ঢাকা ০৯:৪৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ
সংবাদ শিরোনাম ::
প্রবাসে স্বৈরাচারের দোসরদের আস্ফালন, ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতারের দাবি নাসিম আহমদ চৌধুরীর বিজয়নগরে স্কুল শিক্ষিকাকে বেধড়ক পিটিয়ে নগদ অর্থ ও স্বর্ণালঙ্কার লুটপাট “লন্ডনে ‘প্রবাসীদের ক্ষমতায়ন: অধিকার, স্বীকৃতি ও জাতি গঠন – একটি এনআরবি প্রেক্ষাপট’ শীর্ষক সেমিনার ও ইফতার মাহফিল অনুষ্টিত বিশ্বনাথে শিশুকে ধর্ষণের অভিযোগ, যুবক গ্রেপ্তার সুনামগঞ্জে চলন্ত সিএনজিতে কিশোরীকে ধর্ষণচেষ্টা, আটক ২ ‘মানুষের উন্নয়নে দেওয়া প্রতিশ্রুতি বারবার রক্ষা করেছেন খালেদা জিয়া’ জাতিসংঘ মহাসচিবের সঙ্গে বৈঠকঃ দ্রুত নির্বাচনের দাবি বিএনপির “যুক্তরাজ্য যুবদলের সভাপতি আফজাল হোসেনকে ইলিয়াস পত্নী তাহসিনা রুশদির লুনার অভিনন্দন” বায়ান্নের ভাষা শহীদদের প্রতি নর্থইষ্ট বিএনপির শ্রদ্ধা নিবেদন প্রাথমিক বিদ্যালয় গোল্ডকাপ ফুটবল টুর্নামেন্টে জয় লাভ করেন সোয়াবই সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের বালিকারা

রোহিঙ্গারা আরাকানে ছিল ৫০০০ বছর আগে

রোহিঙ্গারা আরাকানে ছিল ৫০০০ বছর আগে
মেহেদী হাসান

কেবল কয়েক শতক নয়, খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ সালেও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের অস্তিত্ব ছিল। এমনকি বর্তমানে সেখানে সংখ্যাগুরু রাখাইন বৌদ্ধদেরও আগে রোহিঙ্গারা ওই অঞ্চলে বসতি গড়েছিল বলে ধারণা করা হয়। গত মে মাসে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিদ্যাবিষয়ক কলেজের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক আজিম ইব্রাহিমের লেখা ‘রোহিঙ্গাস : ইনসাইড মিয়ানমার’স হিডেন জেনোসাইড’ গ্রন্থে এ কথা বলা হয়েছে।

অন্যদিকে গত মার্চ মাসে প্রকাশিত ‘দ্য লেডি অ্যান্ড দ্য জেনারেলস : অং সান সু চি অ্যান্ড বার্মাস স্ট্রাগল ফর ফ্রিডম’ গ্রন্থে দ্য ইনডিপেনডেন্টের বিদেশ সংবাদদাতা ও ভাষ্যকার পিটার পোফাম ১৭৮৪ সালের আগে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের থাকার বিষয়টি চ্যালেঞ্জ না করলেও ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্তে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি তেমন ব্যবহূত তথ্য না হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছেন।

‘লন্ডন রিভিউ অব বুকস’-এ গত মাসে রোহিঙ্গাদের ইতিহাস ও মিয়ানমারবিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থ (ওপরের দুটিসহ) পর্যালোচনা করেছেন গ্যাভিন জ্যাকবসন। বর্তমানে তিনি মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে অবস্থান করে ওই দেশটির উপনিবেশবিরোধী ইতিহাস নিয়ে কাজ করছেন। রোহিঙ্গারা ‘বাঙালি’ বা তারা বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে গেছে—মিয়ানমারের মহলবিশেষের এমন অপপ্রচারও মিথ্যা প্রমাণিত হয় ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্তে। ‘লন্ডন রিভিউ অব বুকস’-এর পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, রোহিঙ্গার মতো সমস্যাগুলোকে ব্যবহার করেই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী নিরাপত্তা ও দেশের অখণ্ডতা রক্ষার নামে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। গ্যাভিন জ্যাকবসন রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির ব্যর্থতারও সমালোচনা করেছেন।

গ্রন্থগুলোর পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, একাদশ শতাব্দী পর্যন্ত আরাকান (বর্তমানে রাখাইন) ও মধ্য বার্মার (বর্তমানে মিয়ানমার) ইতিহাস ছিল ভিন্ন। দুই অঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগে বড় বাধা ছিল ছয় শ মাইল দীর্ঘ পর্বত শ্রেণি। এর ফলে আরাকানের অর্থনৈতিক ও নৃতাত্ত্বিক যোগাযোগ ছিল বঙ্গোপসাগরবর্তী ভারতে। রাখাইন নৃগোষ্ঠী ১০০০ অ্যানো ডমিনির (এ.ডি.) দিকে আরাকানে যাওয়ার পর বার্মার সঙ্গে বাণিজ্য শুরু করে। ১২৯৭ সালে পাগান সাম্রাজ্যের পতনের পর ওই দুই অঞ্চলের মধ্যে প্রায় ছয় শ বছর ধরে বিবাদ চলে। ১৭৮৪ সালে বার্মার কোনবাউং রাজবংশ সিয়ামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করে আরাকানকে তার সঙ্গে যুক্ত করে। এর ফলে ব্রিটিশ ও ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির সঙ্গে সংঘাত দেখা দেয়।

প্রথম অ্যাংলো-বার্মিজ যুদ্ধে (১৮২৪-২৬) এ অঞ্চলে ব্রিটিশ আধিপত্য সুসংহত হয়। ৩০ বছর পর ব্রিটিশরা বার্মার দক্ষিণাংশ দখল করে এবং ১৮৮৬ সালে উত্তরাংশ ছিনিয়ে নেয়। এরপর থেকে আরাকান ব্রিটিশ উপনিবেশের অংশ হিসেবে পরিচালিত হয়। ১৯৪৮ সালে বার্মা স্বাধীন হওয়ার সময় আরাকান এর অংশে পরিণত হয়েছে। তখন সংখ্যাগরিষ্ঠ রাখাইন নৃগোষ্ঠীর নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় রাখাইন।

বর্তমানে যে ‘বিশ্বাস’ থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারে নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হয়, তা হলো ওরা বহিরাগত। বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী, সামরিক বাহিনী ও মিয়ানমারের অনেকেই মনে করে, উনিশ শতকে মিয়ানমারে তাদের আগমন দেশের নৃতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় কাঠামোকে কলুষিত করেছে।

অধ্যাপক আজিম ইব্রাহিম এসব বিশ্বাসকে উড়িয়ে দিয়ে দাবি করেছেন, ১৭৮৪ সালের অনেক আগেই রোহিঙ্গারা আরাকানে ছিল। এমনকি তারা বৌদ্ধ রাখাইনদেরও আগে সেখানে গিয়ে থাকতে পারে।

অধ্যাপক আজিম ইব্রাহিম একটি বিশ্বাসযোগ্য বংশ তালিকাও তাঁর গ্রন্থে তুলে ধরেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গারা ইন্দো-আরিয়ান নৃগোষ্ঠীর। তারা খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ সালে (৫০০০ বছর আগে) গঙ্গা উপত্যকা থেকে আরাকানে এসেছে। তাদের ভাষা ও লিপিতে আরবি, ফার্সি ও বাংলার প্রভাব আছে।

আরেক লেখক পিটার পোফাম সু চির জীবনীগ্রন্থে রোহিঙ্গাদের ১৭৮৪ সালেরও আগের বসতি থাকার দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করলেও আরাকানে মুসলমানদের বসবাসের ইতিহাস যে অনেক পুরনো তা অস্বীকার করেননি। তিনি ১৮২০ সালের দিকে ব্রিটিশদের পরিচালিত শুমারিতে রোহিঙ্গাদের অনুপস্থিতির বিষয়টি তুলেছেন। তাঁর মতে, বিংশ শতাব্দীর আগের নথিপত্রে রোহিঙ্গা শব্দটির একটিমাত্র ব্যবহার দেখা যায়। ১৭৯৯ সালে স্কটিশ চিকিৎসক-অনুসন্ধানী ফ্রান্সিস বুচানন ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন।

তবে আজিম ইব্রাহিমের দাবি, সমসাময়িক অন্য তথ্য-উপাত্তগুলোতেও রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহূত হয়েছে। ১৮১১ সালের ক্লাসিক্যাল জার্নাল এবং জে এস ভাতেরির ১৮১৫ সালের একটি জার্মান সারসংক্ষেপে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি এসেছে। আজিম ইব্রাহিমের মতে, ব্রিটিশ শুমারিতে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি না আসার কারণ তখন সেখানে নৃগোষ্ঠী নয়, বরং ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে জনগণকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

পঞ্চাশের দশকে রোহিঙ্গারা বার্মার একটি নৃগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ১৯৬১ সালের শুমারিতে তাদের নাম অন্তর্ভুক্তি থেকে ধারণা করা হয়, তারা বার্মা সমাজে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। কিন্তু এক বছর পরই নি উইনের অভ্যুত্থান ও সামরিক শাসনের সঙ্গে সঙ্গে পুরো চিত্র বদলে যায়। ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও থাইল্যান্ডের মতো বার্মার জেনারেলরাও দেশের সম্পদ সমৃদ্ধ সীমান্তে বিদ্রোহের হুমকি মোকাবিলায় নিজেদের দেশের অভিভাবক হিসেবে মনে করতে শুরু করে।

সত্তরের দশকের মাঝামাঝি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের জাতীয় নিবন্ধন সনদের পরিবর্তে বিদেশি নিবন্ধন কার্ড দেওয়া হয় এবং তাদের আদমশুমারির বাইরে রাখা হয়। ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে দুই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। আশির দশকে মিয়ানমারে নতুন নাগরিকত্ব আইনে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯১-৯২ সালে নির্যাতন, নিপীড়নের কারণে আরো প্রায় আড়াই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।

২০১৪ সালের আদমশুমারিতে রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক ‘বাঙালি’ হিসেবে নিবন্ধন করতে বাধ্য করা হয়। অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন রাখাইন রাজ্য পরিস্থিতিকে ‘ধীরগতির গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে ‘আর্লি ওয়ার্নিং প্রজেক্ট’ মিয়ানমারে গণহত্যার পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছে।

গ্যাভিন জ্যাকবসন লিখেছেন, রাখাইনে উত্তেজনা, কাচিনের উত্তরাঞ্চল, কায়াহ ওশান রাজ্যে গৃহযুদ্ধ মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সামরিক কর্তৃপক্ষকে ২০১৫ সালের নির্বাচনের পরও দেশটির রাজনৈতিক জীবনে অব্যাহত উপস্থিতির সুযোগ করে দিয়েছে। বর্তমানে মিয়ানমারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী একজন লেফটেন্যান্ট জেনারেল। সামরিক বাহিনীই তাঁকে ওই পদে নিয়োগ দিয়েছে।

গ্যাভিন জ্যাকবসন আরো লিখেছেন, মিয়ানমারের সামরিক জান্তাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, কেবল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরাই ওই দেশের প্রকৃত অধিবাসী। মুসলমানবিরোধী উগ্রবাদী বৌদ্ধ ভিক্ষু অশিন ভিরাথু এবং ধর্ম ও গোষ্ঠী সুরক্ষায় উগ্রবাদী সংগঠন মা বা থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কর্মকাণ্ড চালানোর সুযোগ দেওয়ার জন্য সামরিক জান্তারাই দায়ী।

পশ্চিমা দেশগুলো বৌদ্ধ ধর্ম সহিংস জাতীয়তাবাদের চেয়ে যোগশাস্ত্র ও ধ্যানের সঙ্গেই বেশি সম্পৃক্ত। ২০০৭ সালে মিয়ানমারে শান্তিপূর্ণ গেরুয়া বিপ্লব সামরিক শাসন থেকে গণতন্ত্রায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। কিন্তু থেরাভেদা বৌদ্ধদের মতো কিছু শ্রেণির মধ্যে অসহিষ্ণুতা, বর্ণবাদ, সহিংসতা ও রাজনীতি নিয়ে সন্দেহ আছে। মা বা থার বৌদ্ধ ভিক্ষুরা অন্য ধর্মকে বৌদ্ধ ধর্মের জন্য হুমকি মনে করে। ‘রোহিঙ্গা’ শব্দ উল্লেখ করার দায়ে গত এপ্রিল মাসে তারা মিয়ানমারে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছিল। মুসলমানদের ব্যাপারে আক্রমণাত্মক বক্তব্যের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পই তাদের কাছে নায়ক।

অং সান সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি, সাবেক সামরিক একনায়কদের নিয়ে গড়া দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, এমনকি সামরিক বাহিনী—সবাই তাদের রুখতে ব্যর্থ হয়েছে। মিয়ানমারের ভোটারদের ওপর বৌদ্ধ ভিক্ষুদের প্রভাব নিয়েই তারা চিন্তিত।

সু চি বৌদ্ধ ধর্মের যে ধারা বিশ্বাস করেন তা কি রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশা স্বীকার করতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে?—এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় ১৯৮৫ সালে সু চির লেখা এক নিবন্ধে। সেখানে তিনি লিখেছেন, বৌদ্ধ ধর্মেই যথার্থ দর্শন রয়েছে। এর আরো বিকাশ বা অন্য কোনো দর্শন বিবেচনার কোনো প্রয়োজন নেই। অধ্যাপক আজিম ইব্রাহিম মনে করেন, সু চির নীরবতা হয়তো তাঁর এই বিশ্বাসের প্রতি আনুগত্যেরই বহিঃপ্রকাশ।

মিয়ানমারে ২০১৫ সালের নির্বাচনে রোহিঙ্গারা ভোট দিতে পারেনি। অন্যদিকে রোহিঙ্গাবিরোধী আরাকান ন্যাশনাল পার্টির স্লোগানই ছিল—জাতীয়তাকে ভালোবাসুন, বিশুদ্ধ রক্ত রাখুন, আরাকানে থাকুন। নির্বাচনের পর তারা স্পষ্ট বলে দিয়েছে, ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটিই তারা মানবে না। পিটার পোফাম তাঁর ‘দ্য লেডি অ্যান্ড দ্য পিকক : দ্য লাইফ অব অং সান সু চি’ গ্রন্থে লিখেছেন, ২০১০ সাল পর্যন্ত সু চির যে জোরালো কণ্ঠস্বর ছিল তা অনেকটাই এখন স্থিমিত হয়ে এসেছে। এক হাতে তিনি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করতে পারবেন না। তিনি এখন ক্ষমতা ভাগাভাগির জটিল এক সরকারের অংশ, যেখানে প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র ও সীমান্তসংশ্লিষ্ট বিষয় সামরিক বাহিনীর এখতিয়ার। দলীয় প্রধান, স্টেট কাউন্সেলর এবং জেনারেল অং সানের মেয়ে হিসেবে ক্ষমতা প্রয়োগে তার অনীহাই ট্র্যাজেডি। ভয়মুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি এখন প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ খুঁজতে সংবিধানে পরিবর্তনকে গুরুত্ব দেন। এখানে রোহিঙ্গাদের কোনো স্থান নেই। রোহিঙ্গারা অবরুদ্ধ শিবিরে থাকুক বা সাগরে ডুবে মরুক। এ সংকট নিয়ে কথা বললে মিয়ানমারে সু চির কোনো রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত অর্জন হবে না।

ট্যাগস :
আপলোডকারীর তথ্য

প্রবাসে স্বৈরাচারের দোসরদের আস্ফালন, ইন্টারপোলের মাধ্যমে গ্রেফতারের দাবি নাসিম আহমদ চৌধুরীর

রোহিঙ্গারা আরাকানে ছিল ৫০০০ বছর আগে

আপডেট সময় : ০২:০৫:০২ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২০ জানুয়ারী ২০১৭

রোহিঙ্গারা আরাকানে ছিল ৫০০০ বছর আগে
মেহেদী হাসান

কেবল কয়েক শতক নয়, খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ সালেও মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের অস্তিত্ব ছিল। এমনকি বর্তমানে সেখানে সংখ্যাগুরু রাখাইন বৌদ্ধদেরও আগে রোহিঙ্গারা ওই অঞ্চলে বসতি গড়েছিল বলে ধারণা করা হয়। গত মে মাসে প্রকাশিত যুক্তরাষ্ট্রের যুদ্ধবিদ্যাবিষয়ক কলেজের স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক আজিম ইব্রাহিমের লেখা ‘রোহিঙ্গাস : ইনসাইড মিয়ানমার’স হিডেন জেনোসাইড’ গ্রন্থে এ কথা বলা হয়েছে।

অন্যদিকে গত মার্চ মাসে প্রকাশিত ‘দ্য লেডি অ্যান্ড দ্য জেনারেলস : অং সান সু চি অ্যান্ড বার্মাস স্ট্রাগল ফর ফ্রিডম’ গ্রন্থে দ্য ইনডিপেনডেন্টের বিদেশ সংবাদদাতা ও ভাষ্যকার পিটার পোফাম ১৭৮৪ সালের আগে মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের থাকার বিষয়টি চ্যালেঞ্জ না করলেও ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্তে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি তেমন ব্যবহূত তথ্য না হওয়ার বিষয়টি তুলে ধরেছেন।

‘লন্ডন রিভিউ অব বুকস’-এ গত মাসে রোহিঙ্গাদের ইতিহাস ও মিয়ানমারবিষয়ক কয়েকটি গ্রন্থ (ওপরের দুটিসহ) পর্যালোচনা করেছেন গ্যাভিন জ্যাকবসন। বর্তমানে তিনি মিয়ানমারের ইয়াঙ্গুনে অবস্থান করে ওই দেশটির উপনিবেশবিরোধী ইতিহাস নিয়ে কাজ করছেন। রোহিঙ্গারা ‘বাঙালি’ বা তারা বাংলাদেশ থেকে মিয়ানমারে গেছে—মিয়ানমারের মহলবিশেষের এমন অপপ্রচারও মিথ্যা প্রমাণিত হয় ঐতিহাসিক তথ্য-উপাত্তে। ‘লন্ডন রিভিউ অব বুকস’-এর পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, রোহিঙ্গার মতো সমস্যাগুলোকে ব্যবহার করেই মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী নিরাপত্তা ও দেশের অখণ্ডতা রক্ষার নামে রাজনৈতিক প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তার করে চলেছে। গ্যাভিন জ্যাকবসন রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির ব্যর্থতারও সমালোচনা করেছেন।

গ্রন্থগুলোর পর্যালোচনায় বলা হয়েছে, একাদশ শতাব্দী পর্যন্ত আরাকান (বর্তমানে রাখাইন) ও মধ্য বার্মার (বর্তমানে মিয়ানমার) ইতিহাস ছিল ভিন্ন। দুই অঞ্চলের মধ্যে যোগাযোগে বড় বাধা ছিল ছয় শ মাইল দীর্ঘ পর্বত শ্রেণি। এর ফলে আরাকানের অর্থনৈতিক ও নৃতাত্ত্বিক যোগাযোগ ছিল বঙ্গোপসাগরবর্তী ভারতে। রাখাইন নৃগোষ্ঠী ১০০০ অ্যানো ডমিনির (এ.ডি.) দিকে আরাকানে যাওয়ার পর বার্মার সঙ্গে বাণিজ্য শুরু করে। ১২৯৭ সালে পাগান সাম্রাজ্যের পতনের পর ওই দুই অঞ্চলের মধ্যে প্রায় ছয় শ বছর ধরে বিবাদ চলে। ১৭৮৪ সালে বার্মার কোনবাউং রাজবংশ সিয়ামের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয়লাভ করে আরাকানকে তার সঙ্গে যুক্ত করে। এর ফলে ব্রিটিশ ও ইস্ট ইন্ডিয়া কম্পানির সঙ্গে সংঘাত দেখা দেয়।

প্রথম অ্যাংলো-বার্মিজ যুদ্ধে (১৮২৪-২৬) এ অঞ্চলে ব্রিটিশ আধিপত্য সুসংহত হয়। ৩০ বছর পর ব্রিটিশরা বার্মার দক্ষিণাংশ দখল করে এবং ১৮৮৬ সালে উত্তরাংশ ছিনিয়ে নেয়। এরপর থেকে আরাকান ব্রিটিশ উপনিবেশের অংশ হিসেবে পরিচালিত হয়। ১৯৪৮ সালে বার্মা স্বাধীন হওয়ার সময় আরাকান এর অংশে পরিণত হয়েছে। তখন সংখ্যাগরিষ্ঠ রাখাইন নৃগোষ্ঠীর নামানুসারে এর নামকরণ করা হয় রাখাইন।

বর্তমানে যে ‘বিশ্বাস’ থেকে রোহিঙ্গাদের ওপর মিয়ানমারে নির্যাতন-নিপীড়ন চালানো হয়, তা হলো ওরা বহিরাগত। বৌদ্ধ জাতীয়তাবাদী, সামরিক বাহিনী ও মিয়ানমারের অনেকেই মনে করে, উনিশ শতকে মিয়ানমারে তাদের আগমন দেশের নৃতাত্ত্বিক ও ধর্মীয় কাঠামোকে কলুষিত করেছে।

অধ্যাপক আজিম ইব্রাহিম এসব বিশ্বাসকে উড়িয়ে দিয়ে দাবি করেছেন, ১৭৮৪ সালের অনেক আগেই রোহিঙ্গারা আরাকানে ছিল। এমনকি তারা বৌদ্ধ রাখাইনদেরও আগে সেখানে গিয়ে থাকতে পারে।

অধ্যাপক আজিম ইব্রাহিম একটি বিশ্বাসযোগ্য বংশ তালিকাও তাঁর গ্রন্থে তুলে ধরেছেন। সেখানে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গারা ইন্দো-আরিয়ান নৃগোষ্ঠীর। তারা খ্রিস্টপূর্ব ৩০০০ সালে (৫০০০ বছর আগে) গঙ্গা উপত্যকা থেকে আরাকানে এসেছে। তাদের ভাষা ও লিপিতে আরবি, ফার্সি ও বাংলার প্রভাব আছে।

আরেক লেখক পিটার পোফাম সু চির জীবনীগ্রন্থে রোহিঙ্গাদের ১৭৮৪ সালেরও আগের বসতি থাকার দাবির যৌক্তিকতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করলেও আরাকানে মুসলমানদের বসবাসের ইতিহাস যে অনেক পুরনো তা অস্বীকার করেননি। তিনি ১৮২০ সালের দিকে ব্রিটিশদের পরিচালিত শুমারিতে রোহিঙ্গাদের অনুপস্থিতির বিষয়টি তুলেছেন। তাঁর মতে, বিংশ শতাব্দীর আগের নথিপত্রে রোহিঙ্গা শব্দটির একটিমাত্র ব্যবহার দেখা যায়। ১৭৯৯ সালে স্কটিশ চিকিৎসক-অনুসন্ধানী ফ্রান্সিস বুচানন ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি ব্যবহার করেছিলেন।

তবে আজিম ইব্রাহিমের দাবি, সমসাময়িক অন্য তথ্য-উপাত্তগুলোতেও রোহিঙ্গা শব্দটি ব্যবহূত হয়েছে। ১৮১১ সালের ক্লাসিক্যাল জার্নাল এবং জে এস ভাতেরির ১৮১৫ সালের একটি জার্মান সারসংক্ষেপে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি এসেছে। আজিম ইব্রাহিমের মতে, ব্রিটিশ শুমারিতে ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটি না আসার কারণ তখন সেখানে নৃগোষ্ঠী নয়, বরং ধর্মীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে জনগণকে চিহ্নিত করা হয়েছে।

পঞ্চাশের দশকে রোহিঙ্গারা বার্মার একটি নৃগোষ্ঠী হিসেবে স্বীকৃতি পায়। ১৯৬১ সালের শুমারিতে তাদের নাম অন্তর্ভুক্তি থেকে ধারণা করা হয়, তারা বার্মা সমাজে অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। কিন্তু এক বছর পরই নি উইনের অভ্যুত্থান ও সামরিক শাসনের সঙ্গে সঙ্গে পুরো চিত্র বদলে যায়। ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান ও থাইল্যান্ডের মতো বার্মার জেনারেলরাও দেশের সম্পদ সমৃদ্ধ সীমান্তে বিদ্রোহের হুমকি মোকাবিলায় নিজেদের দেশের অভিভাবক হিসেবে মনে করতে শুরু করে।

সত্তরের দশকের মাঝামাঝি রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারের জাতীয় নিবন্ধন সনদের পরিবর্তে বিদেশি নিবন্ধন কার্ড দেওয়া হয় এবং তাদের আদমশুমারির বাইরে রাখা হয়। ১৯৭৮ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে মে মাসের মধ্যে দুই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে পালিয়ে আসে। আশির দশকে মিয়ানমারে নতুন নাগরিকত্ব আইনে রোহিঙ্গাদের নাগরিকত্ব পাওয়ার পথ বন্ধ হয়ে যায়। ১৯৯১-৯২ সালে নির্যাতন, নিপীড়নের কারণে আরো প্রায় আড়াই লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে বাধ্য হয়।

২০১৪ সালের আদমশুমারিতে রোহিঙ্গাদের জোরপূর্বক ‘বাঙালি’ হিসেবে নিবন্ধন করতে বাধ্য করা হয়। অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন রাখাইন রাজ্য পরিস্থিতিকে ‘ধীরগতির গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন। অন্যদিকে ‘আর্লি ওয়ার্নিং প্রজেক্ট’ মিয়ানমারে গণহত্যার পূর্বাভাস দিয়ে রেখেছে।

গ্যাভিন জ্যাকবসন লিখেছেন, রাখাইনে উত্তেজনা, কাচিনের উত্তরাঞ্চল, কায়াহ ওশান রাজ্যে গৃহযুদ্ধ মিয়ানমারের সেনাবাহিনী ও সামরিক কর্তৃপক্ষকে ২০১৫ সালের নির্বাচনের পরও দেশটির রাজনৈতিক জীবনে অব্যাহত উপস্থিতির সুযোগ করে দিয়েছে। বর্তমানে মিয়ানমারের প্রতিরক্ষামন্ত্রী একজন লেফটেন্যান্ট জেনারেল। সামরিক বাহিনীই তাঁকে ওই পদে নিয়োগ দিয়েছে।

গ্যাভিন জ্যাকবসন আরো লিখেছেন, মিয়ানমারের সামরিক জান্তাদের দৃঢ় বিশ্বাস ছিল, কেবল বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বীরাই ওই দেশের প্রকৃত অধিবাসী। মুসলমানবিরোধী উগ্রবাদী বৌদ্ধ ভিক্ষু অশিন ভিরাথু এবং ধর্ম ও গোষ্ঠী সুরক্ষায় উগ্রবাদী সংগঠন মা বা থার সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের কর্মকাণ্ড চালানোর সুযোগ দেওয়ার জন্য সামরিক জান্তারাই দায়ী।

পশ্চিমা দেশগুলো বৌদ্ধ ধর্ম সহিংস জাতীয়তাবাদের চেয়ে যোগশাস্ত্র ও ধ্যানের সঙ্গেই বেশি সম্পৃক্ত। ২০০৭ সালে মিয়ানমারে শান্তিপূর্ণ গেরুয়া বিপ্লব সামরিক শাসন থেকে গণতন্ত্রায়নের পথে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল। কিন্তু থেরাভেদা বৌদ্ধদের মতো কিছু শ্রেণির মধ্যে অসহিষ্ণুতা, বর্ণবাদ, সহিংসতা ও রাজনীতি নিয়ে সন্দেহ আছে। মা বা থার বৌদ্ধ ভিক্ষুরা অন্য ধর্মকে বৌদ্ধ ধর্মের জন্য হুমকি মনে করে। ‘রোহিঙ্গা’ শব্দ উল্লেখ করার দায়ে গত এপ্রিল মাসে তারা মিয়ানমারে যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসের বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছিল। মুসলমানদের ব্যাপারে আক্রমণাত্মক বক্তব্যের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পই তাদের কাছে নায়ক।

অং সান সু চির ন্যাশনাল লিগ ফর ডেমোক্রেসি, সাবেক সামরিক একনায়কদের নিয়ে গড়া দল ইউনিয়ন সলিডারিটি অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট পার্টি, এমনকি সামরিক বাহিনী—সবাই তাদের রুখতে ব্যর্থ হয়েছে। মিয়ানমারের ভোটারদের ওপর বৌদ্ধ ভিক্ষুদের প্রভাব নিয়েই তারা চিন্তিত।

সু চি বৌদ্ধ ধর্মের যে ধারা বিশ্বাস করেন তা কি রোহিঙ্গাদের দুঃখ-দুর্দশা স্বীকার করতে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে?—এ প্রশ্নের উত্তর পাওয়া যায় ১৯৮৫ সালে সু চির লেখা এক নিবন্ধে। সেখানে তিনি লিখেছেন, বৌদ্ধ ধর্মেই যথার্থ দর্শন রয়েছে। এর আরো বিকাশ বা অন্য কোনো দর্শন বিবেচনার কোনো প্রয়োজন নেই। অধ্যাপক আজিম ইব্রাহিম মনে করেন, সু চির নীরবতা হয়তো তাঁর এই বিশ্বাসের প্রতি আনুগত্যেরই বহিঃপ্রকাশ।

মিয়ানমারে ২০১৫ সালের নির্বাচনে রোহিঙ্গারা ভোট দিতে পারেনি। অন্যদিকে রোহিঙ্গাবিরোধী আরাকান ন্যাশনাল পার্টির স্লোগানই ছিল—জাতীয়তাকে ভালোবাসুন, বিশুদ্ধ রক্ত রাখুন, আরাকানে থাকুন। নির্বাচনের পর তারা স্পষ্ট বলে দিয়েছে, ‘রোহিঙ্গা’ শব্দটিই তারা মানবে না। পিটার পোফাম তাঁর ‘দ্য লেডি অ্যান্ড দ্য পিকক : দ্য লাইফ অব অং সান সু চি’ গ্রন্থে লিখেছেন, ২০১০ সাল পর্যন্ত সু চির যে জোরালো কণ্ঠস্বর ছিল তা অনেকটাই এখন স্থিমিত হয়ে এসেছে। এক হাতে তিনি রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান করতে পারবেন না। তিনি এখন ক্ষমতা ভাগাভাগির জটিল এক সরকারের অংশ, যেখানে প্রতিরক্ষা, স্বরাষ্ট্র ও সীমান্তসংশ্লিষ্ট বিষয় সামরিক বাহিনীর এখতিয়ার। দলীয় প্রধান, স্টেট কাউন্সেলর এবং জেনারেল অং সানের মেয়ে হিসেবে ক্ষমতা প্রয়োগে তার অনীহাই ট্র্যাজেডি। ভয়মুক্ত হয়ে স্বাধীনভাবে কাজ করতে ব্যর্থ হয়েছেন। তিনি এখন প্রেসিডেন্ট হওয়ার সুযোগ খুঁজতে সংবিধানে পরিবর্তনকে গুরুত্ব দেন। এখানে রোহিঙ্গাদের কোনো স্থান নেই। রোহিঙ্গারা অবরুদ্ধ শিবিরে থাকুক বা সাগরে ডুবে মরুক। এ সংকট নিয়ে কথা বললে মিয়ানমারে সু চির কোনো রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত অর্জন হবে না।