ঢাকা ১১:৪৩ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৬ মার্চ ২০২৫, ২ চৈত্র ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
বিশ্বনাথে শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ, যুবক গ্রেপ্তার সুনামগঞ্জে চলন্ত সিএনজিতে কিশোরীকে ধর্ষণচেষ্টা, আটক ২ ‘মানুষের উন্নয়নে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বারবার রক্ষা করেছেন খালেদা জিয়া’ জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠকঃ দ্রুত নির্বাচনের দাবি বিএনপির “যুক্তরাজ্য যুবদলের সভাপতি আফজাল হোসেনকে ইলিয়াস পত্নী তাহসিনা রুশদির লুনার অভিনন্দন” বায়ান্নের ভাষা শহীদদের প্রতি নর্থইষ্ট বিএনপির শ্রদ্ধা নিবেদন প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে জয় লাভ করেন সোয়াবই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বালিকারা “সিলেট প্রদেশ প্রতিষ্ঠার দাবীতে লন্ডনে গ্রেটার সিলেট কমিউনিটি ইউকের সভা অনুষ্ঠিত” জাউয়াবাজারে বিএনপি নেতাকে মিথ্যা মামলায় গ্রেফতারে ব্যবসায়ীদের প্রতিবাদ সমাবেশ গৃহহীন পরিবারের পুনর্বাসনের লক্ষ্য জয়তুন ওয়েলফেয়ার ট্রাস্টের উদ্যোগে সংবর্ধনা ও গৃহ নির্মাণের শুভ উদ্বোধন অনুষ্ঠিত

ব্লগার হত্যার বিচারে সরকারের অঙ্গীকারের পরীক্ষা

স্টাফ রিপোর্টার,

পাঁচ সন্দেহভাজন চরমপন্থী জঙ্গীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ব্লগার হত্যার অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে এ সপ্তাহে। সরকার দেশের ব্লগারদের সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে – তা প্রমাণের জন্য এটি একটি সুযোগ। মার্চে ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যাকা-ের মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগটি এ বছর নিহত চার ব্লগার হত্যাকা-ে অভিযোগ দায়েরের প্রথম ঘটনা। গত কয়েক সপ্তাহে বাকী তিন হত্যাকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগেও পুলিশ কয়েকজনকে আটক করেছে। এরপরও এসব মামলায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কিনা, তা নিয়ে সমালোচকরা এখনও সন্দিহান। কিন্তু বাবু হত্যা মামলাটি সরকারী কর্মকর্তাদের জন্য শক্ত অবস্থান গ্রহণের দারুণ সুযোগ বয়ে এনেছে।
কেন? কারণ, আক্রমণকারীদের হাতেনাতে ধরেছে সংখ্যালঘু হিজড়া সম্প্রদায়ের সদস্যরা। খুন করে পালিয়ে যাবার সময় খুনীদের আটক করে তারা। এরপর তাদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের এবং আদালতে গ্রহণযোগ্য সাজা প্রদানের মধ্যে অবশ্যই বিস্তর ফারাক রয়েছে। ঢাকার একটি আদালত এখন সিদ্ধান্ত নেবে এ মামলাটি বিচারিক প্রক্রিয়ায় আসবে নাকি আরও তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে। অনেক ব্লগার এ বিষয়ে সংশয়ে রয়েই গেছেন। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হবার পর কোনো মতে বেঁচে যাওয়া ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন বলেন, সাম্প্রতিক গ্রেপ্তারের ঘটনাগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের মুখ রক্ষার প্রচেষ্টা। কেননা, ব্লগারদের রক্ষায় ব্যাপক আন্তর্জাতিক চাপে পড়েই সরকার এসবে বাধ্য হয়েছে। সিপিজে’কে তিনি বলেন, আমি সরকারকে বিশ্বাস করি না। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও চাপ মোকাবেলা করতে এসব গ্রেপ্তার স্রেফ আই-ওয়াশ। আসিফ মহিউদ্দিনের শঙ্কা, যারা এখন কারাগারে আছে, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ দুর্বল চার্জশিট গঠন করবে। ফলে এক পর্যায়ে তারা কারাগার থেকে বেরিয়ে যাবে।
কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ পোষণ করার বহু কারণ রয়েছে মহিউদ্দিনের। তার ওপর হামলার পর, অভিযুক্ত কয়েকজন হামলাকারীকে পুলিশ আটক করেছিল। কিন্তু কিছুদিন পরই তারা জামিনে মুক্তি পায় এবং ব্লগারদের ওপর পরবর্তীতে আরও হামলা চালায়। ব্লগার নীলয় নীল হত্যাকা-ের ঘটনায় আরও ২ জনকে গ্রেপ্তারের কথা বৃহ¯পতিবার ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। পুলিশ স্বীকার করেছে, এরাই ২০১৩ সালে মহিউদ্দিনের ওপর ছুরিকাঘাতের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিল এবং পরে জামিনে মুক্তি পেয়েছিল।
এর আগে নীলয় নীল খুনের দায়ে ২ এবং অভিজিৎ রায় ও অনন্ত বিজয় দাস হত্যাকা-ে কথিত ১ মূল হোতা সহ মোট ৩ সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কিন্তু এসব গ্রেপ্তারের তাৎপর্য নিয়ে কিছু ব্লগার নিজেদের সংশয় প্রকাশ করলেন। মৃত্যুর হুমকি পাবার পর সম্প্রতি দেশ ছেড়ে যাওয়া অনন্য আজাদের মনে সন্দেহ, আদৌ কর্তৃপক্ষ প্রকৃত দায়ী ও হোতাদের ধরছে কিনা। এসব গ্রেপ্তারের ঘটনায় আদৌ পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে কিনা, তা নিয়েও তিনি নিশ্চিত নন। তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত হতে পারছি না, এসব গ্রেপ্তার আদৌ সহায়ক হবে কিনা। দেখি কর্তৃপক্ষ কী খুঁজে পায়।
ওয়াশিকুর রহমান বাবু’র খুনীদের বিচারের মুখোমুখি করা হলে সরকারের ওপর ব্লগারদের আস্থা পুনঃস্থাপিত হতে পারে। এতে করে ব্লগার হত্যাকারীদের দায়মুক্তি থামাতে এক ধাপ অগ্রগতিও হবে।
[লেখক: সুমিত গালহোত্রা কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে)’র এশিয়া প্রোগ্রামের গবেষণা সহযোগী। তিনি সংস্থাটির প্রথম স্টেইজার ফেলো হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া কাজ করেছেন সিএনএন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউএসএ ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচে। তিনি লন্ডন, ভারত, ইসরাইল ও দখলকৃত ফিলিস্তিন থেকে তিনি কাজ করেছেন। মানবাধিকার ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ে তিনি একজন বিশেষজ্ঞ। ওপরের লেখাটি সিপিজে’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তার নিবন্ধের অনুবাদ।]

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

বিশ্বনাথে শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ, যুবক গ্রেপ্তার

ব্লগার হত্যার বিচারে সরকারের অঙ্গীকারের পরীক্ষা

আপডেট সময় : ০৯:২২:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩ সেপ্টেম্বর ২০১৫

স্টাফ রিপোর্টার,

পাঁচ সন্দেহভাজন চরমপন্থী জঙ্গীর বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ব্লগার হত্যার অভিযোগ দাখিল করা হয়েছে এ সপ্তাহে। সরকার দেশের ব্লগারদের সুরক্ষার বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে নিচ্ছে – তা প্রমাণের জন্য এটি একটি সুযোগ। মার্চে ওয়াশিকুর রহমান বাবু হত্যাকা-ের মামলায় আনুষ্ঠানিক অভিযোগটি এ বছর নিহত চার ব্লগার হত্যাকা-ে অভিযোগ দায়েরের প্রথম ঘটনা। গত কয়েক সপ্তাহে বাকী তিন হত্যাকা-ে জড়িত থাকার অভিযোগেও পুলিশ কয়েকজনকে আটক করেছে। এরপরও এসব মামলায় ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে সরকার প্রতিশ্রুতিবদ্ধ কিনা, তা নিয়ে সমালোচকরা এখনও সন্দিহান। কিন্তু বাবু হত্যা মামলাটি সরকারী কর্মকর্তাদের জন্য শক্ত অবস্থান গ্রহণের দারুণ সুযোগ বয়ে এনেছে।
কেন? কারণ, আক্রমণকারীদের হাতেনাতে ধরেছে সংখ্যালঘু হিজড়া সম্প্রদায়ের সদস্যরা। খুন করে পালিয়ে যাবার সময় খুনীদের আটক করে তারা। এরপর তাদের পুলিশের হাতে সোপর্দ করে। আনুষ্ঠানিক অভিযোগ দায়ের এবং আদালতে গ্রহণযোগ্য সাজা প্রদানের মধ্যে অবশ্যই বিস্তর ফারাক রয়েছে। ঢাকার একটি আদালত এখন সিদ্ধান্ত নেবে এ মামলাটি বিচারিক প্রক্রিয়ায় আসবে নাকি আরও তদন্তের প্রয়োজন রয়েছে। অনেক ব্লগার এ বিষয়ে সংশয়ে রয়েই গেছেন। ২০১৩ সালের জানুয়ারিতে দুর্বৃত্তদের হামলার শিকার হবার পর কোনো মতে বেঁচে যাওয়া ব্লগার আসিফ মহিউদ্দিন বলেন, সাম্প্রতিক গ্রেপ্তারের ঘটনাগুলো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সরকারের মুখ রক্ষার প্রচেষ্টা। কেননা, ব্লগারদের রক্ষায় ব্যাপক আন্তর্জাতিক চাপে পড়েই সরকার এসবে বাধ্য হয়েছে। সিপিজে’কে তিনি বলেন, আমি সরকারকে বিশ্বাস করি না। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যম ও চাপ মোকাবেলা করতে এসব গ্রেপ্তার স্রেফ আই-ওয়াশ। আসিফ মহিউদ্দিনের শঙ্কা, যারা এখন কারাগারে আছে, তাদের বিরুদ্ধে পুলিশ দুর্বল চার্জশিট গঠন করবে। ফলে এক পর্যায়ে তারা কারাগার থেকে বেরিয়ে যাবে।
কর্তৃপক্ষের উদ্দেশ্য নিয়ে সন্দেহ পোষণ করার বহু কারণ রয়েছে মহিউদ্দিনের। তার ওপর হামলার পর, অভিযুক্ত কয়েকজন হামলাকারীকে পুলিশ আটক করেছিল। কিন্তু কিছুদিন পরই তারা জামিনে মুক্তি পায় এবং ব্লগারদের ওপর পরবর্তীতে আরও হামলা চালায়। ব্লগার নীলয় নীল হত্যাকা-ের ঘটনায় আরও ২ জনকে গ্রেপ্তারের কথা বৃহ¯পতিবার ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। পুলিশ স্বীকার করেছে, এরাই ২০১৩ সালে মহিউদ্দিনের ওপর ছুরিকাঘাতের দায়ে অভিযুক্ত হয়েছিল এবং পরে জামিনে মুক্তি পেয়েছিল।
এর আগে নীলয় নীল খুনের দায়ে ২ এবং অভিজিৎ রায় ও অনন্ত বিজয় দাস হত্যাকা-ে কথিত ১ মূল হোতা সহ মোট ৩ সন্দেহভাজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। কিন্তু এসব গ্রেপ্তারের তাৎপর্য নিয়ে কিছু ব্লগার নিজেদের সংশয় প্রকাশ করলেন। মৃত্যুর হুমকি পাবার পর সম্প্রতি দেশ ছেড়ে যাওয়া অনন্য আজাদের মনে সন্দেহ, আদৌ কর্তৃপক্ষ প্রকৃত দায়ী ও হোতাদের ধরছে কিনা। এসব গ্রেপ্তারের ঘটনায় আদৌ পরিস্থিতির পরিবর্তন হবে কিনা, তা নিয়েও তিনি নিশ্চিত নন। তিনি বলেন, আমি নিশ্চিত হতে পারছি না, এসব গ্রেপ্তার আদৌ সহায়ক হবে কিনা। দেখি কর্তৃপক্ষ কী খুঁজে পায়।
ওয়াশিকুর রহমান বাবু’র খুনীদের বিচারের মুখোমুখি করা হলে সরকারের ওপর ব্লগারদের আস্থা পুনঃস্থাপিত হতে পারে। এতে করে ব্লগার হত্যাকারীদের দায়মুক্তি থামাতে এক ধাপ অগ্রগতিও হবে।
[লেখক: সুমিত গালহোত্রা কমিটি টু প্রোটেক্ট জার্নালিস্ট (সিপিজে)’র এশিয়া প্রোগ্রামের গবেষণা সহযোগী। তিনি সংস্থাটির প্রথম স্টেইজার ফেলো হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। এছাড়া কাজ করেছেন সিএনএন, অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল ইউএসএ ও হিউম্যান রাইটস ওয়াচে। তিনি লন্ডন, ভারত, ইসরাইল ও দখলকৃত ফিলিস্তিন থেকে তিনি কাজ করেছেন। মানবাধিকার ও দক্ষিণ এশিয়া বিষয়ে তিনি একজন বিশেষজ্ঞ। ওপরের লেখাটি সিপিজে’র ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তার নিবন্ধের অনুবাদ।]