কবিরের হস্তক্ষেপে কসবা- আখাউড়া বিএনপি দু’ভাগে বিভক্ত ।
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:২৭:০২,অপরাহ্ন ১১ অক্টোবর ২০২০ | সংবাদটি ৫৫০ বার পঠিত
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের একান্ত সহকারী আব্দুর রহমান সানির বড় ভাই কবির আহাম্মেদ ভুইয়ার অবৈধ হস্তক্ষেপে দুভাগে বিভক্ত হয়ে পড়েছে কসবা – আখাউড়া বিএনপি ও অঙ্গসংগঠন সমুহ। একপক্ষে রয়েছেন সাবেক এমপি, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা মুশফিকুর রহমান ও কৃষকদলের কেন্দ্রীয় নেতা, ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি , সর্বশেষ চূড়ান্ত দলীয় মনোনয়ন প্রাপ্ত নাসির উদ্দিন হাজারী,অপর পক্ষে রয়েছে কবির আহাম্মেদ ভূঁইয়া ও আখাউড়া উপজেলা বিএনপির সভাপতি মুসলিম উদ্দিন। গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পূর্ব থেকেই কবির আহমেদ ভূঁইয়া তার ছোট ভাই সানির প্রভাব খাটিয়ে অবৈধ হস্তক্ষেপ শুরু করেন। তারপর থেকেই উভয় পক্ষ দলীয় ও জাতীয় কর্মসূচী আলাদা ভাবে পালন করছে। যা অতীতে কখনোই কসবা -আখাউড়ার বিএনপির রাজনীতিতে ছিল না। কবির আহম্মেদ ভূঁইয়ার অযাচিত হস্তক্ষেপে কসবা-আখাউড়ার অধিকাংশ নেতাকর্মীর মাঝে ক্ষোভ বিরাজ করছে , দলের ত্যাগী ও পরীক্ষিত অধিকাংশ নেতাকর্মী হতাশ হয়ে রাজনীতিতে নিষ্ক্রিয় হয়ে পড়ছে।
সরেজমিনে জানা যায় ,গত একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৪ আসনে বিএনপির কোন প্রার্থী ছিল না।
সংসদ নির্বাচনের পরপরই রাজনীতিতে হঠাৎ লাইমলাইটে আসেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়াম্যান তারেক রহমানের একান্ত সহকারী আব্দুর রহমান সানির বড় ভাই কবির আহাম্মেদ ভুইয়া। কবির আহমেদ ভূঁইয়ার সমর্থকরা এলাকায় প্রচার করেন সংসদ নির্বাচনের মাত্র দুইমাস আগে প্রার্থীতা ঘোষনা দিয়ে মুসলিম উদ্দিনকে মনোনয়ন পাওয়ার মুল কারিগর আব্দুর রহমান সানি। এলাকায় গুন্জন আছে মনোনয়ন পেতে মুসলিম উদ্দিন কে কবির আহমেদ ভূঁইয়ার সাথে মোটা অংকের লেনদেন করতে হয়েছে। নির্বাচনের পর কবির আহমেদ ভূঁইয়া কসবা- আখাউড়া বিএনপির রাজনীতিতে জোড়ালো হস্তক্ষেপ করা শুরু করেন। তিনি তার ভাইয়ের প্রভাবে পদ -পদবীর লোভ দেখিয়ে দলের নেতা কর্মীদের পক্ষে টেনে তার দলভারি করতে উঠে পড়ে লাগেন। প্রভাব খাটিয়ে আখাউড়া ও কসবা উপজেলা যুবদলের কমিটি ভেঙ্গে তার একান্ত অনুগত লোক দিয়ে একতরফা যুবদলের কমিটি করান।এসব কমিটি থেকে বাদ পড়েন সাবেক কমিটির অনেক ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা।জানা গেছে , তার অনুগত না হওয়ায় ১০১ সদস্য বিশিষ্ট সাবেক আখাউড়া উপজেলা যুবদলের কমিটির ৯৯ জনকে বাদ দেয়।
তাছাড়া তিনি দলের সকল সাংগঠনিক কর্মসূচির ব্যানারে তার ছবি ও নাম ব্যবহার করার জন্য নানাভাবে চাপ সৃষ্টি করেন,তিনি তার অনুগতদেরকে বলেন,যারা কবির ভূঁইয়ার ছবি ব্যবহার না করবে, তাদের সাথে কোন সাংগঠনিক কর্মকান্ড না করার কথা বলেন। এভাবে কবির আহাম্মদ ভুইয়া কসবা- আখাউড়া বিএনপিতে একটি আলাদা গ্রুপ সৃস্টি করেন। একসময় আখাউড়া উপজেলা ছাত্রলীগের রাজনীতির সাথে জড়িত কবির আহাম্মেদের বিএনপির রাজনীতে এধরনের অবৈধ হস্তক্ষেপ দলের বেশীরভাগ নেতাকর্মী মেনে নিতে পারছিলেন না ।তারা সাবেক এমপি মুশফিকুর রহমান এবং নাসির উদ্দিন হাজারীর নেতৃত্বে আলাদা ভাবে দলীয় এবং জাতীয় কর্মসুচী পালন করছেন।
জানাযায় ,বর্তমানে ছাত্রদল এবং যুবদলের নতুন কমিটি গঠন করার জন্য কেন্দ্রীয়ভাবে যে টিম গঠন করা হয়েছে সে টিমের নেতৃবৃন্দকে তার পক্ষে একতরফা কমিটি দেয়ার জন্য বিভিন্নভাবে চাপ প্রয়োগ করছে কবির আহমেদ ভূঁইয়া ও তার ছোট ভাই সানি।
তাছাড়া কবির আহমেদ ভূঁইয়ার ছোট ভাই লন্ডন থেকে যুবদল ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় নেতাদের কে তার ভাইয়ের পক্ষে কমিটি দেয়ার জন্য ফোন দিচ্ছেন । পদ হারানোর ভয়ে জেলা ও কেন্দ্রীয় নেতা সানির প্রভাব খাটানোর বিষয়টি প্রকাশ্যে স্বীকার করছেন না। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক যুবদল ও ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় টিমের ২জন নেতা জানান ,আমরা চাচ্ছি কসবা আখাউড়ায় উভয় গ্রপ থেকে মিলিয়ে যাচাই বাছাই করে ত্যাগী ও যোগ্য নেতাদের দিয়ে একটি শক্তিশালী কমিটি দেয়ার জন্য। কিন্তু কোন কোন গ্রুপের নেতারা একতরফা তাদের পক্ষের কমিটি চাচ্ছে, যা আমাদেরকে বিব্রতকর অবস্হায় ফেলেছে।
কসবা -আখাউড়া বিএনপির রাজনীতির বিভক্তির কারন জানতে চাইলে কসবা পৌর বিএনপির সভাপতি আলী আশরাফ বলেন, কবির আহাম্মেদ ভুইয়ার অযাচিত হস্তক্ষেপের কারনে এই এলাকায় বিএনপি আজ দ্বিধাবিভক্ত। আমরা চাচ্ছিলাম বর্তমানে দুর্দিনে ঐক্যবদ্ধভাবে রাজনীতি করতে,কে এমপি হবে ভবিষ্যতে দল তা নির্ধারন করবে ।
উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক শরিফুল ইসলাম ভূঁইয়া বলেন,সানি ও কবির ভূঁইয়ার অবৈধ হস্তক্ষেপ বন্ধ না হলে অনেক ত্যাগী নেতাকে রাজনীতি থেকে অবসর নিতে হবে।
এ ব্যাপারে আখাউড়া উপজেলা বিএনপির সিনিয়র সহ-সভাপতি আলহাজ্ব মোঃ ইউসুফ সারোয়ার বলেন,এই এলাকার বিএনপি অত্যন্ত শক্তিশালী সংগঠন ছিল, কিন্তু কবির ভূঁইয়ার কারনে আজ বিএনপি দুইভাগে বিভক্ত। বিগত ২০০৪ সালের পরে জাসদ এবং ফ্রিডম পার্টি থেকে আখাউড়া বিএনপিতে যোগদানকারী কিছু সংখ্যক নেতার প্ররোচনায় কবির ভূঁইয়া এবং মুসলিম উদ্দিন দলে গ্রুপিং সৃষ্টি করেছে। এভাবে চলতে থাকলে কসবা- আখাউড়ার বিএনপির ভবিষ্যৎ অন্ধকার। জীবনের শেষ প্রান্তে এসে আমরা বিএনপি করতে পারব কি না তা সন্দেহ হচ্ছে।
গত বছর ১৭ জুলাই বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জনাব তারেক রহমানের নিকট সানী ও কবির ভূঁইয়ার বিরুদ্ধে অভিযোগ দেওয়ার পর ও আমরা কোন সুরাহা পাইনি।
আখাউড়া পৌর বিএনপির সভাপতি মোঃ বাহার মিয়া বলেন,কবির আহাম্মেদ ভূঁইয়া একসময় ছাত্রলীগ করতেন। তিনি কখন কোথায় বিএনপিতে যোগ দিয়েছেন আমরা জানিনা । দলের একটা ক্ষুদ্র অংশকে নিয়ে শুধুমাত্র ভাইয়ের প্রভাবে ওনি যেভাবে একরফা ছাত্রদল ও যুবদলের কমিটি করার চেষ্টা করছেন দলের ত্যাগী নেতাকর্মীরা তা কোনভাবেই মেনে নিবে না।সাবেক ছাত্রলীগ নেতা বিএনপিতে যোগদান না করেই শুধু ভাইয়ের প্রভাব দেখিয়ে যদি এই এলাকার বিএনপির কান্ডারী বনে যায় তাহলে আমরা বিগত ৩৫ বছর কোথায় শ্রম দিলাম। কবির সাহেব বিএনপিকে ধ্বংস করে নিজের পাল্লাভারি করতে কাজ করছেন।
89 - 89Shares