স্টাফ রিপোর্টার,
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ জয়ের ৭০ তম পূর্তি উদযাপন করতে চীন একটি সামরিক প্যারেড আয়োজন করেছে। বিশাল এ প্যারেডে চীনের সর্বশেষ প্রযুক্তির সমরাস্ত্রের এক আভাস পাওয়া গেছে। পশ্চিমা রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানরা সচেতনভাবে এড়িয়ে গেছেন অনুষ্ঠানটি। চীনের রাজধানীতে আজ সকালে প্রায় ১২ হাজার সেনা সামরিক কায়দায় মার্চ করেছে। অসংখ্য যুদ্ধবিমান উড়েছে আকাশে। এ প্যারেডটি ছিল ¯পষ্টতই দেশটির সামরিক শক্তিমত্তা প্রদর্শনের জাঁকজমকপূর্ন এক উপলক্ষ। এ খবর দিয়েছে সিএনএন। প্যারেডে সভাপতিত্ব করেন চীনা প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং। কয়েক দশকে চীনের সবচেয়ে ক্ষমতাবান নেতা ভাবা হচ্ছে তাকে। প্যারেডে বক্তৃতাকালে তিনি বললেন, চীন ‘শান্তিপূর্ন অগ্রগতি’র প্রতি অঙ্গীকারাবদ্ধ থাকবে। তবে অপ্রত্যাশিতভাবে তিনি প্যারেডে ঘোষণা দিয়েছেন, ২৩ লাখ সৈন্যের শক্তিশালী চীনা সামরিক বাহিনী থেকে ৩ লাখ সেনা ছাটাই করা হবে। ২০১২ সালে শি জিনপিং ক্ষমতায় বসার পর, এমন বৃহৎ প্যারেড ছিল এ প্রথম। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের বিজয় উদযাপনে এ প্যারেড আয়োজন করা হলেও, চীনের সে সময়কার ২ মিত্র – যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্র অনুষ্ঠানটি দৃশ্যত এড়িয়ে গেছে। তবে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন, দক্ষিণ কোরিয়ার প্রেসিডেন্ট পার্ক জিউন-হাই, জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন এবং সাবেক দুই চীনা প্রেসিডেন্ট জিয়াং জেমিন ও হু জিনতাও।
রাজধানী বেইজিং-এর প্রাচীন কেন্দ্রবিন্দু বলে পরিচিত তিয়ানমেন চত্বরকেই বেছে নেয়া হয়েছে প্যারেডস্থল হিসেবে। শ’ শ’ ব্যালিস্টিক মিশাইল, ট্যাঙ্ক, উভচর সামরিক বাহন, ড্রোন ও অন্যান্য সমরাস্ত্র প্রদর্শিত হয়েছে। বিভিন্ন পর্যায়ের নেতা ছাড়াও অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন চীনের প্রবীন যোদ্ধা ও অন্য অথিতিরা। আনুমানিক ২০০ যুদ্ধবিমান আকাশে উড়েছে। মার্চে অংশ নেয়া ১২ হাজার সেনার মধ্যে চীন ছাড়াও রাশিয়া, পাকিস্তান ও আরও ১৫টি দেশের সেনারাও ছিল। হংকং বিশ্ববিদ্যালয়ের সহকারী অধ্যাপক ওয়াইভোনে চিউ বলেন, চীনের সামরিক বাজেটের আকার বৃদ্ধি পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এমন অবস্থায় সৈন্য সংখ্যা কমানোর বিষয়ে জিনপিং-এর প্রতিশ্রুতি তাৎপর্যপূর্ন। প্রসঙ্গত, বর্তমানে প্রতিরক্ষা খাতে চীন বিশ্বে আমেরিকার পর সবচেয়ে বেশি ব্যয় করে। প্রতিরক্ষা খাতে মোট বৈশ্বিক ব্যায়ের অর্ধেকের বেশি করে যুক্তরাষ্ট্রের। অপরদিকে চীনের ব্যয় ১৫ শতাংশ। ইন্টারন্যাশনাল ইন্সটিটিউট ফর স্ট্রেটজিক স্টাডিজের মতে, চীনের সামরিক শক্তিমত্তা দিনকে দিন বেড়েছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্রকে ছুঁয়ে বা অতিক্রম করে গেছে চীনের সামর্থ্য। যেমন, যুক্তরাষ্ট্রের ১৪ লাখ সেনার বদলে চীনের রয়েছে ২৩ লাখ সেনা। যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় সাড়ে ৭ হাজার কামানের বিপরীতে চীনের রয়েছে প্রায় ১৪ হাজার। যুক্তরাষ্ট্রের ট্যাংক রয়েছে যেখানে ২৮০০টি, সেখানে চীনের রয়েছে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার। চীনের (৭০) চেয়ে মাত্র তিনটি সাবমেরিন বেশি রয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের (৭৩)। এছাড়া চীনের জঙ্গিবিমান রয়েছে ২৫৭১টি, যুক্তরাষ্ট্রের ৩৬৮০টি। চীনের ডেস্ট্রয়ার রয়েছে ১৭টি, যুক্তরাষ্ট্রের ৬২টি।
প্যারেড চলাকালীন বেইজিং-এ বিমান চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট হু জিনতাওয়ের আমলে চীনের ৬০ তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে ২০০৯ সালে এরকম একটি প্যারেড আয়োজন করা হয়েছিল। কিন্তু শি জিনপিং-এর ক্ষেত্রে এর তাৎপর্য আরও বেশি। এর ফলে তিনি ঘরে তো বটেই, আঞ্চলিকভাবেও শক্তিমত্তার ইঙ্গিত দিলেন যখন চীনের উচ্চাকাঙ্খা নিয়ে প্রতিবেশী দেশগুলো উদ্বিগ্ন। এ প্যারেডে সমরাস্ত্র, বিশেষ করে ব্যালিস্টিক মিশাইল ক্ষেপনাস্ত্র প্রযুক্তির দিকে ঘনিষ্ঠ নজর রাখবে এশিয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র বলে পরিচিত জাপান ও তাইওয়ান। ওয়াশিংটনের জন্য এটি চীনের নিজস্ব প্রতিরক্ষা শিল্পের সর্বশেষ প্রযুক্তি পর্যবেক্ষণের একটি সুযোগ। ওয়াশিংটন যাচাই করবে, দক্ষিণ চীন সাগরে বিভিন্ন বিরোধপূর্ন সীমানা নিয়ে চীন নিজের দাবি অক্ষুণ্ন রাখতে এ প্রতিরক্ষা শিল্প কতটা কার্যকরী। আর দেশেও শি জিনপিং-এর জন্য এটি প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে ভীষণ কার্যকরী। এর ফলে অর্থ-বাজারে কয়েকদিন ধরে চলা অস্থিরতা থেকে জনগণের নজর অন্যত্র সরবে।