বগুড়ার ধুনটে মাত্র ১২ টাকা চুরির অভিযোগে গতকাল শুক্রবার আরজিনা খাতুন (৩৭) নামের এক গৃহবধূকে দফায় দফায় নির্যাতন করেছেন স্বামী রেজাউল করিম। পরে আজ শনিবার সকালে বাড়ির পাশে বাঁশবাগান থেকে তাঁর ঝুলন্ত লাশ পাওয়া যায়।
আরজিনার ভাইয়ের অভিযোগ, রেজাউলই তাঁর বোনকে হত্যা করে আত্মহত্যার নাটক সাজিয়েছেন। লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে।
রেজাউলের বাড়ির পাশে কয়েকজন প্রতিবেশী জানান, প্রায় ২০ বছর আগে চৌকিবাড়ি ইউনিয়নের বিষপুর গ্রামের মজিবর রহমানের মেয়ে আরজিনা খাতুনের একই ইউনিয়নের বিশ্বহরিগাছা গ্রামের শুকুর আলীর ছেলে রেজাউল করিমের সঙ্গে বিয়ে হয়। বিয়ের পর থেকে নানা কারণে-অকারণে আরজিনাকে নির্যাতন করতেন রেজাউল। বাড়িতে শুধু রেজাউল ও তাঁর স্ত্রী এবং তাঁদের তিন সন্তান থাকত। গতকাল বিছানার নিচ থেকে ১২টি টাকা হারিয়ে যায়। এ নিয়ে স্ত্রী আরজিনাকে কয়েক দফা মারধর করেন রেজাউল। আজ সকালে বাড়ির পাশে বাঁশবাগানে তাঁর ঝুলন্ত লাশ দেখা যায়। এ ঘটনায় নিহত আরজিনার বড় ভাই আবদুর রাজ্জাক বাদী হয়ে থানায় একটি অস্বাভাবিক মৃত্যুর মামলা করেছেন।
আরজিনা খাতুনের বড় মেয়ে সপ্তম শ্রেণির আদুরী খাতুনের ভাষ্য, এই ১২ টাকা গতকাল দুপুরে বাবার বিছানার নিচ থেকে সে নেয়। তার বাবা এই টাকা খুঁজে না পেয়ে মাকে টাকা চুরির অভিযোগে মারধর করে। এ ঘটনা নিয়ে দিনভর মা–বাবার মধ্যে ঝগড়া হয়। এরপর রাতে বাড়ির সবাই ঘুমিয়ে পড়ে। এর পরে কী হয়েছে, তা সে বলতে পারছে না।
আরজিনার বড় ভাই আবদুর রাজ্জাকের ভাষ্য, ‘বিয়ের পর থেকে রেজাউল করিম আমার বোনকে মিথ্যা অপবাদে মারধর করত। এসব ঘটনা নিয়ে দফায় দফায় সালিস বৈঠক করে মীমাংসা হয়েছে। গতকাল দুপুরে টাকা চুরির অভিযোগে আমার বোনকে কয়েক দফা মারধর ও নির্যাতন করা হয়েছে।’ আবদুর রাজ্জাকের দাবি, এ ঘটনার জের ধরে রাতে রেজাউল করিম আরজিনাকে পিটিয়ে ও লোহার রড দিয়ে খুঁচিয়ে হত্যা করেছেন। পরে তিনি এই হত্যাকাণ্ডকে আত্মহত্যা বলে প্রমাণ করতে লাশ বাঁশবাগানের ভেতর ঝুলিয়ে রেখে পালিয়েছেন।
চৌকিবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী বলেন, এই দম্পতির মধ্যে প্রায় ঝগড়াবিবাদ হতো। রেজাউল তাঁর স্ত্রীকে মারধর করতেন। এসব বিষয় নিয়ে কয়েকবার সালিস করে মীমাংসা করে দেওয়া হয়েছে। কিন্তু কয়েক দিন পর আবারও তাঁদের মধ্যে অশান্তি শুরু হতো।
এদিকে একই গ্রামে রেজাউলের বাবা ও ভাই আলাদা থাকলেও বর্তমানে তাঁরা পলাতক ।
ধুনট থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মিজানুর রহমান বলেন, নিহত আরজিনা খাতুনের শরীরে ও দুই পায়ে কয়েকটি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। এ কারণে লাশ ময়নাতদন্তের জন্য বগুড়ার শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।