মিয়ানমারের রাখাইন প্রদেশে বসবাস করা রোহিঙ্গাদের মৌলিক অধিকার অর্থাৎ নাগরিকত্ব নিশ্চিত করার মাধ্যমেই তাদের সমস্যার সমাধান সম্ভব বলে মনে করেন কফি আনান কমিশনের সদস্যরা।মঙ্গলবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিস) এ আয়োজিত সুশীল সমাজের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় একথা বলেন তারা। সভায় সঞ্চালকের দায়িত্ব পালন করেন বিসের চেয়ারম্যান মুন্সি ফায়েজ আহমেদ।
আলোচনা শেষে কফি আনান কমিশনের সদস্য ও লেবাননের সাবেক মন্ত্রী ঘাসান সালামে সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি মনে করি, রাখাইনে আইনের শাসন এবং সেখানে বসবাসকারীদের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করা সেখানকার পরিস্থিতি উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত।’
জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে রাখাইন প্রদেশের মানুষের কল্যাণের জন্য মিয়ানমার সরকার গত সেপ্টেম্বরে একটি কমিশন গঠন করে। কফি আনান কমিশন নামে পরিচিত এই কমিশন আগামী আগস্টের মধ্যে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচির কাছে রিপোর্ট জমা দেবে।
নয় সদস্য বিশিষ্ট কমিশনের তিন সদস্য সালামে, উইন ম্রা ও আই লুইন ২৮ জানুয়ারি ঢাকায় আসার পর রোহিঙ্গাদের অবস্থা সরেজমিনে দেখতে দুই দিন কক্সবাজারে ছিলেন।
রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব দিলে রাখাইনে উদ্ভূত সমস্যার সমাধানে হবে কিনা জানতে চাইলে সালামে বলেন, ‘রাখাইন অর্থনৈতিক ও প্রযুক্তিগত দিক দিয়ে মিয়ানমারের অন্যতম পিছিয়ে থাকা প্রদেশ। সেখানে মানবাধিকার ও আইনের শাসন পুনঃপ্রতিষ্ঠার সুযোগ আছে।’
রাখাইনের সমস্যার সঙ্গে ধর্মীয় যোগাযোগ আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শুধু ধর্ম নয়, এর সঙ্গে মানুষের বৈধ অধিকার, নাগরিকত্ব থেকে বঞ্চিত হওয়া, জাতিগত পরিচয়, স্বাধীনভাবে চলাফেরার অধিকার, আইনের শাসন ও মানবাধিকারের বিষয়ও জড়িত।
বাংলাদেশে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের মিয়ানমার ফিরিয়ে নেবে কিনা জানতে চাইলে কমিশনের আরেক সদস্য এবং মিয়ানমার জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান উইন ম্রা বলেন, ‘সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের আলোচনা করা উচিত। আমরা বাংলাদেশে অবস্থিত রোহিঙ্গাদের সঙ্গে কথা বলে একটি নতুন ধারণা পেয়েছি। রোহিঙ্গারা মৌলিক অধিকার চান।’ সমস্যার সমাধানে অন্য প্রতিবেশী দেশে সফর করবেন বলেও জানান তিনি।
গত বছরের ৯ অক্টোবর থেকে রোহিঙ্গাদের উপর শুরু হওয়া মিয়ানমার সশস্ত্র বাহিনীর হামলার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘সেনাবাহিনীর এই অপারেশন এখনও চালু আছে।’
মতবিনিময় সভায় বক্তারা রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব, রাখাইনে সম্মানের সঙ্গে জীবন যাপনের নিশ্চয়তা এবং বাংলাদেশে পালিয়ে আসা সব রোহিঙ্গাকে ফেরত নেওয়ার বিষয়ে গুরুত্ব আরোপ করেন।
আলোচনায় অংশ নেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ইমতিয়াজ আহমেদ, সৈয়দ আনোয়ার হোসেন, সি আর আবরার, তাসনিম সিদ্দিকী, রাশেদুজ্জামান, মেঘনা গুহ ঠাকুরতা, চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের মোহাম্মাদ শাহ, সাবেক রাষ্ট্রদূত অনুপ কুমার চাকমা, আশফাকুর রহমান, ব্রতীর নির্বাহী পরিচালক শারমিন মুরশিদ, সাংবাদিক সৈয়দ বদরুল আহসান প্রমুখ।