ঢাকা ০৭:২৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
প্রবাসে স্বৈরাচারের দোসরদের আস্ফালন, ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতারের দাবি নাসিম আহমদ চৌধুরীর বিজয়নগরে স্কুল শিক্ষিকাকে বেধড়ক পিটিয়ে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার লুটপাট “লন্ডনে ‘প্রবাসীদের ক্ষমতায়ন: অধিকার, স্বীকৃতি ও জাতি গঠন – একটি এনআরবি প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক সেমিনার ও ইফতার মাহফিল অনুষ্টিত বিশ্বনাথে শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ, যুবক গ্রেপ্তার সুনামগঞ্জে চলন্ত সিএনজিতে কিশোরীকে ধর্ষণচেষ্টা, আটক ২ ‘মানুষের উন্নয়নে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বারবার রক্ষা করেছেন খালেদা জিয়া’ জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠকঃ দ্রুত নির্বাচনের দাবি বিএনপির “যুক্তরাজ্য যুবদলের সভাপতি আফজাল হোসেনকে ইলিয়াস পত্নী তাহসিনা রুশদির লুনার অভিনন্দন” বায়ান্নের ভাষা শহীদদের প্রতি নর্থইষ্ট বিএনপির শ্রদ্ধা নিবেদন প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে জয় লাভ করেন সোয়াবই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বালিকারা

বিএসএফ সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিক খুন করলেও বাংলাদেশে অবৈধ ইন্ডিয়ানের সংখ্যা ৫ লাখের বেশি


# বছরে নিয়ে যাচ্ছে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি
# ভারতের রেমিটেন্স আয়ে বাংলাদেশ পঞ্চম
অলিউল্লাহ নোমান
ইন্ডিয়া সীমান্তে নিয়মিত বাংলাদশের নাগরিকদের খুন করছে। তাদের অভিযোগ তারা অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করে। তাদের সাথে সূর মিলিয়ে বাংলাদেশের ইন্ডিয়াপন্থি রাজনীতিক এবং ইন্ডিয়ার অনুগত সরকারি আমলারাও একই কথা বলছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কত অবৈধ ইন্ডিয়ান বাংলাদেশে কাজ করছে? বাংলাদেশে বর্তমানে ৫ লাখের বেশি ভারতীয় নাগরিক বৈধ অবৈধভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে। যদিও সরকারি হিসেবে এই সংখ্যা মাত্র ২০ হাজার ৬৫৬ জন। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) হিসেবে দেখা গেছে ভারতের পাঁচ লাখ নাগরিক বাংলাদেশে কাজ করে। সরকারি হিসাবের ২০হাজার ৬৫৬ জনের বাইরে যারা রয়েছেন সবাই হলেন অবৈধ। আরো বিষ্ময়ের ব্যাপর হচ্ছে বাংলাদেশ হচ্ছে ইন্ডিয়ার রেমিটেন্স আয়ের তালিকায় ৫ নম্বরে। অর্থাৎ যেসব দেশ থেকে ইন্ডিয়ার রেমিটেন্স আসে তার মধ্যে ৫ নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশ। এদের বেশির ভাগই কাজ করেন এনডিও, টেক্সটাইল এবং গার্মেন্টস সেক্টরে।
বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী ইন্ডিয়ার রেমিটেন্স সবচেয়ে বেশি আসে সংযুক্ত আবর আমিরাত থেকে। ২০১২ সালের হিসাব অনুযায়ী আরব আমিরাত থেকে ১৪.২৫৫বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ করেছে ইন্ডিয়া।
দ্বিতীয়স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইন্ডিয়ায় রেমিটেন্স আসে ১০.৮৪৪ বিলিয়ন ডলার।
তৃতীয় স্থানে রয়েছে সৌদী আরব। সৌদী আরব থেকে রেমিটেন্স আসে ৭.৬১২ বিলিয়ন ডলার।
চতুর্থ স্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য। রেমিটেন্সের পরিমান হচ্ছে ৩.৯০৪ বিলিয়ন ডলার। এবং পঞ্চম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। রেমিটেন্সের পরিমান হচ্ছে ৩৭১.৬ কোটি ডলার। এটা হল বিশ্ব ব্যাংকের প্রকাশিত ২০১২ সালের হিসাব। অথচ প্রতিনিয়ত ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গুলি চালিয়ে নাগরিকদের হত্যা করছে। দুনিয়ার কোন দেশের সীমান্তে এভাবে মানুষ খুনের নজির নেই। এমনকি বিরোধপূর্ণ ইসরাইল এব ফিলিস্তিনের সীমান্তেও বছরে এত লোক নিহত হয় না, যতলোক নিহত হন বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে। ্
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের প্রকাশিত ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে কর্মরত অবৈধ ইন্ডিয়ানরা বছরে ৩ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার নিজ দেশে নিয়ে গেছে। স্থানীয় মুদ্রায় যা ৩০ হাজার কোটি টাকা। ২০১৬ সালে এই পরিমান আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। জাতীয় বিনিয়োগ বোর্ড ও পাসপোর্ট অধিদফতরের কাছেও দেশে অবৈধ ভারতীয় নাগরিকদের সঠিক হিসেব নেই।
সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ২০ হাজার ৬৫৬ জন ভারতীয় নাগরিক কাজ করছেন। পুলিশের বিশেষ শাখা থেকেও পাওয়া গেছে একই হিসাব। পুলিশের বিশেষ শাখার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের জুনের পর তারা এ হিসেব আফডেট করেনি। বিশেষ শাখা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে দেশে বৈধভাবে ১ লাখ ১১ হাজার ৫৭৫ জন বিদেশী নাগরিক কাজ করেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে সাত লাখের বেশি অবৈধ বিদেশী নাগরিক রয়েছে। এরমধ্যে ৫ লাখের বেশি হচ্ছে ইন্ডিয়ান। এরপরই রয়েছে শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও চিনের নাগরিক। কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই এরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে। এমন কী এরা নিজ দেশে টাকাও পাঠাচ্ছে। তারা ট্যুরিস্ট ভিষায় বাংলাদেশে এসে মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর কাজ করছে। গ্রামে গঞ্জে, দেশের আনাছে কানাছে নির্বিঘেœ ঘুরে বেড়াচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশে মোট তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে বিদেশীদের কাজের অনুমতি দেয়া হয়। এগুলো হল- বিনিয়োগ বোর্ড, বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন অথরিটি (বেপজা) এবং এনজিও ব্যুরো। এই তিন প্রতিষ্ঠানের তথ্য বলছে, বৈধভাবে মাত্র সাড়ে ১৬ হাজার বিদেশী দেশে কাজ করছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে দেশে বিদেশীদের সংখ্যা ২ লাখের কিছু বেশি। আর বেসরকারি সংস্থাগুলির হিসেবে এই সংখ্যা প্রায় সাত লাখ। প্রতিবছর এরা ৬ থেকে ৭ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ নিজ দেশে নিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে গত ২৫ জুন জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বর্তমানে দেশে বৈধভাবে ১ লাখ ১১ হাজার ৫৭৫ জন বিদেশী নাগরিক রয়েছেন। এরমধ্যে ২০ হাজার ৬৫৬ জন ভারতীয়। আর মোট ৯১০ জন বিদেশী নাগরিকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশে অবৈধভাবে বসবাস করছেন এমন বিদেশীদের একটি তালিকা তৈরির কাজ চলছে। এর আগে একটি তালিকা থাকলেও সে তালিকা অনুযায়ী অবৈধ এসব বিদেশিদের বাংলাদেশে বর্তমান অবস্থানের বিষয়টি স্পষ্ট নয়। অবৈধ বিদেশিদের শনাক্ত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং মাঝে-মধ্যেই অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সূত্র জানায়, বিনিয়োগ বোর্ড থেকে অনুমতি নিয়ে বর্তমানে ১৪ হাজার বিদেশী কাজ করছে। আর বেপজার অনুমতি নিয়ে ২ হাজার এবং এনজিও ব্যুরো থেকে অনুমতি নিয়ে ৫০০ বিদেশি নাগরিক কাজ করছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, দেশে বিদেশী জনশক্তির সংখ্যা ২ লাখ। বিদায়ী ২০১৫ সালে তারা ৫ বিলিয়ন ডলার অর্থ নিজ দেশে নিয়ে গেছে। স্থানীয় মুদ্রায় যা ৪০ হাজার কোটি টাকা। যা দিয়ে কমপক্ষে দুটি পদ্মাসেতু তৈরি করা সম্ভব। এছাড়া এই পরিমাণ অর্থ দেশের মোট রেমিট্যান্সের এক তৃতীয়াংশ। এর অর্থ হল প্রবাসীরা যে পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে, তার এক তৃতীয়াংশই বাইরে চলে যাচ্ছে। অর্থমন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত দক্ষতা উন্নয়ন : উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের অগ্রাধিকার শীর্ষক এক প্রকাশনায়ও এ তথ্য উল্লে¬খ করা হয়েছে।
বিনিয়োগের নির্বাহী সদস্য নাভাস চ›ঁদ্র মন্ডল সাংবাদিকদের জানান, বিদেশী নাগরিকদের ওয়ার্ক পারমিট নিতে হলে যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করবে, ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। বিনিয়োগ বোর্ডে আবেদন করলে আমরা নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতামত নেই। মন্ত্রণালয়ের ইতিবাচক মতামত এলে প্রথমে এক বছরের জন্য কাজের অনুমতি দেয়া হয়। পরবর্তীতে আবেদন করলে নবায়ন করা হয়। তিনি বলেন, ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কেউ কাজ করলে সেটা দেখার দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। বিনিয়োগ বোর্ড থেকে বিষয়টি নজরদারি করা হয় না। ্এসব অবৈধ বিদেশীরা শুধু দেশের নাগরিকদের কর্মসংস্থানেই সংকট সৃষ্টি করছেন না, একই সঙ্গে তাঁরা দেশের প্রচলিত আইন উপেক্ষা করে রাজস্বও ফাঁকি দিচ্ছেন। বর্তমান আইনে বিদেশি নাগরিকদের অর্জিত আয়ের ৩০ শতাংশ কর দেয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু অবৈধভাবে কাজ করার কারণে তারা কর দিচ্ছেন না। আয়কর অধ্যাদেশ অনুসারে বাংলাদেশী কোনো প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া বিদেশীদের নিয়োগ দিলে ওই কোম্পানির প্রদেয় আয়করের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ বা কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান আছে। কিন্তু সরকারের সদিচ্ছার অভাবে এই বিধান কার্যকর হচ্ছে না। ফলে প্রতিবছর বিপুল অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

প্রবাসে স্বৈরাচারের দোসরদের আস্ফালন, ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতারের দাবি নাসিম আহমদ চৌধুরীর

বিএসএফ সীমান্তে বাংলাদেশী নাগরিক খুন করলেও বাংলাদেশে অবৈধ ইন্ডিয়ানের সংখ্যা ৫ লাখের বেশি

আপডেট সময় : ০৪:১৮:০১ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৭


# বছরে নিয়ে যাচ্ছে ৩০ হাজার কোটি টাকার বেশি
# ভারতের রেমিটেন্স আয়ে বাংলাদেশ পঞ্চম
অলিউল্লাহ নোমান
ইন্ডিয়া সীমান্তে নিয়মিত বাংলাদশের নাগরিকদের খুন করছে। তাদের অভিযোগ তারা অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রম করার চেষ্টা করে। তাদের সাথে সূর মিলিয়ে বাংলাদেশের ইন্ডিয়াপন্থি রাজনীতিক এবং ইন্ডিয়ার অনুগত সরকারি আমলারাও একই কথা বলছেন। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে কত অবৈধ ইন্ডিয়ান বাংলাদেশে কাজ করছে? বাংলাদেশে বর্তমানে ৫ লাখের বেশি ভারতীয় নাগরিক বৈধ অবৈধভাবে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে। যদিও সরকারি হিসেবে এই সংখ্যা মাত্র ২০ হাজার ৬৫৬ জন। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) হিসেবে দেখা গেছে ভারতের পাঁচ লাখ নাগরিক বাংলাদেশে কাজ করে। সরকারি হিসাবের ২০হাজার ৬৫৬ জনের বাইরে যারা রয়েছেন সবাই হলেন অবৈধ। আরো বিষ্ময়ের ব্যাপর হচ্ছে বাংলাদেশ হচ্ছে ইন্ডিয়ার রেমিটেন্স আয়ের তালিকায় ৫ নম্বরে। অর্থাৎ যেসব দেশ থেকে ইন্ডিয়ার রেমিটেন্স আসে তার মধ্যে ৫ নম্বরে রয়েছে বাংলাদেশ। এদের বেশির ভাগই কাজ করেন এনডিও, টেক্সটাইল এবং গার্মেন্টস সেক্টরে।
বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী ইন্ডিয়ার রেমিটেন্স সবচেয়ে বেশি আসে সংযুক্ত আবর আমিরাত থেকে। ২০১২ সালের হিসাব অনুযায়ী আরব আমিরাত থেকে ১৪.২৫৫বিলিয়ন ডলার রেমিটেন্স সংগ্রহ করেছে ইন্ডিয়া।
দ্বিতীয়স্থানে রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইন্ডিয়ায় রেমিটেন্স আসে ১০.৮৪৪ বিলিয়ন ডলার।
তৃতীয় স্থানে রয়েছে সৌদী আরব। সৌদী আরব থেকে রেমিটেন্স আসে ৭.৬১২ বিলিয়ন ডলার।
চতুর্থ স্থানে রয়েছে যুক্তরাজ্য। রেমিটেন্সের পরিমান হচ্ছে ৩.৯০৪ বিলিয়ন ডলার। এবং পঞ্চম স্থানে রয়েছে বাংলাদেশ। রেমিটেন্সের পরিমান হচ্ছে ৩৭১.৬ কোটি ডলার। এটা হল বিশ্ব ব্যাংকের প্রকাশিত ২০১২ সালের হিসাব। অথচ প্রতিনিয়ত ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাংলাদেশের অভ্যন্তরে গুলি চালিয়ে নাগরিকদের হত্যা করছে। দুনিয়ার কোন দেশের সীমান্তে এভাবে মানুষ খুনের নজির নেই। এমনকি বিরোধপূর্ণ ইসরাইল এব ফিলিস্তিনের সীমান্তেও বছরে এত লোক নিহত হয় না, যতলোক নিহত হন বাংলাদেশ ভারত সীমান্তে। ্
সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের প্রকাশিত ২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশে কর্মরত অবৈধ ইন্ডিয়ানরা বছরে ৩ দশমিক ৭৮ বিলিয়ন ডলার নিজ দেশে নিয়ে গেছে। স্থানীয় মুদ্রায় যা ৩০ হাজার কোটি টাকা। ২০১৬ সালে এই পরিমান আরও বেশি হওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করা হয়। জাতীয় বিনিয়োগ বোর্ড ও পাসপোর্ট অধিদফতরের কাছেও দেশে অবৈধ ভারতীয় নাগরিকদের সঠিক হিসেব নেই।
সম্প্রতি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জাতীয় সংসদে এক প্রশ্নের উত্তরে জানিয়েছিলেন বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে ২০ হাজার ৬৫৬ জন ভারতীয় নাগরিক কাজ করছেন। পুলিশের বিশেষ শাখা থেকেও পাওয়া গেছে একই হিসাব। পুলিশের বিশেষ শাখার সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, ২০১৬ সালের জুনের পর তারা এ হিসেব আফডেট করেনি। বিশেষ শাখা ও স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে দেশে বৈধভাবে ১ লাখ ১১ হাজার ৫৭৫ জন বিদেশী নাগরিক কাজ করেন।
সংশ্লিষ্টরা জানান, দেশে সাত লাখের বেশি অবৈধ বিদেশী নাগরিক রয়েছে। এরমধ্যে ৫ লাখের বেশি হচ্ছে ইন্ডিয়ান। এরপরই রয়েছে শ্রীলঙ্কা, থাইল্যান্ড ও চিনের নাগরিক। কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই এরা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করছে। এমন কী এরা নিজ দেশে টাকাও পাঠাচ্ছে। তারা ট্যুরিস্ট ভিষায় বাংলাদেশে এসে মাসের পর মাস এমনকি বছরের পর বছর কাজ করছে। গ্রামে গঞ্জে, দেশের আনাছে কানাছে নির্বিঘেœ ঘুরে বেড়াচ্ছে।
সংশ্লিষ্টরা জানান, বাংলাদেশে মোট তিনটি প্রতিষ্ঠান থেকে বিদেশীদের কাজের অনুমতি দেয়া হয়। এগুলো হল- বিনিয়োগ বোর্ড, বাংলাদেশ এক্সপোর্ট প্রসেসিং জোন অথরিটি (বেপজা) এবং এনজিও ব্যুরো। এই তিন প্রতিষ্ঠানের তথ্য বলছে, বৈধভাবে মাত্র সাড়ে ১৬ হাজার বিদেশী দেশে কাজ করছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থমন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুসারে দেশে বিদেশীদের সংখ্যা ২ লাখের কিছু বেশি। আর বেসরকারি সংস্থাগুলির হিসেবে এই সংখ্যা প্রায় সাত লাখ। প্রতিবছর এরা ৬ থেকে ৭ বিলিয়ন ডলারের সমপরিমাণ অর্থ নিজ দেশে নিয়ে যাচ্ছে।
এদিকে গত ২৫ জুন জাতীয় সংসদে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, বর্তমানে দেশে বৈধভাবে ১ লাখ ১১ হাজার ৫৭৫ জন বিদেশী নাগরিক রয়েছেন। এরমধ্যে ২০ হাজার ৬৫৬ জন ভারতীয়। আর মোট ৯১০ জন বিদেশী নাগরিকের ভিসার মেয়াদ শেষ হয়েছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আরও বলেন, বাংলাদেশে অবৈধভাবে বসবাস করছেন এমন বিদেশীদের একটি তালিকা তৈরির কাজ চলছে। এর আগে একটি তালিকা থাকলেও সে তালিকা অনুযায়ী অবৈধ এসব বিদেশিদের বাংলাদেশে বর্তমান অবস্থানের বিষয়টি স্পষ্ট নয়। অবৈধ বিদেশিদের শনাক্ত করতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে এবং মাঝে-মধ্যেই অভিযান চালানো হচ্ছে বলে জানান তিনি।
সূত্র জানায়, বিনিয়োগ বোর্ড থেকে অনুমতি নিয়ে বর্তমানে ১৪ হাজার বিদেশী কাজ করছে। আর বেপজার অনুমতি নিয়ে ২ হাজার এবং এনজিও ব্যুরো থেকে অনুমতি নিয়ে ৫০০ বিদেশি নাগরিক কাজ করছে। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, দেশে বিদেশী জনশক্তির সংখ্যা ২ লাখ। বিদায়ী ২০১৫ সালে তারা ৫ বিলিয়ন ডলার অর্থ নিজ দেশে নিয়ে গেছে। স্থানীয় মুদ্রায় যা ৪০ হাজার কোটি টাকা। যা দিয়ে কমপক্ষে দুটি পদ্মাসেতু তৈরি করা সম্ভব। এছাড়া এই পরিমাণ অর্থ দেশের মোট রেমিট্যান্সের এক তৃতীয়াংশ। এর অর্থ হল প্রবাসীরা যে পরিমাণ রেমিট্যান্স পাঠাচ্ছে, তার এক তৃতীয়াংশই বাইরে চলে যাচ্ছে। অর্থমন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশিত দক্ষতা উন্নয়ন : উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের অগ্রাধিকার শীর্ষক এক প্রকাশনায়ও এ তথ্য উল্লে¬খ করা হয়েছে।
বিনিয়োগের নির্বাহী সদস্য নাভাস চ›ঁদ্র মন্ডল সাংবাদিকদের জানান, বিদেশী নাগরিকদের ওয়ার্ক পারমিট নিতে হলে যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করবে, ওই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। বিনিয়োগ বোর্ডে আবেদন করলে আমরা নিরাপত্তা সংক্রান্ত ব্যাপারে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মতামত নেই। মন্ত্রণালয়ের ইতিবাচক মতামত এলে প্রথমে এক বছরের জন্য কাজের অনুমতি দেয়া হয়। পরবর্তীতে আবেদন করলে নবায়ন করা হয়। তিনি বলেন, ওয়ার্ক পারমিটের মেয়াদ শেষ হওয়ার পরও কেউ কাজ করলে সেটা দেখার দায়িত্ব স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের। বিনিয়োগ বোর্ড থেকে বিষয়টি নজরদারি করা হয় না। ্এসব অবৈধ বিদেশীরা শুধু দেশের নাগরিকদের কর্মসংস্থানেই সংকট সৃষ্টি করছেন না, একই সঙ্গে তাঁরা দেশের প্রচলিত আইন উপেক্ষা করে রাজস্বও ফাঁকি দিচ্ছেন। বর্তমান আইনে বিদেশি নাগরিকদের অর্জিত আয়ের ৩০ শতাংশ কর দেয়ার নিয়ম রয়েছে। কিন্তু অবৈধভাবে কাজ করার কারণে তারা কর দিচ্ছেন না। আয়কর অধ্যাদেশ অনুসারে বাংলাদেশী কোনো প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ক পারমিট ছাড়া বিদেশীদের নিয়োগ দিলে ওই কোম্পানির প্রদেয় আয়করের সর্বোচ্চ ৫০ শতাংশ বা কমপক্ষে পাঁচ লাখ টাকা জরিমানার বিধান আছে। কিন্তু সরকারের সদিচ্ছার অভাবে এই বিধান কার্যকর হচ্ছে না। ফলে প্রতিবছর বিপুল অংকের রাজস্ব হারাচ্ছে