নিজস্ব প্রতিবেদক।।সার্চ কমিটি গঠনের পর এবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারসহ (সিইসি) নির্বাচন কমিশনার হিসেবে কারা নিয়োগ পাবেন তা নিয়ে আলোচনা শুরু হয়েছে। এ নিয়ে সরকারের উচ্চপর্যায়ে কথা চালাচালি থেকে জানা গেছে, প্রধান নির্বাচন কমিশনার করার ক্ষেত্রে পাঁচজনের নাম গুরুত্ব পাচ্ছে। ওই পাঁচ ব্যক্তি হলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) সাবেক কমিশনার সাহাবুদ্দিন চুপ্পু, প্রধানমন্ত্রীর সাবেক মুখ্য সচিব এবং জনতা ব্যাংকের বর্তমান চেয়ারম্যান শেখ মোহাম্মদ ওয়াহিদ উজ-জামান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সাবেক সচিব মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান ও নির্বাচন কমিশনের সাবেক সচিব হুমায়ুন কবির। এর বাইরেও কিছু নাম নিয়ে গুঞ্জন চলছে। তবে চূড়ান্ত চমক দেবেন রাষ্ট্রপতি নিজে।
এদিকে নতুন নির্বাচন কমিশন গঠনে নাম সুপারিশের দায়িত্ব পাওয়া সার্চ কমিটির প্রথম সভা হবে শনিবার। আহ্বায়কের ‘সম্মতিতে’ শনিবার বেলা ১১টায় সুপ্রিম কোর্টের জাজেস লাউঞ্জে বসবেন বলে সার্চ কমিটির দুই সদস্য জানিয়েছেন। বৃহস্পতিবার ছয় সদস্যের কাছে এ সংক্রান্ত প্রজ্ঞাপন পাঠানো হয়েছে।
আলোচনায় থাকা নামের মধ্যে শামসুদ্দিন চৌধুরী মানিক অবসরের আগে ১৬০ মামলার রায় লিখে যাননি। এ নিয়ে তখন ব্যাপক সমালোচনা হয়েছে। জিয়াউর রহমান এবং বিএনপির বিরুদ্ধে সরাসরি বক্তব্য দিয়ে কঠোর সমালোচনার মধ্যে পড়েন তিনি।
সাহাবুদ্দিন চুপ্পু দুদকের কমিশনার থাকাবস্থায় বলেছিলেন, খালেদা জিয়ার শাসনামলে বিএনপি চারবার দুর্নীতিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। খালেদা জিয়াকে কথা বলার আগে নিজের চেহারা আয়নায় দেখার পরামর্শ দিয়ে সমালোচনায় আসেন তিনি। চুপ্পু রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের নেতা ছিলেন।
শেখ ওয়াহিদ উজ-জামান ও মোল্লা ওয়াহিদুজ্জামান প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাদের কারো নাম উল্লেখ না করে বিএনপি নেতারা বলেছেন, এ দুটি পদে ‘রাজনৈতিক নিয়োগ’ হয়ে থাকে। তারা কোনোভাবেই নিরপেক্ষ হতে পারেন না।
হুমায়ুন কবির ২০০৮ সালে নির্বাচন কমিশন সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। পরে তিনি স্বাস্থ্য সচিব হিসেবে নিয়োগ পান। তার কিছুদিন পর তাকে ওএসডি করা হয়। এর পর ভূমি সংস্কার বোর্ডের সদস্য করা হলে তিনি স্বেচ্ছায় পদত্যাগ করেন। তার নাম যতটা না সরকারের উচ্চপর্যায়ে আলোচনায়, তার চেয়ে বেশি আলোচনায় কূটনীতিক ও সুশীল সমাজের মধ্যে।
মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম সাংবাদিকদের বলেন, আহ্বায়কের সম্মতির পর সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রয়োজনীয় সহযোগিতা দেব আমরা।
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বর্জন করা বিএনপি এবারের নির্বাচন কমিশন গঠনকে খুবই গুরুত্ব দিচ্ছে। গত কয়েক মাস ধরে বিষয়টি নিয়ে বেশ সজাগ দলটির হাইকমান্ড। নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন গঠন করতে ১৯ নভেম্বর দলের চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ১৩ দফা প্রস্তাব দিয়েছিলেন। কিন্তু ২৫ জানুয়ারি বুধবার রাষ্ট্রপতি যে সার্চ কমিটি গঠন করেছেন, তা দলটির মনঃপূত হয়নি। দলীয় লোকদের দিয়ে কমিটি করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন দলের নেতারা। ইসি গঠনের ক্ষেত্রে একই চিত্র দেখা গেলে এটি ইস্যু করে রাস্তায় নামার চিন্তা করছে বিএনপি। এ নিয়ে খালেদা জিয়ার সঙ্গে জ্যেষ্ঠ নেতাদের বৈঠকও হয়েছে। অবশ্য আওয়ামী লীগ নেতারা বলছেন, যেসব নাম আসছে, সবই অনুমাননির্ভর। এখন পর্যন্ত এ নিয়ে কোনো আনুষ্ঠানিক বৈঠক হয়নি।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর জানিয়েছেন, আজ শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টায় সার্চ কমিটি নিয়ে বিএনপি আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলন করবে। দলের জাতীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান এক অনুষ্ঠানে বলেছেন, সার্চ কমিটিতে সাবেক ইসি সচিব মোহাম্মদ সাদিক ‘আনুগত্যের পুরস্কারপ্রাপ্ত ব্যক্তি’।