ঢাকা ০১:৩২ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১৮ মে ২০২৫, ৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
প্রবাসে স্বৈরাচারের দোসরদের আস্ফালন, ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতারের দাবি নাসিম আহমদ চৌধুরীর বিজয়নগরে স্কুল শিক্ষিকাকে বেধড়ক পিটিয়ে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার লুটপাট “লন্ডনে ‘প্রবাসীদের ক্ষমতায়ন: অধিকার, স্বীকৃতি ও জাতি গঠন – একটি এনআরবি প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক সেমিনার ও ইফতার মাহফিল অনুষ্টিত বিশ্বনাথে শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ, যুবক গ্রেপ্তার সুনামগঞ্জে চলন্ত সিএনজিতে কিশোরীকে ধর্ষণচেষ্টা, আটক ২ ‘মানুষের উন্নয়নে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বারবার রক্ষা করেছেন খালেদা জিয়া’ জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠকঃ দ্রুত নির্বাচনের দাবি বিএনপির “যুক্তরাজ্য যুবদলের সভাপতি আফজাল হোসেনকে ইলিয়াস পত্নী তাহসিনা রুশদির লুনার অভিনন্দন” বায়ান্নের ভাষা শহীদদের প্রতি নর্থইষ্ট বিএনপির শ্রদ্ধা নিবেদন প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে জয় লাভ করেন সোয়াবই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বালিকারা

ভয়ঙ্কর জঙ্গি’ কে এই মুফতি হান্নান?


হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের জঙ্গিরা দেশে সাত বছরে অন্তত ১৭টি নাশকতামূলক ঘটনা ঘটায়। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১০১ জন। আহত হয়েছেন ৬০৯ জন। এসব হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন হুজি ও হরকাতুল মুজাহিদীনের অন্যতম শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান। এর মধ্যে একটি হামলা ও দুটি হামলাচেষ্টার ঘটনার মূল লক্ষ্যবস্তু ছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার রাতে সিলেটে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় ফাঁসির দণ্ড পাওয়া আসামি হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানকে কাশিমপুর কারাগারে মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনানো হয়েছে। এরপর থেকেই আলোচনায় আসে কে এই মুফতি হান্নান?

গত বছরের ৭ ডিসেম্বর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে মুফতি হান্নানসহ তিন জঙ্গির আপিল শুনানির পর তা খারিজ করেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপর দুই আসামি আপিল না করায় তাদের আগের রায়ই বহাল রয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টাসহ হরকাতুল জিহাদের ১৩টি নাশকতামূলক ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যার পেছনের মূল ব্যক্তি বলে মনে করা হয় মুফতি হান্নানকে।

প্রসঙ্গত গত ১৭ জানুয়ারি আপিল বিভাগের ৬৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করা হয়। এখন আসামিরা রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারবেন। সেটিও খারিজ হলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন আসামিরা। তবে রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হলে রায় কার্যকরে আর কোনো বাধা থাকবে না। এসব বোমা ও গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মুফতি হান্নানের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা হয়েছে। দুটির বিচার শেষ হয়েছে। এর মধ্যে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার দায়ে মুফতি হান্নানসহ তিন জঙ্গির ফাঁসি ও দুজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। এ মামলায় আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন করে গতকাল বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট আদেশ দেন।

এ ছাড়া ২০০১ সালে রমনায় বাংলা নববর্ষবরণের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা মামলায় হান্নানসহ হুজির আট জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ মামলার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন) হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায় আছে। হান্নানের বিরুদ্ধে থাকা আরও ১৩টি মামলার বিচার চলছে। দুটির অধিকতর তদন্ত চলছে। মুফতি হান্নান ২০০৬ সালের ১৯ নভেম্বর এবং ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর দুই দফায় ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে এসব হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের বিস্তারিত বিবরণ দেন।

এর আগে ২০০৫ সালের ১ অক্টোবর রাজধানীর বাড্ডার বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন মুফতি হান্নান। এরপর বিভিন্ন মামলায় টানা ১শ ২০ দিন রিমান্ডে ছিলেন তিনি। তখনই গোয়েন্দাদের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে মুফতি হান্নান শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করাসহ বিভিন্ন হামলায় জড়িত থাকার বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ দেন। কিন্তু তা তৎকালীন সরকার প্রকাশ করেনি।

বরং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। গোয়েন্দাদের কাছে দেওয়া হান্নানের ওই জবানবন্দি প্রথম ২০০৭ সালের ২১ আগস্ট একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাসহ বিভিন্ন মামলা নতুন করে তদন্তের উদ্যোগ নেয়।

জানা গেছে, মুফতি হান্নানের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ায়। তাঁর জবানবন্দি থেকে জানা যায়, তিনি গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসা ও বরিশালের শর্ষিনা আলিয়া মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেন। এরপর ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখানে দাওরা হাদিস পড়াকালে ১৯৮৭ সালে ওই দেশের আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক শিক্ষায় স্নাতকোত্তর পাস করেন। পরের বছর ১৯৮৮ সালে তিনি পাকিস্তানে যান এবং করাচির জামিয়া ইউসুফ বিন নূরিয়া মাদ্রাসায় ফিকাহশাস্ত্রে ভর্তি হন। সেখান থেকে তিনি সীমান্তবর্তী শহর খোস্তে মুজাহিদ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়ে আফগানিস্তানে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধে আহত হয়ে তিনি পেশোয়ারে কুয়েত আল-হেলাল হাসপাতালে ১০ মাস চিকিৎসা নেন। এরপর করাচির ওই মাদ্রাসায় লেখাপড়া শেষ করেন।

মুফতি হান্নান ১৯৯৩ সালে দেশে ফেরেন এবং পাকিস্তানভিত্তিক হরকাতুল মুজাহিদীনের হয়ে তৎপরতা শুরু করেন। অবশ্য এর আগেই আফগানফেরত এদেশীয় মুজাহিদরা হুজি-বি গঠন করেন। মুফতি হান্নান ১৯৯৪ সালে হুজি-বিতে যোগ দেন। প্রথমে তিনি কোটালীপাড়া উপজেলার থানা প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পান। সাংগঠনিক দক্ষতায় অল্প দিনের মধ্যে তিনি হুজি-বির অন্যতম শীর্ষ নেতৃত্বে চলে আসেন। হুজিতে থাকার পাশাপাশি মুফতি হান্নান হরকাতুল মুজাহিদীনের হয়েও কার্যক্রম চালাতেন বলে জানা গেছে।

১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলার মধ্য দিয়ে এ দেশে গোপন জঙ্গি সংগঠন হুজি-বির নাশকতা শুরু হয়। হুজি-বির কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সিদ্ধান্তে মুফতি হান্নান ও মুফতি আবদুর রউফের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় এ হামলা হয় বলে হান্নানের জবানবন্দিতে উল্লেখ রয়েছে। ওই হামলায় ১০ জন নিহত ও দেড় শ জন আহত হন। যদিও তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এ ঘটনায় বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ফলে জঙ্গিদের বিষয়টি তখন আড়ালেই থেকে যায়।
এরপর একই বছরের ৮ অক্টোবর খুলনা শহরের আহমদিয়া মসজিদে বোমা হামলা হয়। তাতে আটজন নিহত হন। ২০০০ সালের জুলাইয়ে কোটালীপাড়ায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাস্থলের কাছাকাছি ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রেখে প্রথম আলোচনায় আসেন মুফতি হান্নান ও তাঁর দল। এরপর থেকে তিনি আত্মগোপনে থেকে তৎপরতা চালান। ২০০১ সালে ঢাকায় সিপিবির সমাবেশে, রমনার বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানসহ ছয়টি বোমা হামলার ঘটনা ঘটায় জঙ্গিরা। এরপর শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালায় ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে তাঁর সমাবেশে। এতে আওয়ামী লীগের ২২ জন নেতা-কর্মী নিহত হন। আহত হন শেখ হাসিনাসহ শতাধিক ব্যক্তি।

তার আগে ওই বছরের ২১ মে সিলেটে হজরত শাহজালাল (র.)-এর মাজারে বাংলাদেশে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর এবং ৭ আগস্ট সিলেটের তৎকালীন মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের ওপর গ্রেনেড হামলা চালায় হুজি-বির জঙ্গিরা। হান্নানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় সর্বশেষ গ্রেনেড হামলা হয় ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জে এক সমাবেশে। ওই হামলায় আওয়ামী লীগের নেতা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াসহ পাঁচজন নিহত হন।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

প্রবাসে স্বৈরাচারের দোসরদের আস্ফালন, ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতারের দাবি নাসিম আহমদ চৌধুরীর

ভয়ঙ্কর জঙ্গি’ কে এই মুফতি হান্নান?

আপডেট সময় : ০৬:৩৪:৩৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৭ ফেব্রুয়ারী ২০১৭


হরকাতুল জিহাদ আল ইসলামী বাংলাদেশের জঙ্গিরা দেশে সাত বছরে অন্তত ১৭টি নাশকতামূলক ঘটনা ঘটায়। এসব ঘটনায় নিহত হয়েছেন ১০১ জন। আহত হয়েছেন ৬০৯ জন। এসব হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী ছিলেন হুজি ও হরকাতুল মুজাহিদীনের অন্যতম শীর্ষ নেতা মুফতি আবদুল হান্নান। এর মধ্যে একটি হামলা ও দুটি হামলাচেষ্টার ঘটনার মূল লক্ষ্যবস্তু ছিলেন তৎকালীন বিরোধী দলীয় নেত্রী ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

মঙ্গলবার রাতে সিলেটে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় ফাঁসির দণ্ড পাওয়া আসামি হরকাতুল জিহাদ নেতা মুফতি আবদুল হান্নানকে কাশিমপুর কারাগারে মৃত্যু পরোয়ানা পড়ে শোনানো হয়েছে। এরপর থেকেই আলোচনায় আসে কে এই মুফতি হান্নান?

গত বছরের ৭ ডিসেম্বর মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রেখে হাই কোর্টের দেওয়া রায়ের বিরুদ্ধে মুফতি হান্নানসহ তিন জঙ্গির আপিল শুনানির পর তা খারিজ করেন প্রধান বিচারপতি এস কে সিনহার নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ। যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত অপর দুই আসামি আপিল না করায় তাদের আগের রায়ই বহাল রয়েছে। ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যাচেষ্টাসহ হরকাতুল জিহাদের ১৩টি নাশকতামূলক ঘটনায় শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যার পেছনের মূল ব্যক্তি বলে মনে করা হয় মুফতি হান্নানকে।

প্রসঙ্গত গত ১৭ জানুয়ারি আপিল বিভাগের ৬৫ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়টি প্রকাশ করা হয়। এখন আসামিরা রায় পুনর্বিবেচনার আবেদন করতে পারবেন। সেটিও খারিজ হলে রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষা চাইতে পারেন আসামিরা। তবে রাষ্ট্রপতি প্রাণভিক্ষার আবেদন খারিজ হলে রায় কার্যকরে আর কোনো বাধা থাকবে না। এসব বোমা ও গ্রেনেড হামলার ঘটনায় মুফতি হান্নানের বিরুদ্ধে ১৭টি মামলা হয়েছে। দুটির বিচার শেষ হয়েছে। এর মধ্যে সাবেক ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলার দায়ে মুফতি হান্নানসহ তিন জঙ্গির ফাঁসি ও দুজনের যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন বিচারিক আদালত। এ মামলায় আসামিদের মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন করে গতকাল বৃহস্পতিবার হাইকোর্ট আদেশ দেন।

এ ছাড়া ২০০১ সালে রমনায় বাংলা নববর্ষবরণের অনুষ্ঠানে বোমা হামলা মামলায় হান্নানসহ হুজির আট জঙ্গির মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন আদালত। এ মামলার ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ডাদেশ অনুমোদন) হাইকোর্টে শুনানির অপেক্ষায় আছে। হান্নানের বিরুদ্ধে থাকা আরও ১৩টি মামলার বিচার চলছে। দুটির অধিকতর তদন্ত চলছে। মুফতি হান্নান ২০০৬ সালের ১৯ নভেম্বর এবং ২০০৭ সালের ১ নভেম্বর দুই দফায় ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়ে এসব হামলার পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের বিস্তারিত বিবরণ দেন।

এর আগে ২০০৫ সালের ১ অক্টোবর রাজধানীর বাড্ডার বাসা থেকে গ্রেপ্তার হন মুফতি হান্নান। এরপর বিভিন্ন মামলায় টানা ১শ ২০ দিন রিমান্ডে ছিলেন তিনি। তখনই গোয়েন্দাদের কাছে দেওয়া জবানবন্দিতে মুফতি হান্নান শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা করাসহ বিভিন্ন হামলায় জড়িত থাকার বিষয়ে বিস্তারিত বিবরণ দেন। কিন্তু তা তৎকালীন সরকার প্রকাশ করেনি।

বরং ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলার তদন্ত ভিন্ন খাতে নেওয়ার চেষ্টা করে। গোয়েন্দাদের কাছে দেওয়া হান্নানের ওই জবানবন্দি প্রথম ২০০৭ সালের ২১ আগস্ট একটি পত্রিকায় প্রকাশিত হয়। তখন তত্ত্বাবধায়ক সরকার ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলাসহ বিভিন্ন মামলা নতুন করে তদন্তের উদ্যোগ নেয়।

জানা গেছে, মুফতি হান্নানের বাড়ি গোপালগঞ্জ জেলার কোটালীপাড়ায়। তাঁর জবানবন্দি থেকে জানা যায়, তিনি গোপালগঞ্জের গওহরডাঙ্গা মাদ্রাসা ও বরিশালের শর্ষিনা আলিয়া মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেন। এরপর ভারতের দেওবন্দ মাদ্রাসায় ভর্তি হন। সেখানে দাওরা হাদিস পড়াকালে ১৯৮৭ সালে ওই দেশের আলীগড় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ইসলামিক শিক্ষায় স্নাতকোত্তর পাস করেন। পরের বছর ১৯৮৮ সালে তিনি পাকিস্তানে যান এবং করাচির জামিয়া ইউসুফ বিন নূরিয়া মাদ্রাসায় ফিকাহশাস্ত্রে ভর্তি হন। সেখান থেকে তিনি সীমান্তবর্তী শহর খোস্তে মুজাহিদ ক্যাম্পে প্রশিক্ষণ নিয়ে আফগানিস্তানে সোভিয়েত বাহিনীর বিরুদ্ধে যুদ্ধে অংশ নেন। যুদ্ধে আহত হয়ে তিনি পেশোয়ারে কুয়েত আল-হেলাল হাসপাতালে ১০ মাস চিকিৎসা নেন। এরপর করাচির ওই মাদ্রাসায় লেখাপড়া শেষ করেন।

মুফতি হান্নান ১৯৯৩ সালে দেশে ফেরেন এবং পাকিস্তানভিত্তিক হরকাতুল মুজাহিদীনের হয়ে তৎপরতা শুরু করেন। অবশ্য এর আগেই আফগানফেরত এদেশীয় মুজাহিদরা হুজি-বি গঠন করেন। মুফতি হান্নান ১৯৯৪ সালে হুজি-বিতে যোগ দেন। প্রথমে তিনি কোটালীপাড়া উপজেলার থানা প্রচার সম্পাদকের দায়িত্ব পান। সাংগঠনিক দক্ষতায় অল্প দিনের মধ্যে তিনি হুজি-বির অন্যতম শীর্ষ নেতৃত্বে চলে আসেন। হুজিতে থাকার পাশাপাশি মুফতি হান্নান হরকাতুল মুজাহিদীনের হয়েও কার্যক্রম চালাতেন বলে জানা গেছে।

১৯৯৯ সালের ৬ মার্চ যশোরে উদীচীর অনুষ্ঠানে বোমা হামলার মধ্য দিয়ে এ দেশে গোপন জঙ্গি সংগঠন হুজি-বির নাশকতা শুরু হয়। হুজি-বির কেন্দ্রীয় মজলিসে শুরার সিদ্ধান্তে মুফতি হান্নান ও মুফতি আবদুর রউফের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় এ হামলা হয় বলে হান্নানের জবানবন্দিতে উল্লেখ রয়েছে। ওই হামলায় ১০ জন নিহত ও দেড় শ জন আহত হন। যদিও তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে এ ঘটনায় বিএনপির নেতাদের বিরুদ্ধে মামলা হয়। ফলে জঙ্গিদের বিষয়টি তখন আড়ালেই থেকে যায়।
এরপর একই বছরের ৮ অক্টোবর খুলনা শহরের আহমদিয়া মসজিদে বোমা হামলা হয়। তাতে আটজন নিহত হন। ২০০০ সালের জুলাইয়ে কোটালীপাড়ায় তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভাস্থলের কাছাকাছি ৭৬ কেজি ওজনের বোমা পুঁতে রেখে প্রথম আলোচনায় আসেন মুফতি হান্নান ও তাঁর দল। এরপর থেকে তিনি আত্মগোপনে থেকে তৎপরতা চালান। ২০০১ সালে ঢাকায় সিপিবির সমাবেশে, রমনার বটমূলে বর্ষবরণ অনুষ্ঠানসহ ছয়টি বোমা হামলার ঘটনা ঘটায় জঙ্গিরা। এরপর শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশ্যে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট ভয়াবহ গ্রেনেড হামলা চালায় ঢাকার বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে তাঁর সমাবেশে। এতে আওয়ামী লীগের ২২ জন নেতা-কর্মী নিহত হন। আহত হন শেখ হাসিনাসহ শতাধিক ব্যক্তি।

তার আগে ওই বছরের ২১ মে সিলেটে হজরত শাহজালাল (র.)-এর মাজারে বাংলাদেশে তৎকালীন ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর এবং ৭ আগস্ট সিলেটের তৎকালীন মেয়র বদরউদ্দিন আহমদ কামরানের ওপর গ্রেনেড হামলা চালায় হুজি-বির জঙ্গিরা। হান্নানের পরিকল্পনা ও নির্দেশনায় সর্বশেষ গ্রেনেড হামলা হয় ২০০৫ সালের ২৭ জানুয়ারি হবিগঞ্জে এক সমাবেশে। ওই হামলায় আওয়ামী লীগের নেতা ও সাবেক অর্থমন্ত্রী শাহ এ এম এস কিবরিয়াসহ পাঁচজন নিহত হন।