২০০ রোহিঙ্গা সাগরে ভাসছেন, বাঁচানোর আকুতি জানাল আসিয়ান
প্রকাশিত হয়েছে : ৯:১৩:৪৮,অপরাহ্ন ২০ ডিসেম্বর ২০২২ | সংবাদটি ৭৬ বার পঠিত
আন্তর্জাতিক ডেস্ক
ভারতের আন্দামান-নিকোবর দ্বীপপুঞ্জের কাছাকাছি এলাকায় গত কয়েক সপ্তাহ ধরে সাগরে ভাসছেন নারী ও শিশুসহ প্রায় ২০০ রোহিঙ্গা।
ভেসে থাকা রোহিঙ্গাদের বাঁচাতে ভারত মহাসাগরের উপকূলবর্তী বিভিন্ন দেশের সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে দক্ষিণপূর্ব এশীয় দেশগুলোর জোট আসিয়ান।
সাগরে ভাসা রোহিঙ্গারা সবাই বাংলাদেশের রোহিঙ্গা শরণার্থী শিবিরে আশ্রিত ছিলেন। কিছুদিন আগে বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ উপকূল থেকে একটি নৌকায় করে তারা মালয়েশিয়ার উদ্দ্যেশ্যে রওনা দেন।
আসিয়ানের মানবাধিকার বিষয়ক সংস্থা আসিয়ান পার্লামেন্টারিয়ানস অব হিউম্যান রাইটস (এপিএইচআর) মহাসাগরের উপকূলবর্তী চার দেশ থাইল্যান্ড, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া ও ভারতকে আহ্বান জানিয়েছে মাঝসাগরে বিপদগ্রস্ত এই রোহিঙ্গাদের বাঁচানোর জন্য।
মঙ্গলবার সংস্থার পক্ষ থেকে এ প্রসঙ্গে একটি বিবৃতি দেওয়া হয়েছে।
ভারতের সংবাদমাধ্যম দ্য কুইন্ট নিউজের বরাত দিয়ে আলজাজিরার এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের কক্সবাজার জেলার টেকনাফ থেকে নারী ও শিশুসহ ২০০ রোহিঙ্গাকে নিয়ে মালয়েশিয়ার উদ্দেশে ইঞ্জিনচালিত নৌকাটি যাত্রা শুরু করেছিল গত ১ ডিসেম্বর। মালাক্কা প্রণালী পার হয়ে আন্দামান-নিকোবর দ্বীপুঞ্জের কাছাকাছি আসার পর নৌকাটির ইঞ্জিন বিকল হয়ে যায়।
নৌকার মাঝি-মাল্লারা বিকল হওয়া সেই ইঞ্জিন গত তিন সপ্তাহের চেষ্টায়ও মেরামত করতে পারেননি।
বিকল অবস্থায় গত ২০ দিন ধরে নৌকাটি মাঝ সমুদ্রে ভাসছে। ইতিমধ্যেই নৌকার খাবার ও পানির মজুত শেষ হয়ে গেছে। ক্ষুধা ও পানিশূন্যতার কারণে কয়েকজন যাত্রীর মৃত্যুও হয়েছে বলে জানা যায়।
বেগতিক পরিস্থিতি দেখে রবিবার নৌকাটির প্রধান মাঝি তার আত্মীয় এবং কক্সবাজার রোহিঙ্গা শিবিরে আশ্রিত শরণার্থী মোহাম্মদ খান রেজওয়ানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করে বলেন, ‘আমরা এখানে মারা যাচ্ছি, আমাদের বাঁচান।’
মোহাম্মদ খান রেজওয়ান ফোন পাওয়ার পর শরণার্থী শিবির কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে এ সম্পর্কে অবহিত করেন। রেজওয়ান ভারতের দৈনিক দ্য প্রিন্টকে বলেন, ‘সেখানকার পরিস্থিতি খুবই উদ্বেগজনক। তাদের খাদ্য-পানি সব ফুরিয়ে গেছে।’
এপিএইচআরের বোর্ডসদস্য ইভা সুন্দারি বিবৃতিতে বলেন ‘দিনের পর দিন ধরে একটি নৌকা সমুদ্রে ভাসছে এবং সেই নৌকার লোকজন খাবার ও পানির অভাবে মৃত্যুর প্রহর গুণছে— ন্যূনতম বিবেকসম্পন্ন লোকজনের জন্যও এটা অত্যন্ত যন্ত্রণাদায়ক একটি ব্যাপার। এই ক্ষুধার্ত-নিরাশ্রয় লোকজনদের অবহেলা করা মনুষ্যত্বকে অপমান করার শামিল।’
মিয়ানমারের সবচেয়ে নিপীড়িত জাতিস্বত্ত্বা সংখ্যালঘু মুসলিম জাতিগোষ্ঠী রোহিঙ্গা । দেশটির ক্ষমতাশালী সামরিক বাহিনী তাদের সাংবিধানিক স্বীকৃতিও কেড়ে নিয়েছে । মিয়ানমারে যাবতীয় সরকারি সুবিধা-সেবা-অধিকার থেকে এই জাতিগোষ্ঠী চরমভাবে বঞ্চিত। আরাকান রাজ্যেই ছিল রোহিঙ্গাদের অধিকাংশের নিবাস ।
আরাকানের কয়েকটি পুলিশ স্টেশন ও সেনা ছাউনিতে সশস্ত্র রোহিঙ্গাগোষ্ঠী রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) হামলা চালায় ২০১৭ সালে । তারপর আরাকানের সাধারণ রোহিঙ্গাদের ওপর হত্যা-ধর্ষণ-অগ্নিসংযোগসহ ভয়াবহ নিপীড়ন শুরু করে দেশটির সামরিক বাহিনীর সদস্যরা।
সৈন্যদের অত্যাচারের মুখে টিকতে না পেরে প্রায় ১০ লাখ রোহিঙ্গা আরাকান থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন। জাতিসংঘের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রোহিঙ্গাদের নিশ্চিহ্ন করে দিতে পরিকল্পিতভাবেই তাদের বিরুদ্ধে অভিযান চালিয়েছিল তাতমাদৌ নামে পরিচিতি মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী।
তবে ২০২০ সাল থেকে বাংলাদেশের সরকার জাতিসংঘ ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন সংস্থাকে স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছে, আর কোনো রোহিঙ্গা শরণার্থীকে বাংলাদেশে আশ্রয় দেওয়া সম্ভব নয়। ২০১৭ সালে যেসব রোহিঙ্গা শরণার্থী এসেছিল, তাদের মিয়ানমারে ফেরত পাঠাতেও আন্তর্জাতিক তৎপরতা শুরু করেছে বাংলাদেশের সরকার।
চলতি বছর বাংলাদেশ থেকে রোহিঙ্গাদের নৌযাত্রার হার নাটকীয় হারে বেড়েছে। গত বছর মালয়েশিয়া ও ইন্দোনেশিয়ার উদ্দেশে বাংলাদেশ থেকে যাত্রা করেছিলেন ২২১ জন রোহিঙ্গা। এসব জানা যায় জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থার তথ্য থেকে।
অন্যদিকে, চলতি বছর জানুয়ারি থেকে নভেম্বর পর্যন্ত এই সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৯২০ জন।