আবারো ভারতের পক্ষে আইসিসি, বিপাকে পাকিস্তান
প্রকাশিত হয়েছে : ৩:১৫:০০,অপরাহ্ন ২০ ডিসেম্বর ২০১৮ | সংবাদটি ২৯১ বার পঠিত
স্পোর্টস ডেস্ক:: বহুদিনের রাজনৈতিক টানাপোড়নে পাকিস্তান এবং ভারতের মধ্যে ক্রিকেট সম্পর্ক এখন নেই বললেই চলে। মাঠে না হলেও দুই প্রতিবেশি দেশের মাঠের বাইরের লড়াই শেষ হচ্ছে না। ভারত-পাকিস্তানের ক্রিকেটীয় মাঠের লড়াইও তাই দেখা যাচ্ছে না। প্রতিবেশী দুই দেশের দ্বন্দ্ব মেটাতে ক্রিকেটের সর্বোচ্চ সংস্থা আইসিসি নতুন উদ্যোগ নিয়েছিল।
দ্বিপাক্ষিক সিরিজ আয়োজনের চুক্তি অমান্য করার জন্য পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড (পিসিবি) ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিসিআই) কাছে প্রায় ৪৪৭ কোটি টাকা ক্ষতিপূরণ চেয়ে আইসিসির দ্বারস্ত হয়েছিল। সেই টাকার কানাকড়িও মেলা তো দূরের কথা, উল্টো বিপুল অঙ্কের ক্ষতিপূরণ দিতে হচ্ছে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে।
ভারত-পাকিস্তানের মাঠের লড়াই ফেরাতে তিন সদস্যের প্যানেল নিয়োগ দেয় ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। তার আগে প্যানেলটি বসেছিল দ্বিপক্ষীয় সিরিজ নিয়ে দুই বোর্ডের দ্বন্দ্ব মেটাতে। বিভিন্ন অজুহাতে পাকিস্তানের সঙ্গে ভারত কয়েকটি দ্বিপাক্ষীয় সিরিজ বাতিল করায় তাদের বিরুদ্ধে ৪৪৭ কোটি রূপি ক্ষতিপূরণ মামলা করেছিল পাকিস্তান। কিন্তু মামলাটিতে ভারতের পক্ষেই রায় দিয়েছিল আইসিসি। সব কিছু যাচাই বাছাইয়ের পর মামলাটি বাতিল করে দেয় আইসিসির প্যানেলটি।
মামলার শুনানিতে আইসিসির বিরোধ নিষ্পত্তি প্যানেল আবারো ভারতীয় বোর্ডের অনুকূলে রায় দিয়েছে। বিসিসিআই শুনানির খরচ আদায় করার জন্য পাল্টা মামলা ঠোকে আইসিসিতে। সেই মামলার রায়ে পিসিবিকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। শুধু তাই নয়, আইসিসি যে তিন সদস্যের বিরোধ নিষ্পত্তি প্যানেল গঠন করে শুনানির ব্যবস্থা করেছিল, তার সিংহভাগ ব্যয়ভার বহন করতে হবে পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ডকে। আর আইসিসির সদর দফতরে আয়োজিত শুনানির বাকি খরচ জোগাবে ভারতীয় বোর্ড। ভারতীয় বোর্ডের দাবি করা অর্থের ৬০ শতাংশ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে পিসিবিকে। একই সঙ্গে শুনানির খরচের ৬০ শতাংশ আইসিসিকে দিতে হবে। তাতে বিসিসিআই শুনানির খরচের ৪০ শতাংশ মিটিয়ে দেবে।
সীমান্ত হোক বা ২২ গজের পিচ, ভারত-পাকিস্তান বৈরিতার তাই শেষ হচ্ছে না। ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সিরিজ নিয়ে গত কয়েক বছর ধরেই জল ঘোলা হচ্ছে। আইসিসির সিদ্ধান্ত যদি পাকিস্তানের পক্ষে যেতো, তাহলে ২০১৯-২০২৩ সালের সফর সূচিতে রাখতে হতো ভারত-পাকিস্তান দ্বিপাক্ষিক সিরিজ। আর সেই সিরিজে খেলতেই হতো ভারতকে। এখন দেখার বিষয় ২০২৩ সাল পর্যন্ত ভারত-পাকিস্তানের মধ্যকার কতটি দ্বিপাক্ষিক সিরিজ অন্তর্ভুক্ত হবে আন্তর্জাতিক সফরসূচিতে।
যদিও দ্বিপাক্ষিক সিরিজ না হওয়ায় পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড বেশ কয়েকটি বড় ধরনের আর্থিক লোকসানের সম্মুখীন হয়। ২০১৪ সালে ভারতের সঙ্গে পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সিরিজ নিয়ে চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছিল। কিন্তু পরে সেই চুক্তি অস্বীকার করে ভারত। দ্বিপাক্ষিক সিরিজ না হওয়ায় পাকিস্তানকে ৭০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার (ভারতীয় মুদ্রায় ৪৬৬ কোটি ৩৪ লাখ রূপি, বাংলাদেশি টাকায় প্রায় ৫৯০ কোটি ৫০ লাখ ৬০ হাজার টাকা) আর্থিক ক্ষতিপূরণ দিতে বলা হয়েছিল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ডকে। সেটি থেকে রেহাই পেল ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড।
এছাড়া, আইসিসির ইভেন্টে মুখোমুখি লড়াইয়ে দেখা হলেও ভারত-পাকিস্তানের দ্বিপাক্ষিক সিরিজ নেই ২০১৩ সাল থেকে। নিরপেক্ষ কোনো ভেন্যুতে খেলার আমন্ত্রণ জানানো হলেও ভারতের পক্ষ থেকে জানিয়ে দেয়া হয়, পাকিস্তানের সঙ্গে কোনো ক্রিকেটই খেলবে না তারা। এমনকি আইসিসির কোনো টুর্নামেন্টে যাতে অন্তত গ্রুপ পর্বে ভারত-পাকিস্তান মুখোমুখি না হয়, সে ব্যবস্থা নিতে আইসিসির ওপরও চাপ সৃষ্টি করে ভারতীয় ক্রিকেট বোর্ড।
শুধু তাই নয়, ২০১৮ সালের এশিয়া কাপ ভারতের মাটিতে হওয়ার কথা ছিল। ক্রিকেটীয় সম্পর্কে ফাটল ধরায় আর ভারত আয়োজক বলে পাকিস্তান এই মেগা ইভেন্টে সেখানে গিয়ে খেলতে চায়নি। পরে এশিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল (এসিসি) ভেন্যু বদল করে সংযুক্ত আরব আমিরাতে আয়োজন করে প্রতিযোগিতাটি। যেখানে বাংলাদেশকে হারিয়ে শিরোপা উঠেছিল ভারতের হাতে।