তথ্যপ্রযুক্তির অপব্যবহার রোধে আইন করা হবে : প্রধানমন্ত্রী
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:০৩:৫৮,অপরাহ্ন ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ | সংবাদটি ৩৭৬ বার পঠিত
স্টাফ রিপোর্টার,
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রযুক্তি যেমন মানুষের জীবনযাত্রাকে সহজ করে দেয়, তেমনি এর কিছু খারাপ দিকও রয়েছে। অনেকেই এই প্রযুক্তির অপব্যবহার করে। জঙ্গিবাদীরা তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে ছড়িয়ে দেয় জঙ্গিবাদ। এটি ক্ষতিকারক। অবশ্য এটা শুধু বাংলাদেশেই নয়, পৃথিবীর অনেক দেশই হচ্ছে। এ প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, দেশে প্রযুক্তি ব্যবহারে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন করা হবে। তবে এ আইন যাতে সঠিকভাবে প্রণিত হয় সে বিষয়ে কাজ করতে হবে।
শনিবার গণভবনে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ইন্টারনেট সপ্তাহ ২০১৫ উদ্বোধনকালে প্রধানমন্ত্রী এসব কথা বলেন। ইন্টারনেট ব্যবহারে আরো বেশি সচেতন হওয়ার পরামর্শ দিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ইন্টারনেটের অপব্যবহারে সামাজিক নানা সমস্যা সৃষ্টি হয়। বিশেষ করে ছোট শিশুরা না বুঝেই এমন অনেক কিছু এর মাধ্যমে সংযোগ করে, যা তাদের চরিত্র গঠনে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে। তাই প্রযুক্তির প্রসারের পাশাপাশি এর নিরাপত্তার বিষয়গুলো নিয়েও চিন্তা করতে হবে।
ইন্টারনেট ব্যবহার করে কারো ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া থেকে বিরত থাকতে সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, কেউ নানাভাবে আমার ধর্ম সম্বন্ধে কষ্ট দিলে আমার খারাপ লাগবে। সুতরাং ইন্টারনেট ব্যবহার করে যেন কারও ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেয়া না হয়। তিনি বলেন, ইন্টারনেট ব্যবহারে যথেচ্ছচার বা অসামাজিক কার্যক্রম বন্ধ করতে হবে। প্রযুক্তি যাতে সামাজিক অবক্ষয় সৃষ্টি করতে না পারে সেদিকে নজর দেয়ার ওপর গুরুত্বারোপ করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী অবৈধ ভিওআইপির ব্যবহার বন্ধের নির্দেশ দিয়ে বলেন, ভিওআইপির ব্যবহার বন্ধ করতে হবে। এটা আমাদের সরকারেরও লোকসান, দেশেরও ক্ষতি হচ্ছে।
প্রধানমন্ত্রী তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহারে তার সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলো তুলে ধরে বলেন, এক সময় ইন্টারনেট তো দূরের কথা, কম্পিউটারের ব্যবহারই ছিল না। কম্পিউটারের দাম ছিল অনেক বেশি। ১৯৯১ সালে পার্টির জন্য একটি কম্পিউটার ও লেজারপ্রিন্টার কিনতে লেগেছিল তিন লক্ষ টাকা। তিনি বলেন, ওই সময় একটি মাত্র কোম্পানি মোবাইল ব্যবসা করত। একটি মোবাইল ফোনের দাম ছিল এক লক্ষ টাকার বেশি। প্রতি মিনিট কল করতে লাগত ১০ টাকা, কল ধরতেও লাগত ১০ টাকা। এ পরিস্থিতির মধ্যে ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার পর প্রযুক্তিকে সাধারণের নাগালে আনতে উদ্যোগ নেই। প্রযুক্তি কীভাবে সহজলভ্য করা যায় সেটা চিন্তা করি। এ বিষয়ে আমার ছেলে জয় (সজীব ওয়াজেদ জয়) সব সময় পরামর্শ দিয়েছে। তার হাতেই আমার কম্পিউটারে হাতেখড়ি। পরে সাবমেরিন কেবল স্থাপন করা হয়।
তথ্যপ্রযুক্তির সেবা মানুষের দোরগোড়ায় পৌঁছে দিতে দেশের মোবাইল ফোন অপারেটরদের প্রতি ইন্টারনেট রেট আরও কমিয়ে আনার আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইন্টারনেটের দাম জনগণের নাগালের মধ্যে নিয়ে আসতে ইন্টারনেটের দাম কমানো হয়েছে। মোবাইল অপারেটরগুলোকে আহ্বান জানাই তারাও যেন গ্রাহক পর্যায়ে দাম কমিয়ে আনতে কার্যকর ভূমিকা নেয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশ এগিয়ে যাচ্ছে। এই ধারাবাহিকতা বজায় রেখে তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহারের মাধ্যমে বাংলাদেশ আরো এগিয়ে যাবে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের পর প্রধানমন্ত্রী বনানী সোসাইটি মাঠ, গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়া, রংপুরের পীরগঞ্জ, সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ, নাটোরের শিংড়া ও বরিশাল সদরে জেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিদের সঙ্গে টেলি কনফারেন্সে কথা বলেন। ‘উন্নয়নের পাসওয়ার্ড এখন আমাদের হাতে’ স্লোগান নিয়ে প্রথম বারের মতো দেশজুড়ে শুরু হয়েছে ইন্টারনেট সপ্তাহ। তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সহযোগিতায় ইন্টারনেট সপ্তাহের আয়োজন করেছে সফটওয়ার রপ্তানিকারকদের সংগঠন বেসিস। ১১ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত চলবে এই ইন্টারনেট সপ্তাহের কর্মসূচি। দেশে ইন্টারনেটের প্রসার এবং ইন্টারনেটভিত্তিক পণ্য ও সেবা সম্প্রসারণের লক্ষ্যে বাংলাদেশ ইন্টারনেট সপ্তাহ আয়োজন করা হয়েছে। ৫ থেকে ৭ সেপ্টেম্বর রাজধানীর বনানী মাঠে, ৯ সেপ্টেম্বর রাজশাহীর নানকিন বাজারে এবং ১১ সেপ্টেম্বর সিলেটের সিটি ইনডোর স্টেডিয়ামে ইন্টারনেট সপ্তাহ উপলক্ষে অনুষ্ঠান হবে। এছাড়া ৪৮৭টি উপজেলায় ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের অংশগ্রহণে একযোগে এই উত্সব পালন করা হবে। শীর্ষস্থানীয় ই-কমার্স কোম্পানি, মোবাইল অ্যাপস ডেভেলপমেন্ট প্রতিষ্ঠান, ওয়েব পোর্টাল, ডিভাইস কোম্পানিসহ ইন্টারনেটভিত্তিক পণ্য ও সেবাদাতা প্রতিষ্ঠান ইন্টারনেট সপ্তাহের আয়োজনে অংশ নেবে।
গণভবনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক, বেসিসের সভাপতি শামীম আহসান, গ্রামীণ ফোনের সিইও রাজীব শেঠী প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।