বাংলাস্টেটমেন্ট প্রতিবেদক
দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) ও পুলিশের শীর্ষ কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে দীর্ঘদিন ধরে ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে আসার অভিযোগে যুক্তরাজ্য প্রবাসী দয়াছ নামের এক ব্যক্তির বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি দুদক চেয়ারম্যান এবং পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ অর্থ হাতিয়ে নিয়েছেন। শুধু তাই নয়, তিনি বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের বিরোধিতা করে সেই আন্দোলনে অংশগ্রহণকারীদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করেছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে।
সম্প্রতি একটি বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেলে প্রচারিত অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে দয়াছের এই রমরমা ঘুষ বাণিজ্যের বিস্তারিত তথ্য উঠে আসে। প্রতিবেদনে বলা হয়, দয়াছ অনেকটা প্রকাশ্যেই ঢাকায় বসে দুদকের চেয়ারম্যানের নাম ব্যবহার করে ঘুষ গ্রহণ করতেন। বিষয়টি নিয়ে দুদকে চাপা আলোচনা থাকলেও এটি এখন ‘ওপেন সিক্রেট’ এ পরিণত হয়েছে।
প্রতিবেদনে দয়াছের একটি অডিও কথোপকথন প্রকাশ করা হয়েছে, যেখানে তাকে ৪০ লাখ টাকার বিনিময়ে দুদকের অভিযোগ থেকে একজনকে রেহাই পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিতে শোনা যায়। এছাড়া, প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, দয়াছ নিজেকে সাবেক দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ, সাবেক আইজিপি নুর মোহাম্মদ এবং বর্তমান অতিরিক্ত আইজিপি দেলোয়ার হোসেনের ঘনিষ্ঠ বন্ধু হিসেবে পরিচয় দিতেন। সুনামগঞ্জের ছাতকে তার বাড়িতে বিভিন্ন সময়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর শীর্ষ কর্মকর্তাদের যাতায়াত ছিল বলেও জানা যায়। দেলোয়ার হোসেন নামের আইজিপি পদবিধারী এক ব্যক্তির নাম ব্যবহার করে বিভিন্ন থানা ও এসপি অফিসে প্রভাব খাটানোর চেষ্টার অভিযোগ উঠেছে। দয়াছ নিজেকে অতিএইক্ত আইজিপি দেলোয়ার হোসেনের সাথে ফোনে কথা বলিয়ে বিভিন্ন পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করার চেষ্টা করেন। এসব বিষয় পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের নজরে আনা প্রয়োজন এবং এর দ্রুত তদন্ত করে এর বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।
এই ধরনের কার্যকলাপ পুলিশের ভাবমূর্তি নষ্ট করে এবং সাধারণ মানুষের মনে প্রশাসনের উপর থেকে বিশ্বাস কমিয়ে দেয়। তাই, এই ঘটনার সত্যতা যাচাই করে দোষী ব্যক্তিকে আইনের আওতায় আনা জরুরি।
অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, দয়াছের একটি শক্তিশালী নেটওয়ার্ক রয়েছে, যারা ঘুষ লেনদেনের দর কষাকষি করে থাকে। বর্তমান পুলিশ কর্মকর্তা অতিরিক্ত আইজি দেলোয়ার হোসেনের সাথে তার ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের সম্পর্ক থাকার সুবাদে, তিনি এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে ঘুষ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন।
আদাবর থানায় সুনামগঞ্জের একাধিক আসামীর কাছ থেকে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে এই চক্রটির বিরুদ্ধে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তারা মামলার বাদিকে র্যাব এবং অতিরিক্ত আইজিপি দেলোয়ার হোসেনকে দিয়ে আদাবর থানার মামলা প্রত্যাহারের আশ্বাস দিয়ে অর্থ আদায় করেছেন। এমনকি, আদাবর থানার ওসিকে ক্লোজ করার কথাও তারা বলেছিলেন।
দয়াছ নিজেকে বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় আওয়ামী লীগের এমপি-মন্ত্রীদের এবং খোদ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ঘনিষ্ঠজন হিসেবে এলাকায় প্রচার করতেন বলেও জানা যায়।
অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে আরও একটি অডিও ক্লিপ প্রকাশ করা হয়, যেখানে দুদকের বরখাস্ত পরিচালক খন্দকার এনামুল বাশিরকে বলতে শোনা যায়, “দয়াছের সঙ্গে কথা বলুন, যদি সে রাজি হয়, আমি দিতে পারি।” এছাড়া, অন্য একটি অডিও ক্লিপে দয়াছকে দিনাজপুরের কয়লাখনির কোনো কেস বা লেনদেন নিয়ে কথা বলতে শোনা যায়।
এসব বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে দয়াছ কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি। তিনি আওয়ামী সরকারের আমলে কর্মকর্তাদের নাম ভাঙিয়ে এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করেছিলেন। জাউয়া এলাকার কতিপয় দুস্কৃতিকারীদের নিয়ে একটা লাটিয়াল বাহিনী তৈরী করেছেন। তার বিরুদ্ধে বাধা প্রধান করতে গিয়ে সুনামগঞ্জ জেলা বিএনপির সহসভাপতি তকদ্দুছ আলী পীরসহ অনেকেই জেল জুলুমের শিকার হয়েছেন।
দুদক ও পুলিশের কর্মকর্তাদের নাম ব্যবহার করে দয়াছের এই ঘুষ বাণিজ্যের বিষয়টি প্রকাশ হওয়ার পর জনমনে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করেছেন সাধারণ মানুষ। একইসঙ্গে, দয়াছের সঙ্গে জড়িত অন্যান্য ব্যক্তিদের খুঁজে বের করে আইনের আওতায় আনার দাবিও উঠেছে।