মেডিক্যালে ভর্তির প্রশ্নফাঁস রহস্য
প্রকাশিত হয়েছে : ২:৫৬:০৩,অপরাহ্ন ০২ অক্টোবর ২০১৫ | সংবাদটি ২৪৯ বার পঠিত
শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ পরীক্ষার ফল বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে আন্দোলন করছে *অযথা বিভ্রান্তি ছড়াবেন না : স্বাস্থ্যমন্ত্রী
মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। আদৌ প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে নাকি একটি মহল এ নিয়ে যড়যন্ত্র করছে তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে। ইতোমধ্যে সরকার পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে বলেছে, মেডিক্যালে ভর্তি পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস হয়নি। এদিকে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগে চিকিত্সকসহ কয়েকজনকে র্যাব গ্রেফতারও করেছে। তবে তাদের বিরুদ্ধে ছিল ভুয়া প্রশ্ন বিক্রির অভিযোগ।
ইতিমধ্যে অনুষ্ঠিত ভর্তি পরীক্ষার পর একদিকে সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীরা যেমন মেডিক্যালে ভর্তির প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে, অন্যদিকে শিক্ষার্থীদের একটা বড় অংশ পরীক্ষার ফল বাতিল করে নতুন করে পরীক্ষা নেয়ার দাবিতে আন্দোলন করছে। তাদের মতে, প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগসমূহ খতিয়ে দেখা উচিত।
অনুসন্ধানে জানা গেছে, মেডিক্যাল কলেজে ভর্তি পরীক্ষায় প্রশ্ন ফাঁসের প্রথম অভিযোগ ওঠে ২০০৬ সালে। তবে এ যাবত্ এ ধরনের অভিযোগের পক্ষে কেউ জোরালো প্রমাণ দিতে পারেনি। জানা গেছে, তিনটি কোচিং সেন্টার মেডিক্যালে ভর্তি কোচিংয়ের একচেটিয়া ব্যবসা করতো। এগুলো শিবির নিয়ন্ত্রিত বলে অভিযোগ রয়েছে। সরকার এসব কোচিং সেন্টারের কার্যক্রম বন্ধ করে দিয়েছে। এখন এসব কোচিং সেন্টারের বিরুদ্ধেও গুজব রটানোর অভিযোগ রয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
স্বাস্থ্য অধিদফতরের পরিচালক (মেডিক্যাল এডুকেশন) অধ্যাপক ডা: এম এ হান্নান এ প্রসঙ্গে বলেন, একটি মহল প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তবে এখনও কেউ কোন প্রমাণ দেখাতে পারেনি। যাদেরকে আটক করা হয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ভুয়া প্রশ্ন বিক্রির অভিযোগ রয়েছে। এই চক্রটি অভিভাবকদের সঙ্গে প্রতারণা করে আসছে দীর্ঘদিন ধরে।
এদিকে মেডিক্যালে ভর্তির প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে হাইকোর্টে রিট করা হলে দুই দফা রিট খারিজ করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার তৃতীয় দফা শুনানি থাকলেও আবেদনকারী আদালতে হাজির হননি।
স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম এ প্রসঙ্গে বলেন, কঠোর নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে প্রশ্নপত্র তৈরি করা হয়। ১৩ জন এর সঙ্গে সংশ্লিষ্ট। প্রশ্ন তৈরির সময় থেকে শুরু করে পরীক্ষা হওয়া পর্যন্ত তারা বাইরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখতে পারেন না। তাদের উপর গোয়েন্দা নজরদারি থাকে। তিনি বলেন, ‘প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়াবেন না। কোন প্রমাণ থাকলে আমাদের সরবরাহ করুন। সামান্য প্রমাণ পেলেও কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
কুমিল্লা থেকে মেডিক্যাল ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়া খালিদ সাইফুল্লাহ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজ বিজ্ঞান অনুষদ থেকে অংশ নেয়া জিহাদ নামে দুইজন ভর্তিচ্ছু বলেন, ফেসবুকে পরীক্ষার একদিন পর আমরা প্রশ্ন দেখেছি। এছাড়া ছাত্র-ছাত্রীদের মুখে প্রশ্ন ফাঁসের কথা জেনেছি। পরে গণমাধ্যমেও এসব প্রশ্ন সরবরাহ করা হয়েছে। ঢাকা কলেজ কেন্দ্র থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয়া বিজয় নামের আরেক ভর্তিচ্ছু বলেন, বন্ধুদের মুখে শুনেছি প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে।
কুমিল্লা থেকে পরীক্ষায় অংশ নেয়া প্রিয়ন্তি পাল টুম্পা নামের একজন পরীক্ষার্থীর অভিভাবক পাপন পাল বলেন, ফেসবুকের মাধ্যমে প্রশ্ন ফাঁস হয়েছে বলে শুনেছি। বন্ধ হয়ে যাওয়া শিবির নিয়ন্ত্রিত কোচিং সেন্টার প্রশ্ন ফাঁসের সঙ্গে জড়িত। নির্বাচিত পরীক্ষার্থীদের সম্পর্কে অনুসন্ধান করলে কোচিং সেন্টারের রহস্য ধরা পড়বে। তদন্ত করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার দাবি জানান তিনি।
র্যাবের মহাপরিচালক বেনজির আহমেদ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘আমরা কয়েকজনকে গ্রেফতার করেছি ভুয়া প্রশ্ন বিক্রির অভিযোগে। প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে এর বেশি তথ্য আমাদের কাছে নেই।’
একাধিক গোয়েন্দা সংস্থা সূত্রে জানা গেছে, ‘ইতোমধ্যে প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টিকারীদের খুঁজে বের করার চেষ্টা করা হচ্ছে। ওয়েবসাইটে কারা এটা দিয়েছে সেটাও খুঁজে বের করা হবে।