ক্রাইস্টচার্চ হামলা: শিশুটির যন্ত্রণায় হৃদয় ভেঙে গিয়েছিল সার্জনের
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:০০:০৭,অপরাহ্ন ২৩ মার্চ ২০১৯ | সংবাদটি ২৭৮ বার পঠিত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:: অপারেশন থিয়েটারে গুলিবিদ্ধ শিশুটিকে দেখে শিউরে ওঠেছিলেন ভাস্কুলার সার্জন ডা. আদিব খানাফ। তিনি কল্পনাও করতে পারেননি, কোনো শিশুর ওপর এমনভাবে কেউ গুলি করতে পারে। ক্রাইস্টচার্চ হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটারে ছুটে গিয়েছিলেন একটি জরুরি ফোন পেয়ে।
ওই সময় তার ধারণাই ছিল না যে জুমার নামাজের সময় ব্রেন্টন ট্যারেন্ট নামে এক উগ্রবাদী শ্বেতাঙ্গ নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের দুটি মসজিদে ঢুকে মুসল্লিদের ওপর নির্বিচারে গুলি চালিয়েছিল। এতে ৫০ জন নিহত ও অর্ধ-শতাধিক গুলিবিদ্ধ হয়।সাহায্যের জন্য অনুরোধের একটি জরুরি ডাক শুনেই হাসপাতালে ছুটে যান ওই সার্জন।
ক্রাইস্টচার্চে সম্প্রতি আন্তর্জাতিক বার্তা সংস্থা এসোসিয়েট প্রেসকে (এপি) দেয়া এক সাক্ষাৎক্ষারে ডা. আদিব খানাফের বলেন, ‘আমি যখন অপারেশনের টেবিলে পৌঁছাই, সেখানে দেখতে পাই, তিনজন শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ চার বছরের এক মেয়ে শিশুর শরীর থেকে রক্ত বন্ধ করার আপ্রাণ চেষ্টা করছে। শিশুটিকে কেউ গুলি করেছে এমন দৃশ্য দেখে আমি মনে প্রচণ্ড আঘাত পাই। ওই সময় আমি যা দেখি তা নিজেই বিশ্বাস করতে পারিনি।’
মুসলিম চিকিৎসক খানাফের পরে জানতে পারেন, ক্রাইস্টচার্চে দুটি মসজিদের বন্দুকধারীর হামলায় অনেকে নিহত হয়েছেন।তিনি সাধারণত নিয়ন্ত্রিত পরিবেশে প্রাপ্তবয়স্কদের অপারেশন করেন। এখন গুলিতে মারাত্মক আহত শিশুকে অপারেশন করার মতো কঠিন পরিস্থিতির মুখোমুখি হতে হয়েছে তাকে।
সার্জন বলেন, ‘ওই সময় আমার চার সন্তানদের কথা মনে পড়ে। গুলিবিদ্ধ শিশুটির প্রচণ্ড কষ্টে আমার হৃদয় ভেঙে পড়ে। এরকম পরিস্থিতির কথা আমি বিশ্বাস করতে পারছিলাম না।’গত ১৫ মার্চ ওই হামলার পর হাসপাতালে ভর্তি করা আহত ব্যক্তিদের মধ্যে ওই মেয়েটি সবচেয়ে কম বয়সী ছিল। তিন বছর বয়সী এক ছেলে শিশু, মুকাদ ইব্রাহিম, আল নূর মসজিদেই গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যান এবং শুক্রবার ক্রাইস্টচার্চে তাকে দাফন করা হয়।
আবেগকে নিয়ন্ত্রণ করে ডা. খানাফের দ্রুত শিশুটির শরীর থেকে গুলি বের করার জন্য সার্জারি শুরু করেন। কয়েক ঘণ্টা পর তিনি সার্জারি শেষ করেন এবং অপারেশন সফল হওয়ায় আনন্দে সহকর্মীদের জড়িয়ে ধরে কাঁদতে থাকেন।তবে অপারেশন সফল হলেও মেয়েটি সংকটময় অবস্থার মধ্যে ছিল। পরে তাকে অকল্যান্ডের একটি শিশু হাসপাতালে স্থানান্তর করা হয়।
ডা. খানাফ মেয়েটির বাবাকে আশ্বস্ত করতে বলেন, ‘আপনার মেয়ে অবস্থা এখন ভাল। সে স্থিতিশীল অবস্থায় রয়েছে। তাকে দেশের সেরা জায়গায় চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। তাই আপনাকে এখন কিছুটা ধৈর্য্য ধরতে হবে।’
তিনি আরো বলেন, ‘কয়েক সপ্তাহের মধ্যে মেয়েটি হাসপাতাল থেকে ছাড়া পাবে বলে আশা করছেন তিনি।’ ক্রাইস্টচার্চ হামলায় ওই মেয়েটির বাবাও গুলিবিদ্ধ ও আহত হন।