বিদেশীদের ভিড়ে উজ্জ্বল এনামুল
প্রকাশিত হয়েছে : ১২:৫০:০২,অপরাহ্ন ২৪ আগস্ট ২০১৫ | সংবাদটি ৩৬৮ বার পঠিত
স্পোর্টস রিপোর্টার,
স্বদেশী সনি নরদের হাত ধরে ঢাকার ফুটবলে আগমন ঘটে ওয়েডসন এনসেলমির। শুরুর বছরই বাজিমাত করেন শেখ জামালের এই হাইতিয়ান ফরোয়ার্ড। তার ২৬ গোলে লীগ শিরোপা পায় শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব। এবার সনি না থাকলেও ওয়েডসন, নাইজেরিয়ান এমেকা ডারলিংটন আর গাম্বিয়ান ফরোয়ার্ড ল্যান্ডিং দারবোয়ের হাত ধরে যথারীতি শিরোপা জিতে নিয়েছে শেখ জামালই। ভাল মানের বিদেশীর অভাবে পিছিয়ে পড়ে শেখ রাসেল ও আবাহনী। জাতীয় দলের একঝাঁক তারকা নিয়েও ভাল মানের বিদেশীর অভাবেই শিরোপা লড়াইয়ে টিকে থাকতে পারেনি এরা। তবে ব্যতিক্রম মুক্তিযোদ্ধার ফরোয়ার্ড এনামুলক হক। তবে এবারের লীগে চমকের নাম মোহামেডান ও ব্রাদার্স ইউনিয়ন ক্লাব। তরুণদের নিয়ে পেশাদার লীগে দল দুটির অবস্থান তৃতীয় ও পঞ্চম। পরশু শেষ হওয়া লীগে এবারও ব্যর্থ দেশী ফরোয়ার্ডরা। শেখ রাসেলের বিপক্ষে খেলতে অস্বীকৃতি জানানোর ফলে বহিষ্কার হয়েছে ফরাশগঞ্জ।
দলবদলে বিলম্ব, বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপ ও এএফসি অনূর্ধ্ব-২৩ বাছাইয়ের কারণে দফায় দফায় পিছিয়ে লীগের খেলা শুরু হয়েছিল ৭ই এপ্রিল। মে মাসের শেষ সপ্তাহে প্রথম লেগের খেলা শেষ হয়েছে। এরপর বিশ্বকাপ বাছাইয়ে বাংলাদেশ জাতীয় দলের দুটি ম্যাচ ছিল ঘরের মাটিতে। এর বাইরে একাধিক ক্লাবের সুবিধা-অসুবিধা বিবেচনায় নিয়ে ২৮শে জুন শুরু হয় দ্বিতীয় লেগের খেলা। বর্ষা মওসুমে খেলা হওয়ায় বৃষ্টির কারণে পিছিয়ে যায় বেশ কয়েকটি ম্যাচ। সে কারণেই প্রথম দিকে যে সূচি দেয়া হয়েছিল তার চেয়ে ১০ দিন পরে শনিবার শেষ হয় দ্বিতীয় লেগের খেলা। তবে শেষ ম্যাচে তেমন কোন রোমাঞ্চ ছিল না। তিন সপ্তাহ আগে শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাব শিরোপা উৎসব করেছে। রানার্সআপ ট্রফি জিতে নিয়েছে শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্র।
শুরু থেকে লীগে আধিপত্য ছিল শেখ জামালের। তিন বিদেশীর কল্যাণেই মনে হয়েছে ফেডারেশন কাপের মতো লীগ শিরোপাও জিতবে মওসুমের শুরুতে কিংস কাপ জেতা এ ক্লাবটি। তবে মাঝে মুক্তিযোদ্ধার আচমকা জ্বলে ওঠা, আর মোহামেডানের নজরকাড়া পারফরম্যান্সে জমে ওঠে লীগ। সানডে সিজুবার আগমনে শিরোপা লড়াইয়ে ফেরে আবাহনীও। তবে ওয়েডসন আর এমেকার কারণে কুলিয়ে উঠতে পারেনি অন্য ক্লাবগুলো। এবারও ওয়েডসন করেছেন ১৭ গোল। আর প্রথম আসরে নাইজেরিয়ান এমেকা ডারলিংটনের পা থেকে এসেছে লীগের সর্বোচ্চ ১৯ গোল। শিরোপা জিততে না পারলেও এবারের লীগে মোহামেডানের আবিষ্কার ছিল জুয়েল রানা ও ইব্রাহিম। গোলরক্ষক আশরাফুল ইসলাম রানাও জাতীয় দলে সুযোগ করে নিয়েছেন। এবারের লীগে নজর কেড়েছেন রহমতগঞ্জের তরুণ ফরোয়ার্ড মান্নাফ রাব্বী, নুরুল আফসাররা। এবারের লীগে নয়টি হ্যাটট্রিক হয়েছে, যার আটটি এসেছে বিদেশীদের পা থেকে। দেশীদের মধ্যে একমাত্র হ্যাটট্রিকটি করেছেন শেখ জামালে খেলা জাতীয় দলের অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম মামুন। বিদেশীদের ভিড়ে এবারও যথারীতি ম্লান হয়েছেন দেশী ফরোয়ার্ডরা। লীগের প্রায় সব ম্যাচ খেলেও জাতীয় দলের এক নাম্বার ফরোয়ার্ড জাহিদ হাসান এমিলি করেছেন মাত্র ছয় গোল। ওয়াহেদ, তকলিসরা খেলার সুযোগ পাননি নিয়মিত। তবে এদের মধ্যে প্রথম লেগে কেবল ব্যতিক্রম ছিলেন মুক্তিযোদ্ধার ফরোয়ার্ড এনামুল হক। প্রথম লেগের দশ ম্যাচের নয়টিতে গোল করেছিলেন এ ফরোয়ার্ড। তবে সেকেন্ড লেগে একেবারে হতাশ করেছেন এনামুল। দুই লেগ মিলিয়ে তার গোল সংখ্যা ১৩। গোলদাতাদের তালিকায় শীর্ষ ১০-এ বাংলাদেশের একমাত্র তিনিই রয়েছেন। ইনজুরির জন্য সেকেন্ড লেগের পুরোটা সময়ই মাঠের বাইরে ছিলেন জাতীয় দলের মিডফিল্ডার হেমন্ত ভিনসেন্ট বিশ্বাস। তবে মোহামেডানের জুয়েল রানার ধার দ্বিতীয় লেগেও বজায় ছিল। মূলত জুয়েল রানা ও গিনির ফরোয়ার্ড ইসমাইল বাঙ্গুরার কারণেই এবার লীগে তৃতীয় হয়েছে মোহামেডান। সাদা-কালোদের হয়ে ইসমাইল বাঙ্গুরা ১৭টি আর জুয়েল রানা করেছেন ৭ গোল। এবারের লীগে ম্যাচ পাতানোর মতো কলঙ্কজনক কিছু না ঘটলেও শেখ রাসেল-ফরাশগঞ্জের ম্যাচটি নানা কথা উঠেছে। বৃষ্টির কারণে দুই দফা পেছানোর পর রেফারির নেয়া একটি সিদ্ধান্তে খেলতে অস্বীকৃতি জানায় ফরাশগঞ্জ। ১৫ মিনিট অপেক্ষা করে মাঠ ছাড়েন রেফারি। পরে বাইলজের দোহাই দিয়ে ফরাশগঞ্জকে দুই মওসুমের জন্য নিষিদ্ধ করে বাফুফের ডিসিপ্লিনারি কমিটি। বাফুফের নেয়া এ সিদ্ধান্তেও নানা সমালোচনা হয়েছে। অনেকে দাবি তুলেছেন, লীগ শেষ হওয়ার আগে শেখ জামালকে চ্যাম্পিয়ন ট্রফি তুলে দেয়ার কারণেই বাইলজ অমান্য করে ফরাশগঞ্জকে এমন শাস্তি দিয়েছে বাফুফে। ফরাশগঞ্জ পয়েন্ট টেবিলের তলানিতে থাকায় আর কোন দলকে অবনমনের শঙ্কায় পড়তে হয়নি। লীগে এটুকু ঘটনা বাদ দিলে পাঁচ মাসের দীর্ঘ লীগ প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণই হয়েছে বলা যায়।
লীগের সর্বোচ্চ গোলদাতাদের তালিকা
খেলোয়াড় দল গোল সংখ্যা
এমেকা ডারলিংটন (নাইজেরিয়া) শেখ জামাল ১৯
ওয়েডসন এনসেলমি (হাইতি) শেখ জামাল ১৭
ইসমাইল বাঙ্গুরা (গিনি) মোহামেডান ১৭
অগাস্টিন ওয়েলসন (হাইতি) ব্রাদার্স ১৫
ল্যান্ডিং দারবোয় (গাম্বিয়ান) শেখ জামাল ১৪
এবারের লীগের নয় হ্যাটট্রিক : অগাস্টিন ওয়েলসন (ব্রাদার্স), ইসমাইল বাঙ্গুরা (মোহামেডান), ওয়েডসন এনসেলমি (শেখ জামাল), মামুনুল ইসলাম মামুন (শেখ জামাল), এমেকা ডারলিংটন (শেখ জামাল), সানডে সিজুবা (আবাহনী), গিডিমন সলোমন (রহমতগঞ্জ), ল্যান্ডিং দারবোয়ে (শেখ জামাল), পল এমিলি (ক্যামেরুন)।
পয়েন্ট টেবিল
দল ম্যাচ জয় প. ড্র পয়ে.
শেখ জামাল ২০ ১৬ ১ ৩ ৫১
শেখ রাসেল ২০ ১৩ ৪ ৩ ৪২
মোহামেডান ২০ ১১ ৪ ৫ ৩৮
আবাহনী ২০ ১০ ৫ ৫ ৩৫
ব্রাদার্স ২০ ১০ ৫ ৫ ৩৫
মুক্তিযোদ্ধা ২০ ৮ ৮ ৪ ২৮
বিজেএমসি ২০ ৬ ১০ ৪ ২২
সকার ক্লাব ২০ ৫ ১৩ ৩ ১৮
চট্টগ্রাম আবাহনী ২০ ৩ ১০ ৭ ১৬
রহমতগঞ্জ ২০ ৩ ১২ ৫ ১৪
ফরাশগঞ্জ ২০ ০ ১৪ ৬ ৬