রংপুর-ঢাকাকে অপেক্ষায় রেখে ফাইনালে কুমিল্লা
প্রকাশিত হয়েছে : ১০:৪৬:২৯,অপরাহ্ন ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০১৯ | সংবাদটি ৩১৪ বার পঠিত
স্পোর্টস ডেস্ক:: দুই ব্যাটসম্যানই রান আউট! তা কখনো হয় নাকি? হয় না বলেই বেঁচে যান ক্রিস গেইল। সঙ্গী মোহাম্মদ মিঠুনের দিকের বেলস আগে ফেলে দেওয়ায় সে যাত্রা ক্যারিবিয়ান দানবের রক্ষা। তখন তাঁর রান ২৯।
৪৫ রানের সময় আউট হতে পারতেন আরেকবার। অফ স্পিনার সঞ্জিত সাহার বলে করা পুলটি ঠিকঠাক লাগেনি। ডিপ স্কয়ার লেগে দাঁড়ানো ফিল্ডার মেহেদী হাসানের জন্য সহজ ক্যাচ। কিন্তু তা-ও তো মুঠো ফসকে দেন ফেলে।গেইলের প্রাপ্য দানবীয় ইনিংসটি তাহলে হয়ে যাচ্ছে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের বিপক্ষে ফাইনালে ওঠার এ কোয়ালিফায়ারেই!
তা হয়নি। ক্যাচ মিস করা মেহেদীর বলে লং অফে ক্যাচ দিয়ে আউট হন গেইল। ৪৪ বলে ৪৬ রান করে। ক্যারিবিয়ান বারুদে কালও তাই বিস্ফোরণ হয়নি পুরোপুরি। আর সর্বশেষ ছয় ম্যাচ দাপটের সঙ্গে জেতা রংপুর রাইডার্সের জয়রথও গেল থেমে। তাদের আট উইকেটে হারিয়ে বিপিএল ফাইনালে নাম লেখাল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস।
ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নদের ফাইনাল খেলার আশা তাতে অবশ্য শেষ হয়ে যায়নি। দ্বিতীয় কোয়ালিফায়ারে আরেকটি সুযোগ পাবে তারা আগামীকাল। সেখানে রংপুর রাইডার্সের প্রতিপক্ষ ঢাকা ডায়নামাইটস। কাল দিনের প্রথম খেলায় এলিমিনেটরে চিটাগং ভাইকিংসকে ছয় উইকেটে হারিয়ে সাকিব আল হাসানের দল টিকে রয়েছে টুর্নামেন্টে।
লিগ পর্বের দুই খেলায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে ৬৩ ও ৭২ রানে অল আউট করেছিল রংপুর রাইডার্স। সর্বশেষটি তো মাত্র দুই দিন আগে। সেই দলের বিপক্ষে কাল ১৬৫ রান করায় স্বস্তিতে থাকার যথেষ্ট কারণ ছিল মাশরাফির দলের। প্রথম পাঁচ ওভারের মধ্যে তামিম ইকবালকে (১৭) ফিরিয়ে দিয়ে আরো বেশি করে। কিন্তু রংপুরের ক্যাম্পে এরপর যে অস্বস্তির চোরকাঁটা ছড়িয়ে দেয় এভিন লুইস ও এনামুল হকের ৯০ রানের জুটি! তাতেই ম্যাচটি হেলে পড়ে কুমিল্লার দিকে।
৩২ বলে ৩৯ রান করে এনামুল যখন আউট হন, জয়ের জন্য ২৯ বলে মোটে ৪১ রান চাই কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের। উইকেটে থিতু হয়ে যাওয়া এভিন লুইস আছেন। থিসারা পেরেরা, শহীদ আফ্রিদির মতো টি-টোয়েন্টি স্পেশালিস্টরাও ড্রেসিংরুমে। তাদের জয় নিয়ে তখন সংশয় সামান্য। পেরেরা-আফ্রিদিদের বসিয়ে শামসুর রহমানকে ক্রিজে পাঠানোয় ভ্রু কুঁচকে উঠেছিল অনেকের। মাত্র ১৫ বলে অপরাজিত ৩৪ রানের ঝোড়ো ইনিংস খেলে টিম ম্যানেজমেন্টের আস্থার প্রতিদান দেন শামসুর। ফরহাদ রেজার করা ১৯তম ওভারের পঞ্চম বলে বাউন্ডারি মেরে তিনি যখন কুমিল্লার জয় নিশ্চিত করেন, অন্য প্রান্তে লুইস অপরাজিত ৫৩ বলে ৭১ রান করে। সাত বল হাতে রেখে আট উইকেটের জয়ে ফাইনালের টিকিট পায় কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস।
এর আগে রংপুর রাইডার্সের ব্যাটিং ইনিংস ছিল বিদেশিনির্ভর; বরাবরের মতোই। এবি ডি ভিলিয়ার্স, অ্যালেক্স হেলসরা চলে যাওয়ার পরও কাল সে ছবি বদলায় না। ওপেনিংয়ে গেইলের সঙ্গী মেহেদী মারুফ এক রান করে আউট; তিনে নামা মিঠুন তিনে রান আউট। রবি বোপারা (৩) ব্যর্থ হলেও কাল রংপুরের ইনিংসের সবচেয়ে বেশি রান তিন বিদেশিরই— বেনি হাওয়েল (২৮ বলে ৫৩*), গেইল (৪৪ বলে ৪৬) এবং রাইলি রুশোর (৩১ বলে ৪৪)। ক্যারিবিয়ান মহাতারকার ব্যাটে ইনিংসের প্রথমার্ধের অক্সিজেন, পরের দুজনের বিস্ফোরণ শেষার্ধের জ্বালানি। প্রথম ১০ ওভারে ৬৭ রান করা দলটি শেষ ১০ ওভারে তোলে ৯৮ রান। তাতেই না রংপুরের ইনিংস পাঁচ উইকেটে ১৬৫ পর্যন্ত যেতে পারে!
ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা ফিফটি করে আট ওভারে। তাতে গেইলের একারই রান ৪২! বিপিএলের সর্বোচ্চ স্কোরার রুশো এসে বাড়াতে চেষ্টা করেন রানের গতি। কিন্তু গেইল ও বোপারা দ্রুত আউট হলে আবার তাতে ভাটার টান। ১৫ ওভারে চার উইকেটে ৯১ রান রংপুর রাইডার্সের। ১৩০-১৪০ রানকেই তখন মনে হচ্ছিল অনেক, দেড় শ তো বহু দূরের পথ! কিন্তু শেষ পাঁচ ওভারে ৭৪ রান তুলে সমীকরণটা একেবারে পাল্টে দেয় ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়নরা। এ ক্ষেত্রে রুশোর রুদ্রমূর্তি প্রত্যাশিত, কিন্তু একেবারেই যে অপ্রত্যাশিত হাওয়েলের ব্যাটে ঝড়!
বিপিএলের প্রথম ছয় ম্যাচ খেলেছিলেন হাওয়েল। তাতে গড়পড়তা পারফরম্যান্স। ডি ভিলিয়ার্স আসার পর একাদশে আর সুযোগ পাননি এ ইংলিশ ক্রিকেটার। কাল সুযোগ পেলেন। আগের ম্যাচগুলোয় মূলত মিডিয়াম পেসার হিসেবে খেলা হাওয়েল কাল ব্যাটিংটা করেন দারুণ। শেষ ওভারের পঞ্চম বলে চার মেরে ফিফটিতে পৌঁছে অপরাজিত থাকেন ২৮ বলে ৫৩ রান করে। যে ইনিংস আলো করেছে তিন চারের সঙ্গে পাঁচ ছক্কা। আর দারুণ ফর্মের ধারাবাহিকতায় রুশোর ব্যাট থেকে আসে ৩১ বলে ৪৪ রানের ইনিংস। তাতেই তো ১৬৫ রানের হৃষ্টপুষ্ট সংগ্রহ রংপুর রাইডার্সের।
লিগ পর্বের দুই খেলায় ৬৩ ও ৭২ রানে অল আউট করে দেওয়া কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসের বিপক্ষে ওই স্কোরও যে জয়ের জন্য যথেষ্ট হবে না, তখন তা কে ভেবেছিলেন!