পূর্ণদিবস কর্মবিরতিতে যাবে সকল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:১৯:৪০,অপরাহ্ন ০৬ সেপ্টেম্বর ২০১৫ | সংবাদটি ৩৩০ বার পঠিত
প্রস্তাবিত অষ্টম বেতন স্কেলে গ্রেড পুননির্ধারণের দাবিতে আগামী মঙ্গলবার (৮ সেপ্টেম্বর) পূর্ণদিবস কর্মবিরতিতে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। ওইদিন তারা দেশের ৩৭টি সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাশ ও পরীক্ষা বর্জন করবেন।
শনিবার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের সংগঠন বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের এক সংবাদ সম্মেলন এই ঘোষণা দেওয়া হয়।
বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নতুন কর্মসূচি সম্পর্কে বলেন, মঙ্গলবার পূর্ণদিবস কর্মবিরতির পাশপাশি দেশের ৩৭টি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিলও করবেন। বৃহস্পতিবার দেশের প্রধান জাতীয় দৈনিকের সম্পাদকদের সঙ্গেও বৈঠক করবেন শিক্ষকরা। সেইসঙ্গে ১৩ সেপ্টেম্বর সকাল ১১টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলার পাদদেশে ফেডারেশনের পক্ষ থেকে সমাবেশও করা হবে। শিক্ষক সমিতির প্রতিনিধিরা সমাবেশে বক্তব্য দেবেন।
এর পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী বরাবরে সব সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের স্বাক্ষর সম্বলিত একটি স্মারকলিপি শিক্ষামন্ত্রীর কাছে দেয়া হবে বলেও জানান তিনি।
তিনি বলেন, প্রস্তাবিত বেতন স্কেলের কাঠামো নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা গত ১৪ মে থেকে আন্দোলন করে আসছেন। যার অংশ হিসেবে গত তিন রবিবার তিন ঘণ্টা করে কর্মবিরতিও করেন। কিন্তু তাতেও কোনো ফলাফল না পেয়ে শনিবার সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে আলোচনা করে এ কর্মসূচি দেয়া হয়েছে। এরপর বিএসএমএমইউ- এর হাফিজুর রহমান মিল্টন হলে ‘উপাচার্য পরিষদ’ নেতাদের সঙ্গেও তারা বৈঠক করেন। পরিষদও তাদের কর্মসূচিতে সম্মতি জানিয়েছেন বলে জানান এই শিক্ষক নেতা।
প্রস্তাবিত বেতন কাঠামো নিয়ে আপত্তি জানিয়ে কয়েক মাস ধরে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করে আসা শিক্ষকরা সংবাদ সম্মেলনের আগে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে এক সভায় কর্মবিরতির কর্মসূচি ঠিক করেন। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোতে অবনমন করে শিক্ষকদের মর্যাদাহানির বিষয় সরকারকে অবগত করতে আমরা গত ১৪ মে থেকে বিভিন্ন কর্মসূচি পালন করেছি। মানববন্ধন, অবস্থান ধর্মঘট ও তিন ঘণ্টার কর্মবিরতিসহ সফট কর্মসূচি ছিল এর মধ্যে।এত সময়ের পরও সরকারের পক্ষ থেকে সুনির্দিষ্ট করে কেউ কিছু বলছেন না। তাই এবার আমরা কঠোর কর্মসূচির দিকে যাচ্ছি।
ফেডারেশন মহাসচিব অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামাল বলেন, মঙ্গলবার সারাদেশের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকরা পূর্ণদিবস কর্মবিরতি পালন করবেন। আগের তিন রোববারে একই দাবিতে তিন ঘণ্টা কর্মবিরতি পালন করলেও ওইসময় পরীক্ষাসমূহ কর্মসূচির বাইরে ছিল। এবার পুরোদিন ক্লাস বর্জনের পাশাপাশি পরীক্ষাও নেবেন না তারা।
‘শিক্ষকদের দেয়ালে পিঠ ঠেকে গেছে মন্তব্য করে ফেডারেশন সভাপতি অধ্যাপক ফরিদ বলেন, এটা এখন মন্ত্রিপরিষদ সভায় পাস হওয়ার অপেক্ষায় আছে। ঈদের আগে এর আরও দুটি সভা হবে। সভায় পাস হয়ে গেলে আমরা কোথায় যাব? আমরা এখনই সরকারের সুনির্দিষ্ট বক্তব্য চাই। একদিকে সরকার শিক্ষকদের স্বতন্ত্র বেতন স্কেলের দাবি মানছে না, অন্যদিকে তাদেরকে আরও কয়েকধাপ নিচে নামিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা তো বেতন বাড়ানো বা টাকা-পয়সার কথা বলছি না; আমরা বলছি আমাদের প্রাপ্য মর্যাদাটুকু আমাদের দিন।
দাবির বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর দৃষ্টি আকর্ষণ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির এই সভাপতি বলেন, যে সময়ে দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ রয়েছে, সে সময় এটাকে অস্থিতিশীল করতে ষড়যন্ত্রমূলকভাবে শিক্ষকদের মর্যাদাহানির অপচেষ্টা করা হচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক আনন্দ কুমার সাহা, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. খবির উদ্দিন, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সহসভাপতি মেহেদী হাসানও উপস্থিত ছিলেন।
সংবাদ সম্মেলনের আগে বিএসএমএমইউ’র হাফিজুর রহমান মিল্টন হলে ‘উপাচার্য পরিষদ’ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করে শিক্ষক সমিতির ফেডারেশন। উপাচার্য পরিষদ ফেডারেশনের দাবির সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশের পাশাপাশি নিজেদের দাবি নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে যাবে বলে জানান অধ্যাপক মাকসুদ কামাল।