নিউজ ডেস্ক:: সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের কূটনীতির প্রাধান্যের ক্ষেত্রে পরিবর্তন এসেছে। এখন রাজনৈতিক কূটনীতির চেয়ে অর্থনৈতিক কূটনীতিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে। এরই পরিপ্রেক্ষিতে এবার বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দূতাবাস বাড়ানোর পাশাপাশি বাংলাদেশের বিদ্যমান দূতাবাসগুলোকে নতুন করে সাজানোর উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়,আরও ২১টি দেশে ২২টি মিশন খোলারও উদ্যোগ নিয়েছে সরকার।বর্তমানে জাতিসংঘভুক্ত ১৯৩ দেশের মধ্যে ৫৮ দেশে বাংলাদেশের মোট ৭৭টি মিশন রয়েছে।অর্থনীতির বিষয়টি মাথায় রেখে প্রায় প্রতিটি দূতাবাসে সৃষ্টি করা হচ্ছে ইকোনমিক কাউন্সিলরের পদও।
পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের সময় কোনো দূতাবাস বন্ধ হয়নি। বরং গত ১০ বছরে বিশ্বের প্রায় ১৭-১৮টি স্থানে বাংলাদেশের নতুন মিশন চালু হয়েছে। সরকারের এ মেয়াদে আরও দেশে এবং শহরে বেশ কিছু নতুন মিশন খোলার পরিকল্পনা রয়েছে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন বলেন, ‘সময়ের প্রয়োজনে কূটনীতির চাহিদা নির্ধারণ হয়। একটা সময় ছিল যখন বাংলাদেশের জন্য রাজনৈতিক কূটনীতি গুরুত্বপূর্ণ ছিল। তেমন মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হতে যাওয়া বাংলাদেশের জন্য এখন অর্থনৈতিক কূটনীতি গুরুত্বপূর্ণ। আর সে লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।’
দেশের অর্থনীতিতে প্রবাসীরা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে থাকেন। প্রবাসীদের দেশের উন্নয়ন প্রক্রিয়ায় আরও বেশি সম্পৃক্ত করা গেলে রেমিট্যান্স প্রবাহ এবং বিনিয়োগ বাড়বে বলে মনে করছে সরকার। তাই তাদের কথা বিবেচনা করে দূতাবাসগুলোকে আরও বেশি সেবাবান্ধব করে গড়ে তুলতে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এমনকি কনস্যুলার সেবা ২৪ ঘণ্টা করার ঘোষণাও দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
কূটনৈতিক সূত্র জানায়, দেশের উন্নয়নে প্রবাসীদের অংশগ্রহণ বাড়াতে প্রবাসী বাংলাদেশিদের ডাটাবেজও তৈরি করা হচ্ছে।এসব বার্তা বিভিন্ন দেশে নিযুক্ত বাংলাদেশি দূতদের দেয়ার জন্য ঢাকায় একটি দূত সম্মেলনেরও আয়োজন করেছে সরকার। এপ্রিলের প্রথমার্ধে অনুষ্ঠিত হতে পারে এ সম্মেলন। যেখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপস্থিত থাকার কথা রয়েছে।
তবে দায়িত্ব নেয়ার কিছুদিন পরই পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আবদুল মোমেন অর্থনৈতিক কূটনীতি এবং কনস্যুলার সেবার মান বাড়াতে বিভিন্ন দেশের বাংলাদেশ দূতাবাস ও মিশনগুলোয় চিঠি দেন। বাংলা ভাষায় লেখা এসব চিঠিতে ছিল নানা দিক নির্দেশনা।
জানা গেছে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি একযোগে পাঠানো এসব চিঠিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী পারস্পরিক সৌহার্দপূর্ণ সম্পর্ক স্থাপন ও যথার্থ সেবা প্রদানের ওপর জোর দেন; তাগিদ দেন পেশা অনুযায়ী প্রবাসীদের একটি ডেটাবেজ তৈরির উদ্যোগ নেয়ার।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রবাসী বাংলাদেশিদের মাঝে সেবা বিস্তৃত করতে নতুন যে ২২টি মিশন খোলা হচ্ছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে- চীনের গুয়াংজু ও সাংহাই, আজারবাইজান, কম্বোডিয়া, লাওস, কাজাখস্তান, উগান্ডা, জিম্বাবুয়ে, তিউনেশিয়া, তাঞ্জানিয়া, ঘানা, আয়ারল্যান্ড, স্কটল্যান্ড, ফ্রাংকফুর্ট, বুলগেরিয়া, হাঙ্গেরি, ইউক্রেন, মেলবোর্ন, নিউজিল্যান্ড, আর্জেন্টিনা, চিলি ও সাওপাওলো।
ভারতের চেন্নাই ও রুমানিয়ার বুখারেস্টে মিশন চালুকরণের সব প্রশাসনিক প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়েছে বলে জানা গেছে।