শরীরের বাধা জয় করে

992
আর দশটি ছেলের মতো সুস্থ-নিরোগ শরীর নিয়েই জন্মেছিলো ছেলেটি। কিন্তু জীবনটা তার এলোমেলো হয়ে গেলো ঘাতক ব্যধি পোলিরও আঘাতে।

পাঁচ মাস বয়সে পোলিওতে আক্রান্ত হলে গ্রামে প্রাথমিক চিকিত্সা নেন তিনি। কিন্তু আর্থিক অনটনের কারণে উন্নত চিকিত্সা করাতে না পারায় শেষ পর্যন্ত তার দুই পায়ের নিচের অংশ সরু হয়ে যায়। দেহের তুলনায় তার দুই পা অনেকটা ছোট। পায়ের পাতাগুলো আঁকাবাঁকা। যার কারণে ভালো করে হাঁটাচলা করা তার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। খুড়িয়ে খুড়িয়ে হেলেধুলে হাঁটতে হয় তাকে। সকলে ভেবেছিলো—এই ছেলেকে দিয়ে কিছু হবে না।

সকলের ভাবনাকে মিথ্যে করে দিয়ে সেই ছেলেটি, সেই আমিন উদ্দিন আজ জাতীয় প্রতিবন্ধী দলের তারকা এবং ব্যক্তিগত জীবনে সফল এক শিক্ষক।

সব সময়ই আত্মবিশ্বাসী ছিলেন আমিন উদ্দিন। অভিষ্ট লক্ষ্যে পৌঁছাতে তিনি সর্বদাই ব্যাকুল ছিলেন। বগুড়া সদরে এক মধ্যবিত্ত পরিবারে আমিন উদ্দিনের জন্ম। শরীরের এই প্রতিকূলতা নিয়েই স্কুলের পাঠ চুকিয়ে তিনি বগুড়া আজিজুল হক কলেজ থেকে ২০০৫ সালে হিসাব বিজ্ঞানে মাস্টার্স সম্পন্ন করেন। বর্তমানে পঞ্চগড় সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ে কমার্সের শিক্ষক হিসেবে কর্মরত আছেন।

ছোট থেকেই পড়াশুনার পাশাপাশি খেলাধুলার প্রতি আসক্ত ছিলেন তিনি। বাড়ির পাশের খেলার মাঠে প্রতিদিন বিকেলে ক্রিকেট খেলতেন। পাড়ার ক্রিকেটারদের জন্য করতোয়া একাদশ নাকে একটা ক্লাব প্রতিষ্ঠা করেন তিনি। ১৯৯৭ সাল থেকে নিজ ক্লাব করতোয়া একাদশ, সুত্রাপুর স্পোর্টিং ক্লাব এবং মডার্ন স্পোর্টিং ক্লাবের হয়ে দ্বিতীয় বিভাগ, প্রথম বিভাগ এবং জেলার প্রিমিয়ার ডিভিশন ক্রিকেট লিগেও খেলেছেন।

ক্রিকেট খেলার অভিজ্ঞতা থাকায় ২০১৪ সালে তার এক বন্ধু প্রতিবন্ধী ক্রিকেট খেলার ব্যাপারে তাকে উত্সাহ যোগান। বন্ধুর সহায়তায় গাজীপুরের প্রতিবন্ধী মোহাম্মদ মহসিনের সাথে তার সাক্ষাত্ হয়। প্রতিবন্ধী দলের হয়ে গত বছর ভারত সফরে গিয়ে দ্বিপাক্ষিক সিরিজ খেলেছেন। এরপর শ্রীলঙ্কায় গিয়ে কয়েকটি ম্যাচ খেলেন। বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল কমিটি অব দ্য রেড ক্রস (আইসিআরসি)’র টি-টোয়োন্টি ক্রিকেট টুর্নামেন্টে বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলছেন।

আইসিআরসি প্রতিযোগিতায় প্রথম ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অসাধারণ ক্রিকেট খেলেছেন। গতকাল শনিবার বিকেএসপির চার নম্বর মাঠে পাকিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশ দল যখন শুরুতে এক উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে যায় তখন দলটিকে টেনে তোলেন দুই নম্বরে ব্যাটিং করতে নামা আমিন উদ্দিন। তিনি ব্যাটিংয়ে নেমে একের পর এক যখন বাউন্ডারি হাঁকাচ্ছিলেন তখন মাঠের সাইড লাইনে দাঁড়িয়ে থাকা বিকেএসপির খেলোয়াড়রা করতালি দিয়ে তাকে সমর্থন জুড়িয়েছেন।

বাংলাদেশ দলের হয়ে তিনিই সর্বোচ্চ ৩৩ রানের ইনিংস খেলেন। এদিন খেলা শেষে আমিন বলেন, ‘ক্রিকেট আমার পছন্দের খেলা। ছোট বয়স থেকেই এই খেলার সাথে সম্পৃক্ত। বাংলাদেশ প্রতিবন্ধী দলের হয়ে খেলার সুযোগ পাওয়ায় খুব ভালো অনুভব হচ্ছে। চেষ্টা থাকবে দেশকে ভালো কিছু এনে দেয়ার জন্য।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

K. A. Rahim Sablu