সবার ভালবাসা দায়িত্ব বাড়ায়
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:০৬:০৭,অপরাহ্ন ২০ আগস্ট ২০১৫ | সংবাদটি ৩১৬ বার পঠিত
খেলাধুলা প্রতিনিধি,
ক্রিকেট বদলে দিয়েছে দিনাজপুরের লিটন কুমার দাসের জীবন। একটা সময় রাস্তায় হেঁটে গেলে খুব আপনজন ছাড়া কেউ তাকাতো না, কথাও বলতো না। এখন মানুষ তাকে দেখলে কাছে আসে, সালাম দেয়। কথা বলতে চায়। এ পরিবর্তন কেমন লাগছে তার? লিটন নিশ্চয় এখন গর্বের সঙ্গে হাঁটেন! না! দম্ভ নয়, এই ভাল লাগায় তিনি অনুপ্রাণিত হন। লিটন বলেন, সালাম পেতে তার বেশ ভাল লাগে। সঙ্গে বেড়ে যায় নিজের দায়িত্বও। যে ক্রিকেট তাকে নিয়ে বদলে দিয়েছে মানুষের দৃষ্টি। তার জন্যতো আরও অনেক কিছুই করার বাকি। তাই ছুটিতে থেকেও অবসর নেই তার। নিজ গ্রামে চলছে ব্যাট-প্যাড নিয়ে অনুশীলন। জাতীয় দলের এ তরুণ উইকেটরক্ষক-ব্যাটসম্যানের বদলে যাওয়া জীবনের গল্প তুলে ধরছেন মানবজমিন-এর স্পোর্টস রিপোর্টার ইশতিয়াক পারভেজ।
প্রশ্ন: ব্যক্তি জীবনে কোন পরিবর্তন দেখছেন?
লিটন কুমার দাস: পরিবর্তন হয়েছে বেশ। বিশেষ করে জাতীয় দলে খেলা শুরুর পর থেকে স্বাধীনভাবে আর চলাফেরা করতে পারি না। আগে যেমন যে কোন হোটেলে বা রেস্টুরেন্টে খেতে চলে যেতাম। এখন তা সম্ভব হয় না। এখন আমাকে দেখলে সবাই চিনে ফেলে। যদিও খাবার নিয়ে আমার খুব বাছ-বিচার নেই।
প্রশ্ন: পরিবর্তনটা উপভোগ করেন ?
লিটন: অবশ্যই। আগে খুব আপনজন না হলে আমাকে কেউ চিনতো না, কথাও বলতো না। এখন রাস্তায় বের হলে মানুষ আমার দিকে তাকায়, এগিয়ে আসে, কথা বলে, সালামও দেয়। এসব ভাল লাগে আমার। আসলে আমি সবার এ ভালবাসাকে দায়িত্ব মনে করি। কারণ আমি জাতীয় দলে ক্রিকেট খেলছি বলেই মানুষ আমাকে চিনছেন, সালাম দিচ্ছেন বা কথা বলতে চাইছেন। আমার জন্য এটা বড় অনুপ্রেরণা। ক্রিকেটের জন্যই আমার এমন প্রাপ্তি । খেলার জন্য আমার অনেক কিছু করার আছে। আমার কাছে প্রত্যাশাটাও দেখতে পাই সবার চাহনীতে।
প্রশ্ন: দলে আবির্ভাবেই উইকেটরক্ষকের গ্লাভস পেলেন। নিজেকে ব্যাটসম্যান নাকি কিপার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করতে চান?
লিটন: আমি কোন একটি বিষয়ে নিজেকে সীমাবদ্ধ রাখতে চাই না। আমি খেলতে চাই দলের হয়ে, দলের প্রয়োজনে। দল যদি মনে করে আমার কিপিং প্রয়োজন তাহলে আমি সবসময়ই প্রস্তুত। দলের প্রয়োজনটাই আমার কাছে বড় কথা। এজন্য ব্যাটিং অর্ডারে ১ কিংবা ১০ নম্বরেও খেলতে প্রস্তুত আমি। মূলত একজন পরিপূর্ণ ক্রিকেটার হিসেবেই নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতে চাই।
প্রশ্ন: ছুটিতে নিশ্চয় খুব ঘুরে বেড়াচ্ছেন?
লিটন: ঠিক তেমন নয়। কিছু দিন আগে আব্বু-আম্মুকে নিয়ে কক্সবাজার ঘুরে এসেছি। এটি তাদের একটি স্বপ্ন ছিল। ভবিষ্যতে ইচ্ছে আছে তাদের নিয়ে দেশের বাইরে বেড়াতে যাওয়ার। পুরো সময় বাসায় কাটে না আমার। ব্যাট-প্যাড নিয়ে অনুশীলনেও ব্যস্ত রাখছি নিজেকে। আগামী ২০শে আগস্ট ঢাকায় ফিরবো। তারপরতো ক্রিকেট নিয়েই ব্যস্ত সময় কাটবে।
প্রশ্ন: সন্তানকে নিয়ে বাবা-মায়ের স্বপ্ন থাকে। তাদের স্বপ্ন কতটা পূরণ করতে পারলেন বলে মনে করেন?
লিটন: বাবা-মা আমাকে নিয়ে যে স্বপ্ন দেখেন সে পথ পাড়ি দেয়া আমার এখনও বাকি।
প্রশ্ন: আপনার সতীর্থ অনেকেই গাড়ি কিনছেন। আপনার প্রিয় কি?
লিটন: গাড়ির কথা এখনও ভাবিনি। আমার কাছে সেটা পরের ভাবনা। তবে মোটরবাইক আমার প্রিয়। আমি আসলে মোটরবাইক চালাতে পছন্দ করি।
প্রশ্ন: মোটরসাইকেল চালাতে ভয় করে না?
লিটন: না,না, আসলে আমি মনে করি যে মৃত্যু থাকলে সেটি যে কোন ভাবেই হবে। তবে এটাও সত্যি সাবধানে চালাতে হবে। এটি শুধু আমার জন্য নয়, সবার জন্য।
প্রশ্ন: এ মুহূর্তে আপনার লক্ষ্য কি ?
লিটন: ক্রিকেটের জন্য ১০০ ভাগ নিজেকে বিলিয়ে দেয়া। সেটি ব্যাট হাতেই হোক আর মাঠের ফিল্ডার হিসেবেই হোক।
প্রশ্ন: অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকার শক্তির পার্থক্য কি মনে করেন?
লিটন: দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে খেলেছি। ওদের শক্তিটা এখন আমি জানি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে সুযোগ হলে ওদের শক্তিটাও বুঝতে পারবো। আসলে মাঠে না খেলে কারও শক্তি নিয়ে ধারণা পাওয়া যায় না।
প্রশ্ন: সবচেয়ে অপছন্দের বিষয় কোনটা?
লিটন: কেউ যখন জোর করে কিছু চাপিয়ে দেয়। আমি যেটি করিনি সেটি যদি কেউ বারবার বলে। আর একটা হলো, কারও সঙ্গে যদি ইচ্ছার বিরুদ্ধে কথা বলতে হয়।