ঢাকা ০৭:৫৯ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫, ২৬ বৈশাখ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বিজয়নগরে স্কুল শিক্ষিকাকে বেধড়ক পিটিয়ে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার লুটপাট “লন্ডনে ‘প্রবাসীদের ক্ষমতায়ন: অধিকার, স্বীকৃতি ও জাতি গঠন – একটি এনআরবি প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক সেমিনার ও ইফতার মাহফিল অনুষ্টিত বিশ্বনাথে শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ, যুবক গ্রেপ্তার সুনামগঞ্জে চলন্ত সিএনজিতে কিশোরীকে ধর্ষণচেষ্টা, আটক ২ ‘মানুষের উন্নয়নে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বারবার রক্ষা করেছেন খালেদা জিয়া’ জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠকঃ দ্রুত নির্বাচনের দাবি বিএনপির “যুক্তরাজ্য যুবদলের সভাপতি আফজাল হোসেনকে ইলিয়াস পত্নী তাহসিনা রুশদির লুনার অভিনন্দন” বায়ান্নের ভাষা শহীদদের প্রতি নর্থইষ্ট বিএনপির শ্রদ্ধা নিবেদন প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে জয় লাভ করেন সোয়াবই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বালিকারা “সিলেট প্রদেশ প্রতিষ্ঠার দাবীতে লন্ডনে গ্রেটার সিলেট কমিউনিটি ইউকের সভা অনুষ্ঠিত”

প্যারিসে অনুষ্ঠিত হল দিন ব্যাপী অমর একুশে বইমেলা


বদরুজ্জামান জামান , প্যারিস : ‘’শিক্ষা-সংস্কৃতি-ভাষার মর্যাদা রক্ষায় একুশের চেতনায় জেগে উঠো বিশ্ব তারুণ্য’’- এই শ্লোগানে ‘বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন ফ্রান্সে’র উদ্যোগে ৩য় বারের মতো গতকাল ৫ ফেব্রুয়ারি প্যারিসে অনুষ্ঠিত হল দিনব্যাপী “একুশে বইমেলা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান” । যুব ইউনিয়ন কেন্দ্রিয় কমিটির সভাপতি- হাসান হাফিজুর রহমান সোহেল টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে মেলার উদ্বোধন করেন ।

বিকাল ৫ টায় থেকে শুরু হয় “একুশের চেতনা ও বর্তমান বাংলাদেশ শীর্ষক” আলোচনা সভা। যুব ইউনিয়ন ফ্রান্স কমিটির সভাপতি- অ্যাডভোকেট রমেন্দু কুমার চন্দের সভাপতিত্বে এবং ফাহাদ রিপনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে আলোচনা পেশ করেন- ইনালকো বিশ্ববিদ্যালয় ফ্রান্সের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রধান ড.ফিলিপ বেনোয়া , প্রধান বক্তা হিসাবে বাংলাদেশ থেকে টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন সিপিবি কেন্দ্রিয় কমিটির সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম , বিশেষ বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন যুব ইউনিয়ন কেন্দ্রিয় কমিটির সাধারন সম্পাদক হাফিজ আদনান রিয়াজ , বিশেষ অতিথি ছিলেন যথাক্রমে- উদীচী ফ্রান্সের সভাপতি কিরণময় মণ্ডল ও সিপিবি ফ্রান্সের সম্পাদক- কমরেড আহমদ আলী দুলাল। কবি ও প্রাবন্ধিক সাখাওয়াত টিপুর লিখা একুশের উপর প্রবন্ধ পাঠ করেন তানবির সরকার শাওন , বক্তব্য রাখেন জবরুল ইসলাম লিটন , ম্যাডাম ক্লেয়ার, দোলন মাহমুদ প্রমুখ ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. ফিলিপ বেনোয়া বলেন- আমি তসলিমা নাসরিনের বইয়ের অনুবাদক হওয়ার কারনে এবছর ঢাকার একুশে বইমেলায় আমার আমন্ত্রণ থাকা সত্ত্বে আমাকে যেতে দেয়া হয়নি । কিন্তু যখন শোনলাম এখানে একুশে বইমেলা হবে তখন আমি খুব খুশী হয়েছি। যারা এই বইমেলার আয়োজন করেছেন তাদের কে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি । আমি এরকম আয়োজন দেখে মুগ্ধ। তিনি বলেন বই আমাদের শ্রেষ্ঠ বন্ধু। আমরা হয়তো আজকে শুধু কাগজে বই পড়ি না , আমরা অনেক সময় কম্পিউটারের পর্দায় অথবা স্ম্রারট ফোনে বই পড়ছি । বিশেষ করে বইয়ের মাধ্যমে লিখক লিখিকারা বাক স্বাধীনতার জন্য কাজ করেন লড়াই করেন। আমাদের সবাই কে মনে রাখতে হবে যখন যেখানে বাক স্বাধীনতা হ্রাস পায় তখন এটা আমাদের সবার জন্য সর্বনাশের কারণ হয় । তাই আমাদের কে বাক স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা একান্ত কর্তব্য । বিশেষ করে যুবকদের কে এজন্য এগিয়ে আসতে হবে। আর ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি নিজের ভাষায় নিজে বাক স্বাধীনতা প্রকাশের এবং বাংলা ভাষা কে অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা করার দাবী কে কেন্দ্র করে যুবকরাই লড়াই করেছিল জীবন দিয়েছিল।

প্রধান বক্তা হিসাবে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন- ২১ শে ফেব্রুয়ারি এখন শুধু শহীদ দিবস নয় , আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে । পৃথিবীতে যত মানুষ আছে প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চার যে অধিকার তা হল তাদের মৌলিক অধিকার । সে অধিকার ২১ শে চেতনা এবং উপলব্ধিটা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার জন্য আমরা সফল হয়েছি ২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি লাভের মাধ্যমে । আমাদের সুদূর প্রবাসে যে সকল বন্ধুরা আছেন যারা মাতৃভাষা প্রিয়তা কে বিশ্বাস করেন ফ্রান্সের আমাদের যুব সমাজ বিশেষ করে যুব ইউনিয়ন পর পর ৩য় বারের মতো অমর একুশ উপলক্ষে বইমেলার আয়োজন করেছেন তাদের কে ধন্যবাদ জানাই এবং এর ধারাবাহিকতা যেন অব্যাহত থাকে । প্রবাসে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চা প্রসারে বইমেলা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে। তাছাড়াও তিনি বলেন সম্প্রতি পাঠ্য পুস্তকে পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িকতা ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে । এর জন্য সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন এবং প্রস্তাবিত রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের তীব্র সমালোচনা করে অবিলম্বে তা বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান ।

মেলায় ফ্রান্স প্রবাসী কবি বদরুজ্জামান জামানের একুশ উপলক্ষে প্রকাশিত “গ্রন্থ নানা রঙের ছড়া” গ্রন্থের মোড়ক উম্নোচন করেন ড. ফিলিপ বেনোয়া।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন যুব ইউনিয়ন , উদীচী ও ফ্রান্সের স্থানীয় শিল্পীরা । প্যারিসের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর দর্শনার্থীদের পদভারে মুখরিত ছিল মেলা প্রাঙ্গণ । মেলায় বেশ কিছু স্টল অংশ গ্রহণ করে। দর্শনার্থীরা তাদের পছন্দের লেখকদের বই ক্রয় করেন। প্রবাসে এধরনের আয়োজনের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান এবং এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখারও আহবান জানান ।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

বিজয়নগরে স্কুল শিক্ষিকাকে বেধড়ক পিটিয়ে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার লুটপাট

প্যারিসে অনুষ্ঠিত হল দিন ব্যাপী অমর একুশে বইমেলা

আপডেট সময় : ০৩:০৮:২০ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৭


বদরুজ্জামান জামান , প্যারিস : ‘’শিক্ষা-সংস্কৃতি-ভাষার মর্যাদা রক্ষায় একুশের চেতনায় জেগে উঠো বিশ্ব তারুণ্য’’- এই শ্লোগানে ‘বাংলাদেশ যুব ইউনিয়ন ফ্রান্সে’র উদ্যোগে ৩য় বারের মতো গতকাল ৫ ফেব্রুয়ারি প্যারিসে অনুষ্ঠিত হল দিনব্যাপী “একুশে বইমেলা, আলোচনা সভা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান” । যুব ইউনিয়ন কেন্দ্রিয় কমিটির সভাপতি- হাসান হাফিজুর রহমান সোহেল টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে মেলার উদ্বোধন করেন ।

বিকাল ৫ টায় থেকে শুরু হয় “একুশের চেতনা ও বর্তমান বাংলাদেশ শীর্ষক” আলোচনা সভা। যুব ইউনিয়ন ফ্রান্স কমিটির সভাপতি- অ্যাডভোকেট রমেন্দু কুমার চন্দের সভাপতিত্বে এবং ফাহাদ রিপনের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সভায় প্রধান অতিথি হিসাবে আলোচনা পেশ করেন- ইনালকো বিশ্ববিদ্যালয় ফ্রান্সের বাংলা ভাষা ও সাহিত্য বিভাগের প্রধান ড.ফিলিপ বেনোয়া , প্রধান বক্তা হিসাবে বাংলাদেশ থেকে টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে বক্তব্য রাখেন সিপিবি কেন্দ্রিয় কমিটির সভাপতি কমরেড মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম , বিশেষ বক্তা হিসাবে বক্তব্য রাখেন যুব ইউনিয়ন কেন্দ্রিয় কমিটির সাধারন সম্পাদক হাফিজ আদনান রিয়াজ , বিশেষ অতিথি ছিলেন যথাক্রমে- উদীচী ফ্রান্সের সভাপতি কিরণময় মণ্ডল ও সিপিবি ফ্রান্সের সম্পাদক- কমরেড আহমদ আলী দুলাল। কবি ও প্রাবন্ধিক সাখাওয়াত টিপুর লিখা একুশের উপর প্রবন্ধ পাঠ করেন তানবির সরকার শাওন , বক্তব্য রাখেন জবরুল ইসলাম লিটন , ম্যাডাম ক্লেয়ার, দোলন মাহমুদ প্রমুখ ।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে ড. ফিলিপ বেনোয়া বলেন- আমি তসলিমা নাসরিনের বইয়ের অনুবাদক হওয়ার কারনে এবছর ঢাকার একুশে বইমেলায় আমার আমন্ত্রণ থাকা সত্ত্বে আমাকে যেতে দেয়া হয়নি । কিন্তু যখন শোনলাম এখানে একুশে বইমেলা হবে তখন আমি খুব খুশী হয়েছি। যারা এই বইমেলার আয়োজন করেছেন তাদের কে আমি অভিনন্দন জানাচ্ছি । আমি এরকম আয়োজন দেখে মুগ্ধ। তিনি বলেন বই আমাদের শ্রেষ্ঠ বন্ধু। আমরা হয়তো আজকে শুধু কাগজে বই পড়ি না , আমরা অনেক সময় কম্পিউটারের পর্দায় অথবা স্ম্রারট ফোনে বই পড়ছি । বিশেষ করে বইয়ের মাধ্যমে লিখক লিখিকারা বাক স্বাধীনতার জন্য কাজ করেন লড়াই করেন। আমাদের সবাই কে মনে রাখতে হবে যখন যেখানে বাক স্বাধীনতা হ্রাস পায় তখন এটা আমাদের সবার জন্য সর্বনাশের কারণ হয় । তাই আমাদের কে বাক স্বাধীনতার জন্য লড়াই করা একান্ত কর্তব্য । বিশেষ করে যুবকদের কে এজন্য এগিয়ে আসতে হবে। আর ১৯৫২ সালের ২১ শে ফেব্রুয়ারি নিজের ভাষায় নিজে বাক স্বাধীনতা প্রকাশের এবং বাংলা ভাষা কে অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা করার দাবী কে কেন্দ্র করে যুবকরাই লড়াই করেছিল জীবন দিয়েছিল।

প্রধান বক্তা হিসাবে মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম বলেন- ২১ শে ফেব্রুয়ারি এখন শুধু শহীদ দিবস নয় , আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি লাভ করেছে । পৃথিবীতে যত মানুষ আছে প্রত্যেক মানুষের নিজস্ব ভাষা সাহিত্য সংস্কৃতি চর্চার যে অধিকার তা হল তাদের মৌলিক অধিকার । সে অধিকার ২১ শে চেতনা এবং উপলব্ধিটা বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দেয়ার জন্য আমরা সফল হয়েছি ২১ শে ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসাবে স্বীকৃতি লাভের মাধ্যমে । আমাদের সুদূর প্রবাসে যে সকল বন্ধুরা আছেন যারা মাতৃভাষা প্রিয়তা কে বিশ্বাস করেন ফ্রান্সের আমাদের যুব সমাজ বিশেষ করে যুব ইউনিয়ন পর পর ৩য় বারের মতো অমর একুশ উপলক্ষে বইমেলার আয়োজন করেছেন তাদের কে ধন্যবাদ জানাই এবং এর ধারাবাহিকতা যেন অব্যাহত থাকে । প্রবাসে বাংলা ভাষা ও সংস্কৃতি চর্চা প্রসারে বইমেলা গুরুত্বপূর্ণ ভুমিকা রাখবে। তাছাড়াও তিনি বলেন সম্প্রতি পাঠ্য পুস্তকে পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িকতা ঢুকিয়ে দেয়া হয়েছে । এর জন্য সরকারের কঠোর সমালোচনা করেন এবং প্রস্তাবিত রামপাল বিদ্যুৎ প্রকল্পের তীব্র সমালোচনা করে অবিলম্বে তা বন্ধ করার জন্য সরকারের প্রতি আহবান জানান ।

মেলায় ফ্রান্স প্রবাসী কবি বদরুজ্জামান জামানের একুশ উপলক্ষে প্রকাশিত “গ্রন্থ নানা রঙের ছড়া” গ্রন্থের মোড়ক উম্নোচন করেন ড. ফিলিপ বেনোয়া।

সন্ধ্যা সাড়ে ৭ টায় শুরু হয় মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান । সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন যুব ইউনিয়ন , উদীচী ও ফ্রান্সের স্থানীয় শিল্পীরা । প্যারিসের বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রচুর দর্শনার্থীদের পদভারে মুখরিত ছিল মেলা প্রাঙ্গণ । মেলায় বেশ কিছু স্টল অংশ গ্রহণ করে। দর্শনার্থীরা তাদের পছন্দের লেখকদের বই ক্রয় করেন। প্রবাসে এধরনের আয়োজনের জন্য আয়োজকদের ধন্যবাদ জানান এবং এর ধারাবাহিকতা অব্যাহত রাখারও আহবান জানান ।