বাংলাদেশের হিন্দু শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দিতে কাজ করছে ভারত
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:০৫:৩৫,অপরাহ্ন ৩০ আগস্ট ২০১৫ | সংবাদটি ৩৩০ বার পঠিত
ভারত সরকার নাগরিকত্ব আইন সংশোধনে একটি অধ্যাদেশ নিয়ে কাজ করছে। বাংলাদেশ, পাকিস্তান ও আফগানিস্তানের নির্যাতিত হিন্দু শরণার্থীদের নাগরিকত্ব দেয়ার জন্য এ সংশোধনী আনা হবে। এ অধ্যাদেশটি ভারতের ৩ প্রতিবেশী রাষ্ট্রের হিন্দু শরণার্থীদের জন্য করা হলেও, এর প্রধান লক্ষ্য বাংলাদেশ থেকে সীমান্ত অতিক্রম করে আসাম ও পশ্চিমবঙ্গে যে বহু সংখ্যক হিন্দু শরণার্থী আশ্রয় নিয়েছেন, তাদের নাগরিকত্ব প্রদান করা। নাগরিকত্ব আইনে এ সংশোধন বিতর্ককে উস্কে দেবে এবং ভারতীয় সংসদে তা বিরোধিতার মুখে পড়ার আশঙ্কা সত্ত্বেও, আগামী শীতকালীন অধিবেশনে এ সম্পর্কিত একটি প্রস্তাব উত্থাপন করতে পারে দেশটির সরকার। এ খবর দিয়েছে অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া। ১৯৮৫ সালের ২৩শে মার্চ স্বাক্ষরিত আসাম চুক্তি অনুযায়ী, শরণার্থীদের বসবাসের বৈধতা প্রমাণে ১৯৭১ সালের মার্চ মাসের আগে আসামে প্রবেশের বৈধ কাগজপত্র প্রদর্শন করতে হবে। তবে সংশোধিত হতে যাওয়া অধ্যাদেশে সেই বাধা উঠিয়ে দেয়া হচ্ছে। ২০০৪ সালের আগে যে হিন্দু বাঙালি শরণার্থীরা ভারতে পাড়ি জমিয়েছিলেন, তাদেরকেও দেশটিতে বসবাসের বৈধতা দেবে ভারত।
আগামী বছর ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় রাজ্য দুটিতে বিধানসভা নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা। ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি) আশা করছে, হিন্দু শরণার্থীদের বা ভারতে বসবাসরত হিন্দুদের নাগরিকত্ব দেয়ার মাধ্যমে নির্বাচনে বিজেপির জয়লাভের সম্ভাবনা উজ্জ্বল হবে। শরণার্থীদের স্বাভাবিক নাগরিকত্ব প্রদানের কার্যপদ্ধতির কূটনৈতিক কাগজপত্র নিয়ে কাজ করছে ভারত সরকার। এ প্রক্রিয়ার সঙ্গে সম্পৃক্ত সূত্রগুলো বলছে, প্রক্রিয়াটির জটিল ও বিতর্কপূর্ণ অংশ হলো, কাদের নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে এবং কিসের ভিত্তিতে তারা নাগরিকের মর্যাদা পাবেন, সেটা নির্ধারণ করা। এরই মধ্যে ভারতের কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় একটি টাস্কফোর্স গঠন করেছে। বহু সংখ্যক হিন্দু, শিখ, খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ ও চাকমা শরণার্থীদের কিভাবে নাগরিকত্ব প্রদান করা হবে, তা নির্ধারণে কাজ করছে মন্ত্রণালয়। এ পদক্ষেপের মাধ্যমে ভারত সরকার আসামে কোন বৈধ কাগজপত্র ছাড়া দীর্ঘদিন বসবাসকারীদের উদ্দেশে একটি বার্তা পাঠতে চায়। সেটি হলো, শরণার্থীদের তাদের সিস্টেম বা গঠনতন্ত্রের আওতায় আনতে চায় ভারত। ভারত সরকারকে শীতকালীন অধিবেশনেই ইস্যুটি উত্থাপন করতে হবে। কারণ, যাচাই-বাছাইয়ের প্রক্রিয়া দীর্ঘ ও ক্লান্তিকর এবং একই সঙ্গে আগামী বছরের এপ্রিল-মে মাসে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। আসামে হিন্দু বাঙালি শরণার্থীদের এ প্রক্রিয়ায় অন্তর্ভুক্ত করার প্রক্রিয়া শুরু হবে ন্যাশনাল রেজিস্টার অব সিটিজেন (এনআরসি) যাচাই ও হালনাগাদ করার মাধ্যমে। শুধু আসামেই এনআরসি প্রযোজ্য।
বিজেপির জ্যেষ্ঠ এক নেতা বলেছেন, যাদের কাছে নিজেদের অধিবাসী প্রমাণের কোন বৈধ কাগজপত্র নেই, তারা হয়রানির শিকার হচ্ছেন। বহু বাঙালি হিন্দু অভিবাসী এতে আক্রান্ত এবং সে কারণেই তাদের অন্তর্ভুক্তির এ আবশ্যকতা। তিনি আরও বলেন, তারা পরিচয়হীনভাবে বসবাস করছেন যেহেতু তাদের পরিচয় প্রমাণের কোন বৈধ কাগজপত্র নেই। তাই আমরা সরকারের কাছে তাদের পরিচয়পত্র না চেয়ে নাগরিকত্ব প্রদানের অনুরোধ জানাচ্ছি। তারা বালাদেশ ও পাকিস্তানের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় এবং সেখানে নিপীড়নের শিকার। তিনি বলেন, তারা কোন কাগজপত্র ছাড়াই পালিয়েছিলেন। ভারতের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকটি সূত্রে জানা গেছে, এ মুহূর্তে যারা কোন কাগজপত্র প্রদর্শন করতে পারবেন না, তাদের ফরেইনার্স অ্যাক্ট ও পাসপোর্ট অ্যাক্টের আওতার যে শাস্তির বিধান রাখা হয়েছে, সেটা থেকে অব্যাহতি দেয়ার বিষয়টি বিবেচনার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।