ঢাকা: ২০১৯ সালের জাতীয় নির্বাচনকে টার্গেটে রেখে ‘বাহির’ সামলাচ্ছে আওয়ামী লীগ। ‘বাহির’শব্দটির ব্যাখ্যা করতে গেলে বলতে হয় ‘ঘর’ নয় ‘জন মনে’ স্থান পেতে চায় টানা দ্বিতীয় বারের মত ক্ষমতায় থাকা দলটি। তৃতীয় বারের মত ক্ষমতার স্বাদ পেতে আওয়ামী লীগের প্রতি জনমনে যাতে কোন অসন্তোষ সৃষ্টি না হয় সে দিকে খেয়াল রাখছে দলটি।
জাতীয় নির্বাচনের আগে কোন ‘ভুল’ করতে চায় না আওয়ামী লীগ। নিজেদের ‘সত্যিকারের জনপ্রিয়তা’ জানান দিতে বিএনপিসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে একটি প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক নির্বাচনের বিকল্প ভাবছে না আওয়ামী লীগ। সেই কথা মাথায় রেখেই জনমনে জায়গা পেতে মরিয়া দলটি। এক্ষেত্রে দলীয় নেতারা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করলে তাদেরকেও ছাড় দিতে রাজি নয় দলটি।
২০১৪ সালে ‘ভোটারবিহীন’ নির্বাচন দলের জন্য ‘বড় ধরনের’ শিক্ষা বলে মনে করছে দলীয় নেতারা। দলীর নেতাদের মতে, নির্বাচনে জয়লাভের পূর্ব শর্ত হচ্ছে জনগণের ম্যান্ডেট পাওয়া। জনগণের ম্যান্ডেট নিয়ে ক্ষমতায় যেতে পারলে সরকারের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন উঠার কোন সুযোগ নেই। সেক্ষেত্রে ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলোর কোন চাপ থাকে না।
ক্ষমতাসীন দলটির দ্বিতীয় মেয়াদের তৃতীয় বর্ষপূর্তির পর থেকে ‘জন সন্তোষ’ অর্জনকে নির্বাচনে জয়লাভের ‘অস্ত্র’ হিসেবে গ্রহণ করেছে আওয়ামী লীগ। নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের পর থেকে এ ধরনের ভাবনা শুরু করেছে দলটি। দলীয় কোন নেতা-কর্মীদের দ্বারা জন মনে যাতে কোন বিরুপ প্রভাব না পড়ে সেদিকে কঠোর বার্তা দিচ্ছে দলটি। পাশাপাশি দলীয় কোন কর্মসূচি দ্বারা যাতে জন দূর্ভোগ সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখছে দলটি।
বছরের শুরুতে ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী, পরদিন ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ পালন কর্মসূচিতে রাজধানীর জনজীবনে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। এর কয়েকদিন পর বঙ্গবন্ধুর স্বদেশ প্রত্যাবর্তন দিবসে দলীয় কর্মসূচি পালনে জন দুর্ভোগ চরমে উঠে। এতে আওয়ামী লীগের প্রতি জনমনে বিরুপ প্রভাব প্রতিফলিত হয়। অবশ্য জনদুর্ভোগের কারণে একাধিক জনসভায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের।
দলীয় সূত্র বলছে, জানুয়ারির শুরুর দিকে এসব কর্মসূচিতে জনদুর্ভোগের চিত্র গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে নজড় কাড়ে দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার। এর পর দলীয় এক সভায় তিনি জনদুর্ভোগ যাতে সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখার নির্দেশ দেন। এর পর থেকে দলীয় কর্মসূচি পালনে জনদুর্ভোগ কমিয়ে আনার ব্যাপারে গুরুত্ব দিচ্ছে দলটি। এক্ষেত্রে দলীয় কর্মসূচি পালনে বিকল্প হিসেবে সরকারি ছুটির দিনকে বিবেচনার কথা ভাবছে নীতিনির্ধারণী মহল।
দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশ পাওয়ার পর সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের এক কর্মসূচিতে বলেন,“আগামী নির্বাচনের জন্য সকল নেতাকর্মীদের প্রস্তুত হতে হবে। জনগণের সাথে খারাপ ব্যবহার করবেন না। এখন যাদের শাস্তি দিচ্ছেন তখন তরা আমাদের ভালো প্রার্থীকেও ভোটের মাধ্যমে শাস্তি দিয়ে দিবে।”
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন,“প্রধানমন্ত্রীর সুস্পষ্ট নির্দেশ আর রাস্তা বন্ধ করে সভা-সমাবেশ বা কোন রাজনৈতিক কর্মসূচি করা যাবে না। ভবিষ্যতে আর রাস্তায় কোন প্রোগ্রাম করা যাবে না।”
রাস্তা যাতে বন্ধ না হয় এর জন্য বিকল্প পথ খুঁজা হচ্ছে জানিয়ে কাদের বলেন,“রাস্তায় র্যালি করার ক্ষেত্রে আমরা বিকল্প পথ খুঁজছি। সরকারি ছুটির দিন গুলিতে র্যালি করা যায় কিনা ভাবছি।”
এ ব্যাপারে আওয়ামী লীগের সভাপতিমন্ডলীর সদস্য আব্দুর রাজ্জাক ব্রেকিংনিউজকে বলেন, জনদুর্ভোগ কারোও কাম্য নয়। দলীয় কোন কর্মসূচি দ্বারা যাতে কোন দুর্ভোগ সৃষ্টি না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা হচ্ছে।
তিনি বলেন,রাজনৈতিক দল হিসেবে দলীয় কর্মসূচি থাকবেই। আওয়ামী লীগ জনগণের দল। জনগণের দুর্ভোগ যাতে কমানো যায় সেদিক বিবেচনা করে দলীয় কর্মসূচি পালনের ব্যাপারটি গুরুত্ব দিয়ে ভাবা হচ্ছে। দলীয় সভানেত্রীর সে ব্যাপারে কঠোর নির্দেশনা রয়েছে।