ঢাকা: ‘হাই প্রোফাইল’ আহ্বায়ক কমিটি হলেও ব্যর্থতার তকমা দূর হয়নি ঢাকা মহানগর বিএনপির। ফলে আবারও মহানগর বিএনপিকে নতুন করে ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া। নগর বিএনপিতে নতুন কমিটি দিতে ইতিমধ্যেই সংশ্লিষ্ট নেতাদের মতামত নিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, ঢাকা মহানগর বিএনপিকে দু’ভাগে ভাগ করার নীতিগত সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। দলটির বিভিন্ন পর্যায়ের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে এ তথ্য জানা গেছে। সূত্র বলছে, সবকিছু বিবেচনায় ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি এখন ঘোষণার অপেক্ষায়।
জানা গেছে, দলের প্রভাবশালী দুই নেতার (খোকা-আব্বাস) নেতৃত্বে থাকা ঢাকা মহানগর বিএনপির বিরুদ্ধে দুই দফায় ব্যর্থতার অভিযোগ করেছেন স্বয়ং চেয়ারপারসন। তাই এবার দলের এই গুরুত্বপূর্ণ ইউনিটকে নবীন-প্রবীণের সমন্বয়ে ঢেলে সাজানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সাংগঠনিক শক্তি বৃদ্ধি ও নেতৃত্বে গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে ঢাকা মহানগর বিএনপিতে প্রভাবশালী নেতাদের স্থলে তাদের অনুসারী অপেক্ষাকৃত নবীন নেতাদের দায়িত্ব দেয়া হতে পারে বলেও জানা গেছে।
২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সরকারবিরোধী আন্দোলনে ব্যর্থতার অভিযোগে সাদেক হোসেন খোকার নেতৃত্বাধীন ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটি ভেঙে দেয়া হয়। এরপর মির্জা আব্বাসকে আহ্বায়ক ও হাবিব-উন-নবী খান সোহেলকে সদস্য সচিব করে ২০১৪ সালের ১৮ জুলাই ৫৩ সদস্যের কমিটি করা হয়। একইসঙ্গে ৪ সিনিয়র নেতাকে দিয়ে করা হয় একটি উপদেষ্টা কমিটিও। ফলে মাঠ পর্যায়ের নেতাকর্মীদের মাঝে বিশ্বাস জন্মেছিল, এবার হয়তো ঢাকা মহানগরীতে দাবি আদায়ে বিএনপির আন্দোলন চাঙ্গা হতে পারে। কিন্তু ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের প্রথম বর্ষপূর্তিকে কেন্দ্র করে ২০১৫ সালে দেশব্যাপী শুরু হওয়া টানা অবরোধ, আন্দোলন কর্মসূচি শুরুর পরপরই আত্মগোপনে চলে যান মির্জা আব্বাস ও হাবিব-উন-নবী খান সোহেলসহ মহানগর বিএনপির দায়িত্বশীল সিনিয়র নেতারা। ফলে আন্দোলন তখনও পুরোপুরি ব্যর্থ হয়।
বিএনপির একাধিক দায়িত্বশীল নেতারা জানান, ঢাকা মহানগর বিএনপির নতুন কমিটি গঠন করা এখন সময়ের দাবি। তাই মহানগর বিএনপিকে উত্তর ও দক্ষিণ এই দু’টি শাখায় ভাগ করে নতুন কমিটি গঠনের বিষয়ে চুলচেরা বিশ্লেষণ চলছে। সূত্র বলছে, সেক্ষেত্রে ঢাকা মহানগর বিএনপির সাবেক সদস্য সচিব ও চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালামকে সভাপতি করে মহানগর উত্তর শাখার কমিটি হতে পারে।
দক্ষিণের সভাপতি হতে পারেন বর্তমান আহ্বায়ক কমিটির সদস্য সচিব ও কেন্দ্রীয় যুগ্ম মহাসচিব হাবিব উন-নবী খান সোহেল।
সংশ্লিষ্ট নেতারা জানান, চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার নির্দেশেই কমিটির খসড়া তালিকা জমা দেয়া হচ্ছে। আগামী সপ্তাহের মধ্যে ৪৯টি থানা, ১০০টি ওয়ার্ড ও ৭টি ইউনিয়নের কমিটির তালিকাও তাঁর কাছে জমা দিতে নির্দেশনা রয়েছে। তাই ঢাকা মহানগরের কমিটি গঠন প্রক্রিয়া যেভাবে এগুচ্ছে তাতে বলা যায়, যেকোনো সময়ই ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নতুন কমিটি ঘোষণা করা হতে পারে। তবে এবার নতুন কমিটিতে সব পক্ষকেই রাখা হচ্ছে। কমিটির শীর্ষ পদে মির্জা আব্বাস ও সাদেক হোসেন খোকার অনুসারীরাই থাকছেন। এমনকি অন্যান্য পদে ছাত্রদল ও যুবদলের সাবেক নেতারাও প্রাধান্য পেতে পারেন।
জানা গেছে, মহানগরের (উত্তর-দক্ষিণ) শীর্ষ পদে আসতে পারেন এমন নেতাদের একটি খসড়া তালিকা চূড়ান্ত পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন বিএনপির দায়িত্বশীল নেতারা। আগামী সপ্তাহে চেয়ারপারসনের কাছে সেই খসড়া তালিকা তারা জমা দেবেন। তবে এই খসড়া তালিকার বাইরেও বিএনপি প্রধান খালেদা জিয়া দলের সিনিয়র নেতাদের মতামতের ওপর ভিত্তি করে নতুন কমিটি চূড়ান্ত করতে পারেন।
দলীয় সূত্র জানায়, সংগঠনে ‘চেইন অব কমান্ড’ ধরে রাখতে ঢাকা মহানগর বিএনপির কমিটিতে প্রথমে শীর্ষ ৫ নেতার (সুপার ফাইভ ) নাম ঘোষণা করা হতে পারে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে এরই মধ্যে খসড়া একটি তালিকা তৈরির কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে রয়েছে। খসড়া ওই তালিকায় ঢাকা মহানগর উত্তরের সভাপতি পদে আবুল খায়ের ভূঁইয়া, আবদুস সালাম, এমএ কাইয়ুম ও তাবিথ আউয়ালের নাম রয়েছে। আর সাধারণ সম্পাদক পদে আহসান উল্লাহ হাসান, আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার ও মুন্সী বজলুল বাসিত আনজুসহ আরও কয়েকজন রয়েছেন। ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সভাপতি পদে হাবিব উন নবী খান সোহেল এবং সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজী আবুল বাশার, নবী উল্লাহ নবী, ইউনুস মৃধা, হাবিবুর রশিদ হাবিবের নাম রয়েছে। এ ছাড়া শীর্ষ পদে হারুনুর রশীদ, এম কপিল উদ্দিন এবং তানভীর আহমেদ রবিনের নাম প্রস্তাব করা হয়েছে।
সংগঠনটির আরেকটি সূত্রে জানা গেছে, ঢাকা মহানগর বিএনপির (উত্তর) সভাপতি হিসেবে সাবেক কমিশনার এম এ কাইয়ুমের নাম বেশ আলোচনায় রয়েছে। কারণ বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস ও ভাইস চেয়ারম্যান সাদেক হোসেন খোকা এ দু’জনের সঙ্গেই কাইয়ুমের ভালো সম্পর্ক রয়েছে। সেক্ষেত্রে (উত্তর) সাধারণ সম্পাদক পদে তাবিথ আউয়ালকে দেখা যেতে পারে। আর মহানগর (দক্ষিণ) সভাপতি হিসেবে আবদুস সালাম বেশ আলোচনায় রয়েছে। তিনি দীর্ঘদিন ঢাকা মহানগরের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত। এর আগে তিনি ঢাকা মহানগর কমিটির সদস্য সচিব ছিলেন। সেক্ষেত্রে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে কাজী আবুল বাশারকে দেখা যেতে পারে। কিন্তু আব্দুস সালাম ও আবুল বাশার দু’জনই খোকাপন্থী হিসেবে পরিচিত। তাই তাদের দু’জনকে একসঙ্গে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক করার সম্ভাবনা কম। সেক্ষেত্রে সাধারণ সম্পাদক পদটি আব্বাস অনুসারীদের দেয়া হতে পারে। আর এ তালিকায় আছেন, ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক হাবিবুর রশিদ হাবিব ও নগর বিএনপির সদস্য ইউনুস মৃধা।