আন্তর্জাতিক ডেস্কঃ গত কয়েক দশকের মধ্যে এ প্রথমবারের মতো নিজেদের দেশে বোমা হামলার শংকায় রয়েছেন বহু ইরানি। ২০১৫ সালে বিশ্ব পরাশক্তি দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের পরমাণু চুক্তির পর দেশটির বহু নাগরিক শান্তি ও স্বাচ্ছন্দ্যে জীবনযাপনের স্বপ্ন লালন করেছিলেন।
গত মাসে ক্ষমতায় বসার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের ওপর খক্ষহস্ত হন। ইরানসহ সাত মুসলিম দেশের অভিবাসীদের প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেন তিনি। পাল্টা হুমকিও দিচ্ছে তেহরান। পাল্টাপাল্টি হুমকি ধীরে ধীরে যুদ্ধের আশংকার দিকে এগোচ্ছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র ও ইরানের মধ্যে কূটনৈতিক বিরোধিতা সামরিক বিরোধিতায় গড়ানোর আশংকা রয়েছে।
রয়টার্সের খবরে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের হামলার শংকায় বহু ইরানি নাগরিক দেশ ছেড়ে পালিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা শুরু করে দিয়েছেন। দীর্ঘ ৮ বছরের ইরাক-ইরান যুদ্ধের সময়ও তারা এমনটা করছিলেন। কেনমানশাহ শহরের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক ঘোরবানালি আজহারি বলেন, ‘আমি আমার ছেলেকে পাসপোর্ট বানানোর জন্য বলেছি। যদি ইসরাইল বা আমেরিকা আমাদের ওপর হামলা চালায় তাহলে যেন গাড়িতে করে তুরস্কে পালিয়ে যেতে পারি। তখন বিমানবন্দর বন্ধ থাকবে বলেও জানান ৬৫ বছর বয়সী ওই শিক্ষক।’ ব্যাংক কর্মকর্তা হুমায়ন বারকোনদার বলেন, ‘আমি মনে করি ইরানের ওপর রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ সম্পন্ন হয়ে গেছে। এখন সামরিক হামলার জন্য গভীরভাবে শংকিত আমি।’ তিনি আরও বলেন, ‘কোনো দেশের সঙ্গে যুদ্ধ চাই না। আমি আমার দেশকে ভালোবাসি। আমরা শান্তিতে বসবাস করতে চাই।’ ইরানের মধ্যাঞ্চলীয় ইসফাহান শহরের বাসিন্দা আলি ঘারবেহ বলেন, ছোট শহরে পালিয়ে যাওয়ার চিন্তা করছি আমি। বড় শহরে বসবাসের চেয়ে জীবন বাঁচানো গুরুত্বপূর্ণ।’ ১৯৮০-৮৮ সালের ইসফাহান শহরে বোমা ফেলেছিল ইরাক। কাশান শহরের কম্পিউটার ইঞ্জিনিয়ার ফিরোজেহ হেনগাম বলেন, ‘আমি বরাবরই স্বপ্ন দেখতাম দুই সন্তানকে আমেরিকায় উচ্চশিক্ষার জন্য পাঠাব। কিন্তু নতুন মার্কিন প্রশাসন ইরানিদের প্রতি ঘৃণা ছড়িয়ে দিয়েছে।’ তবে বিশ্লেষকরা ইরান-আমেরিকা যুদ্ধের আশংকা উড়িয়ে দিচ্ছেন। তাদের দাবি, উপসাগরীয় অঞ্চলের তেলসমৃদ্ধ দেশ ইরানে সামরিক হামলা এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করবে যুক্তরাষ্ট্র। বহু ইরানি আমেরিকার সঙ্গে প্রয়োজনে যুদ্ধ হতে পারে বলেও হুমকি দিচ্ছেন। আরাশ কিয়া নামের এক তরুণ জানান, ‘বিশ্বে যাই হোক না কেন ইরানকে দোষারোপ করে তারা (আমেরিকা)। কিন্তু কেন? আমরা শান্তিপ্রিয় মানুষ। ইরানকে নিয়ে খেলা করার কোনো অধিকার আমেরিকার নেই। যদি যুক্তরাষ্ট্র হামলা চালায় তাহলে আমি ইরানের জন্য যুদ্ধ করতে প্রস্তুত আছি।’
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার জবাবে ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র মহড়া : যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞা আরোপের একদিন পর পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ডের সদস্যরা সামরিক মহড়ার আয়োজন করেছে। গত সপ্তাহে ইরানের ব্যালাস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র পরীক্ষার জবাবে শুক্রবার তেহরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা আনে যুক্তরাষ্ট্র। ইরানের ওপর এটি ট্রাম্প প্রশাসনে প্রথম নিষেধাজ্ঞা। জবাবে ইরান শনিবার ক্ষেপণাস্ত্র মহড়া শুরু করে। খবর এএফপি, বিবিসির। ইরানের মাঝারিপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র প্রায় ২ হাজার কিলোমিটার পর্যন্ত পৌঁছতে পারে, যা নিমিষেই ইসরাইল বা উপসাগরীয় মার্কিন ঘাঁটিতে আঘাত হানতে সক্ষম। তবে ইরানের রেভল্যুশনারি গার্ড জানায়, এবারের সামরিক মহড়ায় স্বল্পমাত্রার ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েন করা হবে, যেগুলো ৭৫ কিলোমিটারের বেশি দূরে আঘাত হানতে সক্ষম। গার্ডের ওয়েবসাইটে বলা হয়, এ মহড়ায় বিভিন্ন ধরনের দেশীয় রাডার, মিসাইল, সাইবার হামলা পদ্ধতির বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে।