স্বপ্নের ফাইনালে বাংলাদেশ
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:১১:৫২,অপরাহ্ন ১৭ আগস্ট ২০১৫ | সংবাদটি ৩৬৩ বার পঠিত
স্পোর্টস রিপোর্টার,
প্রথম দুই ম্যাচের সবকিছু ঠিক থাকলো। সেই গতি, সেই ড্রিবলিং, ছোট ছোট পাস। বদলালো শুধু প্রতিপক্ষ। ভারত-শ্রীলঙ্কার জায়গায় আফগানিস্তান। এবার জয় এলো ১-০ গোলে। সিলেট জেলা স্টেডিয়াম টানা তিন জয় উপহার দিলো বাংলাদেশকে। অনূর্ধ-১৬ সাফ ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপার লড়াইয়ে বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ সেই ভারত। গতবারের চ্যাম্পিয়নরা গতকাল দ্বিতীয় সেমিফাইনালে নেপালকে হারায় একমাত্র গোলেই।
স্বপ্ন পূরণের পথে শীর্ষ ধাপে এখন বাংলাদেশের কিশোররা। শুরুতে দূর দেখা গেলেও সোনায় মোড়ানো ট্রফিটা এখন চোখের সামনে। যেন হাত বাড়ালেই ধরা যায়। আর মাত্র একটি সিঁড়ি। সেটা পাড়ি দিলেই হাতের মুঠোয় ধরা দিবে শিরোপা।
সিলেটে ফুটবল হলেই উপচে পড়া দর্শক। বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপে উচ্ছ্বল ছিল গ্যালারি। এর আগে সিলেট স্টেডিয়ামে নেপালের সঙ্গে প্রীতি ম্যাচতো বাংলাদেশের ফুটবল উন্মাদনার উজ্জ্বল নজির হয়ে আছে। এবার ছোটদের টুর্নামেন্টেও সেই একই দৃশ্য। কাল সিলেট স্টেডিয়ামের গ্যালারিতো আরও বড় বিস্ময় নিয়ে হাজির। খেলা শুরুর অনেক আগেই দর্শকে ঠাসা গ্যালারি। উচ্ছ্বল, উন্মাতাল গ্যালারি ম্যাচ জুড়ে ‘বাংলাদেশ’ ‘বাংলাদেশ’ বলে সুর তুলেছে। সেই সুর হারিয়ে যেতে দেননি একজন সাদ উদ্দিন। আফগানিস্তান যখন শক্ত চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে ম্যাচের দখল নিতে মরিয়া তখনই আসল কাজটা সারেন সিলেটের ছেলে সাদ। টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ যেদিন শুরু করে সেদিন থেকেই আলাদা হয়ে আছেন তিনি। দুই গ্রুপ ম্যাচে ভারত-শ্রীলঙ্কার সঙ্গে গোল পাননি। কিন্তু গোল বানিয়ে দেয়ার কাজটা করেছেন গতি আর ড্রিবলিংয়ে। কিন্তু কে জানতো সেমিফাইনালের জন্য গোল জমিয়ে রেখেছেন সাদ উদ্দিন।
টুর্নামেন্টের সেমিফাইনাল ছাপিয়ে গত কয়েকদিন সিলেটে আলোচনায় ছিল বৃষ্টি। তাই কাল প্রতিপক্ষ আফগানিস্তানের পাশাপাশি বৃষ্টি নিয়েও মাথা ঘামাতে হয়েছে বাংলাদেশকে। কোচ সৈয়দ গোলাম জিলানী আগেরদিন সংবাদ সম্মেলনে বৃষ্টি নিয়ে কথা বলেন, ‘বৃষ্টি হলে আমরা ম্যাচের কৌশলে পরিবর্তন আনবো। বাংলাদেশ-আফগানিস্তান ম্যাচ শুরুর আগে মেঘলা ছিল সিলেটের আকাশ। কর্দমাক্ত সত্যি করে বৃষ্টি তার পরশ লাগিয়ে উধাও। কিন্তু এই কয়েকদিনের বৃষ্টিতে মাঠ ছিল কিছুটা শক্ত। তাই আফগানিস্তান কঠিন চ্যালেঞ্জ জানিয়ে বসে বাংলাদেশকে। তবে চ্যালেঞ্জ জয় করে প্রথমবারের মতো স্বাগতিক দল এখন ফাইনাল মঞ্চে।
শুরুতে দুই দল ছিল কিছুটা অগোছালো। স্বাভাবিক খেলা উপহার দিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায় কর্দমাক্ত ভারি মাঠ। তবে পরিবেশে দ্রুতই মানিয়ে নেয় বাংলাদেশ। রক্ষণভাগ আগের দুই ম্যাচের মতোই ছিল আস্থায় অবিচল। মাঝমাঠে রক্ষণের সঙ্গে সেতু তৈরি করে কালও আলো ছড়িয়েছেন ফাহিম মোর্শেদ। আর আক্রমণে নিপু-সাদের যোগলবন্দি আফগান ডিফেন্স টলিয়ে দেয়। প্রথমার্ধের ২৭ মিনিটে নিপুর ক্রসে সাদ পা লাগাতে পারলে তখনই ১-০ হয়ে যেত। দশ মিনিট পর অবশ্য স্তব্ধ হয়ে যায় সিলেটের উন্মাতাল গ্যালারি। আফগানিস্তানের আবদুল নাসের আমিনি বাংলাদেশের ডি বক্সে বল পেয়ে যান। কিন্তু তাকে কড়া মার্কিংয়ে রেখেছিলেন ডিফেন্ডার জাহাঙ্গীর আলম সজীব। আমিনি বল নিয়ে বেরিয়ে যেতে চাইলে হাল্কা ধাক্কা লাগে বাংলাদেশ ডিফেন্ডারের সঙ্গে। পেনাল্টির মতো অপরাধ না হলেও ভারতীয় রেফারি প্রিয়বর্ত সিং বাজিয়ে দেন বাঁশি। তবে বাংলাদেশকে বাঁচিয়ে দেন আফগান অধিনায়ক অমিদ হায়দান সানেহ ক্রসবারের উপর দিয়ে বল পাঠিয়ে। ভাগ্যে ভর করে বেঁচে যাওয়া বাংলাদেশ বিরতির পর দ্রুত আক্রমণে যায়। গোলও আসে তাড়াতাড়ি। দলের মেরুদণ্ড সাদ এবার বদলে দেন ম্যাচের দৃশ্যপট। পুরো টুর্নামেন্টে আলো ছড়ানো ডিফেন্ডার খলিল ভূঁইয়ার কর্নার থেকে মোহাম্মদ শাওনের শট আফগানিস্তানের গোলপোস্টের সামনে পেয়ে যান সাদ উদ্দিন। পেছনে থাকা ডিফেন্ডার আর গোলরক্ষককে বোকা বানিয়ে আলতো ঠুকায় গোলের কাজ সারেন সাদ। এরপর দুই দলই কৌশল বদলে খেলতে থাকে। রক্ষণাত্মক বাংলাদেশকে তখন চেপে ধরে আফগানিস্তান। আবদুল নাসের আমিনি, রামিন আজিজির একের পর এক আক্রমণ বাংলাদেশ শিবিরে আতঙ্ক ছড়ায়। তবে গত ম্যাচের ভুল শুধরে গোলপোস্টে দারুণ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন ফয়সল আহমদ। দুর্দান্ত কয়েকটি সেভ করে বাংলাদেশকে তুলে দেন ফাইনালে।