খুব ছোটবেলা থেকেই স্বপ্ন ল্যাপটপ আর নতুন নতুন মোবাইল কেনার। এমনকি নিজের ছোট্ট সুন্দর গাড়িতে চড়ে বেড়ানোর স্বপ্নও বুকের এক কোণে। মাঠে যখন ক্রিকেট থাকে না, তখনই চলে যান স্বপ্নের দুনিয়াতে। জাতীয় দলের একমাত্র তরুণ লেগ স্পিনার জুবায়ের হোসেন লিখন খুঁঁজে বেড়ান আধুনিক প্রযুক্তির নানা রকম ডিভাইস।’ যাকে দেখে এখন জামালপুরের শুধু ছেলেরাই নয় মেয়েরাও ক্রিকেট খেলে এগিয়ে যাওয়ার স্বপ্ন দেখে। ক্রিকেটে আসার পর থেকেই নানা রকম চ্যালেঞ্জের মুখে নিজের স্বপ্ন বাঁচিয়ে রাখার যুদ্ধ করে যাচ্ছেন তিনি। ব্যাটসম্যান থেকে বোলার হওয়ার চ্যালেঞ্জ দিয়ে শুরু। বোলার যখন হয়েই গেলেন এখন চ্যালেঞ্জ লেগ স্পিনার হিসেবে জাতীয় দলে টিকে থাকার। স্বপ্ন ও বাস্তবতার মাঝে বদলে যাওয়া এই তরুণের এগিয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরছেন মানবজমিনের স্পোর্টস রিপোর্টার ইশতিয়াক পারভেজ।
প্রশ্ন: সময় খুব কঠিন কাটছে শুনলাম?
জুবায়ের: তাতো অবশ্যই, কন্ডিশনিং ক্যাম্প চলছে। এর আগে এইচপির সঙ্গেও ট্রেনিং করেছি। আসলে লেগ স্পিনারদের টিকে থাকতে হলে পরিশ্রম ছাড়া কোন উপায় নেই। যখন ট্রেনিং শেষ করে আসি তখন আর কিছুই করতে মন চায় না। জাতীয় দলে লেগ স্পিনার হিসেবে টিকে থাকা খুবই কঠিন। তাই এখন কঠিন পরিশ্রম ছাড়া কোন পথ নেই।
প্রশ্ন: ব্যাটিং ছেড়ে লেগ স্পিনার হওয়া ভুল মনে হচ্ছে?
জুবায়ের: না, না তা কেন হবে? এমন নয় যে ব্যাটিংটাও খুব ভাল ছিল। লেগ স্পিনার হবো বলে হয়ে গেলাম তা নয়। আমার সেটা হওয়ার জন্য কিছু যোগ্যতা তো ছিল। যেমন কাঁধের জোর, কব্জির কাজ সেই সঙ্গে চেষ্টা। হ্যাঁ, এটি সত্যি যে এখন আমি খুব চ্যালেঞ্জের মুখে। যখনই সুযোগ পাচ্ছি লক্ষ্য একটাই নিজেকে প্রমাণ করার। লেগ স্পিনারদের এমন চ্যালেঞ্জ থাকেই। তা না হলে, শেন ওয়ার্নকে কেউ মনে রাখতো না।
প্রশ্ন: লেগ স্পিনার হওয়ার গল্পটা যদি বলতেন।
জুবায়ের হোসেন: অনূর্ধ্ব-১৩ ক্রিকেট খেলার সময় আমি ওপেনার ছিলাম। মাঝে মাঝে মিডিয়াম পেস বলও করতাম। সেই বছর খুব একটা ভাল না করায় কোথাও ডাক পাইনি। আমার বড় ভাই শ্যামল ছিলেন জামালপুরের একজন কোচ। অনুশীলনের সময় তিনি বললেন, ‘বাংলাদেশে তো লেগ স্পিনার নেই। প্র্যাকটিস করে দেখ হয় নাকি!’ তখন থেকেই লেগ স্পিনার হিসেবে শুরু।
প্রশ্ন: কাজটা কি এত সহজ ছিল?
জুবায়ের: আমি যখন জামালপুরে খেলা শুরু করি তখন কোন একাডেমি সেখানে ছিল না। কিন্তু দুজন বড় ভাইয়ের কল্যাণে একটি একাডেমি প্রতিষ্ঠিত হয়। সেখানেই আসলে আমার এগিয়ে যাওয়ার সুযোগটা আসে। বড় ভাইও ছিলেন সেই একাডেমির কোচ। বিশেষ করে একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা মনওয়ার পলাশ, মির্জা শিপন ভাইয়ের কথা বলতেই হয়। তারা ফ্রিতে সবার জন্য ক্রিকেট শিখার ব্যবস্থা করেছেন। আমার বড় ভাই ছাড়াও কোচ মিজানুর রহমান মিজুও আমার জন্য অনেক বড় ভূমিকা রেখেছেন।
প্রশ্ন: এখন সেই একামেডিতে যেতে কেমন লাগে?
জুবায়ের: আমি যখন জামালপুরে যাই তখন আমাকে তারা একাডেমিতে নিয়ে যায়। সেখানে ১০০ জনেরও বেশি ক্রিকেট শিখছে। তাদেরকে আমাকে দেখিয়ে কোচরা উৎসাহ দেন।
প্রশ্ন: হঠাৎ তারকা হয়ে যাওয়ার অনুভূতি কেমন লাগে?
জুবায়ের: আসলে ভাল লাগে অন্য একটা কারণে। রকিবুল হাসান ভাই ছাড়া ক্রিকেটে আর তেমন কেউ নেই জামালপুর থেকে। তাই সবাইকে যখন আমার কথা বলে তারা ক্রিকেটার হতে উৎসাহ পায়। এখন আমাকে দেখে জামালপুরের শুধু ছেলেরাই নয়, অনেক মেয়েরাও ক্রিকেট খেলতে উৎসাহ পাচ্ছে। বেশ কয়েকটা ছেলে উঠে আসছে। একজন অনূর্ধ্ব-১৯ দলেও আছে।
প্রশ্ন: আপনার অজান্তেই আপনাকে নিয়ে কোচ ও নির্বাচকদের কিছু বিতর্ক ছিল!
জুবায়ের: সত্যি কথা আমি এই সব বিষয়ে ভাবিও না। আমি মনে করি আমার জন্য সবাই ভাল চিন্তা করে। আমি এখানে খেলতে এসেছি সেই স্বপ্নটাই পূরণ করতে পারি কিনা সেটাই আমার লক্ষ্য। আমি জাতীয় দলে স্থায়ী হতে চাই। এর বাইরে ভাবার চেষ্টাও করি না।
প্রশ্ন: ইমরান তাহির নিজেই নাকি আপনার কাছে এসেছিলেন?
জুবায়ের: আমি জানি না এটি কিভাবে হলো। আগে থেকেই ইচ্ছে ছিল, তার (ইমরান তাহির) কাছ থেকে কিছু শিখবো। কিন্তু আমাকে অবাক করে দিয়ে দ্বিতীয় ওয়ানডেতে ইমরান তাহির নিজেই আমার কাছে এলেন। উর্দুতে বললেন, ‘বোলিং নিয়ে তোমাকে কিছু কথা বলবো। তোমার ভাল লাগলে নিও। নইলে নিও না।’ বললেন, শুরুতে তারও কিছু সমস্যা হতো, যেগুলো নাকি আমার মধ্যেও দেখেছেন। যেমন আমি একটু নার্ভাস থাকছি। পরে ঠিক হলো, চট্টগ্রামে গিয়ে একদিন নেটে একসঙ্গে বোলিং করবো। কিন্তু সে সুযোগ হয়নি। কখনও দেখা হলে বিষয়গুলো জেনে নেয়ার ইচ্ছা আছে।
প্রশ্ন: ক্রিকেটের বাইরে জীবনে অন্য কোন স্বপ্ন?
জুবায়ের: আমার নতুন নতুন মডেলের ল্যাপটপ, মোবাইল খুব ভাল লাগে। ছোট বেলা থেকেই এই জিনিসগুলোর প্রতি খুবই দুর্বল। আর একটা স্বপ্ন হলো গাড়ি কেনা। না, না খুব বড় বা দামি কোন গাড়ি নয়। ছোট্ট, সুন্দর একটা গাড়িতে চড়ে বেড়াবো চিন্তা করতেই ভাল লাগে। খেলা না থাকলে আমি মোবাইল নিয়ে বেশি সময় কাটাই।
প্রশ্ন: মোবাইলে মেয়েদের অনেক ফোন আসে নিশ্চয়ই?
জুবায়ের: আসে, কিন্তু মেয়েদের সঙ্গে কথা বলতে খুব ভয় পাই। আমি ঠিক মতো কথাও বলতে পারি না। সত্যি কথা বলতে কি এখন ক্রিকেটের বাইরে অন্য কোন কিছু ভাবার সময় নেই।
প্রশ্ন: লেগ স্পিনটা আরও ধারালো করতে কি করা প্রয়োজন মনে করেন?
জুবায়ের: লেগ স্পিনারদের জন্য অ্যাকুরেসি গুরুত্বপূর্ণ ও আসল। অনেক লেগ স্পিনারই দেখবেন ওভারে এক-দুইটা বাজে বল দেয়। অতিরিক্ত বৈচিত্র্য আনতে গিয়ে এটা হয়। আমারও হচ্ছে। সেগুলো ঠিক করার চেষ্টা করছি। সামনে অনেক খেলা। ঘরোয়া ক্রিকেটে যদি খেলার সুযোগ পাই, চেষ্টা করবো অ্যাকুরেসিতে আরও উন্নতি আনতে।
সংবাদ শিরোনাম ::
‘লেগ স্পিনার হওয়া ভুল ছিল না’
-
প্রতিনিধির নাম
- আপডেট সময় : ০৯:৫৭:১৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৫
- 346
ট্যাগস :