8
ক্ষমতায় থেকে খাই খাই ভাব হলে জাতীয় সঙ্গীত না গাওয়াই ভালো
মাঈনুল ইসলাম নাসিম : খেটে খাওয়া মানুষের সম্পদ কোটি কোটি টাকা জলে ঢেলে ২০১৪ সালের ২৬ মার্চ ৪৪তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে ঢাকায় আড়াই লাখ লোক জড়ো করে ‘লাখো কন্ঠে জাতীয় সঙ্গীত’ গাওয়ার যে ‘অপ্রয়োজনীয়’ বিশ্বরেকর্ড গড়া হয়েছিল, ভাঙ্গা আয়নার মতোই শনিবার তা ভেঙ্গে দিয়েছেন ভারতীয়রা। টাইমস অব ইন্ডিয়া এবং ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেসে প্রকাশিত সংবাদ মোতাবেক, গুজরাটের রাজকোট জেলায় ২১ জানুয়ারি ২০১৭ সাড়ে ৩ লক্ষাধিক ভারতীয় একসঙ্গে জাতীয় সঙ্গীত গেয়ে নতুন গিনেজ ওয়ার্ল্ড রেকর্ড গড়েছেন। গিনেজ কর্তৃপক্ষ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থেকে নতুন রেকর্ডের স্বীকৃতি দিয়েছেন। বাংলাদেশের আগে এই রেকর্ডটি ভারতীয়দেরই ছিলো।
রেকর্ড ভেঙ্গে খান খান হবার পর এখন কী করবে বাংলাদেশ ? ভারতকে টেক্কা দেয়ার নতুন আয়োজন চলবে ? খেলা হবে ? বিষয়টি কী আসলে ‘খেলা’ নাকি ক্ষমতার অপব্যবহার করে রাষ্ট্রীয় সম্পদ অপচয়ের পাশাপাশি স্বার্থান্বেষী মহলের চেতনা ব্যবসা ? চেতনাজীবিরা প্রশ্রয় পেলে হয়তো মানসম্মান বাঁচাতে এবার ঢাকায় ১০ লাখ লোকের পরিকল্পনা নেয়া হবে। কিন্তু তারপর ? ১ কোটি ভারতীয় জেগে উঠলে কী করবে ঢাকার চেতনা ব্যবসায়ীরা ? হরিদাস পাল হয়ে ব্রাহ্মনের সাথে বেহুদা পাল্লা দিতে হবে কেন ? প্রোডাক্টিভ খাতে বাংলাদেশের কী আর কিছুই করার নেই ? ভারতীয়রা রেকর্ড গড়ে শতভাগ খাঁটি দেশপ্রেম থেকে। ভারতীয়রা কাজে-কর্মে বাংলাদেশীদের চাইতে কেন এবং কীভাবে বহুগুণে বেশি দেশপ্রেমিক, তা জানা ও বোঝার জন্য চোখ-কান খোলা রাখাই যথেষ্ট বৈকি।
চেতনা ব্যবসার যুগে বুকে হাত দিয়ে জাতীয় সঙ্গীত অনুভবের ভান করা অনেক সহজ আজকাল বাংলাদেশে। ভুলে গেলে চলবে না, প্যান্টের উপর আন্ডারওয়্যার পরিধান করলেই যেমন সুপারম্যান হওয়া যায় না, ঠিক তেমনি লক্ষ-কোটি কন্ঠে জাতীয় সঙ্গীত গাওয়ানো হলেই প্রমাণ হয় না ‘আমি একজন দেশপ্রেমিক’। দেশপ্রেম প্রমাণিত হয় রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারকদের পলিসিতে এবং কাজে-কর্মে। একদিকে উন্নয়নের মহাসড়কে বাংলাদেশ, অন্যদিকে ‘খাই খাই’ ভাব আজ ক্ষমতার অপব্যবহারকারীদের। বর্তমান সময়ের সবচাইতে প্রভাবশালী মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের ২০ জানুয়ারি ময়মনসিংহে বলেছেন, “ক্ষমতায় গেলে শুধু খাই খাই ভাব”। কথা সত্যি কারন ওবায়দুল কাদের হাইব্রিড নন, তৃণমূল থেকে আসা ত্যাগী নেতা। খাই খাই ভাবের বাংলাদেশের জন্য তো স্বাধীনতা অর্জিত হয়নি একাত্তরে ! খাই খাই ভাব হলে ‘লাখো কন্ঠে সঙ্গীত তামাশা’ না করাই উত্তম নয় কি ?