রোহিঙ্গা শনাক্তে নেয়া হবে ‘আঙ্গুলের ছাপ’
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:০১:৫২,অপরাহ্ন ০১ অক্টোবর ২০১৫ | সংবাদটি ২৫৫ বার পঠিত
তথ্য সংগ্রহের পাশাপাশি রোহিঙ্গা শনাক্তে ‘আঙ্গুলের ছাপ’ (বায়োমেট্রিক্স) পদ্ধতি চালু করতে যাচ্ছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)।
প্রাথমিকভাবে রোহিঙ্গা ক্যাম্পের সব বাসিন্দাদের পরিচয় শনাক্তে আঙ্গুলের ছাপ নেবে ইসি। জাতীয় পরিচয়পত্রের আদলে রোহিঙ্গাদের জন্য দেশে স্বতন্ত্র ‘তথ্য ভান্ডার’ গড়ে তোলা হচ্ছে। ইসির সরাসরি তত্ত্বাবধানে সেখানে তথ্য সংগ্রহ ও সংরক্ষণ কার্যক্রম চলবে। এ কাজের জন্য পররাষ্ট্র, স্বরাষ্ট্র, ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় এবং এনজিও ব্যুরো কর্তৃপক্ষের সহায়তা নেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ইসি। মূলত পরিচয় লুকিয়ে ভোটার হওয়া অবৈধ অনুপ্রবেশকারীদের ধরতে এ কৌশল গ্রহণ করা হয়েছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইসি সচিবালয়ের সচিব মো. সিরাজুল ইসলাম ইত্তেফাককে বলেন, রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে তথ্য জানার জন্য বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা নেয়া হবে। রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে সঠিক তথ্য জানা থাকলে শতভাগ নির্ভুল ভোটার তালিকা প্রস্তুত করতে সুবিধা হবে। কেননা কাউকে রোহিঙ্গা শনাক্ত করার পর ভোটার করা থেকে বাদ দেয়া গেলেও দেখা যাচ্ছে আবার ওই ব্যক্তি ভোটার হওয়ার জন্য নানাভাবে চেষ্টা করছে।
শুধু সরকার নয়, সঠিক ভোটার তালিকা প্রস্তুত করতে নির্বাচন কমিশনের জন্য বিষফোঁড়া মিয়ানমারের মুসলিম রোহিঙ্গা সম্প্রদায়। ভোটার তালিকায় তাদের অন্তভুক্তি ঠেকাতে বিশেষ কমিটি, বিশেষ এলাকা এবং গোয়েন্দা নজরদারী বাড়ানোর পরও তাদের নিবৃত্ত করতে ব্যর্থ হচ্ছে এ সংশ্লিষ্টরা। তাই তাদের কৌশলে সনাক্তের পরিকল্পনা আঁঁটছে ইসি। এর জন্য তাদের আঙ্গুলের ছাঁপ নেবে। এর আগে দেশের মধ্যে রোহিঙ্গাদের সম্পর্কে ধারণা রয়েছে এ ধরণের সরকারি কিংবা বেসরকারী সংস্থার সহায়তা নেবে ইসি।
ইতিমধ্যে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ত্রান ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয় ও এনজিও ব্যুরোকে তাদের বিষয়ে তথ্য চেয়ে চিঠি দেয়ার বিষয়ে সিদ্ধান্ত রয়েছে ইসির। এছাড়াও রোহিঙ্গাদের তদারকির জন্য স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সমন্বয়ে জাতীয় সমন্বয় কমিটি গঠিত হলেও ওই কমিটি নিষ্কিয় আছে। ফলে থমকে আছে রোহিঙ্গাদের অবৈধ অনুপ্রবেশসহ তাদের অন্যান্য কর্মকান্ডের তদারকি কার্যক্রম।
এই পরিস্থিতিতে ইসিতে সম্প্রতি নির্বাচন ব্যবস্থাপনা অনুবিভাগের যুগ্ম-সচিব জেসমিন টুলীর সভাপতিত্বে একটি বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে। এ বৈঠকে এনআইডি উইং, আইসিটি উইং এবং ইসির বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তারা অংশ নেন। বৈঠকে রোহিঙ্গাদের পৃথক ডাটাবেইজ (তথ্য ভান্ডার) তৈরি, সংরক্ষণ এবং রক্ষণাবেক্ষণ ও তাদের বিভিন্ন তথ্যসহ তালিকা ও সফট কপি বিভিন্ন মাধ্যম থেকে সংগ্রহের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।
ইসির কর্মকর্তারা জানান, ভোটার হওয়া মানেই বাংলাদেশের নাগরিকত্ব। আর এ জন্য পরিচয় গোপন করে রোহিঙ্গারা ভোটার হন এবং বাংলাদেশি পাসপোর্ট নিয়ে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চলে যাচ্ছে। তাদের অপকর্মের ফল আমাদের দেশের সাধারণ প্রবাসী শ্রমিকদের ভোগ করতে হচ্ছে।
কক্সবাজার রোহিঙ্গা শরণার্থী প্রত্যাবাসন কমিশনার কার্যালয় সূত্র জানায়, বর্তমানে উখিয়া উপজেলার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে ১ হাজার ১৭১ পরিবারের ১৪ হাজার ৭২১ জনসহ প্রায় ২৫ হাজার বৈধ রোহিঙ্গা শরণার্থী অবস্থান করছে। তবে ইউএনএইচসিআর-এর কক্সবাজার কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র মতে দুটি ক্যাম্পে বৈধ শরণার্থীর সংখ্যা শিশুসহ ২৮ হাজারের কিছু বেশি। এই ২৮ হাজার রোহিঙ্গার দায়ভার জাতিসংঘ এবং পশ্চিমা বিশ্ব নিলেও, অবৈধ প্রায় ৫ লাখ রোহিঙ্গার দায়িত্ব কেউ নেয়নি। সে কারণে পরিবেশের মারাত্মক ক্ষতি হচ্ছে।