9
বিশেষ প্রতিনিধি:রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপের ব্যাপারে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রীর দুই রকম বক্তব্যে তাদের সম্পর্কের অবনতি হয়েছে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছে বিএনপি।
নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনে রাষ্ট্রপতি আন্তরিকতার পরিচয় দেবেন এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে বিএনপির নেতারা বলেছেন, কাজী রকিবউদ্দিন আহমেদের মতো ‘দলীয় আনুগত্যের’ ইসি গঠন হলে সেটি মানবে না তারা।
নির্বাচনকালীন একটি নির্দলীয় ‘সহায়ক সরকার’ গঠনের দাবি জানিয়ে তারা বলেন, ‘দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচনে ইসি নিরপেক্ষ হলেও প্রতিষ্ঠানটি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না।’
বুধবার বিকালে রাজধানীর গুলিস্তানে ‘মহানগর নাট্যমঞ্চে’ এক আলোচনা সভায় বিএনপি নেতারা এসব কথা বলেন।
বিএনপির প্রতিষ্ঠাতা প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের ৮১তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজন করে বিএনপি।
ইসি গঠনে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতির সংলাপের প্রসঙ্গ টেনে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘বিএনপির সঙ্গে সরকারি দল আলোচনা করতে চায় না। তাহলে রাষ্ট্রপতি ডাকলেন কেন? এর মধ্যে কোনো ছলচাতুরী আছে কি না জানি না। তবে আমরা বিশ্বাস করতে চাই যে, আন্তরিকতা সঙ্গেই রাষ্ট্রপতি ডেকেছেন এবং আন্তরিকতার সঙ্গেই একটি নিরপেক্ষ সার্চ কমিটি গঠন করবেন, যার মাধ্যমে নিরপেক্ষ ইসি গঠন করা হবে। তা না হলে আগের মতো আবার মেরুদণ্ডহীন সরকারের বশংবদ ইসি গঠন করা হবে, যা কোনোদিনই এদেশের মানুষ মেনে নেবে না।’
বিএনপির আলোচনার মাধ্যমে সংকটের সমাধান চায় জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, ‘রাষ্ট্রপতি বলেছেন, রাজনৈতিক দলগুলোর সংলাপ করা উচিৎ। আমরা পরিষ্কার করে বলতে চাই, আমরা আলোচনা চাই, সংলাপ চাই। দেশে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশ সৃষ্টি হোক, দেশনেত্রী সেকথা বলেছেন। দুর্ভাগ্য প্রধানমন্ত্রী তা নাকচ করে দিয়েছেন।’
তিনি বলেন, ‘আমি জানি না রাষ্ট্রপতির সঙ্গে সরকারের সম্পর্কের কোনো অবনতি হয়েছে কি না? সেটা বলতেও চাই না। তবে বলতে চাই, রাষ্ট্রপতি যদি সত্যিকার অর্থেই আন্তরিকভাবে ডেকে থাকেন তাহলে তিনি সত্যি কথা বলেছেন যে, এদেশের মানুষ সংলাপের মাধ্যমেই সংকটের নিরসন দেখতে চায়। জনগণের সরকার প্রতিষ্ঠিত করতে চায়। জনগণের শাসন এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠিত করতে চায়।’
দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সংলাপের যে আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন সেটি ‘পাতানো ষড়যন্ত্রের চিত্র’ বলেও অভিহিত করেন বিএনপির এই নেতা।
মির্জা ফখরুল বলেন, গোটা বাংলাদেশ এখন অবরুদ্ধ। সব অধিকার কেড়ে নেয়া হয়েছে। এর বিরুদ্ধে সকল রাজনৈতিক দলগুলোকে সঙ্গে নিয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলে খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে অধিকার ফিরিয়ে আনতে লড়াই করতে হবে।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, বিএনপি নেত্রী খালেদা জিয়ার প্রস্তাব অনুযায়ী নিরপেক্ষ ইসি গঠন করে নিরপেক্ষ নির্বাচন করতে হবে। তা না হলে সৃষ্ট রাজনৈতিক সংকটের সমাধান হবে না।
দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য ব্যারিস্টার মওদুদ আহমদ বলেন, আওয়ামী লীগের অধীনে নিরপেক্ষ ইসি হলেও কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না। কারণ ’৭৩ সালের নির্বাচন থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত দলীয় সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন সুষ্ঠু হয়নি। ইসি স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারেনি। কিন্তু সহায়ক সরকার বা নির্দলীয় সরকারের অধীনে যত নির্বাচন হয়েছে সব নির্বাচন সুষ্ঠু হয়েছে। সেজন্য দলীয় সরকারকে রেখে ইসিকে একশভাগ শক্তিশালী করা হলেও কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে না।
দলীয় সরকারের আনুগত্য আছে এমন ব্যক্তিদের দিয়ে ‘সার্চ কমিটি গঠনের কথা শোনা যাচ্ছে’ জানিয়ে দলটির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান বলেন, ‘সার্চ কমিটিতে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে, তারা শুধু আওয়ামী লীগই নয়, তারা আওয়ামী লীগের চামচা। এদেরকে নির্বাচন কমিশন গঠনের দায়িত্ব দিলে তাহলে বুঝতে হবে সরকার আবার রকিব উদ্দিনের মতো কমিশন করে প্রহসনের নির্বাচন করতে চাইছে।
ইসি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে রাষ্ট্রপতি সংলাপের দিকে ইঙ্গিত করে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান হাফিজউদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘লোক দেখানোর জন্য আলোচনা করছে। নির্বাচন কমিশনের কাদের নিয়োগ দেওয়া হবে তা দুই বছর আগেই আ’লীগ চূড়ান্ত করে রেখেছে। সার্চ কমিটির মাধ্যমে আওয়ামী লীগের ক্যাডাররা নিয়োগ পেলে মানবো না।’
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের সভাপতিত্বে আরো বক্তব্য রাখেন দলের ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, ড. মাহবুব উল্লাহ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন উপাচার্য ড. খন্দকার মোস্তাহিদুর রহমান, বিএনপির প্রচার সম্পাদক শহীদউদ্দীন চৌধুরী এ্যানী। সভা সঞ্চলনা করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী।
সভায় সব বক্তারাই দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমানের বর্ণময় জীবনের ওপর আলোচনা করেন।