মমতাজ না কি সানি লীওন
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:২২:১১,অপরাহ্ন ২৫ মার্চ ২০২২ | সংবাদটি ২৮১ বার পঠিত
এস এম শামসুর সুমেল।
বিশ্ব ভারতের অতিপ্রাচীনতম সকল খ্যাতনামা বিদ্যালয়গুলোর তালিকায় লিপিবদ্ধ আছে পঞ্চখণ্ড হরগোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয়ের নাম।
যোগ বদলায় সময় বদলায়,সে নিয়মে সকল কিছুই বদলায়।আধুনিক বিশ্বায়নের যোগস্রোতে আজ সে বিদ্যাপিঠের নামে সরকারী শব্দটি যুক্ত হয়েছে।যার বর্তমান নাম পঞ্চখণ্ড হরগোবিন্দ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়।
পঞ্চখণ্ডের উর্বর ভূমি বিয়ানীবাজার উপজেলা সদর তথা পৌর শহরের প্রাণ কেন্দ্রে উঁচু টিলার উপরে এক পায়ে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকা প্রাচীন এই বিদ্যাপিঠ জন্ম দিয়েছে শত শত মহামানব সহ অজস্র মানব কল্যাণবাহি নামবের।সে ধারা আজো চলোমান।যতদিন রবে পৃথিবী খোদার ততদিন রবে চলমান এ ধারার।
প্রাচীন এই বিদ্যাপিঠের কত সন্তান আজ বিরাজিত বিশ্ব ভারত পেরিয়ে বিশ্ব দরবারে।বিশ্ব দরবারে হয়তোবা কত বিভাগ কর্মচাঞ্চল্যে মুখরিত থাকে তাদের পদচারনায়।
সেই সকল সন্তানেরা যদি একটি ঘন্টার জন্যে কেউ কলম তুলেন,কেউ হাত তুলেন, যদি কেউ তার গোটা দেহটাকে নিয়ে বসে থাকেন তার বিভাগ ছেড়ে,তাদের বসত দেশে।ঐ একটি ঘন্টার কর্ম বিরতী সে দেশটাকে বঞ্চিত করে রাখতে পারে অনেক দিন পর্যন্ত কাজের অগ্রগতি থেকে।
এমন একটা বিদ্যাপিঠের জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে অতিথি হয়ে থাকছেন বাংলাদেশের সর্বজন পরিচিত শিল্পী ও জাতীয় সংসদের সাংসদ মমতাজ বেগম।
এ নিয়ে নানা দিক বিদিক,মত অমতের ধমকা হাওয়া বইছে প্রবীন ছাত্র শিক্ষক অভিভাবক সহ গোটা সমাজহিতৈষী মহলে।
মমতাজ নির্দ্বিধায় একজন গুণী মানবী।তাই বলে একটি বিদ্যালয়ের জন্মশতবার্ষিকী অনুষ্ঠানে তাকে কতটা মানাবে সে বোধগম্য নয়।
সে জায়গায় এখানে আসতে পারতেন অধ্যাপক আবদুল্লাহ আবু সাইদ স্যার কিংবা এমন সমমানের জাতীয় শিক্ষককেরা।আসতে পারতেন সেই সকল ব্যক্তিরা,যাদের পদচারণায় প্ররোচনায় মুখরিত এবং অনুপ্রাণিত হয় গোটা শিক্ষার্থী সমাজ।আসতে পারতেন ইত্যাদি পরিচালক হানিফ সংকেত, প্রখ্যাত শিল্পী নকূল কুমার।
পঞ্চখণ্ড হরগোবিন্দ উচ্চ বিদ্যালয় ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দে বৃহত্তর সিলেটের মফঃস্বল অঞ্চলের দ্বিতীয় প্রাচীন উচ্চ বিদ্যালয়ের মর্যাদা লাভ করে এবং ১৯৪১ খ্রিস্টাব্দে কলকতা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ী স্বীকৃতি প্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান হওয়ার গৌরব অর্জন করে।
এই বিদ্যালয়ের নাম বিশ্ব কবি রবিন্দ্রনাথ ঠাকুর ও জানতেন।
এই বিদ্যাপিঠ থেকেই বেরিয়ে এসে ছিলেন বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রথম প্রহরের শহীদ বুদ্ধিজীবী ড. জি.সি (গোবিন্দ চন্দ্র) দেব।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও হেঁটে গেছেন ঐ বিদ্যাপিঠের বারান্দা,আঙ্গিনা। বসেছেন কৃষ্ণচূড়া বৃক্ষের মূলে ও।
কিশরির ঠোঁটের লাল রং যেমন রূপ বর্ধন করে,তেমনি এই বিদ্যালয়ের সুভা বর্ধন করে তার বিল্ডিং ও কৃষ্ণচূড়ার ফুল।
পঞ্চখণ্ড হরগোবিন্দ সরকারী উচ্চ বিদ্যালয়েটি জন্ম হয়েছিলো ১৯১৭ সালে।গণনার খাতায় সেদিক থেকে শত বছর পূর্ণ হয়েছে ২০১৭ ইংরেজি সালে।পাঁচ বছর অতিক্রম হয়ে গেছে নানা বাহানা আর করোনা জ্বরে।
তারই রেশ ধরে শত বার্ষিকী অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে সিলেট প্রেস ক্লাবে একটি প্রেস কনফারেন্স করেছেন নিজেদের মৃত প্রকাশের অধিকার না পাওয়া প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের একপক্ষ।তারা তাদের বক্তব্যে তুলে এনেছেন উপরোল্লিখিত বিষয়গুলে।লিখিত বক্তব্যের বাহিরে তাদের মধ্যে অনেকেই আরো বলেছেন আমাদের বিদ্যালয়ের শিক্ষক-অভিভাবকের খুব শখ জেগেছে মমতাজের ফাইট্টা যায় গানর সাথে রসালো কোমর দোলানো নাচটি ও দেখবার।
এখানে নিরব দর্ষকের ভূমিকায় থাকা তৃতীয় আরেকটি পক্ষ বলছেন ভিন্ন কথা।তাদের মতে,তখন অর্থাৎ ২০১৭ সালে অনুষ্ঠানটি করা হয়নি কিংবা করার সুযোগ ও দেয়া হয়নি কারণ বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি ছিলেন মোঃজাকির হোসেন।তাদের মতে সে সম অনুষ্ঠানটি করা হলে সভাপতিত্ব করতেন জাকির হোসেন।তাই তার নেতৃত্বে অনুষ্ঠান না করার জন্য যত অজুহাত ছিলো তার সবকটা জালই পেতে রাখা হয়েছিলো।অতঃপর সেই পক্ষেই জয় গেলো।কাটলো এক বছর।তার পর শুরু করোনা। এই নিয়েই চলছিলো পাঁচটি বছর।এখন সময় এবং সুযোগ হয়েছে তাই অনুষ্ঠান কমিটি আবার জেগেছেন।
তারমধ্যে আরেকটি পক্ষ তারা সম্ভবত দ্বিতীয় পক্ষেরই লোক হবেন।তারা আবার নতুন করে চিন্তা করছেন ভারতের বিখ্যাত অভিনেত্রী সানি লীওনকে দিয়ে উদ্ভোদন করে আরেকটি শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠান আয়োজন করবেন।
এমন খবরের সত্যতা দুটি জায়গা থেকে পাওয়া গেলেও কবে করবেন তা বলেতে পারেননি তারা
আর যাইহোক,একটি বিদ্যালয়ের শতবর্ষ পূর্তি অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে এমন প্রতিদ্বন্দ্বিতা মূলক অনুষ্ঠান আয়োজন সকল সমাজেই ছাই ছড়াবে।যাহা গোটা শিক্ষার্থী সমাজ সহ দেশ দশ ও সমাজে হিংসার জন্ম হবে।
বাস্তব জীবনে ঘটে যাওয়া এমনই একটি ঘটনা তুলে ধরছি।
সিলেটের বর্ডার গার্ড পাবলিক স্কুল অ্যান্ড কলেজের একটি অনুষ্ঠানে সাবেক সমাজকল্যাণ মন্ত্রী মরহুম সৈয়দ মহসিন আলী সাহেব মঞ্চে বসে ধূমপান করছিলেন।সেই সময় তিনি বিষয়টি নিয়ে দেশ দশ ও সমাজে বেশ সমালোচিত হয়েছিলেন।এবং আজীবনই সেই বিষয়টি ঘৃণার দেয়ালে লিপিবদ্ধ থাকবে।
প্রিয় অগ্রজ ছাত্র ভাইদের কাছে আমার ও আমাদের আকুল আবেদন,এই সমাজ না চায় আপনাদের মমতাজ আর না চায় আপনাদের সানি লীওন।
আমরা চাই আমাদের সকলের প্রিয় বিদ্যালয়টি টিলার উপরে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়ে থাকুক এই আমাদের প্রত্যাশা।
আপনাদের নিজেদের অবস্থা বোঝানোর জন্য পরবর্তী প্রজন্মের মাথার উপরে হিংসা ও ঘৃণার পাহাড় চেপে দিবেন না।এই আমাদের প্রতাশা আপনাদের কাছে।
লেখক
এস এম শামসুর রহমান সুমেল
সাংবাদিক সাংস্কৃতি কর্মী
লন্ডন
ইমেইল shamsursumel@yahoo.com