চট্টগ্রাম: শেখ হাসিনার গাড়িবহরে গুলিবর্ষণের মামলায় আওয়ামী লীগ নেতা সাজেদা চৌধুরী, আমির হোসেন আমু ও তোফায়েল আহমেদকে সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য সমন জারির নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। তাদের আগামী ১৫ মার্চ সাক্ষ্য দেওয়ার জন্য আদালতে আসার জন্য সমন জারি করতে বলেছেন আদালত।
মঙ্গলবার (৩১ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম বিভাগীয় বিশেষ জজ মীর মো.রহুল আমিন এই আদেশ দিয়েছেন।
বিভাগীয় বিশেষ জজ আদালতের পিপি অ্যাডভোকেট মেজবাহ উদ্দিন চৌধুরী বলেন, তিনজন আওয়ামী লীগ নেতা, তিনজন নিহতের স্বজন এবং চারজন প্রত্যক্ষদর্শীসহ মোট ১০ জনের সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য সমন জারির আবেদন করেছিলাম। আদালত আবেদন গ্রহণ করে ১৫ মার্চ তাদের সাক্ষ্যগ্রহণের সময় নির্ধারণ করে সমন জারি করতে বলেছেন।
সাজেদা চৌধুরী বর্তমান সংসদের সরকারি দলের উপনেতা এবং আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য। আওয়ামী লীগের উপদেষ্টামন্ডলীর দুই সদস্য আমির হোসেন আমু শিল্প মন্ত্রণালয় এবং তোফায়েল আহমেদ বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী হিসেবে দায়িত্বে আছেন।
তিন আওয়ামী লীগ নেতা স্বৈরাচার এরশাদ বিরোধী আন্দোলনের সময় ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি শেখ হাসিনার সঙ্গে চট্টগ্রামে এসেছিলেন।
এদিকে চাঞ্চল্যকর এই মামলায় মঙ্গলবার নিহতের আরও দুই স্বজন আদালতে সাক্ষ্য দিয়েছেন। এরা হলেন, নিহত হাসান মুরাদের মা হাসনা বানু এবং নিহত অশোক কুমার দাশের বড় ভাই স্বপন কুমার বিশ্বাস।
সাক্ষ্যে হাসনা বানু বলেন, তার ছেলে হাসান মুরাদ ঘটনার সময় অষ্টম শ্রেণির ছাত্র ছিল। শেখ হাসিনার জনসভা দেখতে এসে পুরাতন বাংলাদেশ ব্যাংকের সামনে সে গোলাগুলির মধ্যে পড়ে। তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদার নির্দেশে তাকে পুলিশ গুলি করে।
হাসান মুরাদের শরীরের নিচের দিকে গুলিবিদ্ধ জখম দেখেছেন উল্লেখ করে হাসনা বানু বলেন, তাকে পাথরঘাটার নজু মিয়া লেইনে পারিবারিক কবরস্থানে দাফন করা হয়েছিল।
সাক্ষ্য দেয়ার এক পর্যায়ে হাসনা বানু আদালতে কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, আমি ছেলে হত্যার বিচার চাই।
সাক্ষ্যে অশোক বলেন, আমার ভাই শেখ হাসিনার জনসভায় গিয়েছিল। পুলিশ গুলি করে আমার ভাইকে হত্যা করে। খোঁজ নিয়ে আমরা হাসপাতালে যাই। জেনারেল হাসপাতালে ময়নাতদন্ত করে পরদিন বিকেলে আমাদের কাছে মরদেহ দেয়। সেদিন সন্ধ্যায় শ্মশানে নিয়ে তাকে দাহ করি। তখন ভাইয়ের মাথায় গুলির চিহ্ন দেখতে পাই।
এদিন দুই সাক্ষী জবানবন্দি দেওয়ার পর তাদেরকে জেরা করেন আসামিপক্ষের আইনজীবী আহসানুল হক হেনা।
এরপর আদালত ১৫ মার্চ পরবর্তী সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করে ওইদিন রাস্ট্রপক্ষের আবেদন অনুযায়ী ১০ জন সাক্ষীকে হাজিরের জন্য সমন জারির নির্দেশ দেন।
স্বৈরাচার এরশাদবিরোধী আন্দোলনের সময় নগরীর লালদিঘি ময়দানে সমাবেশে যাওয়ার পথে ১৯৮৮ সালের ২৪ জানুয়ারি আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনার গাড়িবহরে পুলিশ এলোপাতাড়ি গুলি চালালে নিহত হন ২৪ জন। আহত হন কমপক্ষে দুই শতাধিক মানুষ।
এরশাদ সরকারের পতন হলে ১৯৯২ সালের ৫ মার্চ ক্ষতিগ্রস্তদের পক্ষ থেকে প্রয়াত আইনজীবী শহীদুল হুদা বাদি হয়ে চট্টগ্রাম মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। ১৯৯৮ সালের ৩ নভেম্বর তৎকালীন পুলিশ কমিশনার মীর্জা রকিবুল হুদাসহ ৮ পুলিশ সদস্যকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করা হয়।
অভিযুক্ত অন্যরা হল কোতোয়ালী জোনের তৎকালীন পেট্রল ইন্সপেক্টর (পিআই) জে.সি. মন্ডল, পুলিশ কনস্টেবল আব্দুস সালাম, মুশফিকুর রহমান, প্রদীপ বড়ুয়া, বশির উদ্দিন, মো. আব্দুলাহ ও মমতাজ উদ্দিন। জে.সি.মন্ডল ছাড়া অন্য সবাই উচ্চ আদালতের আদেশে জামিনে আছেন। ঘটনার পর থেকে জে.সি. মন্ডল পলাতক আছেন।
অভিযোগপত্র দাখিলের পর ২০০০ সালের ৯ মে ৮ আসামির বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২/২০১/১০৯/৩২৬/৩০৭/১১৪/৩৪ ধারায় অভিযোগ গঠন করেন আদালত। এরপর ১৭ বছর ধরে চলছে বিচার কার্যক্রম।m