ধাপে ধাপেই এগুতে চাই
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:৫২:৫৫,অপরাহ্ন ১০ আগস্ট ২০১৫ | সংবাদটি ৪২২ বার পঠিত
খেলাধুলা প্রতিনিধি,
৩৮টি প্রথম শ্রেণীর ম্যাচে ২টি সেঞ্চুরি, ফিফটির সংখ্যাও ৮টি। কিন্তু সাব্বির রহমান রুম্মানের জাতীয় দলে অভিষেক হলো টি-টোয়েন্টির ব্যাটসম্যান হিসেবে। গত বছর ফেব্রুয়ারিতে অভিষেকের পর থেকেই দলের লেজের দিকের নির্ভরতার নামও তিনি। একই বছর অভিষেক ওয়ানডেতেও। যদিও এরই মধ্যে ৮টি টি-টোয়েন্টি ম্যাচ খেললেও ওয়ানডে খেলে ফেলেছেন ২০টি। পাকিস্তানের বিপক্ষে টাইগারদের প্রথম টি-২০ জয়ে অপরাজিত ৫১ রানের অবদানটিও তার। এমনকি তার প্রথম ওয়ানডে ফিফটি আসে এই বছর বিশ্বকাপে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে যখন দল ব্যাটিং বিপর্যয়ে তখন ৮ নাম্বারে নেমে চমকে দিয়েছিলেন বিশ্বকে। রাজশাহীর এ তরুণ এখন বাংলাদেশের ক্রিকেট-আকাশে সম্ভাবনার উজ্জ্বল তারা। তবে ৭/৮ মাস তাকে থাকতে হতে পারে মাঠের বাইরেই। এ বছর বাংলাদেশের নেই কোন সীমিত ওভারের ম্যাচ। সর্বশেষ আন্তর্জাতিক সিরিজ হবে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে, সেখানে খেলা হবে শুধু টেস্ট। তাই লম্বা একটা সময় শুধু এইচপির অনুশীলন ক্যাম্পেই কাটাতে হবে। টেস্টে খেলার অদম্য ইচ্ছা থাকলেও তিনি এগিয়ে যেতে চান ধাপে ধাপে। তাই ফাঁকা সময়টা নিজের ব্যাটিংয়ের ভুল-ত্রুটি শুধরে নিতেই সময় দিতে চান। তবে নির্দিষ্ট কোন লক্ষ্য নিয়ে নয়, একটু একটু করে পাড়ি দিতে চান তিনি স্বপ্নের পথ। তার এগিয়ে যাওয়ার কথা তুলে ধরছেন মানবজমিনের স্পোর্টস রিপোর্টার ইশতিয়াক পারভেজ-
প্রশ্ন: অনিচ্ছা সত্ত্বেও সামনে লম্বা একটা অবসরের সময় কাটাবেন কিভাবে?
সাব্বির রহমান: আসলে আমি এখনও ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টি দলেই খেলছি। অস্ট্রেলিয়া সিরিজে টেস্টে জায়গা পাব সেটি নিয়ে ভাবি না। আপনারা জানেন আমি এরই মধ্যে এইচপিতে অনুশীলন করছি। সামনের তিনটা মাস সেখানেই কাটাবো। এতে করে আমার অনুশীলনের সময়টা খারাপ কাটবে না। এরপর শুনছি বিসিএল হতে পারে, এমনকি বিপিএলও হতে পারে। সেখানেও খেলার সুযোগ হবে। দেখতে দেখতে সময়ও কেটে যাবে।
প্রশ্ন: নিজেকে শুধু ওয়ানডে ও টি-টোয়েন্টির ক্রিকেটার ভাবেন?
সাব্বির: না, না, সেটি কেন করবো। আমি আসলে ধাপে ধাপেই নিজেকে এগিয়ে নিতে চাই। প্রথম টি-টোয়েন্টিতে সুযোগ এসেছে। এরপর ওয়ানডেতেও খুব খরাপ খেলিনি। এখন যদি কোন দিন টেস্ট দলে জায়গা হয় সেখানেও ভাল করার চেষ্টা থাকবে।
প্রশ্ন: টেস্টে খেলার জন্য নিজেকে কতটা প্রস্তুত মনে করেন?
সাব্বির: আমি কিন্তু ঘরোয়া লীগগুলোতে খেলি। এই পর্যন্ত অনেক প্রথম শ্রেণীর ম্যাচ খেলেছি। আমি মনে করি টেস্ট খেলতে পারলে ক্রিকেটের যে কোন ফরমেটে খেলা যায়। আমি নিজেকে সে ভাবেই প্রস্তুত করছি। মানসিকভাবে বলবো একটার পর একটা ধাপ পেরিয়ে এখন চাপ নিতে প্রস্তুত। আর যোগ্যতার কথা… সেটি আসলে মাঠে মাঠে খেলেই প্রমাণ দিতে হবে। সেটি প্রমাণ দিতেই মানসিকভাবে প্রস্তুত আছি বলতে পারি। আমার কাছে ক্রিকেটের প্রতিটি ধাপই গুরুত্বপূর্ণ।
প্রশ্ন: তাহলে লক্ষ্যটাও নিশ্চয় ঠিক করে রেখেছেন?
সাব্বির: সত্যি কথা বলতে কি আমি কোন লক্ষ্য ঠিক করে খেলি না। আমার কাজটাই হলো পরিস্থিতি অনুসারে খেলা। চেষ্টা করি যে দায়িত্বটা মাঠে পালন করতে হবে সেটি করার। লক্ষ্য ঠিক করি না- এর কারণ সেটি খেলার সময় চাপ হয়ে যেতে পারে।
প্রশ্ন: সামনেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ, তার জন্য নিজেকে কিভাবে প্রস্তুত করছেন?
সাব্বির: আমি আসলে নিজের ব্যাটিংয়ের ভুলত্রুটি গুলো নিয়ে কাজ করছি। আমার এই দিকটাতে আরও মনোযোগ দিতে হবে। আর একটা বিষয় হলো, আমরা কিন্তু সারা বছর টি-টোয়েন্টি খেলার সুযোগ পাই না। আমাদের এত ম্যাচও নেই। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের জন্য ম্যাচ খেলে প্রস্তুতি নেয়াটাও দরকার। আশা করি সেই সুযোগ হবে।
প্রশ্ন: কি ভুল-ত্রুটি বলবেন কি?
সাব্বির: আমার ফুট ওয়ার্ক নিয়ে কাজ করছি। যেমন ব্যাক ফুটে শট খেলাটা নিয়ে একটু বেশি কাজ করছি। বলতে পারেন ফুট ওয়ার্কে কিছু সমস্যা আছে সেগুলো ঠিক করবো।
প্রশ্ন: টি-টোয়েন্টি দলে ৬ থেকে ৮ নাম্বার পজিশনে আরও একজন হার্ড হিটারের অভাব বোধ করেন কি?
সাব্বির: তাতো অবশ্যই। ধরেন আমি যদি ৬ নাম্বারে ব্যাট করতে নামি তাহলে আমার যদি জানা থাকে যে ৭ নাম্বারে যে আসবে সেই ১০ বলে ২০/২৫ করার ক্ষমতা রাখে তখন আমার সাহসটাও অন্যরকম থাকবে। আমিও তখন ঝুঁকি নিতে ভয় পাবো না যে আমার পরে বা আমার সঙ্গে এমন একজন আছে যে প্রয়োজনে আমাকেও ছাড়িয়ে যেতে পারে।
প্রশ্ন: সেখানে কাকে ভাবছেন?
সাব্বির: এটি নির্বাচকদের বিষয়।
প্রশ্ন: দীর্ঘ দিন ম্যাচ খেলতে না পারলে সেই প্রভাব পারফরম্যান্সে পড়বে বলে মনে করেন?
সাব্বির: অনুশীলন ও সরাসরি ম্যাচ খেলা এক নয়। পারফরম্যান্সে প্রভাবতো পড়বেই। তাই বলে এই নয় যে, সারা বছরই আমরা আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলার সুযোগ পাব। নিজেদের মধ্যে খেলেই সেই ঘাটতিটা পূরণ করতে হবে। এইচপিতে আছি সেখানেও বেশ কয়েকটি ম্যাচ হবে। এরপর বিসিএল, বিপিএল হতে পরে। আমি বলছি ঘাটতি পূরণের জন্য যা যা করার দরকার সেটি করতে হবে।
প্রশ্ন: আপনি গ্রামীণ ফোনের ব্রান্ড অ্যাম্বাসেডর হয়েছেন। কেমন অনুভব করেন মাঠের বাইরের জীবনটা।
সাব্বির: সবাই যেমন বলে আমি কিন্তু মডেলিং বা মিডিয়া জগতে খুব একটা সময় দিই না। আমি খুব কমই যাই। তবে ভাল লাগে আর গ্রামীণ ফোনের মতো বড় প্রতিষ্ঠানের ব্রান্ড অ্যাম্বাডের হওয়াতো অন্যরকম একটি বিষয়।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়া সিরিজ নিয়ে কি ভাবছেন?
সাব্বির: আমি বলবো দারুণ একটা সিরিজ হবে। জয়-পরাজয়-ড্র এই সব ভুলে ওদের মতো বড় দলের বিপক্ষে খেলার অভিজ্ঞতাটা কাজে লাগাতে হবে। যারা সুযোগ পাবেন তাদের জন্য এটি বড় একটি সুযোগ। আশা করি সবাই তা কাজে লাগাবেন।