সিলেট বিএনপির পূর্নাঙ্গ কমিটি নিয়ে চার নেতা ঢাকায়
প্রকাশিত হয়েছে : ৬:০৫:২৯,অপরাহ্ন ২৮ জানুয়ারি ২০১৭ | সংবাদটি ৫০৯১ বার পঠিত
কাউন্সিলের দীর্ঘ এক বছর পর সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির একপেশে পূর্নাঙ্গ কমিটি নিয়ে ঢাকায় অবস্থান করছেন সিলেট বিএনপির চার নেতা। গত দু’দিন থেকে সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবুল কাহের শামীম, সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ, মহানগর বিএনপির সভাপিত নাসিম হোসাইন ও সাধারণ সম্পাদক বদরুজ্জামান সেলিম ঢাকায় অবস্থান করে পূর্নাঙ্গ কমিটি অনুমোদনের চেষ্টার সংবাদে সিলেট বিএনপির অভ্যান্তরে চলছে তোলপাড়।
জানা যায়, ২০১৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারী সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির কাউন্সিল অনুষ্টিত হয়। কাউন্সিলে জেলার সভাপতি পদে আবুল কাহের শামীম সাবেক সংসদ সদস্য দিলদার হোসেন সেলিমকে পরাজিত করে সভাপতি হন। সাধারণ সম্পাদক পদে সাবেক ছাত্রদল নেতা আলী আহমদ বিজয়ী হন আরেক সাবেক ছাত্রদল নেতা এডভোকেট সামসুজ্জামান জামানকে পরাজিত করে। সাংগঠনিক সম্পাদক পদে এমরান আহমদ চৌধুরী ও হাসান আহমদ পাঠোয়ারী রিপনের ভোট সমান হয়ে যায়।
কারাগারে বন্ধি থাকা ছাত্রদল কেন্দ্রীয় সংসদের সাবেক সহ সভাপতি আব্দুল আহাদ খান জামাল সাংগঠনিক সম্পাদক পদে এক ভোট কম পেয়ে পরাজিত হন। কাউন্সিলের সপ্তাহখানেক পর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এমরান আহমদ চৌধুরীকে সাংগঠনিক সম্পাদক ও হাসান আহমদ পাঠোয়ারী রিপনকে যুগ্ম সম্পাদক করা হয়। মহানগরের সভাপতি পদে নাসিম হোসাইন বিজয়ী হন ডাঃ শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরীকে পরাজিত করে। আর সাধারণ সম্পাদক পদে কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম ও রেজাউল হাসান কয়েস লোদিকে পরাজিত করে বিজয়ী হন বদরুজ্জামান সেলিম।
সাংগঠনিক সম্পাদক পদে আজমল বখত সাদেক, হুমায়ুন কবির শাহীন, এমদাদ হোসেন চৌধুরীকে পরাজিত করে বিজয়ী হন সাবেক ছাত্রদল নেতা মিফতাহ সিদ্দিকী। বিগত বিএনপির জাতীয় সম্মেলনে সাবেক এমপি দিলদার হোসেন সেলিমকে বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাংগঠনিক সম্পাদক (সিলেট বিভাগ), স্বেচ্ছাসেবকদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ সভাপতি এডভোকেট সামসুজ্জামান জামানকে বিএনপি নির্বাহী কমিটির সহ স্বেচ্ছাসেবক বিষযক সম্পাদক ও সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক আহবায়ক ডাঃ শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরীকে কেন্দ্রীয় বিএনপির সদস্য পদ দেওয়া হয়।
কাউন্সিলের দীর্ঘ এক বছর পেরিয়ে গেলেও পূর্নাঙ্গ কমিটি গঠন করতে না পারায় বিভিন্ন সময় নেতাকর্মীদের তোপের মূখে পড়েন বিএনপির শীর্ষ নেতারা। জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক এমরান আহমদ চৌধুরী দীর্ঘ আট মাস থেকে ইংল্যান্ডে অবস্থান করায় এবং যুগ্ম সম্পাদক হাসান আহমদ পাঠোয়ারী অসুস্থ থাকায় দুই নেতা দিয়েই চলছে জেলা বিএনপির কার্যক্রম। আর মহানগর বিএনপির তিন নেতার মধ্যে শুরু থেকেই সাংগঠনিক সম্পাদকের সাথে সম্পর্ক ভালো যাচ্ছে না সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকের। অভিযোগ উঠেছে বিএনপিকে সাংগঠনিক ভাবে শক্তিশালী করে আন্দোলন সংগ্রাম করার পরিবর্তে দলের অভ্যান্তরে ভিন্ন মতাবলম্বীদের কোনঠাসা করে নিজেদের বলয় শক্তিশালী করতেই ব্যস্ত জেলা ও মহানগর বিএনপির শীর্ষ চার নেতা।
নিজের অনুসারী, প্রবাসী, আত্নীয় স্বজন, ব্যক্তিগত কর্মকর্তা-কর্মচারী ও অরাজনৈতিক ব্যক্তিদের প্রধান্য দিয়ে গোপনে জেলা ও মহানগরের পূর্নাঙ্গ কমিটি নিয়ে গত দু’দিন থেকে ঢাকায় অবস্থান করছেন নেতারা। কমিটি অনুমোদন নিতে তারা মরিয়া হয়ে উঠছেন। এ ক্ষেত্রে গঠনতন্ত্রেরও তোয়াক্কা করছেন না তারা। জেলা ও মহানগরের সহ সভাপতি পদে ১৫ জন ও যুগ্ম সম্পাদক পদে ৫ জনের নাম থাকার কথা থাকলেও তারা ইচ্ছা মতোই এ সংখ্যা বাড়িয়ে দিয়েছেন বলে নিশ্চিত করেছে একটি সুত্র।
পাশাপাশি বিগত দিনের আন্দোলন সংগ্রামে যারা জীবন বাজি রেখে কাজ করেছেন, জেল-জুলুম ও নির্যাতনের শিকার হয়েছেন এবং এখনো মামলার গ্লানি বয়ে বেড়াচ্ছেন, তাদের অনেককেই ঐ কমিটিতে জায়গা দেওয়া হয়নি। আর হাতেগুনা যে কয়েক জনের নাম দেওয়া হয়েছে, তাদের রাজনৈতিক অবস্থান বিবেচনা না করে প্রতিহিংসা বশত অসম্মানজনক অবস্থানে রাখা হয়েছে। বিএনপির দূর্দিনে সাহসী ভ’মিকা রাখা নেতৃত্ব বিশেষ করে বিএনপির সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক সাবেক সংসদ সদস্য এম ইলিয়াস আলীর সাথে সম্পর্ক যুক্ত নেতাকর্মীদের কৌশলে কোনঠাসা ও কমিটি থেকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি এখন অনেকটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।
আর এ খবর চাউর হওয়ার পর নড়েচড়ে বসেছেন সিলেট বিএনপির বিবদমান বলয়ের নেতারা। আশংকা করা হচ্ছে অনুমোদনের আগেই সিলেট বিএনপির নেতাদের বিভাজনের। চার নেতারা নিজেদের ইচ্ছা মতো কমিটি অনুমোদনের জন্যে যেমনি মরিয়া হয়ে উঠেছেন, তেমনী তা ঠেকাতে পাল্টা তৎপরতা শুরু করেছেন এম ইলিয়স আলীর অনুসারীরা। একই কাঁতারে শামিল হয়েছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, ডাঃ শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী ও এডভোকেট সামসুজ্জামান জামানের অনুসারীরাও। আর এতেই বেশ বেকায়দায় পড়েছেন জেলা ও মহানগর বিএনপির চার নেতা।
একটি সুত্র নিশ্চিত করেছে, কমিটি অনুমোদনের হুংকার দিয়ে ঢাকায় যাওয়া নেতারা শেষ পর্যন্ত ব্যর্থ হয়েই সিলেটে ফিরছেন। জেলা ও মহানগর বিএনপির কমিটি পূর্নাঙ্গ করে জমা দেওয়া বিষয়ে সিলেট বিএনপির নেতাদের সাথে যোগাযোগ করা হলে পরষ্পর বিরোধী বক্তব্য পাওয়া যায়।
মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইনের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি কেন্দ্রে কমিটি জমা দেওয়ার বিষয়টি স্বীকার করেন। একই সাথে তিনি সকলের মতামতের ভিত্তিতেই কমিটি পূর্নাঙ্গ করা হয়েছে বলেই দাবী করেন।
তবে সভাপতির বক্তব্যের সাথে সম্পূর্ণ ভিন্নমত পোষণ করেন, মহানগর বিএনপির সাবেক আহবায়ক ও সভাপতি পদে পরাজিত ডাঃ শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী। তিনি বলেন, নাসিম হোসাইন মিথ্যার আশ্রয় নিয়েছেন। মতামত নেওয়াতো দূরের কথা, গত ছয় মাসেও সাক্ষাত হয়নি তাঁর সাথে। এ বিষয়ে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করেন, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক পদে নিকটতম প্রতিদ্বন্ধী কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম।
তিনি বলেন, কমিটির বিষয়ে সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক কোন কথা বলেন নি। নিয়ম অনুযায়ী কমিটিতে আমি প্রথম যুগ্ম সম্পাদক হওয়ার কথা। কিন্তু তারা তা না করে তাদের পছন্দমতো অযোগ্য একজনকে এই স্থানে নিয়ে আসার চেষ্টা করছেন। আমাকে যারা ভোট দিয়েছেন ও সহযোগীতা করেছেন তাদেরকে মাইনাস করার ষড়যন্ত্র চলছে। এটা বরদাশত করা হবে না। বিষয়টি হাইকমান্ডকে অবগত করেছেন বলে জানান শামীম।
মহানগর বিএনপির নির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী বলেন, পূর্নাঙ্গ কমিটির ব্যাপারে আমি নূন্যতম কিছুই জানি না। তবে আমি আশা করিনি, সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক কমিটি নিয়ে এ রকম লুকোচুরি খেলবেন। বিষয়টি জানার পর আমি দলের মহাসচিবসহ সিনিয়র নেতৃবৃন্দকে অবগত করেছি। তারা আশ্বস্থ করেছেন যে বিষয়টি তারা দেখছেন।
জেলা বিএনপির কমিটি জমা ও অনুমোদনের বিষয় জানতে চাইলে সাধারণ সম্পাদক আলী আহমদ জানান, কমিটি গঠন প্রক্রিয়াধীন। এর বেশি কিছুই বলা যাবে না। তবে সভাপতি আবুল কাহের শামীমের সাথে মোবাইল ফোনে যোযোগের চেষ্টা করা হলেও তাঁকে পাওয়া যায়নি। আর সাংগঠনিক সম্পাদক ইমরান আহমদ লন্ডনে থাকায় তাঁর কোন বক্তব্য পাওয়া যায়নি।
জেলা বিএনপির সভাপতি পদে পরাজিত দিলদার হোসেন সেলিমের সাথে যোগাযোগ করা হলে তাঁকে পাওয়া যায়নি। তবে তাঁর ঘনিষ্ঠ একটি সুত্র নিশ্চিত করেছে, কমিটির বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
এ ব্যাপারে জেলা বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক পদে এক ভোটে পরাজিত সাবেক ছাত্রদল নেতা আব্দুল আহাদ খান জামাল বলেন, কমিটির বিষয়ে সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক কথা বলবেন ও মতামত নিবেন এটা রাজনৈতিক শিষ্টাচার। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক হলেও সত্য যে সভাপতি/সাধারণ সম্পাদক এ কাজটি করেন নি। কমিটিতে নিজে পদ পেলাম কি পেলাম না, সেটা আমার কাছে মূখ্য নয়। দলের দূর্দিনে জীবনবাজি রেখে কাজ করা রাজনৈতিক সহযোদ্ধাদের বঞ্চিত করার যে ষড়যন্ত্র চলছে, তা কাম্য ছিলো না।