ছাতক/সুনামগঞ্জ, রবিবার ২৬ অক্টোবর: বহুল আলোচিত জিয়াউর রহমান হত্যা মামলায় দীর্ঘ এক বছর পর অবশেষে তার আপন ভাই বাবুল আহমেদ (৪০)কে গ্রেফতার করা হয়েছে। আজ রবিবার দুপুর অনুমানিক ২টার দিকে সুনামগঞ্জ আদালত প্রাঙ্গণ থেকে র্যাব সদস্যদের সহযোগিতায় ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম তাকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ছাতক থানায় নিয়ে যান। গত বছর ছাতকের গহরপুর গ্রামের জিয়াউর রহমানের বস্তাবন্দী মরদেহ উদ্ধারের পর থেকেই এ মামলার রহস্য নিয়ে তীব্র জল্পনা চলছিল, এবং পরিবারের সদস্যদের অস্বাভাবিক আচরণ শুরু থেকেই সন্দেহের জন্ম দিয়েছিল।
ঘটনার সূত্রপাত ঘটে গত বছর ১০ সেপ্টেম্বর। ছাতক থানার মহদী গ্রামের একটি বাড়ির পেছনের খাল থেকে ৫৮ বছর বয়সী জিয়াউর রহমানের বস্তাবন্দী মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়। লাশ শনাক্ত করার পর জিয়ার পরিবার জানায় যে জিয়া বিগত তিনদিন ধরে নিখোঁজ ছিলেন। তবে এই দীর্ঘ সময়ে পরিবারের কেউ, এমনকি তার স্ত্রী-পুত্র কিংবা গ্রেফতারকৃত ভাই বাবুল আহমেদও নিখোঁজ সংবাদ পুলিশ বা গ্রামের কাউকে অবহিত করেননি। এমনকি একই পরিবারের সিংচাপইড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন সাহেলকেও তারা এ বিষয়ে জানাননি, যা জনমনে প্রশ্ন তৈরি করে।
পুলিশ ও গ্রামবাসী সূত্রে জানা যায়, জিয়াউর রহমান নিখোঁজ হওয়ার পর পরিবার থেকে তাকে খুঁজে বের করার জন্য একটি ফোন কলও করা হয়নি। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তেও পরিবারের এই নীরবতা এবং নিষ্ক্রিয়তা বারবার উঠে আসে। এ কারণে প্রথম থেকেই সন্দেহের তীর পরিবারের দিকে থাকলেও, সিংচাপইড় ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান সাহাব উদ্দিন সাহেলের প্রভাব ও ভয়ে গ্রামের অনেকেই প্রথম দিকে মুখ খুলতে সাহস পাননি বলেও অভিযোগ রয়েছে।
দীর্ঘ অনুসন্ধানের পর এই হত্যাকাণ্ডের পেছনের সম্ভাব্য কারণ হিসেবে চাঞ্চল্যকর কিছু তথ্য বেরিয়ে এসেছে। জানা গেছে, জিয়াউর রহমানের স্ত্রীর সঙ্গে তার সহোদর ভাই বাবুল আহমেদের দীর্ঘদিনের অবৈধ সম্পর্ক ছিল। গ্রামবাসী ও পুলিশের হস্তক্ষেপে একাধিকবার তাদের পালিয়ে যাওয়া ঠেকানো হলেও এ সম্পর্কের ইতি ঘটেনি। এছাড়াও বিগত তিন বছর ধরে লন্ডন প্রবাসী মাসুক মিয়ার সঙ্গেও জিয়ার স্ত্রীর অবৈধ সম্পর্ক গড়ে উঠেছিল বলে জানা যায়। এই ত্রিভুজ প্রেমের জটিলতাকেই হত্যাকাণ্ডের মূল কারণ বলে ধারণা করা হচ্ছে।
বর্তমানে জিয়াউর রহমানের স্ত্রী পলাতক রয়েছেন বলে গ্রামবাসী জানিয়েছেন, যা এই সন্দেহের পালে নতুন হাওয়া যোগ করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই হত্যাকাণ্ডে জিয়ার স্ত্রী, চেয়ারম্যান সাহেল, লন্ডন প্রবাসী মাসুক মিয়া সহ গ্রামের আরও বেশ কয়েকজন চেয়ারম্যানের ঘনিষ্ঠ লোক জড়িত থাকতে পারে।
ছাতক থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শফিকুল ইসলাম জানিয়েছেন, গ্রেফতারকৃত বাবুল আহমেদকে নিবিড়ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তার কাছ থেকে এই হত্যাকাণ্ডের পেছনের রহস্য উদঘাটনের চেষ্টা চলছে এবং এর সঙ্গে জড়িত বাকিদের শনাক্ত করে দ্রুত আইনের আওতায় আনা হবে। পুলিশ আশা করছে, বাবুলের জবানবন্দি এই মামলার নতুন মোড় এনে দেবে এবং জিয়ার নির্মম হত্যাকাণ্ডের প্রকৃত সত্য উন্মোচিত হবে।
প্রতিনিধির নাম 












