সিলেটে প্রাধান্য উন্নয়ন ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৫৯:৩৯,অপরাহ্ন ১৮ ডিসেম্বর ২০১৮ | সংবাদটি ২৭৩ বার পঠিত
নিউজ ডেস্ক:: আসন্ন একাদশ সংসদ নির্বাচনে সিলেটের ছয়টি আসনে মোট প্রার্থী ৪৩ জন। প্রতীক পাওয়ার পরপরই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের প্রার্থীরা প্রচারে ঝাঁপিয়ে পড়লেও বিএনপি এ ক্ষেত্রে কিছুটা পিছিয়ে আছে। এ জন্য প্রতিকূল রাজনৈতিক পরিবেশকে দায়ী করে বিএনপির প্রার্থীরা বলছেন, ধীরে ধীরে তাঁরাও প্রচারে নেমে পড়ছেন। নির্বাচনী প্রচারকালে দেশের বিভিন্ন এলাকায় হামলা–সংঘাতের ঘটনা ঘটলেও সিলেট অঞ্চল তুলনামূলক শান্ত রয়েছে।
প্রচারে নেমে বড় দুই রাজনৈতিক দল দুই ধরনের বক্তব্য নিয়ে ভোটারদের আকৃষ্ট করার চেষ্টা করছে।আওয়ামী লীগ বলছে উন্নয়নের ধারাবাহিকতা অক্ষুণ্ন রাখা এবং মুক্তিযুদ্ধের চেতনা সমুন্নত রাখার কথা। আর বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার কথা বলছেন।
ভোটাররা জানিয়েছেন, মহাজোট এবং ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা উন্নয়ন আর গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারের কথা এতটাই বেশি বলছেন যে স্থানীয় গুরুত্বপূর্ণ ইস্যু চাপা পড়ে যাচ্ছে। প্রার্থীরা আগের মতো আর সেভাবে স্থানীয় উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন না।
আওয়ামী লীগ তথা মহাজোটের প্রার্থীরা বর্তমান সরকারের উন্নয়নমুখী নানা পদক্ষেপ ভোটারদের কাছে তুলে ধরছেন। এখানে প্রার্থীর চেয়ে দলের প্রধান শেখ হাসিনার নেতৃত্ব ও বর্তমান সরকারের মেগা প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নের প্রসঙ্গ বেশি উচ্চারিত হচ্ছে। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণ, মিয়ানমারের সঙ্গে সমুদ্র জয় থেকে শুরু করে বিগত ১০ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের সাফল্যের কথা বারবার আসছে।
অন্যদিকে বিএনপি তথা ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থীরা দেশে গণতন্ত্র অবরুদ্ধ ও দেশব্যাপী বিরোধীদলীয় প্রার্থীদের ওপর হামলার বিষয় বলে ভোটারদের সহানুভূতি আদায়ের চেষ্টা করছেন। পাশাপাশি তাঁরা বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়ার কারামুক্তির জন্য ধানের শীষে ভোট দেওয়ার অনুরোধ করছেন।
সিলেট-১ (মহানগর ও সদর)
বিগত ১০ বছরে দেশব্যাপী আওয়ামী লীগের উন্নয়ন এবং এ আসনের বর্তমান সাংসদ অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের উন্নয়ন কর্মকাণ্ডের ফিরিস্তি বর্ণনা করে প্রচারণা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী এ কে আবদুল মোমেন। তিনি বলেন, উন্নয়নের ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে নৌকার বিকল্প নেই।
অপরদিকে বিএনপির প্রার্থী খন্দকার আবদুল মুক্তাদীর বলছেন, সিলেটসহ দেশব্যাপী লোক দেখানো কিছু উন্নয়ন হয়েছে। উন্নয়নের ব্যাপারে কেবল খালেদা জিয়াই আন্তরিক। তাঁর কারামুক্তির স্বার্থে ধানের শীষে ভোট দেওয়া উচিত।
এ আসনের অপর প্রার্থীরা হলেন ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মাওলানা রেদওয়ানুল হক চৌধুরী, জাতীয় পার্টির মাহবুবুর রহমান চৌধুরী, ইসলামী ঐক্যজোটের মুহম্মদ ফয়জুল হক, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির ইউসুফ আহমদ, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির উজ্জ্বল রায়, বাসদের প্রণব জ্যোতি পাল, বাংলাদেশ মুসলিম লীগের আনোয়ার উদ্দিন বুরহানাবাদী ও খেলাফত আন্দোলনের মাওলানা নাসির উদ্দিন।
সিলেট-২ (বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর)
এ আসনে মহাজোটের প্রার্থী জাতীয় পার্টির মো. ইয়াহ্ইয়া চৌধুরী। তিনিও উন্নয়নের স্বার্থে মহাজোট মনোনীত প্রার্থীকে লাঙ্গল প্রতীকে ভোট দেওয়ার আহ্বান জানাচ্ছেন।
অন্যদিকে বিএনপির প্রার্থী তাহসিনা রুশদীর লুনা তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় বলছেন, আওয়ামী লীগ সরকার তাঁর স্বামী ইলিয়াস আলীকে গুম করেছে। দলের চেয়ারপারসনকে কারাগারে আটকে রেখেছে। স্বামীকে ফিরে পেতে এবং কারাবন্দী দলীয় চেয়ারপারসনকে মুক্ত করতে ধানের শীষে ভোট চাইছেন তিনি। এ আসনের অপর প্রার্থীরা হচ্ছেন গণফোরামের মোকাব্বির খান, খেলাফত মজলিসের মুহাম্মদ মুনতাছির আলী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের মো. আমির উদ্দিন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির মনোয়ার হোসাইন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্টের মোশাহিদ খান এবং স্বতন্ত্র এনামুল হক সরদার ও মুহিবুর রহমান।
সিলেট-৩ (দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ)
এ আসনে শাহজালাল সার কারখানা নির্মাণসহ গত ১০ বছরে ১০ হাজার কোটি টাকার বেশি উন্নয়ন হয়েছে দাবি করে প্রচারণা চালাচ্ছেন আওয়ামী লীগের প্রার্থী মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী।
বিএনপির প্রার্থী শফি আহমদ চৌধুরী গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার ও খালেদা জিয়াকে মুক্ত করার স্বার্থে ধানের শীষে ভোট চাইছেন। এ আসনের অন্য প্রার্থীরা হচ্ছেন জাতীয় পার্টির উছমান আলী, খেলাফত মজলিসের দিলওয়ার হোসাইন, খেলাফত মজলিসের আতিকুর রহমান ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের এম এ মতিন বাদশা।
সিলেট-৪ (গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর ও কোম্পানীগঞ্জ)
এ আসনের প্রার্থীরা হচ্ছেন আওয়ামী লীগের ইমরান আহমদ, বিএনপির দিলদার হোসেন সেলিম, জাতীয় পার্টির আহমেদ তাজ উদ্দিন তাজ রহমান, বিপ্লবী ওয়াকার্স পার্টির মনোজ কুমার সেন ও ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের জিল্লুর রহমান।
সিলেট-৫ (জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট)
এখানে প্রার্থীরা হচ্ছেন আওয়ামী লীগের হাফিজ আহমদ মজুমদার, জাতীয় পার্টির সেলিম উদ্দিন, জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের উবায়দুল্লাহ ফারুক (ধানের শীষ), ইসলামী ঐক্যজোটের এ এ মতিন চৌধুরী, মুসলিম লীগের শহিদ আহমদ চৌধুরী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের নুরুল আমিন, গণফোরামের বাহার উদ্দিন আল রাজী ও স্বতন্ত্র ফয়জুল মুনির চৌধুরী।
হাফিজ আহমদ মজুমদার বলেন, মানুষ এখন দুই ভাগে বিভক্ত।মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের এবং বিপক্ষের। বিবেকবান মানুষ কখনোই আওয়ামী লীগের বিরোধিতা করতে পারেন না।ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী অসুস্থ থাকায় তিনি প্রচারণায় অংশ নিতে পারছেন না।তবে তাঁর সমর্থকেরা জানাচ্ছেন, প্রতিশ্রুতির চেয়েও বড় কথা হচ্ছে সব ধরনের অন্যায়ের প্রতিবাদ জানানো।সে কারণেই ধানের শীষে ভোট দেওয়া উচিত।
সিলেট-৬ (বিয়ানীবাজার ও গোলাপগঞ্জ)
এ আসনে প্রার্থীরা হচ্ছেন আওয়ামী লীগের শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, বিএনপির ফয়সল আহমদ চৌধুরী, বিকল্পধারার সমশের মবিন চৌধুরী, ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশের আজমল হোসেন ও স্বতন্ত্র জাহাঙ্গীর হোসেন মিয়া।তবে সমশের মবিন গত শনিবার ঢাকায় সংবাদ সম্মেলন করে নৌকা প্রতীককে সমর্থন জানিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
নুরুল ইসলাম নাহিদ তাঁর নির্বাচনী প্রচারণায় বলছেন, পরপর দুটি মেয়াদে তাঁর সময়ে এলাকায় প্রচুর উন্নয়ন হয়েছে। শেখ হাসিনার কাছেই দেশ নিরাপদ। আর সে বিবেচনায়ই ভোটারদের ভোট দেওয়া উচিত।
বিএনপির ফয়সল আহমদ প্রচারণায় বলছেন,দেশের মানুষ খালেদা জিয়ার মুক্তি চায়। তাই সবাই ৩০ ডিসেম্বর ধানের শীষে ভোট দেওয়ার জন্য মুখিয়ে আছেন।