বৃদ্ধ এক রিকশাচালককে নিয়ে নিজের ফেসবুক ওয়ালে হৃদয়ছোঁয়া স্ট্যাটাস দিয়েছেন মফস্বলের এক সাংবাদিক। তানভীর হাসান তানু নামে ওই সাংবাদিক দৈনিক ইত্তেফাক ও ইন্ডিপেনডেন্ট টেলিভিশনের ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি।
অার বৃদ্ধ রিকশাচালক অাবুল হোসেনের বাড়ি সদর উপজেলার ছোট খোঁচাবাড়ি হাট এলাকায়। শহর থেকে ৪ কিলোমিটার পূর্ব দিকে এই এলাকাটির অবস্থান।
ওই সাংবাদিক বুধবার রাত সাড়ে ১১টার দিকে শহরের চৌরাস্তায় অাবুল হোসেনের রিকশায় ওঠেন এবং তার পারিবারিক পরিচিতি চান। দীর্ঘ অালাপচারিতায় অনেক কথা হয় তাদের মাঝে।
এক পর্যায়ে ওই রিকশাচালক জানান অাজ বৃহস্পতিবার দুপুরে তার মেয়ের বিয়ে। এলাকার চেয়ারম্যান ও মেম্বারের কাছে যা সাহায্য তুলেছেন সেটি খুবই অল্প। তাই বাড়তি অায়ের অাশায় প্রতিদিনের মতো তিনি রিকশা নিয়ে বেরিয়ে পড়েন।
পাঠকের জন্য ওই সাংবাদিকের ফেসবুক ওয়াল থেকে লেখাটি হুবহু তুলে ধরা হলো:
কাল মেয়ের বিয়ে, তাই আবুল হোসেন রিকশা নিয়ে…………..
সময় তখন রাত ১১.৩০ মিনিট। অফিস থেকে বের হয়ে রিকশার জন্য অপেক্ষা করছি। রিকশা না পেয়ে সামনে একটু হাঁটতে শুরু করলাম। পেছন থেকে ঝালমুড়িওয়ালা ফারুক ডাকতে শুরু করলো, সাংবাদিক ভাই আজ মুড়িমাখা খাবেন না? শুরু করে দিল মুড়িমাখা বানানোর কাজ।
এমন সময় রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলেন একজন বয়স্ক রিকশাওয়ালা। চাচাকে ডাকলাম, যাবেন নাকি চাচা বৈশাখি মোড়ের দিকে,,,,,উনি দাঁড়ালেন। এদিকে ঝালমুড়িওয়ালা ফারুক মুড়ি মাখা বানানো শেষ করেছে। তখন রিকশাওয়ালা চাচাসহ মোট তিনটি ঠোঙ্গায় মুড়ি মাখা নিলাম। আমি, বন্ধু জীবন ও রিকশাচালক আবুল হোসেন গল্প করতে করতে মুড়িমাখা খাওয়া শুরু করলাম।
খাওয়া শেষে রিকশায় উঠে বৈশাখি মোড়ের দিকে রওনা দিলাম আমরা। চাচাকে জিজ্ঞাসা করলাম বাসা কোথায় আপনার, উত্তরে তিনি জবাব দিলেন ছোট খোঁচাবাড়ি। ছেলে-মেয়ে কয়জন জানতে চাইলে বলেন, ২ ছেলে ও ২ মেয়ে। বড় ছেলে কয়েক বছর আগে পরলোক গমন করেছেন। আর ছোট ছেলে ঢাকায় কাজ করেন। কিন্তু পরিবারকে কোনো প্রকার সহযোগিতা করেন না। এক মেয়ের বিয়ে হয়েছে কয়েক বছর আগে। মেয়ে সংসার নিয়ে ভালোই আছে।
কিন্তু ভালো নেই রিকশাচালক আবুল হোসেন। জানতে চাইলে বলেন, ছোট মেয়ের বিয়ে কাল (২৬ জানুয়ারি)। ইউপি চেয়ারম্যান ও কিছু মানুষের কাছ মেয়ের বিয়ের জন্য টাকাও তুলেছেন। কিন্তু তা দিয়ে বিয়ে সম্পন্ন করা অসম্ভব। তাই আর কিছু খরচের টাকা জোগাড়ের জন্য রাতে রিকশা নিয়ে বেরিয়েছেন।
তখন রিকশা হাজীপাড়া বিএন মসজিদের কাছাকাছি। কেন জানি আবুল হোসেনের কষ্টের কথাগুলো মনে নাড়া দিল। আমার পকেটে হাত দিয়ে দেখি বেশি টাকা নেই, তাকে যে কিছু সহযোগিতা করবো। রিকশাওয়ালা চাচাকে বললাম, চাচা আবার একটু চৌরাস্তায় যেতে পারবেন। উনি আবার রিকশা নিয়ে চৌরাস্তার উদ্দেশে অামাদের নিয়ে রওনা দিলেন। যেতে নানা বিষয়ে কথা হলো আবুল হোসেনের সঙ্গে। পৌঁছালাম ডাচ-বাংলা এটিএম বুথের কাছে। সেখানে কিছু টাকা তুললাম।
আবার রিকশায় উঠে বাড়ির দিকে রওনা দিলাম। বাসার সামনে এসে রিকশাভাড়া দিলাম। এরপর মেয়ের বিয়ে উপলক্ষে সামান্য সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিলাম। আবুল হোসেন আমাকে বুকে জড়িয়ে ধরলেন। খুবই তৃপ্তি পেলাম তার মুখটি দেখে। দোয়া করি আল্লাহর রহমতে উনি যেন ভালোভাবে মেয়ের বিয়ে সম্পন্ন করতে পারেন।
আমাদের সমাজে অনেক ব্যক্তি আছেন যারা হাজারো আবুল হোসেনের মেয়ের বিয়ে দিয়ে সহযোগিতা করতে পারেন। আসুন সমাজের অসহায় আবুল হোসেনদের পাশে দাঁড়াই। সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেই সকলে।
রিকশাচালক অাবুল হোসেনকে অাজ বৃহস্পতিবার দুপুরের মধ্যে সহযোগিতা করতে চাইলে সরাসরি অথবা সাংবাদিক তানভীর হাসান তানু মাধ্যমে সহযোগিতা পাঠাতে পারেন।
মোবাইল : ০১৭১৭-৫২৬৩৫৬ (বিকাশ), নম্বরটি ডাচ বাংলাও করা অাছে। প্রয়োজনে কথা বলে নিতে পারেন