ইতালির পাসপোর্ট পেতে আবেদনে জালিয়াতি,বাতিল কয়েক’শ বাংলাদেশির নাগরিকত্ব
প্রকাশিত হয়েছে : ৪:৩২:৫৮,অপরাহ্ন ১০ জুন ২০২২ | সংবাদটি ৫৫ বার পঠিত
আঁখি সীমা কাউসার
ইতালি থেকে
বাঙালি প্রচলন কথা ঢেকি স্বর্গে গেলেও ধান ভাঙ্গে ,অর্থাৎ অনেক বাঙ্গালীদের স্বভাব জালিয়াতি ঘুষ-দুর্নীতি করা, সেটা সভ্য দেশে এসেও ভুলতে পারেনি । এখন তার খেসারত গুনে গুনে দিতে হচ্ছে ।ইতালীয় নাগরিকত্ব অর্জনের সময় আবেদনপত্রে জালিয়াতির আশ্রয় নেওয়ার অভিযোগে কয়েক’শ বাংলাদেশির । ইতালীয় নাগরিকত্ব বাতিল হওয়ার উপক্রম হয়েছে অনেক বাংলাদেশির ।
গত দুই বছরে আরো কয়েক শ’ ইতালির নাগরিকত্ব বাতিল হয়েছে, যা আইনি প্রক্রিয়ায় মামলা চলছে । কয়েকজনকে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে বলে
জানা গেছে ।
পরিস্থিতি বর্তমানে এমন হয়েছে যে ইতালি প্রবাসী এক বাংলাদেশি ইতালির নাগরিকত্ব পান ২০১৮ সালে,নাগরিকত্ব পেয়েই তিনি সপরিবারে চলে যান ব্রিটেনে, কিছুটা বিশ্লেষণ করা যেতে পারে এখানে, গত ছয় বছরে ইতালির পাসপোর্ট পাওয়ার সাথে সাথে লন্ডনে চলে যাওয়ার যে ঢল নেমেছে, তা চোখে পড়ার মতো ।বিশেষ করে সবচেয়ে বেশি হলো বাংলাদেশীদের মধ্যে । একটি কথা আছে না, যে থালায় ভাত খেলাম সেই থালা ছিদ্র করা । ইতালি সরকারও কম যায় না, খোঁজ খবর নিতে শুরু করলো কেন লন্ডনে যাওয়ার এত ঢল ? আর এত পাসপোর্ট কিভাবে পেল তারা ? যেমন ভাবা তেমন কাজ শুরু হতে লাগলো তদন্ত, সত্যিকারে তদন্ত, আস্তে আস্তে প্রশাসন জেনে গেল কিছুটা উল্টো পথে মিথ্যা তথ্য, বাংলাদেশ থেকে যেসব পুলিশ ভেরিফিকেশন আনা হয়েছে সেখানেও ভুয়া কাগজপত্র ছিল, ঘুষ দিয়ে পাসপোর্ট বের করেছে কয়েক হাজার বাংলাদেশি, শুধুমাত্র বাংলাদেশীরা নয় ,তদন্তে উঠে এসেছে অন্যান্য দেশের নাগরিকরা অসৎ পন্থা অবলম্বন করেছে । যেমন বাংলাদেশে সপরিবারে থেকেও, ছেলে মেয়ে স্কুল ইউনিভার্সিটিতে পড়ছে তারপরেও এখানে এসে উকিল ধরে ,ভুয়া কাগজপত্র দিয়ে নাগরিকত্ব বের করেছে, এমন তথ্যও আছে প্রশাসনের কাছে ।
চলতি বছর এপ্রিলে ব্যক্তিগত কাজে এক ফ্যামিলি ইতালি আসে, ফেরার সময় তার পাসপোর্ট আটকে দেয় ইতালি ইমিগ্রেশন,কারণ তিনি নাগরিকত্ব আবেদনের সময় প্রতারণার আশ্রয় নিয়েছিলেন, ঘুষ দিয়ে তার নাগরিকত্ব আবেদন করে সফল হন। (এই ইতালিয়ানদেরকে ঘুষ দিয়ে প্রতারণা করে কাজ করা যায় এই বিদ্যা টুকু দিয়েছে মেধাবী বাংলাদেশিরা )এখন বিপদ হচ্ছে তার, পুরো পরিবার ব্রিটেনে আর তিনি আটকা পড়েছেন ইতালিতে! তিনি ২০১৬ সালের এপ্রিলে তার নাগরিকত্বের আবেদন করেছিলেন।
এমন সংকটের ঝুঁকিতে রয়েছেন অন্তত ২ হাজারো বেশী বাংলাদেশি ।এর মধ্যে অন্তত ৪০০-৫০০ বাংলাদেশি আছেন যারা ব্রিটেনে আসা ইতালীয় প্রবাসী।
ইতালির রাজধানী রোমের পাবলিক প্রসিকিউটর অফিসের ২০২০ সালের ২০ জুলাই জারি করা একটি চিঠির কপি কয়েকটি মিডিয়ার হাতে এসেছে বলে জানা গেছে
ঐচিঠিতে ১০ জনের একটি জালিয়াত চক্রের নাম প্রকাশ করা হয়েছে; এদের মধ্যে পাসপোর্ট অফিসের কর্মকর্তা ও বাইরের দালাল রয়েছে। চিঠিতে ৪৮৬টি পাসপোর্ট আবেদনের রেফারেন্স নম্বরের উল্লেখ আছে। এ রকম আরও বেশ কিছু চিঠি ইতালির বিভিন্ন শহর থেকে ইস্যু করা হয়েছে। সে চিঠিতে উল্লেখ আছে- ২০১৬ সালের জুলাই থেকে ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত ৪৮৬ টি আবেদনের রেফারেন্স নম্বর দেওয়া আছে। এ ৪৮৬ পাসপোর্ট আবেদনের তদন্ত হয় ২০১৭ সালের জানুয়ারি থেকে ২০১৮ সালের জুলাই পর্যন্ত। মূলত কভিডের আগে এ নাগরিকত্ব বাতিলের চিঠি দেওয়া হলেও নতুন করে আবারও গত দুই মাস থেকে এ চিঠি দেওয়া হচ্ছে।
ব্রিটেন প্রবাসী ইতালি থেকে আসা বাংলাদেশি নাগরিকদের কয়েকজন২০২০/২০২১ এধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়েছে । তাদেরকে ইতালি এয়ারপোর্টে নাগরিকত্ব বাতিল করে দিয়েছ । এবং তাদেরকেও বলে দিয়েছে দশ বছর ইতালি থেকে আবার পাসপোর্ট এর জন্য আবেদন করতে ।
একটি কথা বাংলাদেশীদের বুঝতে হবে আপনি যেখানেই থাকুন না কেন সেখানকার আইন নিয়ম কারণ যদি মানা হয় তাহলে সে ক্ষেত্রে এ ধরনের কোনো সমস্যা হবার কথা না শুধু কেবল নাগরিকত্ব নয় সাধারণ একটি পাসপোর্ট এর জন্য করতেও বাংলাদেশিরা সব সময় ফলস কাগজপত্র ব্যবহার করে কিছু টাকার বিনিময়ে সাথে সাথে পার পেয়ে গেলেও পরবর্তীতে তা কিন্তু আবার ধরা পড়ে প্রশাসনের হাতে এবং তাদেরকে বিপদের সম্মুখীন হতে হয় তাই অভিজ্ঞজনরা মনে করে বাংলাদেশি কমিউনিটির যেমন বদনাম হয় এ ধরনের কার্যক্রমে বাংলাদেশের সুনাম নষ্ট হয় কাজেই কেউ যেন দুই নাম্বারি পন্থায় কোন কাগজপত্রে ফর্সড মেন্স ব্যবহার না করে সেদিকে বাংলাদেশি কমিউনিটিকে তথা ইতালি দূতাবাসকেও লক্ষ্য রাখতে হবে । টেলি দূতাবাস থেকে বারবার যদি কাউন্সেলিং করা হয় মাঝেমধ্যে বাংলাদেশি কমিউনিটি নিয়ে বসা হয়, ব্রিফিং দেয়া হয় এধরনের কাজ থেকে বিরত থাকা হয়তোবা কিছুটা হলেও সুফল পাওয়া যাবে । বাংলাদেশে দুর্নাম থেকে মুক্তি পাবে । আর যারা চার্জ ডকুমেন্ট দিয়ে বিভিন্ন কাগজপত্র টাকা দিয়ে তৈরি করে তারাও বড় রকম বিপদের হাত থেকে মুক্তি পাবে ।
রোমে বাংলাদেশ কমিউনিটিতে কয়েকজন বিশিষ্ট ব্যক্তির সাথে কথা বলে জানা গেছে,যারা বাংলাদেশী প্রবাসীদের সমস্যা নিয়ে কাজ করে, আগামীতে আরো দুই থেকে আড়াই হাজার ব্যক্তির নাগরিকত্ব বাতিল হতে পারে ।এর মধ্যে ইতালির প্রশাসনের নজরে অন্যান্য দেশের নাগরিকসহ উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশি আছেন ,
বিশ্বস্ত একটি সূত্র থেকে জানা গেছে যে‘,ইতালি থেকে ব্রিটেনে আসা অনেক বাংলাদেশি ইতালি দূতাবাসে নিবন্ধন করেননি, মানে ইতালির সরকারের হিসাবে তারা ইতালিতেই আছেন তাদের ব্যাপারেও এরি মধ্যে যারা এখনো
ইতালিত ত্যাগের বিষয়ে ইতালি সরকারকে এখন কিছু জানায় নাই, তারা কিন্তু বড় রকম বিপদের মুখোমুখি হবে । তাদের অনেককেই, ইতালির সরকার ইতালির ঠিকানায় চিঠি দিয়েছে,
সে চিঠির খবরই জানেনি অনেকেই। এখন ইতালিতে যাওয়ার পর পাসপোর্ট আটকে রাখা হচ্ছে।’ তিনি বলেন এখন যাদের পাসপোর্ট ফিরিয়ে নেওয়া হচ্ছে তাদের আবারও সেই ১০ বছর বৈধভাবে থেকে তারপর নতুন করে নাগরিকত্বের আবেদন করতে হবে ।
এখন উচিত যারা এ ঘটনার সঙ্গে যুক্ত তাদের যৌথভাবে অভিজ্ঞ একজন ইমিগ্রেশন আইনজীবী নিয়োগ করা, যিনি ইতালির আইন বোঝেন। নইলে সামনে আরও বিপদ হতে পারে।’