়, মার্কিন সেনারা বন্দিদের কমলা রংয়ের পোশাক পরিয়ে চোখ-মুখ বেঁধে অমানবিক নির্যাতন করছে। এছাড়া কারাগারটিতে কোনও সংবাদকর্মীর প্রবেশেও ছিল নিষেধাজ্ঞা।
প্রকাশিত ও প্রাপ্ত তথ্য অনুসারে, গুয়ানতানামো বে কারাগারে যাদের বন্দি করে রাখা হত তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্রের শত্রু হিসেবে মনে করা হতো। বিশ্বব্যাপী মার্কিন নিয়ন্ত্রণে পরিচালিত যুদ্ধে নিয়োজিত ব্রিটিশ ও মার্কিন সেনাদের হত্যাকারীদের শাস্তি দিতে বন্দিদের এখানে আনা হয়। বিশেষ করে ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে টুইন টাওয়ারে হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আটক সব সন্ত্রাসীকে রাখা হয়েছে এখানে।জেনেভা কনভেনশন অনুযায়ী, প্রত্যেক বন্দি, তাকে আটকে রাখার বৈধতা চ্যালেঞ্জ করতে পারেন। এ ব্যাপারে আদালতের কাছে তিনি বিচার চাইতে পারেন। কিন্তু গুয়ানতানামো কারাগারের বন্দিরা এ অধিকার থেকেও বঞ্চিত হতেন।
২০০৮ সালে বারাক ওবামা যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের দ্বিতীয় দিনেই কুখ্যাত গুয়ানতানামো বে কারাগার বন্ধের জন্য নির্বাহী আদেশ দেন। তিনি বলেছিলেন, কারাগারটির স্থাপন, পরিচালনা সবই অসাংবিধানিক।এরপর ধারাবাহিকভাবে কয়েক দফায় গুয়ানতানামো বে কারাগারের বন্দিদের মুক্তি দেওয়া শুরু হয়। চলতি বছর দায়িত্ব ছাড়ার আগ মুহূর্তেও বেশ কয়েকজন বন্দিকে এ কারাগার থেকে অন্যত্র স্থানান্তর করা হয়।
তবে গত বছরের শেষের দিকে নতুন করে সাজানো হয়েছে কারাগারটি। এরই ধারাবাহিকতায় সেখানে ৮ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করে একটি মেডিকেল ক্লিনিক তৈরি করছে মার্কিন সেনাবাহিনী। এ ছাড়া ১২ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার খরচ করে তৈরি করা হচ্ছে সেনাদের জন্য ডাইনিং সুবিধা। এ থেকে বোঝা যাচ্ছে যে, এত সহজে বন্ধ করা হচ্ছে না কারাগারটি। আর পুরো সিদ্ধান্তটি নির্ভর করছে মার্কিন নির্বাচনে জয়ী ডোনাল্ড ট্রাম্পের ওপর।
নির্বাচনি প্রচারণার শুরু থেকেই বর্তমান প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন গোয়েন্দা সংস্থাগুলোর কুখ্যাত সব জিজ্ঞাসাবাদের পদ্ধতি ফিরিয়ে আনার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন। তিনি আভাস দিয়েছিলেন, ওয়াটারবোর্ডিং নামক নির্যাতন পদ্ধতি ও সিআইএ ব্ল্যাক লিস্টেড সাইটগুলোও পুনরায় চালু করা হতে পারে।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর প্রথম টেলিভিশন সাক্ষাৎকারেও একই প্রতিশ্রুতির কথা জানিয়েছেন ট্রাম্প। কুখ্যাত ওয়াটারবোর্ডিং নির্যাতনের পদ্ধতির পক্ষে সাফাই গেয়ে ট্রাম্প বলেন, ওয়াটার বোর্ডিং ব্যবস্থা একটি যথাযথ পথ।
এর আগে ট্রাম্প স্বাক্ষরিত তিন পৃষ্ঠার এক গোপন নথি হাতে পেয়ে নিউ ইয়র্ক টাইমস জানিয়েছে, বুশ যুগে চালু থাকা সিআইএর ভয়াবহ গোপন কারাগার ব্যবস্থা এবং জিজ্ঞাসাবাদের প্রক্রিয়া ফিরিয়ে আনতে পারেন যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত রিপাবলিকান এই প্রেসিডেন্ট।
নিউ ইয়র্ক টাইমস প্রাপ্ত নথির বরাতে আরও জানায়, নির্বাহী আদেশে স্থগিতকৃত ব্লাক সাইট কারাগার ব্যবস্থা আবারও ফিরিয়ে আনার প্রস্তুতি নিচ্ছেন নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। ইতিহাসের সবথেকে বিতর্কিত এই মার্কিন প্রেসিডেন্ট আগেই এ ধরনের কারাগার ফিরিয়ে আনার ইশারা দিয়েছেন। ডিসেম্বরের মাঝামাঝি কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আলজাজিরার এক খবরে বলা হয়, বন্দি নির্যাতন ও মৃত্যুর ঘটনায় ক্রমেই কুখ্যাত হয়ে ওঠা এক ব্ল্যাক সাইট প্রিজন গুয়ানতানামো বে সম্ভবত সহসা বন্ধ হচ্ছে না। ট্রাম্প এটি চালু রাখার আভাস দিয়েছেন।সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট।