সিঙ্গেল মাদার সমাজের জন্য কি অভিশাপ?
প্রকাশিত হয়েছে : ১১:০২:০৯,অপরাহ্ন ০৭ নভেম্বর ২০১৮ | সংবাদটি ১৭৯২ বার পঠিত
আমাদের দেশে শব্দ গুলোর সাথে কম পরিচিত হলেও পাশ্চাত্য দেশসম‚হে শব্দ গুলোর খুব নিবিড়ভাবে জড়িয়ে আছে সমাজে। পাশ্চাত্যের দেশ বিশেষ করে বৃটেনের মত দেশে সিঙ্গেল মাাদারদের আর্থিকভাবে গুরুত্ব দিলেও সামাজিকভাবে তেমন একটি গুরুত্ব দিতে চায়না পশ্চাতপদ সমাজ ব্যবস্থা। বৃটেনে আর্থিক নিশ্চয়তা থাকার কারণে অনেক সময় মহিলারা নিজেকে সিঙ্গেল মাদার হিসেবে পরিচয় দিতে খুব একটা লজ্জাবোধ করেনা। বাংলাদেশে আর্থিক নিশ্চয়তা না থাকলেও সামাজকিভাবে সিঙ্গেল প্যরেন্টসদের সাহায্য করার জন্য অনেক আত্মীয় স্বজন থাকে আশেপাশে, তাই কষ্টটা সেইভাবে বুঝতে পারে না, আর পাশ্চাত্য দেশসম‚হে কেউ সামাজিকভাবে সহযোগিতা করে না বিধায় একা মা-ই পরিবারের সমস্ত দায়-দায়িত্ব পালন করে থাকে।
সাবেক ৃবটিশ প্রধানমন্ত্রী টনি ব্লেয়ারের এক সময় সিঙ্গুল মাদারদের ব্যাপারে বক্তৃতা রাখতে গিয়ে বলেছিলেন, তিনি ফেডআপ সিঙ্গেল মাদারদের উপর, কারণ রাষ্ট্রের প্রচুর টাকা খরচ হয় এ সব সিঙ্গেল মাদারদের জন্য। তবে টনি ব্লেয়ারের বকৃতা কোনো দিক নির্দেশনা ছিলনা এসব সিঙ্গেল মাদারদের ব্যাপারে।
ইউকে থেকে প্রকাশিত ইভিনিং স্ট্যান্ডারডের সাথে এক সাক্ষাতকারে লন্ডনের টরি মেয়রাল প্রার্থী শাউন বেলী বলেছেন, ছেলেমেয়েদের উজ্জল ভবিষ্যতের পিতামাতা উভয়রই প্রয়োজন। যদিও তিনি নিজেও একজন সিঙ্গুল মাদারের সন্তান। বাবার সাথে তার সম্পকের কথা বলতে গিয়ে তিনি বেশ আবেগপ্রবণ হয়ে পড়েন এবং সঠিক শব্দ খুঁজে পাচ্ছিলেন না কিভাবে বাবার সাথে তার সম্পকের ব্যাখ্যা করবেন।
যদিও এখন দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে সিঙ্গেল মাদার এর সংখ্যা বাংলাদেশ এবং পাশ্চাত্য দেশসম‚হে । সমাজে অনেকেই বলে থাকেন মেয়েরা যত বেশি স্বাধীনচেতা হচ্ছেন শিক্ষিত হচ্ছেন ততবেশী ডিভোর্সের সংখ্যা ও বাড়ছে। যখন থেকে মহিলারা নিজেদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন এবং শ্রদ্ধাশীল হতে শুরু করেছে তখন থেকে ডিভোর্সের সংখ্যা ও বাড়া শুরু করেছে। ডিভোর্সের সংখ্যা বাড়ার জন্য পূরুষ ও নারী উভয়ই দায়ী, ছেলেরা স্বামীরত্বের নামে অন্যায় আচরণ প্রয়োগ করার চেষ্টা করছে এবং মেয়েদের উপর প্রভাব বিস্তার করার ব্যর্থ চেষ্টা বা অপচেষ্টা করছে, যা আজকের শিক্ষিত এবং সচেতন নারীরা মেনে নিতে চায় না। পূরুষদের এই ধরনের আচরণ পাশ্চেত্যের দেশগুলোতে সম্পূর্ণ রুপে অন্যায় এবং ডমেষ্টিক ভায়েলেন্স হিসেবে পরিগণিত হয়, শেষ পর্যন্ত ডমেষ্টিক ভায়েলেন্স থেকে পুলিশ, সোস্যাল সার্ভিস, আদালত পর্যন্ত গড়িয়ে গল্পের পরিসমাপ্তি হয় ডিভোর্স। তবে আমাদের দেশে ডিভোর্সের পর শুরু হয় আরো অন্যায় , ন্যার্য পাওনা দিতে গড়িমসি করতে দেখা যায় অধিকাংশের ক্ষেত্রে ।
সিঙ্গেল প্যরেন্টস বলতে আমরা একটা মেয়েকে বুঝে থাকি বা দেখে থাকি , এই ভ‚মিকায় ছেলেরা আছে কি না আমার জানা নেই। কারণ একটা মেয়ে বাচ্চাসহ যখন তার স্বামীকে রেখে যান , সেই স্ত্রী পরিত্যক্তা স্বামী ২/৪ মাস না যেতেই নতুন বৌ নিয়ে আসেন, উপভোগ করতে থাকেন নতুন জীবন আর অন্যদিকে বাচ্চার ভাগ্যে শুরু হয় দুঃখ দ‚র্দশা । তবে এর ব্যতিক্রম যে নেই , তা বলছিনা।এক্ষেত্রে মেয়েরা অনেক শক্তিশালী ভ‚মিকা রাখেন। স্বামী পরিত্যক্তা বা যেই কারণে স্বামী থেকে আলাদা থাকুক না কেন বাচ্চাদের কষ্টের কথা চিন্তা করে একাই জীবন কাটিয়ে দেয়ার কথা চিন্তা করে অনেক ক্ষেত্রে অনেক মেয়েরাই। একা থাকার কারণে বাচ্চার স্কুল , চাকুরী , বাজার সবকিছু নিয়ে হিমশিম খেতে হয় প্রতিটি ম‚হুর্তে। এতো কষ্ট করার পর ও রেহাই পায়না সমাজের কটুক্তি থেকে, প্রয়োজনে অপ্রয়োজনে কোন পুরুষ মানুষের সাথে কথা বলতে দেখলে বাজে কমেন্ট করতে কেউ ছাড়ে না। আবার অনেক ক্ষেত্রে অন্য পূরুষদের সাথে আপত্তিকরভাবে চলাফেরা করে পারিবারিক কোন্দলের কারণ হয়ে থাকেন এই সব সিঙ্গেল মাদাররা । তাদের মধ্যে অনেকে আছেন লাগিয়ে দেয়া কোন্দল দূরের থেকে বেশ উপভোগ করেন।
এ ক্ষেত্রে প‚রুষদের ও সমস্যা আছে অনেক । যখন শুনে সিঙ্গেল মাদার রাত নেই দিন নেই বিরক্ত করা শুরু করে । সিঙ্গেল মাদারকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয় অনেকে, তার মধ্যে ৮০% প‚রুষ সাহায্্েযর নামে তাদের নোংরা মনমাসিকতার পরিচয় দিয়ে থাকে। একাকীত্বের কারণে , বিভিন্ন মানসিক চাপ এবং কাজের চাপের কারণে কিছুটা স্বস্তি পাওয়ার আশায় বন্ধু বান্ধবীদের নিয়ে সময় কাটিয়ে নিজের কষ্টের কাছ থেকে কিছুক্ষণের জন্য দ‚রে রাখতে চায়, সেই বন্ধু বান্ধবীরাও এর সুযোগ নিয়ে বাজে কোন কাজ করা বা কটুক্তি করা উচিত নয় বলে আমি মনে করি।
সিঙ্গেল মাদার পারিবারিক এবং সামাজিকভাবে অনেক জটিলতার সমুখ্খীন হতে হয় বলে বিষন্নতায় ভুগে থাকে জীবনের অধিকাংশ সময়। এই বিষন্নতার প্রতিক্রিয়ার প্রতিফলন দেখা যায় বিভিন্ন ক্ষেত্রে যেমন পারিবারিক, সামাজিক এবং চাকুরী। সামাজিকভাবে এবং চাকুরী ক্ষেত্রে অনেক সমালোচনার সম্মুখীন হতে হয় নিজের অস্বাভাবিক আচরণের জন্য।
সিঙ্গেল মাদারের বাচ্চারা সব সময় নানা ধরনের মানসিক সমস্যায় ভ‚গতে দেখা যায়। অন্য পরিবারের মত বাবা মা কে এক সাথে পায় না বলে এবং মায়ের সব দিক সব সময় সামাল দিতে গিয়ে বাচ্চাদের ঠিকমত সময় দিতে না পারায় ভীষণভাবে বিষণতায় ভূগতে দেখা যায় বাচ্চাদেরকে। তাছাড়া মানসিক এবং শারীরিক অনেক সমস্যায় ভূগতে দেখা যায় তাদেরকে। এই বিষন্নতা থেকে এক সময় বাচ্চারা বিভিন্ন খারাপ নেশায় আশক্ত হয়ে পড়ে। যা সমাজের জন্য এক সময় বোঝা হয়ে দাড়ায়। সমাজ এদেরকে না পারে ধরে রাখতে না পারে ফেলতে। কেউ কোনো সমাধান দিতে পারেনা সমালোচনা ছাড়া।
আমি যেটি বুঝতে পেরেছি সেটি হচ্ছে কোনোভাবেই যেন বিয়ে চুড়ান্তভাবে ভেঙ্গে দেয়া না হয় অন্তত বাচ্চাদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে। আর যদি বিয়ে ভেঙ্গে দিতেই হয় তাহলে যেন সংসার জীবন অল্প থাকতে ভেঙ্গে দেয়া হয়। অনেকেই ১৫/২০বছর পর বলেন স্বামীর সাথে বনিবনা হচ্ছেনা, এটা কি বিশ্বাসয্যোগ কথা? সিঙ্গেল মাদার বা সিঙ্গেল প্যারেন্টস সমাজ বা পরিবার কারো জন্যই সুখকর নয়। তাই স্বামী স্ত্রী একে অন্যের মতামতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হতে হবে, ত্যাগী মনভাব থাকতে হবে , কেউ কারো স্বাধীনতায় আঘাত করবে না , বিশ্বাস থাকতে হবে, আরো চেষ্টা করা যেতে পারে কাউন্সিলিং এর মাধ্যমে। এই সবের মাধ্যমে কমে আসবে বিয়ে ভাঙ্গার প্রবনতা তথা সিঙ্গেল মাদার।
লেখক: হাছিনা আক্তার
টিভি প্রেজেন্টার