ঢাকা ০১:২৬ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জুন ২০২৫, ৬ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
প্রবাসে স্বৈরাচারের দোসরদের আস্ফালন, ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতারের দাবি নাসিম আহমদ চৌধুরীর বিজয়নগরে স্কুল শিক্ষিকাকে বেধড়ক পিটিয়ে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার লুটপাট “লন্ডনে ‘প্রবাসীদের ক্ষমতায়ন: অধিকার, স্বীকৃতি ও জাতি গঠন – একটি এনআরবি প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক সেমিনার ও ইফতার মাহফিল অনুষ্টিত বিশ্বনাথে শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ, যুবক গ্রেপ্তার সুনামগঞ্জে চলন্ত সিএনজিতে কিশোরীকে ধর্ষণচেষ্টা, আটক ২ ‘মানুষের উন্নয়নে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বারবার রক্ষা করেছেন খালেদা জিয়া’ জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠকঃ দ্রুত নির্বাচনের দাবি বিএনপির “যুক্তরাজ্য যুবদলের সভাপতি আফজাল হোসেনকে ইলিয়াস পত্নী তাহসিনা রুশদির লুনার অভিনন্দন” বায়ান্নের ভাষা শহীদদের প্রতি নর্থইষ্ট বিএনপির শ্রদ্ধা নিবেদন প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে জয় লাভ করেন সোয়াবই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বালিকারা

খোঁজ মিলছে ভাষাশহীদ সালামের কবরের!


ডেস্ক নিউজ: ৬৫ বছরের অপেক্ষার পালা শেষে ভাই পেতে যাচ্ছেন ভাষা শহীদ সালামের কবর! সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর- পাঁচ ভাষাশহীদের নাম উচ্চারণে প্রথমেই আসে ভাষাশহীদ সালামের নাম। চার ভাই দুই বোনের মধ্যে সালাম ছিলেন সবার বড়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে শহীদ হন তিনি। রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। কিন্তু ভাষা আন্দোলনের ৬৫ বছর পার হয়ে গেলেও এখনও চিহ্নিত করা হয়নি বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলনের সূর্যসৈনিক ভাষাশহীদ সালামের কবরটি।

সংবাদ সংগ্রহে এই প্রতিবেদক রাজধানীর ধানমন্ডিতে, ভাষাসংগ্রামী কাজী গোলাম মাহবুব ট্রাস্ট পরিচালিত ভাষা আন্দোলন গবেষণা কেন্দ্র ও জাদুঘর-এ গেলে এর নির্বাহী পরিচালক এম আর মাহবুবের সাথে কথা হয়। তিনি জানান, বেশ কয়েকবার তিনি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেছেন ভাষাশহীদ সালামের কবর চিহ্নিত করার ব্যাপারে। স্মারকলিপিও দিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। কিন্তু কোন ফল হয়নি। এম আর মাহবুবের কাছ থেকেই জানা গেলো ভাষাশহীদ সালামের ভাই আবদুল করিমের জীবিত থাকার খবর।

ভাষা আন্দোলনের উপর প্রতিবেদন তৈরির কাজে হাত দিয়ে এই প্রতিবেদকের কথা হয় ভাষাশহীদ সালামের ভাই আব্দুল করিমের সাথে। এই প্রতিবেদককে মোবাইলফোনে আব্দুল করিম বলেন, আমার একটাই দাবি, ‘আমার ভাইয়ের কবর চিহ্নিত করে দেয়ার ব্যবস্থা করুক সরকার। মরবার আগে এটা আমি দেখে যেতে চাই’। আবদুল করিম আরো বলেন, ‘প্রত্যেক বছর ফেব্রুয়ারি আসলে সাংবাদিকরা আমার সাথে দেখা কইরা আমার কথা নেয়। কিন্তু কথা নিয়া কি লাভ, কেউ তো আগাইয়া আসে না আমার ভাইয়ের কবরটা শনাক্ত করার ব্যবস্থা করতে। আমি প্রত্যেক বছর একই কথা কই।’

ভাষাশহীদ সালামের কবরের স্থানটি দেখানো হচ্ছে আজিমপুর কবরস্থান ইনচার্জকে
বড় ভাই সালামের কবর চিহ্নিত করার জন্য বেশ কয়েকবার সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন বলেও জানান আব্দুল করিম। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারিতে ভাষাশহীদ সালামের কবর জিয়ারতে আজিমপুর কবরস্থানে আসেন আব্দুল করিম। তিনি বলেন, বহুবার সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করছি। আজিমপুর কবরস্থানে গিয়াও কতজনরে কইছি। আজিমপুর কবরস্থানের মালিকরা আমারে কইছে তিনলাখ টাকা দিলে তারা আমার ভাইয়ের কবর চিহ্নিত কইরা দিবো। তারপর থেকে আর রাগে-ক্ষোভে টাকা দেওয়ার ভয়ে কারোরে কিছু কই না। আমার তো তিনলাখ টাকা জোগাড়ের সামর্থ্য নাই।’

কবরস্থানের মালিক কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই যে তারা কবরস্থানে বইসা থাকে, ওইখানেই কথা হইছে। গ্রামের সাধারণ সহজ-সরল আব্দুল করিমের সাথে কে বা কারা এই নির্মম প্রহসন করেছে তা অজানাই রয়ে যায়।


আজিমপুর কবরস্থান বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীনে। এ বিষয়ে এই প্রতিবেদক মেয়র সাঈদ খোকনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আব্দুল করিম আজিমপুরের যেখানে ভাষাশহীদ সালামের কবর চিহ্নিত করে দিবে সেখানে আমরা অন্য ভাষাশহীদের কবরের মতো করে সালামের কবর পাকাকরণের ব্যবস্থা করবো।’

আপনি ব্যবস্থা করেন কোন জায়গায় সালামকে কবর দেয়া হয়েছে সেটা বের করার, এটা অনেক ভালো ও মহৎ উদ্যোগ। আমি কথা দিচ্ছি এটা অবশ্যই হবে, বলেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন।

একইভাবে এই প্রতিবেদক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ বিষয়ে পূর্ণ সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, বলা হয় দায়িত্ব কার? সরকারের দায়িত্ব অবশ্যই আছে। আমরা যখন যা জানতে পারছি তখনই সেটা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার ভাষার মাস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তমদ্দুন মজলিস আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় আসেন আব্দুল করিম। অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যেও একই দাবি তোলেন আব্দুল করিম। এই প্রতিবেদকের সাথে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কথা হয় আব্দুল করিমের। তাকে জানানো হয় যে মেয়র সাঈদ খোকন ও মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের দেয়া আশ্বাসের কথা। এরপর এই প্রতিবেদকের অনুরোধে আব্দুল করিম পরিবর্তন ডটকমের সাথে যান আজিমপুর কবরস্থানে। এ সময় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা ভাষাশহীদ বরকতের ভাতিজা আইনুদ্দিন বরকত টুটু ও ভাষা আন্দোলন গবেষণা কেন্দ্র ও যাদুঘরের নির্বাহী পরিচালক এম আর মাহবুবও সাথে ছিলেন।

ভাষাশহীদ আবদুস সালাম
আজিমপুর কবরস্থানে ভাষাশহীদ শফিউর রহমানের কবরের পূর্বদিকে দুইটি পুরানো কবরের পরের কবরটিকে ভাষাশহীদ সালামের কবর বলে দাবি করেন সালামের ভাই আব্দুল করিম। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন কবরস্থানের ইনচার্জ মাওলানা হাফিজুল ইসলাম।

সংশ্লিষ্ট কবরস্থান কর্মকর্তা ও নগরভবন সূত্র জানায়, এখন কেবল বাকী আছে- আব্দুল করিমের দাবির সাথে ১৯৫২ সালের আজিমপুর কবরস্থানের রেজিস্টার খাতা মিলিয়ে দেখার কাজ। তাহলেই আনুষ্ঠানিকভাবে ভাষা শহীদ সালামের কবর শনাক্ত হয়ে যাবে।

১৯২৫ সালে ফেনীর দাগনভুইঞাঁ উপজেলার লক্ষ্মণপুর (বর্তমান সালামনগর) গ্রামে শহীদ আবদুস সালামের জন্ম। বাবার নাম মোহাম্মদ ফাজিল মিয়া। শহীদ আবদুস সালাম দাগনভুইঞা কামাল আতাতুর্ক হাই স্কুলে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। তিনি তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের ডিরেক্টরেট অব ইন্ডাস্ট্রিজ বিভাগের ‘পিয়ন’ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

ঢাকায় আবদুস সালাম ৩৬/বি নীলক্ষেত ব্যারাকে বাস করতেন। ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারিতে সরকার ১৪৪ ধারা জারি করলে ছাত্র-জনতা সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যে-বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন, শহীদ আবদুস সালাম তাতে অংশ নেন। সেই বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হলে তাঁকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়।

পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। সালামের লাশ ঢাকাস্থ আজিমপুর কবরস্থানে নেওয়া হয়। সে সময় সালামের বাবা ফাজিল মিয়া, ভাতিজা মকবুল, ভাই হাবিব উল্লাহসহ ছাত্র-জনতার উপস্থিতিতে সালামের জানাজা শেষে দাফন করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ভাতিজা মকবুল এখনও জীবিত আছেন। সে সময় সালামের ছোট ভাই আব্দুল করিম ছিলেন শিশু। পরবর্তীতে বাবা ও ভাইদের সাথে সালামের কবর জিয়ারত করতে বিভিন্ন সময়ে আজিমপুর কবরস্থানে আসেন আব্দুল করিম।

ছবি: ওসমান গণি

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

প্রবাসে স্বৈরাচারের দোসরদের আস্ফালন, ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতারের দাবি নাসিম আহমদ চৌধুরীর

খোঁজ মিলছে ভাষাশহীদ সালামের কবরের!

আপডেট সময় : ০৬:১৯:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩ ফেব্রুয়ারী ২০১৭


ডেস্ক নিউজ: ৬৫ বছরের অপেক্ষার পালা শেষে ভাই পেতে যাচ্ছেন ভাষা শহীদ সালামের কবর! সালাম, বরকত, রফিক, জব্বার, শফিউর- পাঁচ ভাষাশহীদের নাম উচ্চারণে প্রথমেই আসে ভাষাশহীদ সালামের নাম। চার ভাই দুই বোনের মধ্যে সালাম ছিলেন সবার বড়। ১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি মাতৃভাষা বাংলার অধিকার প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে শহীদ হন তিনি। রাজধানীর আজিমপুর কবরস্থানে তাকে দাফন করা হয়। কিন্তু ভাষা আন্দোলনের ৬৫ বছর পার হয়ে গেলেও এখনও চিহ্নিত করা হয়নি বাঙালি জাতির স্বাধিকার আন্দোলনের সূর্যসৈনিক ভাষাশহীদ সালামের কবরটি।

সংবাদ সংগ্রহে এই প্রতিবেদক রাজধানীর ধানমন্ডিতে, ভাষাসংগ্রামী কাজী গোলাম মাহবুব ট্রাস্ট পরিচালিত ভাষা আন্দোলন গবেষণা কেন্দ্র ও জাদুঘর-এ গেলে এর নির্বাহী পরিচালক এম আর মাহবুবের সাথে কথা হয়। তিনি জানান, বেশ কয়েকবার তিনি সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে যোগাযোগ করেছেন ভাষাশহীদ সালামের কবর চিহ্নিত করার ব্যাপারে। স্মারকলিপিও দিয়েছেন বিভিন্ন সময়ে। কিন্তু কোন ফল হয়নি। এম আর মাহবুবের কাছ থেকেই জানা গেলো ভাষাশহীদ সালামের ভাই আবদুল করিমের জীবিত থাকার খবর।

ভাষা আন্দোলনের উপর প্রতিবেদন তৈরির কাজে হাত দিয়ে এই প্রতিবেদকের কথা হয় ভাষাশহীদ সালামের ভাই আব্দুল করিমের সাথে। এই প্রতিবেদককে মোবাইলফোনে আব্দুল করিম বলেন, আমার একটাই দাবি, ‘আমার ভাইয়ের কবর চিহ্নিত করে দেয়ার ব্যবস্থা করুক সরকার। মরবার আগে এটা আমি দেখে যেতে চাই’। আবদুল করিম আরো বলেন, ‘প্রত্যেক বছর ফেব্রুয়ারি আসলে সাংবাদিকরা আমার সাথে দেখা কইরা আমার কথা নেয়। কিন্তু কথা নিয়া কি লাভ, কেউ তো আগাইয়া আসে না আমার ভাইয়ের কবরটা শনাক্ত করার ব্যবস্থা করতে। আমি প্রত্যেক বছর একই কথা কই।’

ভাষাশহীদ সালামের কবরের স্থানটি দেখানো হচ্ছে আজিমপুর কবরস্থান ইনচার্জকে
বড় ভাই সালামের কবর চিহ্নিত করার জন্য বেশ কয়েকবার সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছেন বলেও জানান আব্দুল করিম। প্রতিবছর ফেব্রুয়ারিতে ভাষাশহীদ সালামের কবর জিয়ারতে আজিমপুর কবরস্থানে আসেন আব্দুল করিম। তিনি বলেন, বহুবার সাংস্কৃতিক মন্ত্রণালয়ে আবেদন করছি। আজিমপুর কবরস্থানে গিয়াও কতজনরে কইছি। আজিমপুর কবরস্থানের মালিকরা আমারে কইছে তিনলাখ টাকা দিলে তারা আমার ভাইয়ের কবর চিহ্নিত কইরা দিবো। তারপর থেকে আর রাগে-ক্ষোভে টাকা দেওয়ার ভয়ে কারোরে কিছু কই না। আমার তো তিনলাখ টাকা জোগাড়ের সামর্থ্য নাই।’

কবরস্থানের মালিক কারা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ওই যে তারা কবরস্থানে বইসা থাকে, ওইখানেই কথা হইছে। গ্রামের সাধারণ সহজ-সরল আব্দুল করিমের সাথে কে বা কারা এই নির্মম প্রহসন করেছে তা অজানাই রয়ে যায়।


আজিমপুর কবরস্থান বর্তমানে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অধীনে। এ বিষয়ে এই প্রতিবেদক মেয়র সাঈদ খোকনের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, ‘আব্দুল করিম আজিমপুরের যেখানে ভাষাশহীদ সালামের কবর চিহ্নিত করে দিবে সেখানে আমরা অন্য ভাষাশহীদের কবরের মতো করে সালামের কবর পাকাকরণের ব্যবস্থা করবো।’

আপনি ব্যবস্থা করেন কোন জায়গায় সালামকে কবর দেয়া হয়েছে সেটা বের করার, এটা অনেক ভালো ও মহৎ উদ্যোগ। আমি কথা দিচ্ছি এটা অবশ্যই হবে, বলেন ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন।

একইভাবে এই প্রতিবেদক সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের সাথে যোগাযোগ করলে তিনি এ বিষয়ে পূর্ণ সহযোগিতা করার আশ্বাস দেন। তিনি বলেন, বলা হয় দায়িত্ব কার? সরকারের দায়িত্ব অবশ্যই আছে। আমরা যখন যা জানতে পারছি তখনই সেটা বাস্তবায়নে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।

বৃহস্পতিবার ভাষার মাস উপলক্ষে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে তমদ্দুন মজলিস আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকায় আসেন আব্দুল করিম। অনুষ্ঠানে দেওয়া বক্তব্যেও একই দাবি তোলেন আব্দুল করিম। এই প্রতিবেদকের সাথে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে কথা হয় আব্দুল করিমের। তাকে জানানো হয় যে মেয়র সাঈদ খোকন ও মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূরের দেয়া আশ্বাসের কথা। এরপর এই প্রতিবেদকের অনুরোধে আব্দুল করিম পরিবর্তন ডটকমের সাথে যান আজিমপুর কবরস্থানে। এ সময় কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে আসা ভাষাশহীদ বরকতের ভাতিজা আইনুদ্দিন বরকত টুটু ও ভাষা আন্দোলন গবেষণা কেন্দ্র ও যাদুঘরের নির্বাহী পরিচালক এম আর মাহবুবও সাথে ছিলেন।

ভাষাশহীদ আবদুস সালাম
আজিমপুর কবরস্থানে ভাষাশহীদ শফিউর রহমানের কবরের পূর্বদিকে দুইটি পুরানো কবরের পরের কবরটিকে ভাষাশহীদ সালামের কবর বলে দাবি করেন সালামের ভাই আব্দুল করিম। এ সময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন কবরস্থানের ইনচার্জ মাওলানা হাফিজুল ইসলাম।

সংশ্লিষ্ট কবরস্থান কর্মকর্তা ও নগরভবন সূত্র জানায়, এখন কেবল বাকী আছে- আব্দুল করিমের দাবির সাথে ১৯৫২ সালের আজিমপুর কবরস্থানের রেজিস্টার খাতা মিলিয়ে দেখার কাজ। তাহলেই আনুষ্ঠানিকভাবে ভাষা শহীদ সালামের কবর শনাক্ত হয়ে যাবে।

১৯২৫ সালে ফেনীর দাগনভুইঞাঁ উপজেলার লক্ষ্মণপুর (বর্তমান সালামনগর) গ্রামে শহীদ আবদুস সালামের জন্ম। বাবার নাম মোহাম্মদ ফাজিল মিয়া। শহীদ আবদুস সালাম দাগনভুইঞা কামাল আতাতুর্ক হাই স্কুলে নবম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনা করেছিলেন। তিনি তৎকালীন পাকিস্তান সরকারের ডিরেক্টরেট অব ইন্ডাস্ট্রিজ বিভাগের ‘পিয়ন’ হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

ঢাকায় আবদুস সালাম ৩৬/বি নীলক্ষেত ব্যারাকে বাস করতেন। ১৯৫২ সালে ২১ ফেব্রুয়ারিতে সরকার ১৪৪ ধারা জারি করলে ছাত্র-জনতা সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে যে-বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন, শহীদ আবদুস সালাম তাতে অংশ নেন। সেই বিক্ষোভে পুলিশের গুলিতে গুরুতর আহত হলে তাঁকে ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি করা হয়।

পরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান। সালামের লাশ ঢাকাস্থ আজিমপুর কবরস্থানে নেওয়া হয়। সে সময় সালামের বাবা ফাজিল মিয়া, ভাতিজা মকবুল, ভাই হাবিব উল্লাহসহ ছাত্র-জনতার উপস্থিতিতে সালামের জানাজা শেষে দাফন করা হয়।

প্রত্যক্ষদর্শী ভাতিজা মকবুল এখনও জীবিত আছেন। সে সময় সালামের ছোট ভাই আব্দুল করিম ছিলেন শিশু। পরবর্তীতে বাবা ও ভাইদের সাথে সালামের কবর জিয়ারত করতে বিভিন্ন সময়ে আজিমপুর কবরস্থানে আসেন আব্দুল করিম।

ছবি: ওসমান গণি