নির্বাচন কমিশন
নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের লক্ষ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাব থেকে ‘কমন’ ব্যক্তিদেরই গুরুত্বের সঙ্গে দেখছে সার্চ কমিটি। আওয়ামী লীগ-বিএনপিসহ রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবিত ১২৫ জানের দীর্ঘ তালিকা থেকে সার্চ কমিটি ১ ফেব্রুয়ারি ২০ জনের একটি শর্ট লিস্ট করে। ওই শর্ট লিস্টে যাদের নাম রয়েছে, তাদের মধ্যে রাজনৈতিক দলগুলোর কমন পছন্দে ব্যক্তি রয়েছেন এক ডজনের মতো। নতুন ইসি গঠনে রাষ্ট্রপতির কাছে নাম প্রস্তাবের ক্ষেত্রে এই কমন নামগুলো থেকেই দশ জনের তালিকা করাতে চায় সার্চ কমিটি। এক্ষেত্রে ছোট রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবিত নামগুলোকেও গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে সার্চ কমিটি। তবে, কমন ব্যক্তিদের মধ্যে কাঙ্ক্ষিত-সংখ্যক যোগ্যব্যক্তির নাম বের করা সম্ভব না হলে সার্চ কমিটি দ্বিতীয় ‘অপশন’ বেছে নেবে। অর্থাৎ রাজনৈতিক দলগুলোর প্রস্তাবের সঙ্গে সার্চ কমিটির সদস্যরা নিজেদের পছন্দের লোকদের সমন্বয়ে ১০ জনের একটি তালিকা করে রাষ্ট্রপতির কাছে পাঠাবেন। একাধিক নির্ভরযোগ্য সূত্র এ তথ্য নিশ্চিত করেছে।
জানা গেছে, সর্বোচ্চ গোপনীয়তা রক্ষা করেই তথ্য যাচাই করতে সার্চ কমিটি ইসি গঠনে নির্বাচিত নামগুলো গোয়েন্দা সংস্থাকে দিয়েছে।গোয়েন্দা কর্মকর্তারা তথ্য সংগ্রহ শেষ করে, যাচাই-বাছাই শেষে রবিবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সার্চ কমিটির হাতে দেবেন। পরদিন সোমবার সার্চ কমিটি সেই তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করে ১০ জনের তালিকা চূড়ান্ত করবে। প্রয়োজন হলে নাম সংযোজন-বিয়োজনের কাজটি সোমবারের মধ্যেই করবে সার্চ কমিটি। এরপর মঙ্গলবার (৭ ফেব্রুয়ারি) সার্চ কমিটি চূড়ান্ত তালিকা রাষ্ট্রপতির কাছে জমা দেবে।
এদিকে, সংশ্লিষ্ট একটি সূত্র জানিয়েছে, এখনও ২০ জনের তালিকায় সংযোজন-বিয়োজন কিছুই করা হয়নি। এখন পর্যন্ত গত ১ ফেব্রুয়ারি তৈরি করা শর্ট লিস্টের ২০জনের ওপরই পর্যালোচনা চলছে। এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোহাম্মদ শফিউল আলম বলেন, ‘আগামী সোমবার বিকালে সার্চ কমিটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হবে। বৈঠকটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওই বৈঠকে সার্চ কমিটি অনেক কার্যক্রম গুছিয়ে আনতে পারবে।’
সূত্র জানায়, তালিকাভুক্ত ব্যক্তিদের তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহকালে বড় কোনও দোষ ত্রুটি না উঠে এলে ২০ জনের ভেতরে সর্বোত্তম যারা হবেন, তাদের মধ্য থেকেই বাছাই করে রাষ্ট্রপতির কাছে ১০ জনের নাম জমা দেবে সার্চ কমিটি। এক্ষেত্রে যদি বেশিরভাগের বিরুদ্ধেই অভিযোগ পাওয়া যায়, তাহলে সার্চ কমিটি নিজেদের বাছাই তালিকার ওপর গুরুত্বারোপ করবে।
এদিকে ‘কমন’ নাম প্রস্তাব করার কথা স্বীকার করেছেন বেশ কয়েকটি রাজনৈতিক দলের একাধিক শীর্ষ নেতা। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, জোটের আওয়ামী লীগের প্রস্তাব করা নামের সঙ্গে জোটের শরিক দলের নাম প্রস্তাবে অন্তত ২/৩টি নাম ‘কমন’ হয়ে গেছে। ‘কমন’ পড়া প্রসঙ্গে তারা বলেন, আমরা স্বাধীনতার, মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের শক্তি। পছন্দের জায়গায় অনেক ক্ষেত্রেই মিল রয়েছে। তাই প্রস্তাবিত নামেও এর প্রভাব পড়েছে।’ দেখা গেছে, বিএনপির সঙ্গেও ২০ দলীয় জোটের শরিক দলগুলোর প্রস্তাবিত নামের মধ্যেও অনেক কমন পড়েছে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহাবুবউল আলম হানিফ বলেন আমরা জানি না, কোন দল কার নাম প্রস্তাব করেছে। যদি এক দলের সঙ্গে আরেক দলের প্রস্তাবিত কমন পড়ে যায়, সেটা ‘মিরাকল’ হতে পারে। যোগসাজশে করে হয়েছে এটা ভাবার অবকাশ নেই।’’
জানতে চাইলে জাসদ সাধারণ সম্পাদক শিরীন আক্তার বলেন, ‘‘নাম ‘কমন’ পড়তে পারে। তবে একদল আরেক দলের সঙ্গে আলোচনা করে নাম প্রস্তাব করেনি।’’
ওয়ার্কার্স পার্টির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আনিসুর রহমান মল্লিক বলেন, ‘‘নাম ‘কমন’ পড়তেই পারে, এটা স্বাভাবিক। আমার কাছে যিনি যোগ্য, তিনি অন্য দলের কাছেও যোগ্য বিবেচিত হতে পারেন।’’
এদিকে, নিজেদের কাজের প্রক্রিয়া নিয়ে একেবারেই মুখ বন্ধ করে রেখেছেন সার্চ কমিটির সদস্যরা। তবে তারা বলছেন, আমাদের কাজ করতে দিন। আমরা এখন কথা বলতে চাই না। সব কথা হবে রাষ্ট্রপতির কাছে তালিকা হস্তান্তরের পর। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক সার্চ কমিটির তিন জন সদস্য বলেন, ‘দায়িত্ব শেষ করে রাষ্ট্রপতির কাছে তালিকা হস্তান্তর করে আপনাদের সঙ্গে মন খুলে কথা বলব, গল্প করব। এখন নয়।’